ঘোড়াঘাটে হয়ে গেল ‘খাদক’ প্রতিযোগিতা
Published: 15th, November 2025 GMT
ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু, সাপ খেলা, পাতা খেলাসহ দেশে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলা রয়েছে। তবে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে হয়ে গেলো ব্যতিক্রমধর্মী খাওয়ার প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগীতায় বিজয়ী হবেন সেরা খাদক বা হাঙ্গর।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে ঘোড়াঘাট পৌর শহরের ফুটবল মাঠে খাদক প্রতিযোগিতা হয়। এতে ৯ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন।
বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম জনকে ছাগল, দ্বিতীয় জনকে রাজহাঁস ও তৃতীয় জনকে একটি মোবাইল ফোন দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়। ভিন্নধর্মী এই খাওয়ার খেলা দেখতে হাজারও দর্শকের ভিড় জমে।
আয়োজকরা খেলোয়াড়দের ১৫ মিনিট সময় নির্ধারণ করে দেন। এই ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রতিযোগীকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাত, গরুর মাংস, ডাল ও ডিম খেয়ে শেষ করতে হবে।
এতে খাদক বা হাঙ্গর হিসেবে প্রথম স্থান অর্জন করেন সুলতান হোসেন, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন রাজিব এবং তৃতীয় হন স্বাধীন নামের এক প্রতিযোগী।
রাজিয়া সুলতানা নামের এক দর্শক বলেন, “আজকের এই খেলাটি আমি প্রথম দেখলাম। দেশে অনেক খেলা আছে, এমন খেলা এই প্রথম। অন্যরকম এই প্রতিযোগীতামূলক খেলা দেখতে খুবই ভাল লাগলো।”
রেজাউল করিম, আশরাফুল ইসলাম, বেলাল হোসেনসহ বহু দর্শক বলেন, মানুষ যে এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতোগুলো খাবার খেতে পারে, এই প্রথম আমরা দেখলাম। এই উপজেলার এধরনের খেলা আগে কখনও দেখিনি। আমরা চাই আয়োজকরা যেন প্রতিবছর এমন খেলার আয়োজন করে।
প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অধিকারী সুলতান হোসেন প্রথম পুরষ্কার হিসেবে ছাগল পেয়েছেন।
প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অধিকারকারী সুলতান হোসেন বলেন, “খাওয়া প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে পেরে খুব ভাল লাগছে। খাওয়ার প্রতি প্রচুর ভালবাসা আমার আছে। সবধরনের খাবার দ্রুত খেয়ে শেষ করতে পারি। এখানে এতগুলো দিয়েছে, যদি আরো দিতো তাও খেয়ে ফেলতাম।”
আয়োজক নূর মোহাম্মদ রিমন বলেন, “আমাদের এলাকায় বিভিন্ন ধরনের খেলার প্রতিযোগিতা রয়েছে। তবে আমরা আয়োজকরা একটু ভিন্নধর্মী খেলার আয়োজন করেছি। ঘোড়াঘাট পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। গত মাসের ২৩ তারিখ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে খাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু করি। তার মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে একজনকে জয়ী করা হয়। আজ ৯টি ওয়ার্ডের ৯ জনের মাঝে ফাইনাল খেলা হয়। তাদেরকে ১৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এরমধ্যে যে সবার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাত, গরুর মাংস, ডাল, ডিম খেয়ে শেষ করতে পেরেছেন তাকেই প্রথম বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।”
ঘোড়াঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল সাত্তার মিলন বলেন, “আমাদের এই উপজেলার এই প্রথম ভিন্নধর্মী প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হলো। বিজয়ীদের খাদক বা হাঙ্গর নাম উপাধি দেওয়া হয়েছে। এটি বেশ মজার।”
ঢাকা/মোসলেম/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’