দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে ‘মব ভায়োলেন্স’ থেকে সরে আসতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের প্রধানতম কথা হচ্ছে,  আপনাকে অন্যের মত সহ্য করতে হবে। আমি কথা বলব, আপনার কথা সহ্য করব না, পিটিয়ে দেব, মব ভায়োলেন্স তৈরি করব, কিছু মানুষ জড়ো করে বলব, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, তাকে মেরে ফেলো পিটিয়ে, দিস ইজ নট ডেমোক্রেসি।”

বুধবার (১৯ নভেম্বর) এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। গুলশানে লেকশোরে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’ শীর্ষক সংকলিত গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। এর আগে গণঅভ্যুত্থানের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।

আরো পড়ুন:

শেখ হাসিনার মামলার রায়: ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি ফখরুলের

নানা দাবির নামে নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা চলছে: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল বলেন, “ডেমোক্রেসির মূল কথাটা হচ্ছে, আমি তোমার সঙ্গে একমত না হতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা তাকে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো। দ্যাট ইজ ডেমোক্রেসি। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এখানে অন্যের মতকে সহ্য করতে চাই না, আমরা তাকে উড়িয়ে দিতে চাই। এই জায়গা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই যদি আমরা টেকসই একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে না চাই, তাহলে গণতন্ত্রকে আমাদের এখানে প্রতিপালন করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করতে হবে।”

তিনি বলেন, “কোন দল কে জিতল, কে হারল, এটা জরুরি নয়, জরুরি হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানটা শক্তিশালী হলো কিনা, আমাদের জুডিসিয়ারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিনা, আমাদের মিডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিনা, আমাদের পার্লামেন্ট ইফেক্টিভ কিনা, আমাদের দেশ আইনের শাসনে চলছে কিনা, সুশাসন চলছে কিনা, মানুষের সামাজিক মর্যাদা সুরক্ষা এবং মানবাধিকার আমরা রাখতে পারছি কিনা; এই বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতে কাজ করতে হবে।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “নির্বাচন আসছে। বিএনপির ওপরে দায়িত্ব বেশি পড়ছে। বিএনপিকে সত্যিকার অর্থেই এমন একটা মোর্চা গড়ে তুলতে হবে, যে মোর্চা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে অতীতে, লড়াই করবে এবং গণতন্ত্রকে এখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে। এই মোর্চাই আমাদের এখানে গড়তে হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার দিকে তাকালেই তো আমরা উত্তরটা পেয়ে যাই। একজন নেত্রী, যিনি গণতন্ত্রের জন্যে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আনার জন্য কত  নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং দীর্ঘ ছয় বছর কারান্তরীণ থেকেছেন। এখনও অসুস্থ অবস্থায় তিনি কিন্তু এই গণতন্ত্রের কথাই বলছেন।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “৫ আগস্ট তিনি (খালেদা জিয়া) একটা খুব ছোট্ট একটা বিবৃতি দিয়েছিলেন। ওই বিবৃতিতে খুব সুন্দর করে বলেছিলেন, প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়। আসুন আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে সবাই একযোগে কাজ করি… এই যে আপনার ধারণা এটাকে আমাদের মূলত কাজে লাগাতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্যাতিত হয়েছেন, তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে, তারপরও বিদেশে থেকেও তিনি কিন্তু আমাদের দলকে শুধু নয়, গোটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন, তিনি উজ্জীবিত করেছেন।”

মির্জা ফখলরু বলেন, “কিছুক্ষণ আগে প্রামাণ্যচিত্রে তার বক্তব্য আপনার দেখেছেন কীভাবে গণতন্ত্রের পক্ষে তিনি মানুষকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব যে আমরা সবাই অন্তত গণতন্ত্র যারা বিশ্বাস করি, আমরা সবাই একজোট হয়ে সামনের দিনগুলোতে শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচন পরবর্তীকালে যেন গণতন্ত্রকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারি, শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারি, এটাতে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমার মাঝে মাঝে একটু হতাশ লাগে। হতাশ লাগে যখন দেখি, একদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে রায় দেওয়া হচ্ছে কোর্টে। অন্যদিকে দেখি মব ক্রেসি, মব ভায়োলেন্স চলছে। এটা কীসের আলামত আমি জানি না।”

তিনি বলেন, “আমি তো মনে করি যে ওই রায়ের যে গুরুত্ব সেটাকে কমিয়ে দেওয়ার জন্য একটা বিশেষ মহল ভিন্ন খাতে বিশ্ব দৃষ্টিকে নেওয়ার জন্য এই কাজগুলো করেছে। এই বিষয়গুলো আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি, লড়াই করি, যারা প্রাণ দিয়েছে, আমাদের ছেলেরা, আজকে কোনও একটা মহল অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে, চালাকির সঙ্গে সেটাকে বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে কিনা এটা আমাদের দেখা উচিত। এর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে কিনা?”

“আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই বিএনপি কোনও বিপ্লবী দল নয়। বিএনপি একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতন্ত্রের জন্যই আমরা সারা জীবন লড়াই করেছি এবং এই দেশের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষও তার গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্যই শত শত বছর ধরে লড়াই করেছে”, বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “এখানে নিঃসন্দেহে যারা বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাস করেন করতে পারেন। কিন্তু আমরা বিএনপি খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, উই আর লিবারেল ডেমোক্রেটস। এতে আমাদের কাউকে ভুল বোঝার কোনো সুযোগ আমি দিতে চাই না। আমি বিপ্লবী নয়। আই এম এ লিবারেল ডেমোক্রেট। আমরা সবাইকে নিয়ে এই ভূখণ্ডে যারা বাস করে তাদের সবাইকে নিয়ে সব ধর্ম, সব বর্ণ, সব মত, সবাইকে একসঙ্গে করে আমরা একটা রেইনবো স্টেট নির্মাণ করতে চাই। এটা আমাদের ঘোষিত নীতি।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, গ্রন্থের সম্পাদক বাবুল তালুকদার,  প্রকাশক অধ্যাপক বিএম নাগিব হোসেন বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র মব ভ য় ল ন স গণত ন ত র ক আম দ র দ কর ছ ন ব স কর ফখর ল ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

জকসু: জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অনিকের সম্মানে পদ খালি রাখল ছাত্রশক্তি

প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনে ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ নামে প্যানেল ঘোষণা করেছে জাতীয় ছাত্রশক্তি। তবে বিশেষ সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র’ সম্পাদক পদটি খালি রেখেছে সংগঠনটি।

গত বছরের জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়া অনিক কুমার দাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংগঠনটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

জকসু: প্যানেল ঘোষণাতেই আচরণবিধি লঙ্ঘন শিবির-ছাত্রশক্তির

জকসু নির্বাচন: নবীনদের ‘তরুণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদ হাসান প্যানেল ঘোষণা করলে এ তথ্য জানা যায়।

গত বছরের ১৬ জুলাই ঢাকার সিএমএম আদালত এলাকায় আন্দোলন চলাকালে চারজন গুলিবিদ্ধ হন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা অনিক তাদেরই একজন।

জবি শাখা ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে চারজন প্রথম গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, অনিক তাদের মধ্যে একজন। তার ত্যাগ পুরো দেশ দেখেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ সমর্থক—এই প্রচলিত ধারণাটিও অনিক ভেঙে দিয়েছে নিজের বুক পেতে গুলি খেয়ে।”

তিনি বলেন, “অনিকের সেই অবদান ও ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশক্তি ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র’ সম্পাদক পদে কোনো প্রার্থী দেইনি।”

অনিক কুমার দাস বর্তমানে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেল থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র’ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জকসু নির্বাচন। আগামী ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জকসু: জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অনিকের সম্মানে পদ খালি রাখল ছাত্রশক্তি
  • আমরা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি, একটা দোলাচল চলছে: মির্জা ফখরুল
  • প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন অ্যাপ উদ্বোধন, ‘নতুন অধ্যায়’ বললেন সিইসি