‘মিস ইউনিভার্স ২০২৫’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত আসরের কয়েক দিন আগে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দুই বিচারক। তাদের একজনের অভিযোগ—প্রতিযোগিতাটি সাজানো বা পক্ষপাতদুষ্ট। খবর নিউ ইয়র্ক টাইমসের।

মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আট সদস্যের জুরি বোর্ডের অন্যতম সদস্য লেবানিজ-ফরাসি সংগীতশিল্পী ওমর হারফু। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ইনস্টাগ্রাম পোস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। তাতে তিনি বলেন, “মিস ইউনিভার্সের চূড়ান্ত আসরের বিচারকের পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা ব্যাখ্যা করা জরুরি মনে করছি।” 

আরো পড়ুন:

এপস্টাইন ফাইল প্রকাশের অনুমতি দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস

খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কিছুই জানতেন না সৌদি যুবরাজ: ট্রাম্প

বিচারক ওমর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায়—“ফাইনালের দুই দিন আগে ১৩৬ জন প্রতিযোগীর মধ্য থেকে ৩০ জনকে প্রাক-নির্বাচনের জন্য একটি ‘গোপন ভোট’ নেওয়া হয়। যারা এই ভোট নিয়েছেন তারা জুরি বোর্ডের কোনো সদস্য নন। এখন পর্যন্ত কেউ জানেন না, নির্বাচিত সেই ৩০ জন কারা। একজন ব্যক্তির কাছে সেই তালিকাটি রয়েছে। এই ব্যক্তি অংশগ্রহণকারী একটি দেশের জাতীয় সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত; যা স্পষ্টতই একটি ‘স্বার্থের সংঘাত’।” 

খানিকটা ব্যাখ্যা করে ওমর বলেন, “আমি জনসমক্ষে বা টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে এমন একটি ভোটকে বৈধতা দেওয়ার ভান করতে পারি না; যে ভোটে আমি অংশই নিইনি। এই প্রক্রিয়ায় যে দেশগুলো বাদ পড়েছে, তাদের মধ্যে কেউ যুদ্ধাবস্থায় থাকতে পারে, বৈষম্যের শিকার হতে পারে, অথবা ভূ-রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হতে পারে। দর্শকরা ধরে নিতেন যে, এই সিদ্ধান্তগুলো জুরি বোর্ড নিয়েছে এবং এমন একটি প্রক্রিয়ার দায় আমি নিতে পারি না, যেটিতে আমি যুক্তই ছিলাম না। এর বিপরীত অবস্থান নেওয়া অসৎ আচরণ হতো।” 

ওমর এখানেই থেমে যাননি। এরপর আরো বেশ কয়েকটি পোস্ট দিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে। মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের পরিকল্পনা করেছেন। এ বিষয়ে নিউ ইয়র্কের অন্যতম শীর্ষ আইন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ করেছেন বলেও জানান তিনি।  

ওমরের পদত্যাগের ঘোষণার এক ঘণ্টা পরে ফরাসি ফুটবল ম্যানেজার ক্লদ মাকেলেলে জুরি বোর্ড থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে এ বিচারক ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।  

মিস ইউনিভার্সের ৭৪তম আসর বসেছে থাইল্যান্ডে। এ আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তানজিয়া জামান মিথিলা। আগামী ২১ নভেম্বর এ প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হবে। 

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ম স ইউন ভ র স ব চ রক

এছাড়াও পড়ুন:

বামপন্থা, ইসলাম ও পালনবাদ: ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন

মাওলানা ভাসানী সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে, তিনি একজন বিভ্রান্ত মানুষ। না হতে পারলেন মাওলানা, না রাজনীতিবিদ, না পারলেন সমাজতন্ত্র কায়েম করতে, না পারলেন ইসলামি সমাজতন্ত্র কায়েম করতে। কিন্তু মাওলানা কি আদৌ সমাজতন্ত্র বা ইসলামি সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছেন? তাঁর রাজনৈতিক দর্শনটা আসলে কী?

মাওলানার চীন সফর–পরবর্তী সংবর্ধনাকে ঘিরে একটি ঘটনা প্রচলিত আছে। সেদিনও ভাসানীর মাথায় ছিল তালপাতার টুপি, পরনে লুঙ্গি। তাঁর বেশভূষা দেখে শ্রোতাদের মধ্যে গুনগুন মন্তব্য, ‘ইয়ে তো মিসকিন হ্যায়!’ কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে ভাসানী বক্তব্য শুরু করতেই সেই শ্রোতারা বলল, ‘ইয়ে তো মাওলানা হ্যায়!’

রাজনৈতিক বক্তব্য শুনে তারা এবার অবাক হয়ে পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, ‘আরি বাহ্, ইয়ে তো পলিটিশিয়ান হ্যায়!’ যখন ভাসানী বিশ্ব মোড়লদের শোষণ–নিপীড়ন সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন, তখন ওই একই দর্শকশ্রোতা বলে উঠল, ‘হায় আল্লাহ, ইয়ে তো এস্টেট মেন হ্যায়!’ কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়:

‘দুর্গত এলাকা প্রত্যাগত বৃদ্ধ মৌলানা ভাসানী
কী বলেন। রৌদ্রালোকে দাঁড়ালেন তিনি, দৃঢ়, ঋজু,
যেন মহাপ্লাবনের পর নূহের গভীর মুখ
সহযাত্রীদের মাঝে ভেসে ওঠে, কাশফুল-দাড়ি
উত্তরে হাওয়ায় ওড়ে। বুক তার বিচর্ণিত দক্ষিণ বাংলার
শবাকীর্ণ হু হু উপকূল, চক্ষুদ্বয় সংহারের
দৃশ্যাবলীময়, শোনালেন কিছু কথা, যেন নেতা
নন, অলৌকিক স্টাফ রিপোর্টার।’

(সফেদ পাঞ্জাবী/শা.রা.)

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর গঠিত ‘হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতির’র মাধ্যমে কি প্রচলিত ধারণার ইসলমি খেলাফত চেয়েছেন নাকি ইসলামি সমাজতন্ত্র চেয়েছেন? তাঁর রাজনৈতিক পরিভাষাগুলো আমাদের অনেক শিক্ষিত ইতিহাসবিদের কাছেও অবোধ্য-দুর্বোধ্য। আমরা তাঁর তিনটি রাজনৈতিক পরিভাষার ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে বোঝার চেষ্টা করব। রুবুবিয়াৎ, খুদায়ে খিদমাতগার এবং হুকুমতে রাব্বানিয়া।

কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে আমি (আল্লাহ) খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছি। (২:৩০) এই খলিফা ইসলামি খেলাফত বা রাজতন্ত্রের খলিফা না। কারণ, খেলাফত ব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের খলিফা হন একজন। আর রুবুবিয়াতের খলিফা আমি, আপনি, সবাই।রুবুবিয়াৎ বা পালনবাদ

কোরআনের অনুবাদ করতে গিয়ে অধিকাংশ অনুবাদক ‘রব’ শব্দের অর্থ করেছেন ‘প্রভু’, যা ইসলামি দৃষ্টিতে শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার করা। মাওলানা ভাসানী সচেতনভাবে এর অনুবাদ করেছেন ‘পালনবাদ’। একজন পালনকর্তা হিসেবে আল্লাহ সবাইকে খাওয়ান, পরান, আলো–বাতাস দেন। জীবজন্তুকে খাওয়ানোরও দায়িত্ব নেন। কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে আমি (আল্লাহ) খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছি। (২:৩০) এই খলিফা ইসলামি খেলাফত বা রাজতন্ত্রের খলিফা না। কারণ, খেলাফত ব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের খলিফা হন একজন। আর রুবুবিয়াতের খলিফা আমি, আপনি, সবাই। আমরা সবাই আল্লাহর প্রতিনিধি। সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর যা যা দায়িত্ব, আমাদের ওপরও তা-ই দায়িত্ব। এটা যে ভাসানীর মনগড়া ব্যাখ্যা, বিষয়টা এমন না। তাঁর ব্যাখ্যার পেছনে কোরআনে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় মানুষকে আল্লাহর রঙে রঙিন হতে বলা হয়েছে। (২:১৩৮)

মাওলানা ভাসানীর হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতি থেকে প্রকাশিত ‘হুকুমতে রাব্বানিয়া: পূর্বশর্ত’ গ্রন্থের দ্বিতীয় প্রবন্ধে লেখক শামসুল হক বলেন, ‘আল্লাহর সমস্ত গুণাবলী মানবজীবনে রূপায়িত হলে কতই না সুন্দর হবে।...রব হিসেবে এই সৃষ্টিকে পালন অর্থাৎ রুবুবিয়াতের কাজ করাই আল্লাহর সবচাইতে বড় কাজ। আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মানুষেরও প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে রুবুবিয়াৎ পালন।’

রুবুবিয়াতের চারটি স্তর—বিয়ের আগে, পারিবারিক জীবন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে, সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে।

আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০—১৭ নভেম্বর ১৯৭৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইমোশনাল অ্যাবিউজের মাধ্যমে শিশুর যে ক্ষতি করেন বড়রা
  • যুবদল নেতা হত্যায় বড় অংকের অর্থ লেনদেন হয়েছে: র‌্যাব
  • জকসু নির্বাচন: ছেলে এজিএস প্রার্থী, নির্বাচনী দায়িত্বে বাবা
  • নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকানে ঢুকে গেল কাভার্ডভ্যান, নিহত ১
  • বিকাশের মাধ্যমে ৫০ লাখ মাসিক সঞ্চয়ী হিসাব খুলেছেন গ্রাহকেরা
  • বক্স অফিসে রাশমিকার সিনেমার হালচাল কী?
  • ভাত কী সত্যিই ওজন বাড়ায়?
  • হার্মিস: ভাইয়ের গরু চুরি করে বীণা উপহার দিয়েছিলেন
  • বামপন্থা, ইসলাম ও পালনবাদ: ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন