অলিম্পিকেও স্বর্ণ জিততে চান স্কেটার নাবীয়্যূন
Published: 17th, October 2025 GMT
‘বেল্ট অ্যান্ড রোড চায়না-আসিয়ান স্পিড রোলার স্কেটিং সিটি ইনভাইটেশনাল টুর্নামেন্ট’ এ জোড়া স্বর্ণপদকসহ ৪টি পদক জয় করেছেন স্পীড স্কেটার বগুড়ার নাবীয়্যূন ইসলাম পৃথিবী। গত ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর চীনের জিনজিয়াং রাজ্যের কারামাই শহরে অনুষ্ঠিত হয় ত্রিগতির ক্যাটাগরির এই টুর্নামেন্ট। জুনিয়র-এ গ্রুপ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নাবীয়্যূন প্রথম দিনে ৫০০ মিটার স্পিড রেসে এবং দ্বিতীয় দিনে ১০০০ মিটার স্প্রিন্ট রেসে প্রথম স্থান অধিকার করে জোড়া স্বর্ণপদক অর্জন করেন।
টুর্নামেন্টটিতে এশিয়া মহাদেশের ১৭টি দেশের ৩০০ জনেরও বেশি স্কেটার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে নাবীয়্যূন পৃথিবীসহ মোট ৭ জন স্কেটার অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ রোলার স্কেটিংয়ের ৩০ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশি হিসেবে এশিয়া মহাদেশের ১৭টি দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে একসঙ্গে দুটি স্বর্ণপদক অর্জনের ঘটনা এটিই প্রথম। গত ৩০ বছরে আন্তর্জাতিক রোলার স্কেটিং ইভেন্টে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন।
নাবীয়্যূন ইসলাম পৃথিবী বগুড়া রোলার স্কেটিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও কোচ আশরাফুল ইসলাম রহিত এর ছেলে। বগুড়া করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামার আগে দুটি জাতীয় ইভেন্টে রৌপ্যপদক এবং রোপ স্কিপিংয়ে চলতি বছর উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হন নাবীয়্যূন।
জানা গেছে, তিন মাস আগে থেকে টুর্নামেন্টটির জন্য প্রতিযোগী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন। প্রতিযোগী হিসেবে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হন আকিফ হামিদ, মুনজির আফনান বিশ্বাস, মো.
পরে গত ৮ অক্টোবর তারা চায়নার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এই সফরে বাংলাদেশ টিমের প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। প্রধান কোচ ছিলেন আশরাফুল আলম মাসুম ও সহকারি কোচ ছিলেন আসিফ ইকবাল।
নাবীয়্যূন ইসলাম পৃথিবী বলেন, বাবার হাত ধরেই আমার স্কেটিং শেখা। এই টুর্নামেন্টটির জন্যই জীবনে প্রথমবার দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। আমার সংকল্প ছিল দেশের জন্য ভালো অর্জন নিয়ে আসার। আমি পেরেছি। এজন্য আমি অনেক খুশি। তবে এই প্রতিযোগিতা আমাদের বাংলাদেশিদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। কারণ, আমরা যে গ্রাউন্ডে প্র্যাকটিস করেছি আর চীনের যে গ্রাউন্ডে আমাদের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ আলাদা। আসলে আন্তর্জাতিকভাবে যে গ্রাউন্ডে খেলা হয় সেই গ্রাউন্ডেই অনুশীলন করলে আমরা যারা স্কেটার আছি তাদের জন্য ভালো হয়। আর সত্য বলতে আমরা জানতামও না ওইখানকার গ্রাউন্ড আলাদা হবে। তাই আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আর সেখানে গিয়ে তো অনুশীলনের সময় পেয়েছি মাত্র ১ দিন। এরপরেও আমার চেষ্টা ছিল দেশের জন্য, বগুড়ার জন্য এবং নিজের জন্য অর্জন করার। আমার সেই চেষ্টাই আমি সফল হয়েছি।’’
নাবীয়্যূন বলেন, ‘‘স্কেটিং করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে হাত ছিলে যাওয়া বা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকে। তাই এখনও এটাকে স্পোর্টস হিসেবে বাংলাদেশের মানুষজন পজিটিভলি নেন না। তাই এখনও আমাদের স্কেটিংয়ের জন্য যে গ্রাউন্ড দরকার সেটা নেই। আর আমি তো বগুড়ায় থাকি। বগুড়ায় তো প্র্যাকটিসের জন্যও কোথাও ভালো কোন গ্রাউন্ড নেই। আমি আপাতত প্র্যাকটিসের জন্য ঢাকায় যাওয়া-আসা করছি।
নাবীয়্যূন বলেন, ‘‘স্কেটিং নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি অনেকদূর পর্যন্ত। আমি অলিম্পিকে স্বর্ণ জিততে চাই। স্কেটিং বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে জিততে চাই।’’
নাবীয়্যূন পৃথিবীর মা নওরীন আক্তার লাবনী বলেন, ‘‘আমার ছেলের জন্য আমি গর্বিত। অন্যান্য খেলা যেভাবে প্রাধান্য পায় স্কেটিং কিন্তু সেভাবে প্রাধান্য পায় না। আমি নিজেই প্রাধান্য দিতাম না। চাইতাম না সে স্কেটিং করুক। এমনকি সে প্রতিযোগিতার জন্য চায়না যাক সেটাও চাইনি। সেটা মা হিসেবে। সে পড়ে যেত। হোচট খেতো এতে ছিলে যেত, কেটে যেত। এজন্য আমি কষ্ট পেতাম। তবে সে যে এই সাফল্য নিয়ে আসবে। এই সাফল্যে যে এত সম্মান নিয়ে আসবে এটা আমি নিজেও ভাবিনি। এখন আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তার জন্য। আমি চাই সে আরো ভালো করুক।’’
নাবীয়্যূন পৃথিবীর বাবা বগুড়া রোলার স্কেটিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও কোচ আশরাফুল ইসলাম রহিত বলেন, ‘‘প্রায় ৮ বছর আগে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের গ্রাউন্ড থেকে নাবীয়্যূন এর স্কেটিং শিখতে শুরু করে। প্র্যাকটিসটাও কিন্তু এরকম (স্কেটিংয়ের অনুপযোগী) গ্রাউন্ডেই করা। বগুড়ায় স্কেটিংয়ের জন্য কোন গ্রাউন্ড নেই। এরকম একটি জায়গা থেকে একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে দুটি গোল্ড মেডেল অর্জন এটি আসলেই অনেক কিছু। আমি বগুড়া রোলার স্কেটিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও কোচ। বর্তমানে আড়াই শতাধিক বগুড়ায় রোলার স্কেটার রয়েছে। আমাদের মূল প্রতিবন্ধকতাই হলো আমাদের গ্রাউন্ড নেই। আমরা আপাতত ডিসি অফিস, হোপ স্কুল, আজিজুল হক কলেজসহ আরো কয়েকটি জায়গায় স্কেটিং প্র্যাকটিস করাচ্ছি। যদি বগুড়ায় স্থায়ী ভালোমানের গ্রাউন্ড পাওয়া যায়। তাহলে আশা করি এরকম অর্জন আরো অন্যান্য স্কেটাররা প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গা থেকে আনতে পারবে।’’
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য মমিনুর রশীদ শাইন বলেন, ‘‘৭ বছর পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্কেটিং নিয়ে মাঠে বাংলাদেশি স্কেটাররা। এর মধ্যে আমাদের বগুড়ার নাবীয়্যূন পৃথিবীও ছিল এবং সে ২টি স্বর্ণপদক অর্জন করেছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের। নাবীয়্যূনের কারণে অনেকের দৃষ্টি এখন এই স্কেটিংয়ের দিকে এসেছে। তবে বগুড়ায় স্কেটিং তৈরি বা যারা নিজ আগ্রহ থেকে স্কেটিং করতে চায় তাদের জন্যও নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বা প্রশিক্ষণের জন্য গ্রাউন্ড। জেলা প্রশাসক এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার তত্ত্বাবধানে সুন্দর একটি স্কেটিং গ্রাউন্ড অচিরেই হবে সেটি প্রত্যাশা করি।’’
ঢাকা/এনাম/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ব য় য ন ইসল ম প থ ব র গ র উন ড দ র জন য স বর ণ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ‘মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট’ বিষয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি মানসিক স্বাস্থ্য ও সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট নিয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করেছে। বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার মতো দক্ষ পেশাজীবীর প্রয়োজন বাড়ছে। সেই প্রয়োজন পূরণ করতেই এ প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। প্রোগ্রামটি পরিচালনা করবে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (ব্র্যাক আইইডি)।
এই মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়াশোনা হবে তত্ত্ব, অনুশীলন ও গবেষণার মিশ্রণে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে প্রোগ্রামটি তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় রাখা হয়েছে। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এখানে ক্লাস নেবেন। প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য আবেদন চলছে। আবেদনের শেষ তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫। প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে।
সম্প্রতি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসে এ প্রোগ্রামের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে ব্র্যাক আইইডি ‘মেন্টাল হেলথ ফর অল: ব্রেকিং স্টিগমা, বিল্ডিং ক্যাপাসিটি’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক, পেশাজীবী, নীতিনির্ধারক ও মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীরা অংশ নেন। তাঁরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। কীভাবে স্টিগমা কমানো যায় এবং সবার জন্য ভালো সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা যায়, এ বিষয়গুলো উঠে আসে আলোচনায়।
আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সহ–উপাচার্য আরশাদ মাহমুদ চৌধুরী ও ব্র্যাক আইইডির নির্বাহী পরিচালক ইরাম মরিয়ম। অনুষ্ঠানে ‘থ্রাইভিং টুগেদার: ফ্রম লাইফ টু লিডারশিপ’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনাও হয়। বিভিন্ন পেশার মানুষ তাঁদের নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।