আড়াল থেকে আলোতে আসা তাইজুলের উইকেট শৃঙ্গে ওঠার অপেক্ষা
Published: 15th, November 2025 GMT
ততদিনে সাকিব আল হাসান সুপারস্টার। ধুমকেতু হয়ে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ধ্রুবতারার জায়গাটি দখল করে নিয়েছেন। আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের ‘প্রয়োজন’ আছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল!
তখনকার, মানে ২০১৪ সালের প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের মনে আছে তাইজুলকে কেন তিনি টেস্ট দলে নিয়েছিলেন, ‘‘সাকিব তখন নিষেধাজ্ঞায় ছিল। রাজ্জাককে আমরা নিয়মিত টেস্ট ক্রিকেটে বিবেচনায় করছিলাম না। আমাদের একজন বাঁহাতি স্পিনার প্রয়োজন ছিল। ওই মৌসুমে তাইজুল জাতীয় ক্রিকেট লিগে অসাধারণ খেলেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে এ দলের সফরেও ওকে পাঠিয়েছিলাম। ভালো করেছিল বলেই তাকে জাতীয় দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিয়ে যাই।’’
আরো পড়ুন:
ইডেনে বুমরার আগুনে স্পেল, প্রথম দিনেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে ভারত
ম্যাচ সেরা হয়েও যে আক্ষেপ মাহমুদুলের
কখনো সাকিবের অনুপস্থিতিতি, কখনো সাফল্যের পার্শ্ব-বোলার হিসেবে তাইজুল বিবেচিত হয়ে আসছিলেন। নায়ক হয়েও থাকতেন আড়ালে। পাদপ্রদীপের আলো বাইরে। সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংকে তো একবার বলেওছিলেন, ‘‘আমাদের আরেকজন ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্পিনার আছে সাকিব, যে তাইজুলের আগে থাকে। তাই তাইজুল সবসময় সামনে থাকে না। কিন্তু রেকর্ড তার পক্ষ কথা বলছে। আপনারা হয়ত সে ভালো করলেই শুধু কথা বলেন।’’
২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে তার টেস্ট অভিষেক। ক্যারিবীয়ান দ্বীপপুঞ্জে প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করে পেয়ে যান ফাইফার। অভিষেকের আগে ওই বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে ২২.
২০১৪ থেকে ২০২৫ সময় গড়িয়েছে অনেক। তাইজুলও নিজের অবস্থান করেছেন শক্তপোক্ত। তবে আড়াল থেকে তাইজুল আলোতে আসতে পেরেছেন কয়েক বছরই হলো। প্রশ্ন উঠে, বিতর্কও হয়, সাকিবের কারণে কী আড়ালেই ছিলেন না তাইজুল? খানিকটাও কী অভাগা তাইজুল?
তাকে খুব কাছ থেকে স্থানীয় কোচ সোহল ইসলাম তা বিশ্বাস করেন না। তার দাবি তাইজুলও এভাবে চিন্তা করেন না,‘‘না, না। এইগুলো চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই।’’ তাইজুলের ভাবনা এরকম, ‘‘ও যেটা করতো, সবসময় প্রস্তুত থাকতো। সুযোগ পেলেই খেলবো এই ভাবনাতে থাকতো। পারফর্ম করবো, সর্বোচ্চটা চেষ্টা করবো। ও প্রথম দিকে যখন খেলতো বা খেলতো না, এটা কোন কিছু ম্যাটার করত না। সবসময় প্রস্তুত থাকতো যে, আমি যখন খেলবো, তখন যেন আমি দলের জন্য খেলতে পারি, পারফর্ম করতে পারি। প্রথম দিকে একটু কম সুযোগ পেয়েছে, পরের দিকে বেশি পেয়েছে। সাকিবের সঙ্গেও খেলেছে। ও যদি প্রথম থেকেই চিন্তা করতো, সাকিব ভাই কখন বসবে, থাকবে না তখন আমি খেলবো, তাহলে কি ক্যারিয়ারটা এত বড় হতো?’’
তাইজুলের অভিষেকের আগে সাকিব ৩৪ টেস্ট খেলেছেন। তার নেওয়া ২৪৬ উইকেটের ১২২টিই ওই সময়ে পেয়েছিলেন। তাইজুলের আগমণের পর বাকি ১২৪ উইকেট পেয়েছেন ৩৭ টেস্টে। সেই সাকিবকে এখন টেস্টে ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় তাইজুল। ২৪২ উইকেট নিয়ে তাইজুল আছেন দুই নম্বরে। ১৯ নভেম্বর ঢাকায় শুরু হচ্ছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট পেলে সাকিবকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডটা নিজের করে নেবেন তাইজুল।
রেকর্ডের দিকে তাইজুলের নজর নেই তা জোর গলায় বললেন সোহেল ইসলাম,‘‘এইটা (রেকর্ড) নিয়ে চিন্তিত না। পাঁচটা উইকেট লাগবে, এইটা আমিও জানি না, এটা তাইজুলও নিশ্চিতভাবে জানে না। জিনিসটা হচ্ছে যে, আপনি ম্যাচ খেলবেন, আপনি দলের জন্য কন্ট্রিবিউট করতে পারছেন কিনা, দলের যে চাহিদা, ওইটা আপনি পূরণ করতে পারছেন কিনা—এইটা হচ্ছে প্রথম। আমি এই সাফল্য চাই, আমার ঐ সর্বোচ্চ উইকেট পেতে হবে-পারফর্ম করলে এগুলো আপনা আপনি হবে।’’
বাংলাদেশের তিন স্পিনার টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। ২০০ উইকেট পেতে সাকিবের লেগেছিল ৫৪ টেস্ট, তাইজুল সেটা ছুঁয়েছেন ৪৮ টেস্টেই। মিরাজের লেগেছিল ৫২ টেস্ট। সাকিব থাকায় কম্বিনেশনের কারণে টেস্টের একাদশে তাইজুল সুযোগ পেতেন না অনেক সময়। দেশের মাটিতে সুযোগ হলেও বাইরে একেবারে কালেভাদ্রে।
সাকিবের সঙ্গে ৭১ টেস্টে মাত্র ২৬টিতে ছিলেন তাইজুল। যার ২২টি দেশের মাঠে। ৪টি বাইরে। যেই ৪টি দেশের বাইরে তার মধ্যে ২টি ভারতে এবং ১টি করে শ্রীলঙ্কায় ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। পারফরম্যান্সের বিচারে দুইজন কাছাকাছি অবস্থান করছেন। একসঙ্গে খেলা ২৬ টেস্টে সাকিবের উইকেট সংখ্যা ১০২টি। তাইজুলের ৯৪টি। দেশে সাকিবের উইকেট ৮৪টি। তাইজুলের ৮৫টি। অ্যাওয়েতে সাকিবের শিকার ১৮টি। তাইজুলের ৯টি।
সাকিবের সঙ্গে খেলায় তাইজুল যতটা কার্যকারী ভূমিকা রাখেন, অনুপস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে তাইজুল ততটাই ধ্রুপদী। ৩০ ম্যাচে ৫১ ইনিংসে ১৪৮ উইকেট পেয়েছেন ২৯.৬২ গড়ে। ক্যারিয়ারের ১৭ ফাইফারের ১৩টিই পেয়েছেন সাকিববিহীন ম্যাচে। পরিসংখ্যানই বলে দেয়, সাকিবের ছায়া থেকে বেরিয়ে তাইজুল হয়ে উঠেন আরো দ্যোদিপ্যমান। দায়িত্বের মশাল থাকে তার হাতেই। হতে হয় স্পিন আক্রমণের নেতা।
স্বীকৃত ক্রিকেটে পরিসংখ্যান কেবলই একটি সংখ্যা তা মনে করিয়ে দিলেন সোহেল ইসলাম। দলের চাহিদা তাইজুল ঠিকঠাক পূরণ করতে পারছেন কিনা সেদিকেই নজর দিতে বললেন, ‘‘সাকিব ভাই এত উইকেট পাচ্ছে, আমাকে এত উইকেট পাইতে হবে—বিষয়গুলো এরকম না। জিনিসটা হচ্ছে যে আমার আসলে রোলটা কী ছিল? দলের পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলিং করা, দলের চাহিদা অনুযায়ী অ্যাটাকিং করা, রান আটকে রাখা আবার ভিন্ন ভিন্ন কৌশল থাকে…এগুলো আসলে সব বলেও বোঝানো যায় না। এই জায়গাগুলোতে আমরা এইভাবে দেখি জিনিসগুলো। এতদিন ধরে পারফর্ম করছে এবং ধারাবাহিকভাবে উপরের দিকে আছে। নিশ্চিতভাবেই প্রতিভাবান না হলে পারতো না। আমি বলব যে ম্যাচিউরিটির দিক থেকে কিন্তু ও অনেক আগায় আছে।’’
তাইজুলের প্রশংসা করে সোহেল ইসলাম যোগ করেন, ‘‘লাল বলের ক্ষেত্রে যেটা লাগে, ওর যে বোলিংয়ের যে প্যাটার্ন, যে গতি ও ছন্দ…অনেকক্ষণ লম্বা সময় ধরে একটা ভালো জায়গায় বল করতে হয়। ও রিদমিক বোলার। ও ভালো জায়গা বল করে। আর হচ্ছে, ছোট ছোট টেকনিক্যাল বা ট্যাকটিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্ট, এগুলা হচ্ছে বিভিন্ন উইকেট অনুযায়ী করতে পারে। তাইজুলকে দেখলে এরকম মনে হবে না কিন্তু তার গেম সেন্স অনেক ভালো। ও খেলা বুঝে। কাকে, কোথায়, কখন, কিভাবে করতে হবে, কত পেসে বল করতে হবে—এই জিনিসগুলা বুঝে।’’
আড়াল থেকে আলোতে চলে এসেছেন তাইজুল। সাকিবকে টপকে কিছুদিনের মধ্যেই তাইজুল উইকেটের শৃঙ্গে উঠবেন। নিশ্চিতভাবেই এই সময়টার জন্যই তার এতোদূর আসা।
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ইজ ল র ন ত ইজ ল প রফর ম উইক ট র উইক ট প ল ইসল ম র কর ড প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
আড়াল থেকে আলোতে আসা তাইজুলের উইকেট শৃঙ্গে ওঠার অপেক্ষা
ততদিনে সাকিব আল হাসান সুপারস্টার। ধুমকেতু হয়ে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ধ্রুবতারার জায়গাটি দখল করে নিয়েছেন। আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের ‘প্রয়োজন’ আছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল!
তখনকার, মানে ২০১৪ সালের প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের মনে আছে তাইজুলকে কেন তিনি টেস্ট দলে নিয়েছিলেন, ‘‘সাকিব তখন নিষেধাজ্ঞায় ছিল। রাজ্জাককে আমরা নিয়মিত টেস্ট ক্রিকেটে বিবেচনায় করছিলাম না। আমাদের একজন বাঁহাতি স্পিনার প্রয়োজন ছিল। ওই মৌসুমে তাইজুল জাতীয় ক্রিকেট লিগে অসাধারণ খেলেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজে এ দলের সফরেও ওকে পাঠিয়েছিলাম। ভালো করেছিল বলেই তাকে জাতীয় দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিয়ে যাই।’’
আরো পড়ুন:
ইডেনে বুমরার আগুনে স্পেল, প্রথম দিনেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে ভারত
ম্যাচ সেরা হয়েও যে আক্ষেপ মাহমুদুলের
কখনো সাকিবের অনুপস্থিতিতি, কখনো সাফল্যের পার্শ্ব-বোলার হিসেবে তাইজুল বিবেচিত হয়ে আসছিলেন। নায়ক হয়েও থাকতেন আড়ালে। পাদপ্রদীপের আলো বাইরে। সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংকে তো একবার বলেওছিলেন, ‘‘আমাদের আরেকজন ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্পিনার আছে সাকিব, যে তাইজুলের আগে থাকে। তাই তাইজুল সবসময় সামনে থাকে না। কিন্তু রেকর্ড তার পক্ষ কথা বলছে। আপনারা হয়ত সে ভালো করলেই শুধু কথা বলেন।’’
২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে তার টেস্ট অভিষেক। ক্যারিবীয়ান দ্বীপপুঞ্জে প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করে পেয়ে যান ফাইফার। অভিষেকের আগে ওই বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে ২২.৭ গড়ে ৫৫ উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল। এছাড়া ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুটি চারদিনের ম্যাচে তার শিকার ছিল ৯ উইকেট।
২০১৪ থেকে ২০২৫ সময় গড়িয়েছে অনেক। তাইজুলও নিজের অবস্থান করেছেন শক্তপোক্ত। তবে আড়াল থেকে তাইজুল আলোতে আসতে পেরেছেন কয়েক বছরই হলো। প্রশ্ন উঠে, বিতর্কও হয়, সাকিবের কারণে কী আড়ালেই ছিলেন না তাইজুল? খানিকটাও কী অভাগা তাইজুল?
তাকে খুব কাছ থেকে স্থানীয় কোচ সোহল ইসলাম তা বিশ্বাস করেন না। তার দাবি তাইজুলও এভাবে চিন্তা করেন না,‘‘না, না। এইগুলো চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই।’’ তাইজুলের ভাবনা এরকম, ‘‘ও যেটা করতো, সবসময় প্রস্তুত থাকতো। সুযোগ পেলেই খেলবো এই ভাবনাতে থাকতো। পারফর্ম করবো, সর্বোচ্চটা চেষ্টা করবো। ও প্রথম দিকে যখন খেলতো বা খেলতো না, এটা কোন কিছু ম্যাটার করত না। সবসময় প্রস্তুত থাকতো যে, আমি যখন খেলবো, তখন যেন আমি দলের জন্য খেলতে পারি, পারফর্ম করতে পারি। প্রথম দিকে একটু কম সুযোগ পেয়েছে, পরের দিকে বেশি পেয়েছে। সাকিবের সঙ্গেও খেলেছে। ও যদি প্রথম থেকেই চিন্তা করতো, সাকিব ভাই কখন বসবে, থাকবে না তখন আমি খেলবো, তাহলে কি ক্যারিয়ারটা এত বড় হতো?’’
তাইজুলের অভিষেকের আগে সাকিব ৩৪ টেস্ট খেলেছেন। তার নেওয়া ২৪৬ উইকেটের ১২২টিই ওই সময়ে পেয়েছিলেন। তাইজুলের আগমণের পর বাকি ১২৪ উইকেট পেয়েছেন ৩৭ টেস্টে। সেই সাকিবকে এখন টেস্টে ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় তাইজুল। ২৪২ উইকেট নিয়ে তাইজুল আছেন দুই নম্বরে। ১৯ নভেম্বর ঢাকায় শুরু হচ্ছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট পেলে সাকিবকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডটা নিজের করে নেবেন তাইজুল।
রেকর্ডের দিকে তাইজুলের নজর নেই তা জোর গলায় বললেন সোহেল ইসলাম,‘‘এইটা (রেকর্ড) নিয়ে চিন্তিত না। পাঁচটা উইকেট লাগবে, এইটা আমিও জানি না, এটা তাইজুলও নিশ্চিতভাবে জানে না। জিনিসটা হচ্ছে যে, আপনি ম্যাচ খেলবেন, আপনি দলের জন্য কন্ট্রিবিউট করতে পারছেন কিনা, দলের যে চাহিদা, ওইটা আপনি পূরণ করতে পারছেন কিনা—এইটা হচ্ছে প্রথম। আমি এই সাফল্য চাই, আমার ঐ সর্বোচ্চ উইকেট পেতে হবে-পারফর্ম করলে এগুলো আপনা আপনি হবে।’’
বাংলাদেশের তিন স্পিনার টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। ২০০ উইকেট পেতে সাকিবের লেগেছিল ৫৪ টেস্ট, তাইজুল সেটা ছুঁয়েছেন ৪৮ টেস্টেই। মিরাজের লেগেছিল ৫২ টেস্ট। সাকিব থাকায় কম্বিনেশনের কারণে টেস্টের একাদশে তাইজুল সুযোগ পেতেন না অনেক সময়। দেশের মাটিতে সুযোগ হলেও বাইরে একেবারে কালেভাদ্রে।
সাকিবের সঙ্গে ৭১ টেস্টে মাত্র ২৬টিতে ছিলেন তাইজুল। যার ২২টি দেশের মাঠে। ৪টি বাইরে। যেই ৪টি দেশের বাইরে তার মধ্যে ২টি ভারতে এবং ১টি করে শ্রীলঙ্কায় ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। পারফরম্যান্সের বিচারে দুইজন কাছাকাছি অবস্থান করছেন। একসঙ্গে খেলা ২৬ টেস্টে সাকিবের উইকেট সংখ্যা ১০২টি। তাইজুলের ৯৪টি। দেশে সাকিবের উইকেট ৮৪টি। তাইজুলের ৮৫টি। অ্যাওয়েতে সাকিবের শিকার ১৮টি। তাইজুলের ৯টি।
সাকিবের সঙ্গে খেলায় তাইজুল যতটা কার্যকারী ভূমিকা রাখেন, অনুপস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে তাইজুল ততটাই ধ্রুপদী। ৩০ ম্যাচে ৫১ ইনিংসে ১৪৮ উইকেট পেয়েছেন ২৯.৬২ গড়ে। ক্যারিয়ারের ১৭ ফাইফারের ১৩টিই পেয়েছেন সাকিববিহীন ম্যাচে। পরিসংখ্যানই বলে দেয়, সাকিবের ছায়া থেকে বেরিয়ে তাইজুল হয়ে উঠেন আরো দ্যোদিপ্যমান। দায়িত্বের মশাল থাকে তার হাতেই। হতে হয় স্পিন আক্রমণের নেতা।
স্বীকৃত ক্রিকেটে পরিসংখ্যান কেবলই একটি সংখ্যা তা মনে করিয়ে দিলেন সোহেল ইসলাম। দলের চাহিদা তাইজুল ঠিকঠাক পূরণ করতে পারছেন কিনা সেদিকেই নজর দিতে বললেন, ‘‘সাকিব ভাই এত উইকেট পাচ্ছে, আমাকে এত উইকেট পাইতে হবে—বিষয়গুলো এরকম না। জিনিসটা হচ্ছে যে আমার আসলে রোলটা কী ছিল? দলের পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলিং করা, দলের চাহিদা অনুযায়ী অ্যাটাকিং করা, রান আটকে রাখা আবার ভিন্ন ভিন্ন কৌশল থাকে…এগুলো আসলে সব বলেও বোঝানো যায় না। এই জায়গাগুলোতে আমরা এইভাবে দেখি জিনিসগুলো। এতদিন ধরে পারফর্ম করছে এবং ধারাবাহিকভাবে উপরের দিকে আছে। নিশ্চিতভাবেই প্রতিভাবান না হলে পারতো না। আমি বলব যে ম্যাচিউরিটির দিক থেকে কিন্তু ও অনেক আগায় আছে।’’
তাইজুলের প্রশংসা করে সোহেল ইসলাম যোগ করেন, ‘‘লাল বলের ক্ষেত্রে যেটা লাগে, ওর যে বোলিংয়ের যে প্যাটার্ন, যে গতি ও ছন্দ…অনেকক্ষণ লম্বা সময় ধরে একটা ভালো জায়গায় বল করতে হয়। ও রিদমিক বোলার। ও ভালো জায়গা বল করে। আর হচ্ছে, ছোট ছোট টেকনিক্যাল বা ট্যাকটিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্ট, এগুলা হচ্ছে বিভিন্ন উইকেট অনুযায়ী করতে পারে। তাইজুলকে দেখলে এরকম মনে হবে না কিন্তু তার গেম সেন্স অনেক ভালো। ও খেলা বুঝে। কাকে, কোথায়, কখন, কিভাবে করতে হবে, কত পেসে বল করতে হবে—এই জিনিসগুলা বুঝে।’’
আড়াল থেকে আলোতে চলে এসেছেন তাইজুল। সাকিবকে টপকে কিছুদিনের মধ্যেই তাইজুল উইকেটের শৃঙ্গে উঠবেন। নিশ্চিতভাবেই এই সময়টার জন্যই তার এতোদূর আসা।
ঢাকা/ইয়াসিন