যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শুক্রবার গরুর মাংস, টমেটো, কলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েক ডজন খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছেন। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই নতুন এ শুল্কছাড় কার্যকর হয়েছে। এটিকে ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি দাবি করে আসছিলেন যে চলতি বছরের শুরু থেকে তিনি যে ব্যাপক আমদানি শুল্ক আরোপ করে আসছিলেন, তা মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন কাঠামোগত বাণিজ্যচুক্তিরও ঘোষণা দেয়। এটি চূড়ান্ত হলে আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা ও এল সালভাদর থেকে আমদানি হওয়া কিছু খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য সামগ্রীর ওপর শুল্ক প্রত্যাহার হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা বছর হওয়ার শেষের আগেই এ ধরনের আরও কিছু চুক্তি করার কথা ভাবছেন।

আরও পড়ুনশুল্কের বিরোধীরা ‘মূর্খ’, রাজস্ব থেকে মার্কিনদের ২০০০ ডলার ‘লভ্যাংশ’ দেওয়া দেওয়া হবে: ট্রাম্প১০ নভেম্বর ২০২৫

গতকাল শুল্ক প্রত্যাহার করে যেসব পণ্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেসবের মধ্যে এমন সব পণ্য রয়েছে, যা মার্কিন ভোক্তারা প্রতিদিন কেনেন। এসব পণ্যের বেশির ভাগের দাম গত এক বছরে ব্যাপক হারে বেড়েছে।

কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্সের সেপ্টেম্বরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গরুর কিমা মাংসের দাম প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে। আর স্টেকের দাম বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এ মূল্যবৃদ্ধি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া কলার দাম ৭ শতাংশ ও টমেটোর দাম ১ শতাংশ বেড়েছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টিতে মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে তাঁর শুল্কনীতি নয়; বরং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতিমালা দায়ী।

গত সেপ্টেম্বরে বাড়িতে খাওয়ার উপযোগী ভোগ্যপণ্যের সামগ্রিক খরচ বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে বিশ্ববাণিজ্যব্যবস্থাকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন ট্রাম্প। অঙ্গরাজ্যভেদে অতিরিক্ত শুল্কও নির্ধারণ করেছেন তিনি।

আরও পড়ুনশুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের ছিনিমিনি রুখতে এখনই যা জরুরি২৯ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্প সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টিতে মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে তাঁর শুল্কনীতি নয়; বরং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতিমালা দায়ী।

এদিকে ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে হতাশা ক্রমে বাড়ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যবৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে আমদানি শুল্ক। আগামী বছর ভোগ্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো শুল্কের বোঝা ভোক্তাদের ওপর চাপাতে শুরু করবে।

আরও পড়ুনওষুধের ওপর ট্রাম্পের ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপে বিরাট ক্ষতির আশঙ্কায় ভারত২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র যপণ য র র ওপর আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দুই রকমের নাগলিঙ্গম ফুল

প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক পিজি হাসপাতাল) মধ্য দিয়ে হেঁটে পার হই আর মাঝেমধ্যে রাস্তার এপাশে একটি ও ওপাশে আরেকটি নাগলিঙ্গমগাছের দিকে তাকাই। বছরের নানা সময় দেখি সেই গাছে ফুল ফুটছে। ফুল ফোটার যেন কোনো নির্দিষ্ট মৌসুম নেই। একদিন সেসব ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে দেখলাম, দুটি গাছের ফুলের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। একটির ফুল ফিকে লাল, অন্যটির ফুল টকটকে মেরুন লাল। এর পর থেকে যেখানেই নাগলিঙ্গমগাছ দেখি, সেখানেই ফুলগুলোকে দেখি। প্রায় সব নাগলিঙ্গমগাছের ফুলগুলোই দেখি লাল বা ফিকে লাল। কিন্তু মেরুন বা ঘন লাল রঙের ফুল আর একটিও চোখে পড়েনি।

রমনা পার্কে আছে বেশ কটি নাগলিঙ্গমগাছ। তার প্রায় প্রতিটির ফুলকে দেখার চেষ্টা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের বাগানে আছে একটি প্রাচীন নাগলিঙ্গমগাছ। মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ভেতরে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে—সব জায়গার গাছেই প্রায় একই রকমের ফুল। 

কিন্তু এই একটি গাছের ফুল এমন আলাদা হলো কেন? এ গাছটির বয়স তুলনামূলকভাবে কম, বয়সে নবীন। তাই গাছটি অন্যগুলোর চেয়ে পরে লাগানো। মনে প্রশ্ন এল, তাহলে কি নাগলিঙ্গমেরও ভিন্ন ভিন্ন জাত আছে, যেটিকে কখনো এভাবে চরিত্রায়ণ করা হয়নি, নামকরণও না। জানি না। নিসর্গী দ্বিজেন শর্মাও ঢাকায় নাগেশ্বর ফুল দেখতে দেখতে একদিন দুই রকমের নাগেশ্বর ফুল আবিষ্কার করেছিলেন। তেমনি নাগলিঙ্গমেরও কি দুটি জাতের গাছ ঢাকা শহরে আছে? এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা যেতে পারে। 

তবে জাতটাত যা–ই হোক, দুটি জাতের ফুলই দেখতে চমৎকার। যেকোনো উদ্যানে এ গাছ থাকলে যিনি কখনো নাগলিঙ্গমের ফুল দেখেননি, তিনি অবশ্যই চমৎকৃত হবেন। কেননা এ গাছের মোটা গুঁড়ির চারদিক থেকে শলা বা কাঠির মতো কুঁড়িসহ নস্যি রঙের মঞ্জরিদণ্ডÐবেরিয়ে আসে। সেসব মঞ্জরিদণ্ডের আগায় একসঙ্গে একাধিক ফুল ফোটে। পর্যায়ক্রমে তাতে আরও ফুল ফুটতে থাকে। ফুলগুলোর ঘ্রাণে গাছের চারপাশ আমোদিত হয়ে ওঠে। রমনা পার্কে ভোরবেলায় যখন এসব গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে যাই, মনে হয় সেসব গাছে যেন স্বর্গের পরিরা আতর মেখে বসে আছে! গাছের গোড়ায় ঝুলছে ঘুঙুরের মতো সবুজাভ-হলদে কুঁড়ি আর লাল ফুল, সকাল হতেই খসতে শুরু করে ফুলের পাপড়িগুলো। বলধা উদ্যানের প্রাচীন নাগলিঙ্গমগাছের তলায় একবার দেখেছিলাম সেসব ঝরা ফুলের বিছানাকে, ফুলে ফুলে বিছানো ছিল গাছের তলা, কোনো মাটি দেখা যাচ্ছিল না।

নাগলিঙ্গমের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Couroupita guianensis ও গোত্র লেসিথিডেসি, পাতাঝরা প্রকৃতির বহুবর্ষী বৃক্ষ। গাছ ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। একটি বয়স্ক গাছে দিনে হাজারটা ফুলও ফুটতে পারে। নাগলিঙ্গমের ফুলগুলো বড্ড অদ্ভুত, সাধারণ কোনো ফুলের মতো গড়ন না। হঠাৎ দেখলে মনে হয় অসংখ্য দাঁত নিয়ে হাঁ করে আছে কোনো সাপের ফণা! জননাঙ্গটা সাদাটে দুই পাটি মাড়ির মতো, বক্রাকার সে অঙ্গের ওপরের অংশে গেঁথে আছে অসংখ্য হলদে- গোলাপি লোমের মতো পুরুষকেশর, নিচে রয়েছে ঘন লাল রঙের খাড়া কেশরগুচ্ছ। ফুলের সৌন্দর্যে ও সৌরভে কীটপতঙ্গরা ছুটে আসে। কিন্তু এসে খানিকক্ষণ ফুলে ঘোরাঘুরি করে নিরাশ হয়ে ফিরে যায়, নাগলিঙ্গম ফুল যে মধুশূন্য। কেবল কাঠ মৌমাছিরাই থেকে যায় ফুলের রেণু সংগ্রহের জন্য। ফুলের হলদে গুঁড়ার মতো রেণুই যে ওদের বাচ্চাদের খাবার, মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পাউরুটির মতো তা বাচ্চাদের খাওয়ায়। মাথা ও পিঠে মেখে সেসব রেণু বয়ে নিয়ে যায় ওরা। উড়ে আবার সে ফুল থেকে পাশের ফুলে যায়। ডানা ঝাপটায় আর ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। এতে লাভ হয় দুজনেরই। কাঠ মৌমাছি পায় ছানাদের খাবার, নাগলিঙ্গম ফুল পায় বীজ ও ফলগঠনের সাহায্য। প্রকৃতিতে এ এক চমৎকার পারস্পরিক মেলবন্ধন।

নাগলিঙ্গমের গাঢ় লাল ফুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ