কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ
Published: 15th, November 2025 GMT
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের উড়োজাহাজ চলাচল ৩৫ মিনিটের জন্য বন্ধ। ব্যাংক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, এক ঘণ্টা দেরি করে আসতে, যাতে রাস্তায় কোনো যানজট না লাগে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। কারণ, এদিন ছিল দেশটির তীব্র প্রতিযোগিতামূলক কলেজ ভর্তি পরীক্ষা, যা ‘সুনুং’ নামে পরিচিত।
সুনুং শুরু হয়েছিল সকাল থেকে। তবে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল দুপুর ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। কারণ, এই সময়ে ইংরেজি লিসনিং পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সময়ে জরুরি ফ্লাইট ছাড়া আর কোনো বিমান ওঠানামা করতে পারেনি।
ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সিউলের ইয়ংসান হাইস্কুলে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শিক্ষার্থীদের ভিড় শুরু হয়। ১৮ বছর বয়সী পরীক্ষার্থী কিম মিন-জে বলেন, ‘আমি কিছুটা নার্ভাস। কিন্তু প্রস্তুতি ভালো। সবচেয়ে ভালো করতে চাই।’ হাসতে হাসতে কিম যোগ করেন, ‘আমার চেয়ে বাবা-মা বেশি চিন্তিত।’
দক্ষিণ কোরিয়ায় কলেজ ভর্তি পরীক্ষা বা সুনুংয়ের ওপর নির্ভর করে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ভবিষ্যৎ পেশা, সামাজিক মর্যাদা—সবকিছুর পথ খুলে যায়। তাই কর্তৃপক্ষও এই পরীক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। প্রতিবছরের মতো এবারও পুলিশের দ্রুত সেবা দেখা গেছে। কোনো শিক্ষার্থী দেরি করলে তাঁকে মোটরসাইকেলে করে দ্রুত কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছে। চলতি বছর এই পরীক্ষায় ৫ লাখ ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন।
সুনুং পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোরিয়ায় কিছু কুসংস্কারও চালু আছে। যেমন এদিন কোনো পরীক্ষার্থী ‘সি-উইড’ স্যুপ খান না। কারণ, এতে নাকি পরীক্ষার ফল খারাপ হতে পারে। আর পরীক্ষার দিন সকালে সন্তানদের হলে পাঠিয়ে অনেকের মা-বাবা গির্জা বা বৌদ্ধমন্দিরে প্রার্থনা করতে চলে যান।
এক শিক্ষার্থীর ৫০ বছর বয়সী মা হান ইউ-না বলেন, ‘পরীক্ষার সময়সূচি মেনে আমিও পুরোটা সময় প্রার্থনা করব। ছেলে যখন বিরতি নেবে, আমিও নেব।’ তিনি ছেলেকে বলেন, ‘প্রিয় বৎস, শেষ পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রেখো। ভালোবাসা রইল।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ র
এছাড়াও পড়ুন:
দুই রকমের নাগলিঙ্গম ফুল
প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক পিজি হাসপাতাল) মধ্য দিয়ে হেঁটে পার হই আর মাঝেমধ্যে রাস্তার এপাশে একটি ও ওপাশে আরেকটি নাগলিঙ্গমগাছের দিকে তাকাই। বছরের নানা সময় দেখি সেই গাছে ফুল ফুটছে। ফুল ফোটার যেন কোনো নির্দিষ্ট মৌসুম নেই। একদিন সেসব ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে দেখলাম, দুটি গাছের ফুলের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। একটির ফুল ফিকে লাল, অন্যটির ফুল টকটকে মেরুন লাল। এর পর থেকে যেখানেই নাগলিঙ্গমগাছ দেখি, সেখানেই ফুলগুলোকে দেখি। প্রায় সব নাগলিঙ্গমগাছের ফুলগুলোই দেখি লাল বা ফিকে লাল। কিন্তু মেরুন বা ঘন লাল রঙের ফুল আর একটিও চোখে পড়েনি।
রমনা পার্কে আছে বেশ কটি নাগলিঙ্গমগাছ। তার প্রায় প্রতিটির ফুলকে দেখার চেষ্টা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের বাগানে আছে একটি প্রাচীন নাগলিঙ্গমগাছ। মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ভেতরে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে—সব জায়গার গাছেই প্রায় একই রকমের ফুল।
কিন্তু এই একটি গাছের ফুল এমন আলাদা হলো কেন? এ গাছটির বয়স তুলনামূলকভাবে কম, বয়সে নবীন। তাই গাছটি অন্যগুলোর চেয়ে পরে লাগানো। মনে প্রশ্ন এল, তাহলে কি নাগলিঙ্গমেরও ভিন্ন ভিন্ন জাত আছে, যেটিকে কখনো এভাবে চরিত্রায়ণ করা হয়নি, নামকরণও না। জানি না। নিসর্গী দ্বিজেন শর্মাও ঢাকায় নাগেশ্বর ফুল দেখতে দেখতে একদিন দুই রকমের নাগেশ্বর ফুল আবিষ্কার করেছিলেন। তেমনি নাগলিঙ্গমেরও কি দুটি জাতের গাছ ঢাকা শহরে আছে? এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা যেতে পারে।
তবে জাতটাত যা–ই হোক, দুটি জাতের ফুলই দেখতে চমৎকার। যেকোনো উদ্যানে এ গাছ থাকলে যিনি কখনো নাগলিঙ্গমের ফুল দেখেননি, তিনি অবশ্যই চমৎকৃত হবেন। কেননা এ গাছের মোটা গুঁড়ির চারদিক থেকে শলা বা কাঠির মতো কুঁড়িসহ নস্যি রঙের মঞ্জরিদণ্ডÐবেরিয়ে আসে। সেসব মঞ্জরিদণ্ডের আগায় একসঙ্গে একাধিক ফুল ফোটে। পর্যায়ক্রমে তাতে আরও ফুল ফুটতে থাকে। ফুলগুলোর ঘ্রাণে গাছের চারপাশ আমোদিত হয়ে ওঠে। রমনা পার্কে ভোরবেলায় যখন এসব গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে যাই, মনে হয় সেসব গাছে যেন স্বর্গের পরিরা আতর মেখে বসে আছে! গাছের গোড়ায় ঝুলছে ঘুঙুরের মতো সবুজাভ-হলদে কুঁড়ি আর লাল ফুল, সকাল হতেই খসতে শুরু করে ফুলের পাপড়িগুলো। বলধা উদ্যানের প্রাচীন নাগলিঙ্গমগাছের তলায় একবার দেখেছিলাম সেসব ঝরা ফুলের বিছানাকে, ফুলে ফুলে বিছানো ছিল গাছের তলা, কোনো মাটি দেখা যাচ্ছিল না।
নাগলিঙ্গমের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Couroupita guianensis ও গোত্র লেসিথিডেসি, পাতাঝরা প্রকৃতির বহুবর্ষী বৃক্ষ। গাছ ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। একটি বয়স্ক গাছে দিনে হাজারটা ফুলও ফুটতে পারে। নাগলিঙ্গমের ফুলগুলো বড্ড অদ্ভুত, সাধারণ কোনো ফুলের মতো গড়ন না। হঠাৎ দেখলে মনে হয় অসংখ্য দাঁত নিয়ে হাঁ করে আছে কোনো সাপের ফণা! জননাঙ্গটা সাদাটে দুই পাটি মাড়ির মতো, বক্রাকার সে অঙ্গের ওপরের অংশে গেঁথে আছে অসংখ্য হলদে- গোলাপি লোমের মতো পুরুষকেশর, নিচে রয়েছে ঘন লাল রঙের খাড়া কেশরগুচ্ছ। ফুলের সৌন্দর্যে ও সৌরভে কীটপতঙ্গরা ছুটে আসে। কিন্তু এসে খানিকক্ষণ ফুলে ঘোরাঘুরি করে নিরাশ হয়ে ফিরে যায়, নাগলিঙ্গম ফুল যে মধুশূন্য। কেবল কাঠ মৌমাছিরাই থেকে যায় ফুলের রেণু সংগ্রহের জন্য। ফুলের হলদে গুঁড়ার মতো রেণুই যে ওদের বাচ্চাদের খাবার, মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পাউরুটির মতো তা বাচ্চাদের খাওয়ায়। মাথা ও পিঠে মেখে সেসব রেণু বয়ে নিয়ে যায় ওরা। উড়ে আবার সে ফুল থেকে পাশের ফুলে যায়। ডানা ঝাপটায় আর ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। এতে লাভ হয় দুজনেরই। কাঠ মৌমাছি পায় ছানাদের খাবার, নাগলিঙ্গম ফুল পায় বীজ ও ফলগঠনের সাহায্য। প্রকৃতিতে এ এক চমৎকার পারস্পরিক মেলবন্ধন।
নাগলিঙ্গমের গাঢ় লাল ফুল