ভারত–পাকিস্তানের রাজধানীতে ‘বিরল’ বিস্ফোরণ কী বার্তা দিল
Published: 15th, November 2025 GMT
দিল্লিতে বিস্ফোরণের পর ফরেনসিক দলগুলো একটি পুড়ে যাওয়া গাড়ির ধ্বংসাবশেষ খুঁটিয়ে দেখছিল। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই, ইসলামাবাদের বিচারিক কমপ্লেক্সের বাইরে ঘটে এক আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা। এই দুটি প্রাণঘাতী হামলা কারা করল তা এখনো জানা যায়নি। জানা যায়নি হামলা দুটির কোনো যোগসূত্র আছে কি না!
তবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের জন্য বিস্ফোরণগুলো রাজনৈতিকভাবে এক তীব্র সতর্কবার্তা। এই সতর্কবার্তা দেখাচ্ছে, নিরাপত্তাজনিত যে হুমকিগুলো এ দুই অঞ্চলজুড়ে সুপ্ত অবস্থায় থাকে, সেগুলো কতটা ভয়ানক হতে পারে।
দেশ দুটির কড়া সুরক্ষাবেষ্টনীতে ঘেরা রাজধানীতে এমন বিস্ফোরণ খুবই বিরল। তবে পরপর দুই দিনে দুটি হামলা ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান প্রশাসনকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। নতুন করে তৈরি হয়েছে প্রতিবেশীদের সন্দেহ ও দোষারোপের চক্র শুরু হওয়ার আশঙ্কা। সেটাও এমন এক বছরে, যা আগেই এই তিন দেশের জন্য ছিল অস্থিরতায় ভরা।
আরও পড়ুনভারত ও পাকিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন খেলা০৬ আগস্ট ২০২৫মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। একে ধরা হচ্ছে প্রায় দুই দশকের মধ্যে পাকিস্তানের রাজধানীতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে। এর মাত্র এক দিন আগে দিল্লির এক ঐতিহাসিক এলাকায় গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১০ জন নিহত ও আরও এক ডজনের বেশি আহত হন।
এই ঘটনা নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের কট্টরপন্থী নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছে এক শক্তিশালী অস্ত্র। যা প্রতিটি সরকারকেই কঠোর পদক্ষেপ নিতে স্থানীয়ভাবে চাপের মুখে ফেলেছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের খেলা শুরু হয়ে গেছে ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইসলামাবাদে হামলার জন্য ‘ভারতীয় সন্ত্রাসী দোসরদের’ দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেছেন হামলাটি ‘ভারতের সমর্থনে আফগান ভূমি থেকে পরিচালিত’। জবাবে নয়াদিল্লি একে বলেছে ‘ভিত্তিহীন ও মনগড়া’।
বুধবার ভারত সরকার বিস্ফোরণটিকে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির দ্বারা সংঘটিত ‘সন্ত্রাসী ঘটনা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। দিল্লির বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অঙ্গীকার করেছেন, ‘যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’
নয়াদিল্লি এখনো ওই বিস্ফোরণের সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো যোগসূত্রের দাবি করেনি। প্রশাসন এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য দায়ীদের বিষয়ে নীরব রয়েছে। তবে অতীতে এমন হামলার পর ভারত প্রায়ই পাকিস্তানকে দায়ী করেছে।
নিরাপত্তাবেষ্টিত রাজধানী!ভারত ও পাকিস্তান ইতিহাসে বহুবার গুরুতর নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। তবু তাদের রাজধানীগুলোকে সব সময়ই ধরা হয় দুর্গের মতো নিরাপদ হিসেবে।
দিল্লিতে হামলাটি ঘটে ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই পুলিশ রাজধানীর উপকণ্ঠের ফরিদাবাদের এক গ্রাম থেকে হাজার হাজার কিলোগ্রাম বিস্ফোরক উদ্ধার করে।
নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা নীতির প্রতীক হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন। নিজেকে দেশের ‘পাহারাদার’ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তাই এই হামলার পর নিরাপত্তাঘাটতির অভিযোগে বিরোধী দলগুলো মুখর হয়েছে সরকারের সমালোচনায়।
সীমান্তের ওপারে ইসলামাবাদে বিস্ফোরণটি ঘটে বিচারিক কমপ্লেক্সের পার্কিংয়ের এলাকায়। কমপ্লেক্স এলাকাটি বহু উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বাসস্থানের কাছেই অবস্থিত।
ভারত ও পাকিস্তানে হামলার পর অভিযোগ আর অতিরঞ্জিত বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি এক সুপরিচিত রাজনৈতিক ধারা। এই ধরনের বক্তব্য দুই দেশের সরকারের রাজনৈতিক প্রয়োজনে কাজে এলেও, এটি সহজেই দুই দেশকে বিপজ্জনক অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে।পাকিস্তান বহু বছর ধরেই জঙ্গিদের হাতে অস্থিতিশীলতার শিকার। তবে রাজধানী ইসলামাবাদে এমন হামলা খুবই বিরল। কারণ, শহরটি কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার আওতায় থাকে।
বিগত দশকে পাকিস্তানে সংঘটিত বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া আরেকটি শাখা জামাআতুল আহরার (জেএইউএ)। এক বিবৃতিতে ইসলামাবাদের হামলার দায় স্বীকার করেছে জেএইউএ।
এ হামলার পর ইসলামাবাদ প্রশাসন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ হামলাটিকে এক ‘সতর্কবার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যা মূলত আফগানিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে। পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগান ভূমিতে থাকা জঙ্গিদের আশ্রয়স্থল থেকেই এসব সমস্যার উৎপত্তি।
২০২১ সালে আফগান তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর থেকে পাকিস্তানে জঙ্গি সহিংসতার নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে। যা দুই দেশের মধ্যে বাড়িয়ে তুলেছে সীমান্ত উত্তেজনা। সম্প্রতি যা রূপ নিয়েছে বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষে। কাতার ও ইস্তাম্বুলে সাম্প্রতিক বৈঠকগুলো সীমান্ত সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।
আফগান তালেবান পাকিস্তানি তালেবানকে (টিটিপি) কোনো সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ইসলামাবাদে মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় ‘গভীর দুঃখ ও নিন্দা’ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুনপাকিস্তান কি আরও স্বৈরশাসনের পথে হাঁটছে১১ নভেম্বর ২০২৫অস্থিরতা বাড়ছেভারত ও পাকিস্তানে হামলার পর অভিযোগ আর অতিরঞ্জিত বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি এক সুপরিচিত রাজনৈতিক ধারা। এই ধরনের বক্তব্য দুই দেশের সরকারের রাজনৈতিক প্রয়োজনে কাজে এলেও, এটি সহজেই দুই দেশকে বিপজ্জনক অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের খেলা দুই পক্ষেই আস্থাহীনতার গল্পে ইন্ধন জোগায়। বহু বছর ধরে পাকিস্তান দাবি করে আসছে যে ভারত তার ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিচ্ছে। একইসঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর মতো পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীকে সহায়তা দিচ্ছে।
একই ধরনের অভিযোগ ভারতেরও আছে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, দেশটিতে হামলা চালানো সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও সহায়তা দেয় পাকিস্তান। যদিও দুই দেশই একে অপরের অভিযোগ অস্বীকার করে।
আরও পড়ুনতালেবান ও আরএসএস যে ইস্যুতে এক১৫ অক্টোবর ২০২৫পাকিস্তান ভারতের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার কয়েক মাস আগেই এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ জড়িয়েছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষে। মে মাসে চার দিনের ওই সংঘাতে ব্যবহৃত হয়েছিল যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন।
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের এক মনোরম পাহাড়ি এলাকায় সংঘটিত এক হত্যাযজ্ঞ থেকেই ওই প্রাণঘাতী সংঘর্ষের সূচনা হয়েছিল। যেখানে বন্দুকধারীরা ২৬ জনকে হত্যা করে, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন ভারতীয় পর্যটক।
বরাবরের মতোই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। যদিও ইসলামাবাদ সেই অভিযোগ অস্বীকার করে। ওই ঘটনার পর নরেন্দ্র মোদি ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী নীতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। জানান, এখন থেকে ভারতের ভূখণ্ডে কোনো হামলা ঘটলে সেটিকে ‘যুদ্ধের মতো’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এরপর নয়াদিল্লি পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও দ্রুত সামরিক প্রতিক্রিয়া জানায়।
দুই সরকার যখন আলাদাভাবে নিজেদের দেশে হামলার কারণ অনুসন্ধান করছে, তখন দিল্লি ও ইসলামাবাদের সাধারণ মানুষেরাই পরিষ্কার করছে ধ্বংসস্তূপ। তাঁরা শোক পালন করছে প্রিয়জনদের হারিয়ে।
• রিয়া মোগল সিএনএন ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাংবাদিক
সিএনএন থেকে নেওয়া, ইংরেজিতে থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম ব দ র স ব ক র কর নয় দ ল ল র জন ত ক সন ত র স কর ছ ন র জন য সরক র আফগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে দাড়িয়ে থাকা মিনিবাসে আগুন
সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে দাড়িয়ে থাকা একটি মিনিবাসে (ঢাকা মেট্রো জ-১১-০৩৩৮) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় বাসের ভেতরে কোনো লোকজন না থাকায় কেউ হতাহত হয়নি। আগুনে বাসের বডি, সিট, ভেতরের অংশ ও জানালার কাঁচ পুড়ে যায়।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) ভোর ৬টার দিকে শিমরাইল এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি কোনো ধরনের নাশকতা নাকি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটেছে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিস।
শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের টিআই জুলহাস উদ্দিন বলেন, সেখানকার নৈশ প্রহরী বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানিয়েছে, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পাশের ওয়াশরুমে গিয়েছিল।
ফিরে এসে দেখে বাসে আগুন লেগেছে। বাসের বডি, সিট ও জানালার কাঁচ পুরোপুরি পুড়ে গেছে। তবে বাসের আশপাশে কোনো লোকজন দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, অগ্নিকাণ্ডে বাসের সিট ও গ্লাস পুড়ে গেলেও ভেতরে কোনো মানুষ না থাকায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। যাত্রী বা চালক কেউ না থাকায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকেও রক্ষা পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটি যান্ত্রিক ত্রুটি নাকি নাশকতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।