পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ২৬ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা
Published: 15th, November 2025 GMT
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৯ থেকে ১৩ নভেম্বর) সূচকের বড় পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেনে বেশ কমেছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন বেশ কমেছে ২৬ হাজার ৫১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫৬.
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯১৫ কোটি ৮৯ লাখ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৬ হাজার ৯৪১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৪২২ কোটি ২৩ লাখ টাকার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬৫০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির, দর কমেছে ৩৬৩টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩টির। তবে লেনদেন হয়নি ৩০টির।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৫৭.৩১ পয়েন্ট বা ৩.৯৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪০১ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ১.৯১ শতাংশ কমে ১২ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ৩.৪৪ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৩১৮ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ৩.৫১ শতাংশ কমে ৮৪৪ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ১১.৩৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ১৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৫৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৮০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ২৭২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৯টির, দর কমেছে ২৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭টির শেয়ার ও ইউনিট দর।
ঢাকা/এনটি/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব জ র ম লধন আর ব দ ন কম ছ ড এসই স এসই
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ মাস পর সর্বোচ্চ দরপতন, কমেছে ৯২% কোম্পানির শেয়ারদর
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এদিন ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২৩ পয়েন্ট বা আড়াই শতাংশের বেশি কমেছে। এর আগে সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ মে এই সূচক ১৪৯ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশের বেশি কমেছিল।
কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এই দরপতনে ডিএসইএক্স সূচকটি কমে ৪ হাজার ৭০৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। প্রায় পাঁচ মাসের ব্যবধানে এটি ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, এর আগে সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩ জুন ডিএসইএক্স সূচকটি ৪ হাজার ৬৯৫ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।
বাজারের এই দরপতনের জন্য বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কয়েকটি কারণের কথা জানান। তাঁরা জানান, সম্প্রতি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের দাম শূন্য ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেয়ারের দাম শূন্য ঘোষণা করায় এসব শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা কিছুই পাবেন না। ফলে এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) করা মার্জিন ঋণ–সংক্রান্ত নতুন বিধানের বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে বাজারে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ ঘিরে গতকাল জনমনে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করে। এ কারণে যান চলাচল থেকে শুরু করে মানুষের চলাচলও সীমিত। এ কারণে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে বিনিয়োগকারীর উপস্থিতিও ছিল কম; যার প্রভাবও বাজারে পড়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও বলেন, এমনিতে বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে মন্দাভাব চলছে। তাতে ধারাবাহিকভাবেই সূচক কমছে। এর মধ্যে ৬ নভেম্বর বিএসইসি মার্জিন ঋণসংক্রান্ত নতুন বিধিমালা প্রকাশ করে। তাতে শেয়ারের বিপরীতে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন করে নানা শর্ত যুক্ত করা হয়। পাশাপাশি এরই মধ্যে বিতরণ করা ঋণ হিসাবে যেসব শেয়ার ঋণ অযোগ্য হয়ে গেছে, সেসব শেয়ার ছয় মাসের মধ্যে বিক্রি করে দেওয়ার শর্তারোপ করা হয়। এ ছাড়া নতুন করে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের কঠোরতা আরোপ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে ঋণ করে যাঁরা বিনিয়োগ করেন এবং যাঁরা বিনিয়োগকারীদের ঋণ প্রদান করেন, তাঁদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়ে যায়। যার প্রভাব কয়েক দিন ধরে বাজারে পড়ছে।
সাম্প্রতিক কয়েকটি সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের দাম শূন্য ঘোষণা, মার্জিন ঋণসংক্রান্ত নতুন বিধিমালার নানা শর্ত ও সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা—শাকিল রিজভী, পরিচালক, ডিএসইডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচকটি ৪১৯ পয়েন্ট বা ৮ শতাংশের বেশি কমেছে। গত ৩০ অক্টোবর ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ১২২ পয়েন্টের অবস্থানে ছিল। আজ তা ৪ হাজার ৭০০ পয়েন্টের ঘরে নেমে আসে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৫২টি বা ৯২ শতাংশের দরপতন হয়েছে। দাম বেড়েছে ১৫টির বা প্রায় ৪ শতাংশের আর অপরিবর্তিত ছিল ১৭টির বা প্রায় ৪ শতাংশের।
জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে একসঙ্গে কয়েকটি সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। প্রথমত পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের দাম শূন্য ঘোষণা করা, এরপর মার্জিন ঋণসংক্রান্ত নতুন বিধিমালার নানা শর্ত বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর সঙ্গে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। পুঁজিবাজার যেহেতু খুবই সংবেদনশীল, তাই বড় বড় এ সিদ্ধান্তে বাজার পড়বে—এটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থান থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারধারীদের কী হবে, সেটি সরকার ও বিএসইসির পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিতে হবে। আর মার্জিন ঋণ নিয়ে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেগুলোর বাস্তবভিত্তিক সমাধান করতে হবে। তাহলে বাজার আবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে পারে। যদিও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয়ে কারও কিছু করণীয় নেই।
শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট, বীকন ফার্মা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, রেনাটা, রবি আজিয়াটা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন বা বিএসসি ও লাভেলো আইসক্রিম। এই ১০ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনেই ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছে প্রায় ৩৯ পয়েন্ট। দরপতনের এদিনে ঢাকার বাজারে খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে ছিল প্রকৌশল খাতের কোম্পানি। ঢাকার বাজারে মোট লেনদেনের মধ্যে ২৪৩ কোটি টাকায় ছিল এ খাতের কোম্পানিগুলোর লেনদেন।
ঢাকার বাজারে আজ দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৮৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৯৩ কোটি টাকা বেশি। গতকাল বুধবার ঢাকার বাজারে লেনদেন হয়েছিল ২৯০ কোটি টাকার। গত ২৩ জুনের পর বুধবারই ঢাকার বাজারে লেনদেন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছিল। সেখান থেকে আজ লেনদেনের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।