বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকার ৪০টি ক্লাব ক্রিকেট বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। তাতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ক্রিকেটাররা। বিদ্রোহী সেই ক্লাবগুলোর লিগ বয়কটের ঘোষণায় আর্থিক নিরাপত্তা এবং ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন যাচ্ছে তাদের।
বিদ্রোহী সেই ক্লাবগুলোর মধ্যে রয়েছে তামিম ইকবালের ওল্ডডিওএইচএস ক্লাব, বিসিবির সাবেক পরিচালক রফিকুল ইসলাম বাবু, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান মাসুদ। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল দায়িত্ব গ্রহণের পরই জানিয়েছেন, ক্লাবগুলোর সঙ্গে বসবেন। তবে সেই আলোচনা পরে আর আগায়নি। তবে ক্রিকেটাররা নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে ক্লাবগুলোর সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
বিসিবি নির্বাচন করবেন না তামিম
নোংরামি সরিয়ে ক্রিকেটের বৃহৎ স্বার্থ দেখার আহ্বান
ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি মোহাম্মদ মিঠুন শনিবার জানালেন, ক্লাবগুলোর সঙ্গে তারা বসতে যাচ্ছেন। মাঠে যেন ক্রিকেট গড়ায়, ক্লাবগুলো যেন লিগে অংশগ্রহণ করে এবং বিসিবি এবং ক্লাবের মধ্যকার টানপোড়নের সম্পর্ক যেন ইতি টানে সেসব নিয়ে কথা বলবেন।
মিঠুন বলেছেন, “আমরা সবাই জানি, বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার ক্লাবগুলোর সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডের একটা সমস্যা চলছে। এটা নিয়ে কোনো কমেন্ট করতে চাই না। খেলোয়াড়দের স্বার্থে আমরা ক্লাবগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। সামনে যে ঢাকা লিগগুলো আসবে সেই লিগগুলো যেন আমরা খেলতে পারি। এই বিষয়গুলো নিয়ে উনাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। উনারা আগেই আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।”
নির্দিষ্ট কারো নাম বলেননি মিঠুন। তবে বিদ্রোহী ক্লাবগুলো সবার সঙ্গেই বসার আগ্রহ তার, “আমরা ওই প্যানেলটার সঙ্গে বসতে চাই যারা খেলতে আগ্রহী নয় বা খেলতে চাচ্ছেন না। আমরা এটা নিয়ে উনাদের সঙ্গে আলোচনা করব। যেন উনারা খেলোয়াড়দের কথা চিন্তা করে। যেন আমরা কিভাবে খেলা মাঠে গড়াতে পারি।”
বাংলাদেশের ক্রিকেটরাদের আয়ের বড় উৎস ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট। গত বছর এমনিতেই তাদের পারিশ্রমিক প্রায় অর্ধেক করে দিয়েছিল ক্লাবগুলো। এবার যদি লিগ না হয় তাহলে আর্থিকভাবে চরম বিপর্যয়ে পড়বেন তারা। আয়ের বড় উৎস প্রিমিয়ার লিগ হলেও তারা ঘরোয়া ক্রিকেটের অনান্য লিগগুলো খেলেন। কিন্তু প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ক্লাবগুলোর ক্রিকেটাররা খেলা না হলে স্রেফ বিপর্যয়ে পড়বেন।
মিঠুন সেই কথাগুলোই মনে করিয়ে দিলেন, “আপনারা জানেন, ঢাকা লিগে খেলোয়াড়, কোচ, বয়, ফিজিও ট্রেনার সব মিলে ২ হাজার প্লাস এখান থেকে আয় করে। ঢাকা লিগ তাদের একটা মেইন সোর্স। এই টুর্নামেন্ট যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ২ হাজার পরিবার হুমকির মুখে পড়বে। শেষ বছরও দেখেছেন ঢাকা লিগ যেভাবে হয় নরম্যালি সেভাবে কিন্তু হয়নি। বিভিন্ন ইস্যুর কারণে খেলোয়াড়রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এই বছরও এরকম কিছু হয় তাহলে আমার ডাউট খেলোয়াড়রা কতুটুক সারভাইব করতে পারবে। এই ইস্যুকে মাথায় রেখে উনাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা। উনারাও আশ্বস্ত করেছেন আমাদের সঙ্গে বসবেন। আশা করছি পজিটিভ কিছু জানাতে পারব।”
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ম ম ইকব ল
এছাড়াও পড়ুন:
তালা কেটে কার্যালয় থেকে বের হলেন রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতারা
জেলা কমিটি বাতিলের দাবিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির কয়েকজন নেতাকে ভেতরে রেখে কার্যালয়ে তালা দেন ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবিকারী একদল তরুণ। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে তাঁরা মিছিল নিয়ে নগরের গণকপাড়া এলাকায় ওই কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর তালা কেটে সেখান থেকে এনসিপির নেতাদের বের করা হয়।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল তরুণ রাজশাহী মহানগর এনসিপির কার্যালয়ের প্রবেশ করেন। এরপর উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকেন, ‘এই বাইরন, বাইরন। আজ থেকে মহানগর এনসিপির সব কার্যক্রম বন্ধ। রাজশাহীতে এনসিপিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হচ্ছে।’ এ ছাড়া ওই তরুণেরা ‘ইনকিলাব, ইনকিলাব, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ’, ‘অ্যাকশন, অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘দালালি না আজাদি, আজাদি, আজাদি’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে এনসিপির সংবাদ সম্মেলনে যাওয়া সাংবাদিকদের ‘তালা মেরে’ আটকে রাখার হুমকি০১ ডিসেম্বর ২০২৫একপর্যায়ে এনসিপির মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলী বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে তাঁরা শান্ত না হয়ে নিচে নেমে যান এবং নেতাদের কার্যালয় ত্যাগের জন্য ২০ মিনিট সময় বেঁধে দেন। এর কিছুক্ষণ পর রাত ৯টার দিকে নেতাদের ভেতরে রেখেই প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন তাঁরা। পরে রাত ১১টার দিকে এনসিপির কর্মীরা তালা কেটে অবরুদ্ধ আট নেতাকে বের করে আনেন।
তালা দেওয়ার পর এনসিপির কার্যালয়ের ফটকে বিক্ষুব্ধরা ক্রস চিহ্ন দিয়ে লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ বয়কট, দালাল বয়কট, বয়কট পুনর্বাসনকারী, বয়কট এনসিপি’।
রাজশাহী মহানগর এনসিপির ওই কার্যালয়ে শাখার সদস্যসচিবসহ আটজন গতকাল তালাবদ্ধ ছিলেন বলে জানান আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলী। তিনি বলেন, ‘গতকাল যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা জুলাই আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন। জেলা কমিটি তাঁরা মানতে পারছেন না। তাঁদের আন্দোলন যৌক্তিক। তবে এই কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই, কেন্দ্রীয় কমিটি এটি দিয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্র দ্রুত সিদ্ধান্ত নিক।’
জেলা কমিটি থেকে আরও ৫ জনের পদত্যাগএনসিপির রাজশাহী জেলার আহ্বায়ককে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে একই কমিটির আরও পাঁচ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা এই কমিটিকে বিলুপ্তের দাবি জানিয়ে গতকাল বুধবার পদত্যাগপত্র কেন্দ্রে পাঠান। এ নিয়ে জেলা কমিটির মোট ১১ জন নিজেদের পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন।
নতুন করে পদত্যাগকারী নেতারা হলেন আজিজুল ইসলাম, আসাদ, মিলন চন্দ্র ঘোষ, মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, নঈম ফকির। তাঁরা গত ২৯ নভেম্বর এনসিপির ঘোষিত রাজশাহী জেলা কমিটিতে সদস্যপদ পান।
পদত্যাগপত্রে ওই ৫ জন উল্লেখ করেন, ‘আমরা জুলাই আন্দোলনে সম্মুখের যোদ্ধা ছিলাম, স্বৈরাচার হটানোর জন্য আন্দোলন করলাম। অথচ সেই স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর সাইফুল ইসলামকে রাজশাহীর আহ্বায়ক করে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে এ কমিটি বাতিলের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
২৯ নভেম্বর রাতে ১১৪ সদস্যবিশিষ্ট এনসিপির রাজশাহী জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও রনিউর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরদিনই যুগ্ম সদস্যসচিব জিহান মোবারক সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে সাইফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, ‘যদি সাংগঠনিক আলোচনা বা কোনো পদ থাকে, তবেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বলা যাবে। আমার কোনো পদ ছিল না।’