নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘যে নির্বাচন কমিশন একটা রাজনৈতিক দলকে তার প্রাপ্য মার্কাটা দেওয়ার সৎ সাহস দেখাতে পারে না, সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন এই বাংলাদেশে হতে পারে না।

এনসিপি প্রত্যাশা করে শাপলা প্রতীক পেয়েই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। যদি শাপলা প্রতীক দিতে এনসিপির সঙ্গে অন্যায় করা হয় তাহলে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।’

আজ রোববার দুপুরে দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দলের কর্মিসভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সারজিস আলম। এর আগে বেলা ১১টা থেকে দলের বিভিন্ন উপজেলার নেতা–কর্মীরা জড়ো হন মিলনায়তনে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা দলের নেতা–কর্মীদের তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন সারজিস আলম।

সারজিস আলম বলেন, ‘যাঁরা আইন পড়ান, আইন তৈরি করেন, এ রকম অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা জানিয়েছেন এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। নেই বলেই আমরা শাপলা প্রতীক চেয়েছি। আজ উনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) কোন মুখে এই কথা বলেন। যেদিন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলাম, সেদিনই এই প্রতীক চেয়েছিলাম। তাহলে বিগত কয়েক মাসে এই প্রতীক কেন তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন নাই। হয় তাঁরা খামখেয়ালিপনায় এটা অন্তর্ভুক্ত করেন নাই অথবা কারও প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সৎ সাহস দেখাতে পারেন নাই।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার বিষয়ে সারজিস বলেন, ‘জুলাই সনদ আপনারাও চান, আমরাও চাই। আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো নামকাওয়াস্তে একটা পেপারের মতো জুলাই সনদ চান, তাহলে ওই সনদ আমরা চাই না। আমরা জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি চাই। সেই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চাই। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সব সচেতন মানুষ এমনকি অন্য রাজনৈতিক দলের মানুষও চায় জুলাই সনদে যে সংস্কারগুলোর কথা বলা আছে সেটার বাস্তবায়ন।’

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চেয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘জুলাই সনদের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে রেখেছে। আমরা মনে করি অন্যান্য ৭০টি সংস্কারের চাইতে ওই সাতটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ওই জায়গাগুলোতে পলিসি কী হবে? যদি সনদটা গণভোটে পাস হয় তাহলে ওই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো হবে কি না, এটা অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশ্চয়তা দিতে হবে। যদি হয় সনদে আমাদের স্বাক্ষর করতে কোনো বাধা থাকবে না।’

সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন ও জুলাই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে এনসিপি নেতা সারজিস বলেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পূর্বে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরের প্রেক্ষাপট বা দিন ধার্য করা হয় নাই। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। পুরো বাংলাদেশের মানুষ যার যার অবস্থান থেকে স্বপ্ন দেখছিল সুন্দর আয়োজনের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবে, এই এই সংস্কারগুলো হবে। কিন্তু সনদ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দেখে মনে হলো যেন তাদের কোনো একটা চাওয়া আছে, খুব দ্রুত শেষ করার একটা তাড়া আছে। এই তাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কে এল, কে এল না, এসব চিন্তা না করে তারা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করল।’

সারজিস আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মানিক মিয়া এভিনিউতে লক্ষাধিক মানুষ নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব ছিল। তাহলে গেজেটেড জুলাই যোদ্ধা ও হাজারের মতো শহীদ পরিবারের জন্য কেন আসনের ব্যবস্থা হলো না।

সারজিস বলেন, ‘শুধু গতানুগতিক কয়েকটা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি-অফিসার-আমলাদের নিয়ে অনুষ্ঠান বানালেন, তাহলে যাঁদের নিয়ে এই অভ্যুত্থান হলো তাঁদের অংশগ্রহণটা কোথায়। এই কাজ জুলাই ঘোষণাপত্রের দিনও করা হয়েছে। শহীদ পরিবার কিংবা জুলাই যোদ্ধারা একটা ক্ষোভের জায়গা থেকে অপ্রত্যাশিত পদ্ধতিতে ওইখানে (অনুষ্ঠানস্থলে) প্রবেশ করেছে। যদিও পদ্ধতিটা তাঁদের ভুল ছিল। কিন্তু এটার দায়তো অন্তর্বর্তী সরকার এড়াতে পারে না। সেদিন প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাঁদের (জুলাই যোদ্ধাদের) যেভাবে উন্মুক্তভাবে পেটানো হয়েছে, আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়েছে, এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য লজ্জার। আমরা আহ্বান করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে ডেকে তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করার।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ অন ষ ঠ ন ক ত কর সরক র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

সাভারে বিউপি শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে জাবিতে বিক্ষোভ

সাভারে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিউপি) শিক্ষার্থীকে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান তারা। 

রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে পৃথকভাবে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।

আরো পড়ুন:

শিক্ষকদের ওপর হামলা হলে দায় সরকারের: আজিজী

ইবিতে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ, নিরাপত্তা শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

বিকেল ৪ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

এ সময় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল হোসাইন বলেন, “জুলাই পরবর্তী সময়ে আমরা এখনো আইনের শাসন ও শক্তিশালী বিচার বিভাগ নিশ্চিত করতে পারিনি। যারই ফলশ্রুতিতে দেশে অনবরত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাভারে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার বিচার চাই। ধর্ষণের বিচারকার্য গতিশীল করতে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিও আবশ্যক।”

আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহম্মদ বাবর বলেন, “সাভারে বিউপি শিক্ষার্থী গণধর্ষণের প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। গত ১৭ বছরের বিচারহীনতার কারণে দেশে ধর্ষণ ও অন্যায়-অনিয়ম অব্যাহত ছিল। জাবিতে ছাত্রলীগের মানিক এবং কিছুদিন আগে মোস্তাফিজ ধর্ষণ করেছিল। জুলাই পরবর্তী সময়ে ইন্টেরিম সরকারের মাধ্যমে আমরা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু এ সরকারও নারীদের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও আইন-শৃঙ্খলা উন্নতি করতে পারেনি। আমরা চাই, অনতিবিলম্বে সাভারের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।”

অন্যদিকে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন, অস্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড এবং বিরাজমান অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে জাকসুর ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “আমরা জানতে চাই, আর কত বোন ধর্ষিত ও নিপীড়িত হলে এই সরকার সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে যাবে? বিগত সময়ের ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ আমরা যখন কমিয়ে দিয়েছি, তখনই সরকার এ বিষয়ে শিথিল হয়ে পড়েছে। যদি ধর্ষণের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দৃশ্যমান না হয়, তাহলে আমাদের প্রতিবাদ জারি থাকবে। আমরা চাই আমাদের মা-বোনরা নিরাপদে নির্বিঘ্নে এ দেশে বসবাস করবেন। সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন- এই দাবি জানাই।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ