মৃত ভেবে ৮ ঘণ্টা হিমঘরে ফেলে রাখা মেয়েটির আঙুল নড়ছিল
Published: 15th, November 2025 GMT
গাজার রাঘাদ আল-আসারের বয়স মাত্র ১২ বছর। গত বছর তাদের বাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় রাঘাদের দুই বোন নিহত এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের সবাই কমবেশি আহত হয়েছিল। রাঘাদও মারা গেছে মনে করে দুই বোনের মৃতদেহের সঙ্গে তাকে গাজার একটি মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।
অচেতন রাঘাদকে মৃত ভেবে মর্গে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে হিমঘরে তার দেহ প্রায় আট ঘণ্টা পড়ে ছিল।
সম্প্রতি আল-জাজিরাকে নিজের সেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে গাজার ছোট্ট মেয়েটি।
রাঘাদ আল–আসার বলে, ‘অন্যদের মতো আমরাও আমাদের বাড়িতে বসে ছিলাম। হঠাৎ গুলি, যুদ্ধবিমান, ড্রোন সব আমাদের ওপর আছড়ে পড়ে।’
রাঘাদের বেঁচে যাওয়াকে অলৌকিক বললেও কম বলা হয়। সেদিন আরেক ফিলিস্তিনি বাবা নিজের ছেলেকে খুঁজতে মর্গে এসেছিলেন। তিনি মর্গের হিমঘরে থাকা মৃতদেহগুলো একে একে দেখতে শুরু করেন। হঠাৎ দেখেন, ঠান্ডা স্ল্যাবের ওপর পড়ে থাকা এক বালিকার আঙুল একটু একটু নড়ছে।
রাঘাদ বলে, ‘আমি দুই সপ্তাহ কোমায় ছিলাম। কোমা থেকে জেগে ওঠার পর, আমার পরিবার আমাকে বলে, আমাকে মর্গের রেফ্রিজারেটরে রাখা হয়েছিল।’
সেদিন আরেক ফিলিস্তিনি বাবা নিজের ছেলেকে খুঁজতে মর্গে এসেছিলেন। তিনি মর্গের হিমঘরে থাকা মৃতদেহগুলো একে একে দেখতে শুরু করেন। হঠাৎ দেখেন, ঠান্ডা স্ল্যাবের ওপর পড়ে থাকা এক বালিকার আঙুল একটু একটু নড়ছে।গত বছরের ৮ জুনের ওই হামলায় রাঘাদের দুই বোন মারা যায়। গুরুতর আহত বড় বোনের শারীরিক অবস্থা এখন তার চেয়েও খারাপ।
রাঘাদ বলে, ‘আমার পরিবারের বাকিরা সবাই আহত হয়েছেন। দুই বোন মারা গেছে। বড় বোনের অবস্থা আমার থেকেও খারাপ। সে এখন এক চোখে দেখতে পায় না, শরীর অনেকটা পুড়ে গেছে, গভীর ক্ষত রয়েছে ও পেটের পীড়াতেও আক্রান্ত।’
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেখানে ইসরায়েলের হামলায় এমন অনেক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। জাতিসংঘ গাজায় জাতিহত্যা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৬৪ হাজার শিশু নিহত বা পঙ্গু হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৯ হাজার ১৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।
ইসরায়েলের হামলায় নিহত এক ফিলিস্তিনি শিশুর মরদেহ। মধ্য গাজার আল-অউদা হাসপাতালে দাফনের প্রস্তুতির সময়, ২০ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ মঘর
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রহাণু ধরতে নতুন প্রযুক্তি
গাছ থেকে নারকেল, তাল কিংবা আম পেড়ে খেতে ভারী মজা। লম্বা লম্বা তালগাছ থেকে তাল পাড়তে অনেক কৌশল ব্যবহার করি আমরা। গাছের মাথা থেকে তাল ফেলে দিলে নিচে অনেক কসরত করে ধরতে হয়। কখনো বিশাল চাদর, কখনো বা খালি হাতেই তাল বা নারিকেল ধরতে চাই আমরা। এবার বিজ্ঞানীরা আকাশে ছুটে চলা গ্রহাণু ধরার একটি পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। বিভিন্ন গ্রহাণু বিরল ও সাধারণ সব ধরণের ধাতুসমৃদ্ধ। গ্রহাণুতে মানুষের পৌঁছানো বেশ কঠিন কাজ বলা যায়। বর্তমানে পৃথিবীতে যেহেতু ধাতুর খনির সম্পদ কমছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহাণু ধরে ধরে খনির চাহিদা মেটাতে চান বিজ্ঞানীরা। এমন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রান্সঅ্যাস্ট্রা নামের স্টার্টআপ।
গ্রহাণু ধরতে একটি ক্যাপচার ব্যাগ ডিজাইন ও পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই ব্যাগ ছোট পাথর থেকে শুরু করে বড় বড় আকারের গ্রহাণু পর্যন্ত সবকিছুকে ধরতে সক্ষম। এই বিশেষ ব্যাগ ব্যবহার করে মহাকাশের আবর্জনা অপসারণের সুযোগ তৈরি হতে পারে। ক্যালটেকের মহাকাশ প্রকৌশলী ও ট্রান্সঅ্যাস্ট্রার প্রতিষ্ঠাতা জোয়েল সার্সেল বলেন, গ্রহাণুতে খনন করা একটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং কাজ। গ্রহাণু খনন সমস্যা সমাধানের জন্য আসলে আরও চারটি সমস্যা সমাধান করতে হয়। গ্রহাণু শনাক্ত করে তাকে ধরা গুরুত্বপূর্ণ। এরপর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধাতু সংগ্রহের সুযোগ আছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গ্রহাণুকে ধরার বিশেষ ব্যাগ প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হয়েছে। ব্যাগটি পৃথিবীর মতো কক্ষপথে থাকা গ্রহাণুকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। বেশ কিছু গ্রহাণু আছে যা তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি মাত্র শত শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এসবে খনন করা যেতে পারে। ইতিমধ্যেই শত শত গ্রহাণুর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০২৮ সালে প্রথম গ্রহাণু ধরা হবে। ট্রান্সঅ্যাস্ট্রা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১.২ কোটি মার্কিন ডলার ও নাসা ও ইউএস স্পেস ফোর্স চুক্তি থেকে ১. দশমিক ৫ কোটি মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে।
এখন পর্যন্ত তিনটি গ্রহাণুতে খননের চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও এর পেছনে কয়েক শ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। খরচ কমানোর জন্য ক্যাপচার ব্যাগ ধারণা নিয়ে কাজ করছে। এই পরিকল্পনায় ব্যাগ নিয়ে সজ্জিত একটি মহাকাশযানকে লক্ষ্যবস্তুর কাছে পাঠানো হবে। লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি যাওয়ার পর মহাকাশযানের মাধ্যমে একটি বড় ও টেকসই ব্যাগ দিয়ে তা ধরে ফেলা হবে। যেহেতু গ্রহাণুর ভিতরের নানা উপাদান থাকে তাই নমনীয় ব্যাগটি সেই সব উপাদান সুরক্ষিত করবে।
ট্রান্সঅ্যাস্ট্রার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো গ্রহাণু খননের জন্য ক্যাপচার ব্যাগ ব্যবহার করা। সবচেয়ে বড় ব্যাগে ১০ হাজার টন ওজনের গ্রহাণু ক্যাপচার করা যাবে। ২০২৮ সালের মধ্যে খননের জন্য প্রথম গ্রহাণু ক্যাপচার বা ধরা হতে পারে। এছাড়াও মূল্যবান গ্রহাণুকে ধরার পাশাপাশি ক্যাপচার ব্যাগ মহাকাশের আবর্জনা হিসেবে অকেজো স্যাটেলাইট ধরতে ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র: এনডিটিভি