অ্যাডলফ হিটলার জিনগত সমস্যার কারণে সম্ভবত ‘ক্যালম্যান সিনড্রোমে’ ভুগেছিলেন। ফলে তাঁর বয়ঃসন্ধি শুরু হতে দেরি হয়। জন্মগত বিরল এই সমস্যার কারণে তাঁর হরমোনেও সমস্যা হয়েছিল। হিটলারের ডিএনএর নমুনা পরীক্ষা করে একটি তথ্যচিত্রে বিশেষজ্ঞরা এমন দাবি করেছেন।

নতুন তথ্যচিত্রটির নাম হিটলার’স ডিএনএ: ব্লুপ্রিন্ট অব আ ডিক্টেটর। তথ্যচিত্রটি আজ শনিবার যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ৪-এ সম্প্রচারিত হওয়ার কথা। এতে বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদেরা হিটলারের যৌনজীবনের বিকাশ এবং তাঁর মানসিক অবস্থার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি এতে তাঁর বংশধর নিয়েও নতুন তথ্য দেওয়া হয়েছে। তথ্যচিত্র–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গত বৃহস্পতিবার এ কথাগুলো জানিয়েছেন।

তথ্যচিত্রে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের জিনতত্ত্ববিদ টুরি কিং এবং নাৎসি জার্মানির বিশেষজ্ঞ ও দেশটির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের জ্যেষ্ঠ লেকচারার অ্যালেক্স কাই অন্যতম। তথ্যচিত্রের গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন টুরি কিং। এ প্রকল্পের জন্য তাঁর দল চার বছরের বেশি সময় কাজ করেছে। টুরি কিং জানান, ‘১৯৪৫ সালে হিটলার যে বাংকারের সোফায় বসে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন, সেই সোফার যে অংশে তাঁর রক্ত লেগে ছিল, সেটার একটি নমুনা আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। রক্তের এই নমুনার ডিএনএর সঙ্গে হিটলারের এক আত্মীয়ের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হয়েছে।’

কিন্তু তথ্যচিত্রে যে ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে, তা একই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অন্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা পর্যালোচনা করা কিংবা বিজ্ঞানবিষয়ক কোনো সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি। তাই এ প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, এমন বিজ্ঞানীরা এর সত্যতা মূল্যায়ন করতে পারেননি। তবে টুরি কিং জানান, তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদন একটি বিখ্যাত সাময়িকীতে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তা প্রকাশিত হবে।

এই জিনতত্ত্ববিদ বলেন, ‘কী খুঁজে পাব, শুরুতে তা আমরা বুঝতেই পারিনি। ধরে নিয়েছিলাম, আমরা হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর কোনো জিনোম সিকোয়েন্স করতে চলেছি। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল ছিল বিস্ময়কর।’

রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা

টুরি কিংয়ের গবেষণা দল হিটলারের রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা করে যেসব তথ্য পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রোক-টু নামের জিনের পরিবর্তন (মিউটেশন) লক্ষ করা গেছে। জিনের এ পরিবর্তনের কারণে হিটলার ক্যালম্যান সিনড্রোমে ভুগেছেন। পাশাপাশি জন্মগত হাইপোগোনাডোট্রপিক হাইপোগোনাডিজম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। ছেলেরা এ সমস্যায় ভুগলে বয়ঃসন্ধি শুরু হতে বিলম্বিত হতে পারে এবং অণ্ডকোষের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কম থাকায় এ সমস্যা হয়। এ সমস্যার কারণে লিঙ্গের গঠন স্বাভাবিক হলেও আকারে ছোট হতে পারে।

হিটলার যে সোফায় বসে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হয়, সেটা বর্তমানে রাশিয়ায় সংরক্ষিত আছে। ২০০৯ সালে সোফার বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা করে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট স্টেট মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির সাবেক প্রত্নতত্ত্ববিদ নিকোলাস এফ বেলান্তোনি। তিনি বলেন, আত্মহত্যার আগে হিটলার বন্দুক হাতে সোফার শেষভাগে বসে ছিলেন। বন্দুক চালিয়ে আত্মহত্যার পর তাঁর রক্ত সোফা ও পেছনের দেয়ালে ছিটকে পড়েছিল। তাই এই তথ্যচিত্রে যদি সেই সোফার উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তাহলে এই রক্ত হিটলারের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

জিন বিশ্লেষক টুরি কিংয়ের নতুন তথ্য হিটলারের ঐতিহাসিক নথির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করেন নাৎসি জার্মানি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স কাই। তিনি বলেন, ১৯২৩ সালে মিউনিখ বিয়ার হলের ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার পর হিটলার কারাভোগ করেন। এ সময় তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে তৈরি একটি নথিতে দেখা যায়, হিটলারের ক্রিপ্টোরকিডিজম ছিল। এ সমস্যার কারণে ডান পাশের অণ্ডকোষের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। নতুন তথ্যচিত্রে হিটলারের ক্যালম্যান সিনড্রোমের যে কথা বলা হয়েছে, সেটা আগের ধারণাকে আরও দৃঢ় করে।

হিটলার ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল বর্তমান অস্ট্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর হন। নাৎসি পার্টির নেতা হিসেবে ক্ষমতায় এসে কঠোর হাতে বিরোধী মত দমন শুরু করেন। হয়ে ওঠেন একনায়ক। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষলগ্নে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল বার্লিনে এক বাংকারে আত্মহত্যা করেন হিটলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ড এনএ এ সমস য পর ক ষ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জিনগত সমস্যায় হিটলারের বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত হয়েছিল 

অ্যাডলফ হিটলার জিনগত সমস্যার কারণে সম্ভবত ‘ক্যালম্যান সিনড্রোমে’ ভুগেছিলেন। ফলে তাঁর বয়ঃসন্ধি শুরু হতে দেরি হয়। জন্মগত বিরল এই সমস্যার কারণে তাঁর হরমোনেও সমস্যা হয়েছিল। হিটলারের ডিএনএর নমুনা পরীক্ষা করে একটি তথ্যচিত্রে বিশেষজ্ঞরা এমন দাবি করেছেন।

নতুন তথ্যচিত্রটির নাম হিটলার’স ডিএনএ: ব্লুপ্রিন্ট অব আ ডিক্টেটর। তথ্যচিত্রটি আজ শনিবার যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ৪-এ সম্প্রচারিত হওয়ার কথা। এতে বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদেরা হিটলারের যৌনজীবনের বিকাশ এবং তাঁর মানসিক অবস্থার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি এতে তাঁর বংশধর নিয়েও নতুন তথ্য দেওয়া হয়েছে। তথ্যচিত্র–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গত বৃহস্পতিবার এ কথাগুলো জানিয়েছেন।

তথ্যচিত্রে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের জিনতত্ত্ববিদ টুরি কিং এবং নাৎসি জার্মানির বিশেষজ্ঞ ও দেশটির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের জ্যেষ্ঠ লেকচারার অ্যালেক্স কাই অন্যতম। তথ্যচিত্রের গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন টুরি কিং। এ প্রকল্পের জন্য তাঁর দল চার বছরের বেশি সময় কাজ করেছে। টুরি কিং জানান, ‘১৯৪৫ সালে হিটলার যে বাংকারের সোফায় বসে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন, সেই সোফার যে অংশে তাঁর রক্ত লেগে ছিল, সেটার একটি নমুনা আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। রক্তের এই নমুনার ডিএনএর সঙ্গে হিটলারের এক আত্মীয়ের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হয়েছে।’

কিন্তু তথ্যচিত্রে যে ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে, তা একই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অন্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা পর্যালোচনা করা কিংবা বিজ্ঞানবিষয়ক কোনো সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি। তাই এ প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, এমন বিজ্ঞানীরা এর সত্যতা মূল্যায়ন করতে পারেননি। তবে টুরি কিং জানান, তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদন একটি বিখ্যাত সাময়িকীতে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তা প্রকাশিত হবে।

এই জিনতত্ত্ববিদ বলেন, ‘কী খুঁজে পাব, শুরুতে তা আমরা বুঝতেই পারিনি। ধরে নিয়েছিলাম, আমরা হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর কোনো জিনোম সিকোয়েন্স করতে চলেছি। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল ছিল বিস্ময়কর।’

রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা

টুরি কিংয়ের গবেষণা দল হিটলারের রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা করে যেসব তথ্য পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রোক-টু নামের জিনের পরিবর্তন (মিউটেশন) লক্ষ করা গেছে। জিনের এ পরিবর্তনের কারণে হিটলার ক্যালম্যান সিনড্রোমে ভুগেছেন। পাশাপাশি জন্মগত হাইপোগোনাডোট্রপিক হাইপোগোনাডিজম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। ছেলেরা এ সমস্যায় ভুগলে বয়ঃসন্ধি শুরু হতে বিলম্বিত হতে পারে এবং অণ্ডকোষের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কম থাকায় এ সমস্যা হয়। এ সমস্যার কারণে লিঙ্গের গঠন স্বাভাবিক হলেও আকারে ছোট হতে পারে।

হিটলার যে সোফায় বসে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হয়, সেটা বর্তমানে রাশিয়ায় সংরক্ষিত আছে। ২০০৯ সালে সোফার বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা করে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট স্টেট মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির সাবেক প্রত্নতত্ত্ববিদ নিকোলাস এফ বেলান্তোনি। তিনি বলেন, আত্মহত্যার আগে হিটলার বন্দুক হাতে সোফার শেষভাগে বসে ছিলেন। বন্দুক চালিয়ে আত্মহত্যার পর তাঁর রক্ত সোফা ও পেছনের দেয়ালে ছিটকে পড়েছিল। তাই এই তথ্যচিত্রে যদি সেই সোফার উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তাহলে এই রক্ত হিটলারের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

জিন বিশ্লেষক টুরি কিংয়ের নতুন তথ্য হিটলারের ঐতিহাসিক নথির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করেন নাৎসি জার্মানি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স কাই। তিনি বলেন, ১৯২৩ সালে মিউনিখ বিয়ার হলের ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার পর হিটলার কারাভোগ করেন। এ সময় তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে তৈরি একটি নথিতে দেখা যায়, হিটলারের ক্রিপ্টোরকিডিজম ছিল। এ সমস্যার কারণে ডান পাশের অণ্ডকোষের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। নতুন তথ্যচিত্রে হিটলারের ক্যালম্যান সিনড্রোমের যে কথা বলা হয়েছে, সেটা আগের ধারণাকে আরও দৃঢ় করে।

হিটলার ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল বর্তমান অস্ট্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর হন। নাৎসি পার্টির নেতা হিসেবে ক্ষমতায় এসে কঠোর হাতে বিরোধী মত দমন শুরু করেন। হয়ে ওঠেন একনায়ক। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষলগ্নে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল বার্লিনে এক বাংকারে আত্মহত্যা করেন হিটলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ