মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আফগানিস্তানের মতো ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’-এর দিকে না নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ক্যারিবীয় অঞ্চলে আমেরিকান সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মাদুরো এই আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

৬২ বছর বয়সী মাদুরো বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সরকারপন্থি সমাবেশে পৌঁছানোর জন্য জনতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, “আর চিরস্থায়ী যুদ্ধ নয়। আর অন্যায় যুদ্ধ নয়। আর লিবিয়া নয়। আর আফগানিস্তান নয়। শান্তি দীর্ঘজীবী হোক।”

মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সরাসরি কী বলবেন জানতে চাইলে মাদুরো বলেন, “আমার বার্তা হচ্ছে হ্যাঁ, শান্তি। হ্যাঁ, শান্তি।”

ভেনেজুয়েলার নেতার বক্তব্যের কয়েক ঘন্টা পরে হেগসেথ ভেনেজুয়েলার নেতার উপর আরো চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। তিনি মাদক-সন্ত্রাসীদের নির্মূলের জন্য অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার ঘোষণা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক মাসে ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক সন্ত্রাসীদের নির্মূলের নামে ২০টি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় ৮০ জনের মতো নিহত হয়েছে। তবে হামলাগুলো ‘মাদকবাহী নৌকায়’ হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করলেও আদতে মাছ ধরার নৌকাই হামলার শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

আনুষ্ঠানিকভাবে বিশাল মার্কিন রণতরী মোতায়েনের বিষয়টি ট্রাম্প প্রশাসনের ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর অংশ এবং ল্যাটিন আমেরিকার মাদক কার্টেলগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন এবং ফেন্টানাইল পাচার বন্ধ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। তবে ভেনেজুয়েলা কোকেন উৎপাদনকারী নয়। কোকেন উৎপাদন ও পাচারের কাজ প্রায় সম্পূর্ণরূপে বলিভিয়া, কলম্বিয়া এবং পেরুতে করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, ভেনেজুয়েলায় ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটাতে এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ আমেরিকায় নিজেদের প্রভাব সুদৃঢ় করতেই ট্রাম্প প্রশাসন এই কাজ করছে।
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

১১ কিলোমিটার সড়কে চলে ২৩ হাজার তিন চাকার যান

সরকারি ছুটির দিনে কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পৌরসভার হোটেল-মোটেল জোন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়কে তখন দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া কিংবা অবসর বিনোদনের জন্য কোথাও যেতে চাইলে লম্বা সময় বসে থাকতে হয় সড়কে। আর এমন যানজটের অন্যতম কারণ তিন চাকার যানবাহন। তিন চাকার এসব যানবাহন টমটম ও ইজিবাইক নামে পরিচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভার ১১ কিলোমিটার সড়কে ২৩ হাজারের বেশি তিন চাকার যান চলাচল করে। এর বাইরে দূরপাল্লার আরও চার শতাধিক গণপরিবহন, পাঁচ হাজারের বেশি মিনিবাস, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কার-জিপ চলাচল করে। টানা কয়েক দিনের ছুটিতে যখন কক্সবাজারে পাঁচ থেকে ছয় লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে, তখন যানবাহনের সংখ্যা আরও চার থেকে পাঁচ হাজার বেড়ে যায়। ফলে যানজট সীমাহীন হয়ে দাঁড়ায়।

শহরের বাইরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে মাত্র দুই শতাধিক বাস রাখার জায়গা রয়েছে। অবশিষ্ট গাড়ি ফেলে রাখা হয় বাইপাস, কলাতলী ও সৈকত সড়কের দুই পাশে। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ে। তা ছাড়া সরু সড়কের দুই পাশ ও ফুটপাত দখল করে হাজারো ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানোর কারণে পথচারীদের হাঁটাচলার জায়গাও থাকে না। সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে হয় যাত্রীদের।

সবচেয়ে বেশি যানজট ও ভোগান্তি দেখা দেয় শহরের অভ্যন্তরে প্রধান সড়কের ঝাউতলা, বিমানবন্দর সড়কের মোড় ঘুমগাছতলা, পানবাজার সড়কের ভোলাবাবুর পেট্রলপাম্প এলাকা, ফায়ার সার্ভিস এলাকা, বাজারঘাটা, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, হাসপাতাল সড়ক, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, কালুরদোকান এলাকা, তারাবুনিয়ারছড়া, খুরুশকুল রাস্তার মোড়, রুমালিয়ারছড়া, কলাতলীর বাইপাস মোড় ও সুগন্ধা সড়ক এলাকায়।

যে কারণে বাড়ছে তিন চাকার যান

কক্সবাজার শহরে তিন হাজার ইজিবাইক চলতে পারে। কিন্তু এখন চলছে ২৩ হাজার। গত এক বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে এসব যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছৈয়দুল হক আজাদ বলেন, এক যুগ আগে শহরে চলাচলের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তিন হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছিল। সম্প্রতি আরও ৫০০ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু শহরের অভ্যন্তরে চলাচল করছে ২০ হাজারের বেশি। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইজিবাইক জব্দ করা হলেও গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

এক যুগ আগে শহরে চলাচলের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তিন হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছিল। সম্প্রতি আরও ৫০০ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু শহরের অভ্যন্তরে চলাচল করছে ২০ হাজারের বেশি। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইজিবাইক জব্দ করা হলেও গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।—ছৈয়দুল হক আজাদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কক্সবাজার পৌরসভা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে সড়কে হঠাৎ ইজিবাইক নামানোর হিড়িক পড়ে। তখন সড়কে ট্রাফিক পুলিশও ছিল না। ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয় ও পুলিশের কয়েকটি তল্লাশিচৌকিতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। তিন মাস পর ট্রাফিক পুলিশ মাঠে নেমে অবৈধ যানবাহন জব্দ করা শুরু করলে চালকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এর পর থেকে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ৬২ জন পুলিশ সড়কের নিরাপত্তা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। কিন্তু ধারণক্ষমতার ১০ গুণ ইজিবাইক চলাচলের কারণে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে পুলিশ লাইসেন্স পাওয়া ইজিবাইকের চালকদের ডেটাবেজের আওতায় নিয়ে এসেছে। অবৈধ যানবাহনের চলাচল বন্ধে যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে।

কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, তিন চাকার যান এতই বেড়েছে যে সড়কে হাঁটার জায়গাও পাওয়া যায় না। শহরের লালদীঘিরপাড় থেকে বার্মিজ মার্কেট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক যেতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সও প্রতিবন্ধকতায় পড়ে। যানজটের কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, তিন চাকার যানগুলো সারা দিন যাত্রীর আশায় সড়কে ঘুরতে থাকে। যখন যেখানে ইচ্ছা দাঁড়িয়ে থাকে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ লোকজন যান চালানোর কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।

বিদ্যুতের ঘাটতি

কক্সবাজার শহরে চলাচল করা তিন চাকার গাড়িগুলোয় ব্যাটারি চার্জ দিতে দৈনিক দুই থেকে তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে বলে জানান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, শহরের নানা জায়গায় গ্যারেজে এসব যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টমটম ও মিশুক গাড়ির ব্যাটারি চার্জের জন্য শহরের ঝাউতলা, গাড়ির মাঠ, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলী, বাস টার্মিনাল, সমিতিপাড়া, কলাতলী, নাজিরারটেকসহ বিভিন্ন স্থানে তিন শতাধিক গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। কিছু অসাধু গ্যারেজের মালিক অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ টেনে ব্যাটারি চার্জ দিচ্ছেন।

সমিতিপাড়ার টমটমের চালক আকবর আলী (৩৪) বলেন, আগে সাগরে মাছ ধরতেন। গত ৪ অক্টোবর মাছ আহরণের ওপর ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে তাঁর আয়রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি ইজিবাইক চালাচ্ছেন। দৈনিক ১ হাজার ৪০০ টাকা আয় হলেও টমটমের ভাড়া ৬০০ টাকা মালিককে পরিশোধ করতে হয়। ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ দিতে গ্যারেজের মালিককে দিতে হয় ১৫০ টাকা।

যানজট কমানোর পদক্ষেপ

পর্যটকসহ যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি দূর, নিরাপত্তা ও গণপরিবহনের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসে জেলা পুলিশের উদ্যোগে দেশের প্রথম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘অনলাইন বাস টার্মিনাল’ চালু করা হয়। গত এক বছরে এর সাফল্য অনেক দাবি করে জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দীন শাহীন বলেন, অনলাইন বাস টার্মিনালে এ পর্যন্ত কক্সবাজারে চলাচলরত ৭৩টি আন্তজেলা বাস পরিবহনের শিডিউল অ্যাপসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তা ছাড়া দেশের ১০৫টি আন্তজেলা পরিবহনের ১ হাজার ৭৬৮টি বাস, ১ হাজার ৬৮০ চালক ও ২ হাজার ৩৮৬ গাইডের তথ্য অ্যাপসে সন্নিবেশ করা হয়েছে। ডিজিটাল এই প্ল্যাটফর্মে যাত্রী সাধারণদের ঘরে বসে সব পরিবহনের টিকিট প্রাপ্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। শহরের ভেতরে শিক্ষাসফর কিংবা পিকনিকে আসা বাস প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের পূর্বানুমতি লাগে। গত এক বছরে অ্যাপস ব্যবহার করে শহরে প্রবেশ করেছে প্রায় ১১ হাজার বাস। এতে যানজট কিছুটা কমেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ