গাজীপুরে স্ত্রীর গলাকাটা মরদেহ, স্বামীকে জখম অবস্থায় উদ্ধার
Published: 15th, November 2025 GMT
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী নওয়াব আলী মার্কেট এলাকায় একটি বাসা হতে স্ত্রীর গলাকাটা মরদেহ এবং স্বামীকে অর্ধ গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক অবস্থায় স্বামীকেও মৃত বলে মনে হলেও তিনি মারাত্মক জখম হয়েছেন।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে এবং গুরুতর আহত অবস্থায় স্বামীকে হাসপাতালে নেয়। শনিবার সকালে তাদের ১৬ বছরের মেয়ে শারমিন আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজত নিয়েছে পুলিশ।
নিহত নারী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বিনোয়াটি গ্রামের শাজাহান সরকারের মেয়ে রহিমা বেগম (৩৮ )। অর্ধ গলা কাটা গুরুতর আহত অবস্থায় তার স্বামী ইমরান হোসেনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার আমতৈল গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এমরান হোসেন ও রহিমা তাদের সন্তান শারমিনকে নিয়ে কোনাবাড়ি নওয়াব আলী মার্কেট এলাকার একতা ভিলার পাঁচ তলায় ভাড়া থাকতেন। স্বামী এমরান হোসেন কোনাবাড়ি এলাকায় মাংস বিক্রির কাজ করতেন এবং স্ত্রী ছিলেন গৃহিণী।
শনিবার সকালে পুলিশ খবর পায় স্বামী-স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। কোনাবাড়ী থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল করতে যান। সে সময়ে পুলিশ অর্ধ গলাকাটা অবস্থায় এমরানকে হাত নাড়াচাড়া করতে দেখেন। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তাদের মেয়ে শারমিন আক্তারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাতে তার মা রহিমা বেগম ও বাবা ইমরানের সঙ্গে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। তারই জের ধরে এমরান ধারালো দা দিয়ে প্রথমে স্ত্রী রহিমার গলা কেটে দেন। পরে নিজেও ওই দা নিয়ে নিজের গলা কেটে ফেলেন।
কোনাবাড়ী থানা পুলিশ জানায়, প্রথমে তারা দুজনের মৃত্যুর খবর পান। সেই খবরের ভিত্তিতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন। ঠিক ওই সময় স্বামীর হাত নাড়াচাড়া করতে দেখেন। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, “মেয়ে শারমিন আক্তার বন্ধুদের নিয়ে টিকটক করতেন। সে (শারমিন) জানিয়েছে তার বাবা প্রথমে তার মাকে হত্যা করে, পরে সে নিজেই নিজের গলা কাটে। এটা শারমিন নিজের চোখেই নাকি দেখেছে। কিন্তু তার কথা আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। যে কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “নিহত রহিমা বেগমের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং তার স্বামীকে একই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
ঢাকা/রেজাউল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গল ক ট অবস থ এমর ন
এছাড়াও পড়ুন:
দুই রকমের নাগলিঙ্গম ফুল
প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক পিজি হাসপাতাল) মধ্য দিয়ে হেঁটে পার হই আর মাঝেমধ্যে রাস্তার এপাশে একটি ও ওপাশে আরেকটি নাগলিঙ্গমগাছের দিকে তাকাই। বছরের নানা সময় দেখি সেই গাছে ফুল ফুটছে। ফুল ফোটার যেন কোনো নির্দিষ্ট মৌসুম নেই। একদিন সেসব ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে দেখলাম, দুটি গাছের ফুলের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। একটির ফুল ফিকে লাল, অন্যটির ফুল টকটকে মেরুন লাল। এর পর থেকে যেখানেই নাগলিঙ্গমগাছ দেখি, সেখানেই ফুলগুলোকে দেখি। প্রায় সব নাগলিঙ্গমগাছের ফুলগুলোই দেখি লাল বা ফিকে লাল। কিন্তু মেরুন বা ঘন লাল রঙের ফুল আর একটিও চোখে পড়েনি।
রমনা পার্কে আছে বেশ কটি নাগলিঙ্গমগাছ। তার প্রায় প্রতিটির ফুলকে দেখার চেষ্টা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের বাগানে আছে একটি প্রাচীন নাগলিঙ্গমগাছ। মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ভেতরে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে—সব জায়গার গাছেই প্রায় একই রকমের ফুল।
কিন্তু এই একটি গাছের ফুল এমন আলাদা হলো কেন? এ গাছটির বয়স তুলনামূলকভাবে কম, বয়সে নবীন। তাই গাছটি অন্যগুলোর চেয়ে পরে লাগানো। মনে প্রশ্ন এল, তাহলে কি নাগলিঙ্গমেরও ভিন্ন ভিন্ন জাত আছে, যেটিকে কখনো এভাবে চরিত্রায়ণ করা হয়নি, নামকরণও না। জানি না। নিসর্গী দ্বিজেন শর্মাও ঢাকায় নাগেশ্বর ফুল দেখতে দেখতে একদিন দুই রকমের নাগেশ্বর ফুল আবিষ্কার করেছিলেন। তেমনি নাগলিঙ্গমেরও কি দুটি জাতের গাছ ঢাকা শহরে আছে? এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা যেতে পারে।
তবে জাতটাত যা–ই হোক, দুটি জাতের ফুলই দেখতে চমৎকার। যেকোনো উদ্যানে এ গাছ থাকলে যিনি কখনো নাগলিঙ্গমের ফুল দেখেননি, তিনি অবশ্যই চমৎকৃত হবেন। কেননা এ গাছের মোটা গুঁড়ির চারদিক থেকে শলা বা কাঠির মতো কুঁড়িসহ নস্যি রঙের মঞ্জরিদণ্ডÐবেরিয়ে আসে। সেসব মঞ্জরিদণ্ডের আগায় একসঙ্গে একাধিক ফুল ফোটে। পর্যায়ক্রমে তাতে আরও ফুল ফুটতে থাকে। ফুলগুলোর ঘ্রাণে গাছের চারপাশ আমোদিত হয়ে ওঠে। রমনা পার্কে ভোরবেলায় যখন এসব গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে যাই, মনে হয় সেসব গাছে যেন স্বর্গের পরিরা আতর মেখে বসে আছে! গাছের গোড়ায় ঝুলছে ঘুঙুরের মতো সবুজাভ-হলদে কুঁড়ি আর লাল ফুল, সকাল হতেই খসতে শুরু করে ফুলের পাপড়িগুলো। বলধা উদ্যানের প্রাচীন নাগলিঙ্গমগাছের তলায় একবার দেখেছিলাম সেসব ঝরা ফুলের বিছানাকে, ফুলে ফুলে বিছানো ছিল গাছের তলা, কোনো মাটি দেখা যাচ্ছিল না।
নাগলিঙ্গমের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Couroupita guianensis ও গোত্র লেসিথিডেসি, পাতাঝরা প্রকৃতির বহুবর্ষী বৃক্ষ। গাছ ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। একটি বয়স্ক গাছে দিনে হাজারটা ফুলও ফুটতে পারে। নাগলিঙ্গমের ফুলগুলো বড্ড অদ্ভুত, সাধারণ কোনো ফুলের মতো গড়ন না। হঠাৎ দেখলে মনে হয় অসংখ্য দাঁত নিয়ে হাঁ করে আছে কোনো সাপের ফণা! জননাঙ্গটা সাদাটে দুই পাটি মাড়ির মতো, বক্রাকার সে অঙ্গের ওপরের অংশে গেঁথে আছে অসংখ্য হলদে- গোলাপি লোমের মতো পুরুষকেশর, নিচে রয়েছে ঘন লাল রঙের খাড়া কেশরগুচ্ছ। ফুলের সৌন্দর্যে ও সৌরভে কীটপতঙ্গরা ছুটে আসে। কিন্তু এসে খানিকক্ষণ ফুলে ঘোরাঘুরি করে নিরাশ হয়ে ফিরে যায়, নাগলিঙ্গম ফুল যে মধুশূন্য। কেবল কাঠ মৌমাছিরাই থেকে যায় ফুলের রেণু সংগ্রহের জন্য। ফুলের হলদে গুঁড়ার মতো রেণুই যে ওদের বাচ্চাদের খাবার, মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পাউরুটির মতো তা বাচ্চাদের খাওয়ায়। মাথা ও পিঠে মেখে সেসব রেণু বয়ে নিয়ে যায় ওরা। উড়ে আবার সে ফুল থেকে পাশের ফুলে যায়। ডানা ঝাপটায় আর ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। এতে লাভ হয় দুজনেরই। কাঠ মৌমাছি পায় ছানাদের খাবার, নাগলিঙ্গম ফুল পায় বীজ ও ফলগঠনের সাহায্য। প্রকৃতিতে এ এক চমৎকার পারস্পরিক মেলবন্ধন।
নাগলিঙ্গমের গাঢ় লাল ফুল