হামলায় নিহত আফগানিস্তানের তিন ক্রিকেটার, পাকিস্তানে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে না আফগানিস্তান
Published: 18th, October 2025 GMT
আফগানিস্তানের আরগুন জেলায় হামলায় তিন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হওয়ায় আগামী মাসে পাকিস্তানে হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে আফগানিস্তান।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) গত মাসে সিরিজটি আয়োজনের ঘোষণা দেয়। আগামী ১৭ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে টি–টোয়েন্টি সংস্করণে ত্রিদেশীয় সিরিজটি অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আফগানিস্তানেরও অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ‘এক্স’ হ্যান্ডলে করা পোস্টে এক বিবৃতিতে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) দাবি করেছে, হামলায় কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটারও আছেন। তাঁরা পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী শারানায় একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাড়ি ফিরছিলেন।
এসিবির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় আরগুন জেলার তিন ক্রিকেটার কবির, সিবঘাতুল্লাহ ও হারুনসহ আরও পাঁচ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন সাত জন। দুপুরে তাঁরা পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী শারানা শহরে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন। খেলা শেষে নিজ এলাকায় ফিরে একত্র হওয়ার সময় হামলার শিকার হন তাঁরা।’
ত্রিদেশীয় সিরিজে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তও এই বিবৃতিতে জানিয়েছে এসিবি, ‘মর্মান্তিক এই ঘটনার প্রতিবাদে ও নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানকে নিয়ে নভেম্বরের শেষ দিকে এটি খেলার কথা ছিল।’
চলতি বছর এটা হতো আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে নিয়ে দ্বিতীয় ত্রিদেশীয় সিরিজ। গত আগস্টে এশিয়া কাপের আগে দুটি দল একটি ত্রিদেশীয় সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল। তবে পাকিস্তানের মাটিতে এটি হতো আফগানিস্তানের প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজ।
এর আগে আফগানিস্তান পাকিস্তানে খেলেছে ২০২৩ সালের এশিয়া কাপে এবং চলতি বছরের শুরুতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। তবে তখন তারা স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো ম্যাচ খেলেনি।
সূচি অনুযায়ী, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দুটি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল—একটি ১৭ নভেম্বর ত্রিদেশীয় সিরিজে উদ্বোধনী ম্যাচ, আরেকটি ২৩ নভেম্বর।
ত্রিদেশীয় সিরিজের আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছিল এমন এক সময়, যখন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিল। এ ঘটনায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র
এছাড়াও পড়ুন:
তালেবান, দেওবন্দ এবং ভারতের ‘ধর্মীয় কূটনীতি’
১০ অক্টোবর। শরতের বাতাসে দিল্লির পাতা ঝরছে। ভারতের মাটিতে পা রাখলেন কাবুলের প্রভাবশালী নেতা মৌলভি আমির খান মুত্তাকি, যিনি আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতে তাঁর ছয় দিনের সফর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির নতুন মানচিত্র আঁকছে।
দিল্লিতে নেমে মুক্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বসলেন নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হলো, কাবুলে ভারত আবার দূতাবাস খুলবে, যা তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বন্ধ। এরপর ১১ অক্টোবর মুত্তাকি গেলেন সাহারানপুরের দারুল উলুম দেওবন্দে; যা ইসলামিক ইমারতের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতার প্রথম এই ভারতীয় মাদ্রাসা পরিদর্শন।
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কীভাবে কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান সরকারের একজন মন্ত্রীকে গ্রহণ করল—এ রকম প্রশ্ন নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে নিশ্চয়ই। কাবুলের সঙ্গে দিল্লি এমন এক সময়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের দূরত্ব বাড়ছে, সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলছে। তাহলে দেওবন্দ পরিদর্শন কি শুধু প্রতীকী, নাকি এর মধ্যে কোনো গভীর রাজনৈতিক ইঙ্গিতও রয়েছে?
২.২০২১ সালের আগস্ট তো বেশি দূরের সময় নয়। মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর তালেবান ক্ষমতায় এলে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারত। চার বছর ‘সম্পর্কহীন’ থাকার পর তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার দিল্লিতে এসে বললেন, অমৃতসর-কাবুল ফ্লাইট শুরু হবে শিগগিরই। চার দশকের যুদ্ধে ক্লান্ত আফগানিস্তানের মানুষ উন্নয়নের জন্য উদ্গ্রীব।
আফগানিস্তানের আগের সরকারের সময় ভারত সেখানে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে সালমা ড্যাম, জারঞ্জ-দেলারাম হাইওয়ে ও পার্লামেন্ট ভবনের মতো প্রকল্পে। এবার মুত্তাকি এসে আফগানিস্তানের খনিজ ক্ষেত্রেও ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, এটা ‘তালেবান ২.০’-এর ইঙ্গিত। আসলেই কি তাই, নাকি এটা ‘শত্রুর শত্রু হলো বন্ধু’ কৌশলের খেলা? ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান, যারা এখন আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের শত্রু।
■ দেওবন্দের যে চিন্তাধারা তালেবানকে প্রভাবিত করেছে, সেটি এসেছে পাকিস্তানের ‘ছাঁকনি’ দিয়ে। ■ প্রথমবারের মতো দেওবন্দ মাদ্রাসার সঙ্গে এবং দেওবন্দি ভারতীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রচিত হলো পাকিস্তানের ছায়ার বাইরে গিয়ে।বোঝার জন্য বলি, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেকটাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয়। ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বটে; কিন্তু নানা যৌক্তিক কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে। কিন্তু ভারত ছাড়া আমাদের আবার চলেও না। চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ এমনকি ঈদের বাজার করতে ভারতেই ভরসা ছিল এতকাল; এমনকি বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদেরও ‘শেষ আশ্রয়স্থল’ ভারত। বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের যদিও আগ্রাসী ভারতের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু দেওবন্দ মাদ্রাসার কারণে ভারতের আলেম-ওলামার সঙ্গে তাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগও রয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশে বড় কোনো ইসলামি সম্মেলন মানেই ভারতের কোনো আলেমের আগমন।
দিল্লি সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি