সরকারি চাকরি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ সব ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী যুবরা’ বৈষম্যের শিকার উল্লেখ করে জাতীয় যুবনীতি ২০১৭ পুনর্মূল্যায়ন এবং তাঁদের বাস্তব অন্তর্ভুক্তি ও অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।

আজ রোববার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়: জাতীয় যুবনীতি ২০১৭-এর পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রান্তিক আদিবাসী যুবদের অন্তর্ভুক্তিকরণ, অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ ও অগ্রগতি’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এমন দাবি জানানো হয়।

সংলাপ আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম। এতে চাকমা, মারমা, গারো, খাসিয়া, ত্রিপুরা, সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর যুবরা অংশ নেন।

সংলাপে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘জাতীয় যুবনীতি কোনোভাবেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে না। এ নীতি শুধু আদিবাসী যুব নয়, প্রান্তিক বাঙালি যুবদেরও ধারণ করে না। তাই নীতিমালা পুনর্মূল্যায়ন করে আদিবাসী ও দেশের সব অঞ্চলের যুবদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ ও অগ্রগতি নিশ্চিত করা জরুরি।’

যুবদের উদ্দেশে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘জাতীয় যুবনীতিতে “ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী” কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে বলে হতাশ হয়ে নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাবা যাবে না। দেশের নাগরিক হিসেবে, যুবক হিসেবে যুবনীতিতে আদিবাসী যুবরাও আছে। পাশাপাশি নিজেদের স্বীকৃতির জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

খাগড়াছড়ির গুইমারার ঘটনা উল্লেখ করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, সহিংসতার পর পাহাড়ি কিশোর ও যুবকদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির কারণে অনেককে মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আদিবাসীদের সমান অংশগ্রহণ থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রব্যবস্থা কখনোই আদিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি। যত দিন পর্যন্ত রাষ্ট্র আদিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ মনে না করবে, তত দিন আদিবাসীদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে না।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা।

মূল প্রবন্ধের প্রস্তাবগুলো হলো প্রান্তিক আদিবাসী যুবসমাজের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে জাতীয় যুবনীতি পুনর্মূল্যায়ন করা। আদিবাসীদের আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি আর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। দ্বিভাষিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা চালু করা। ঐতিহ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করা। মানবাধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।

সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের অর্থ সম্পাদক অনন্যা দ্রং। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সহসভাপতি টনি চিরান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ত য় য বন ত ন শ চ ত কর য বদ র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্লগার অভিজিৎ হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পক্ষে গুমের অভিযোগ দিলেন তাঁর ভাই

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ করেছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মনের ভাই আব্দুল্লাহ আল হুসাইন। আজ মঙ্গলবার জমা দেওয়া অভিযোগে আব্দুল্লাহ আল হুসাইন দাবি করেছেন, ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোজাম্মেল হুসাইন ২০১৭ সালে গুমের শিকার হয়েছিলেন।

চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে আজকে পৃথক ১০টি গুমের অভিযোগ করা হয়েছে। সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তাঁরা এই অভিযোগ করেছেন। আলেপ র‍্যাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আজকে যে ১০ জন পৃথকভাবে গুমের অভিযোগ করেছেন, তাঁরা হলেন আব্দুল্লাহ আল হুসাইন (মোজাম্মেল হুসাইনের ভাই), ওবায়দুল হক, মো. রায়হান, ওবায়দুর রহমান, আল আমিন, আবু জাফর, শামীম মিয়া, লোকমান মিয়া, হাবিবুর রহমান ও বাহাউদ্দিন।

গুমের লিখিত অভিযোগ দায়ের শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ব্রিফিং করেন গুমের শিকার ব্যক্তিদের সংগঠন ভয়েস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ার্ড পারসনসের (ভয়েড) সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, মোজাম্মেল হুসাইনকে গুম করে অভিজিৎ হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছিল। তাঁকে দীর্ঘদিন গুম রেখে, ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়। অভিজিৎ হত্যা মামলায় মোজাম্মেল হুসাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো জেলহাজতে আছেন। মোজাম্মেলের পক্ষে তাঁর ভাই আব্দুল্লাহ আল হোসাইন অভিযোগ দিয়েছেন।

ব্রিফিংয়ে আব্দুল্লাহ আল হুসাইন বলেন, তাঁর ভাই মোজাম্মেল হোসেনকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গুম করা হয়। তাঁকে প্রায় ৫০ দিন গুম করে রাখা হয়। পরে একটি মামলায় সম্পৃক্ততা দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। গুম করে রাখার সময় মোজাম্মেলকে শারীরিক নির্যাতন করা, ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে লেখালেখি করার কারণে মোজাম্মেলের সঙ্গে এসব ঘটেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মনসহ পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। আব্দুল্লাহ আল হুসাইন বলেন, মোজাম্মেলকে দেওয়া সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তাঁরা আপিল করেছেন।

তিন মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা একটি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আব্দুর রউফ জবানবন্দি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ আজ তিনি এ মামলার ১৪তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন।

ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ এ মামলায় পাঁচ আসামি। তাঁদের মধ্যে সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার গ্রেপ্তার আছেন।

অন্যদিকে গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানে আলম খান আজ জবানবন্দি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২–এ তিনি এ মামলার ২৪তম সাক্ষী হিসেবে এই জবানবন্দি দেন। এ মামলায় আসামি ১৬ জন। এর মধ্যে আটজন গ্রেপ্তার এবং আটজন পলাতক।

এ ছাড়া জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে করা মামলায় বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহার সাক্ষ্য গ্রহণ আজ সম্পন্ন হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্লগার অভিজিৎ হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পক্ষে গুমের অভিযোগ দিলেন তাঁর ভাই