ঢাকায় নৃশংসভাবে খুন হওয়া রংপুরের বদরগঞ্জের আশরাফুল হকের জানাজা ও দাফন ঘিরে এলাকায় গভীর শোক নেমে এসেছে। আজ শনিবার ভোর থেকে হাজারো মানুষ ভিড় করেন বদরগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের নয়পাড়া গ্রামে। সকাল সাড়ে আটটার দিকে আশরাফুলের জানাজা সম্পন্ন হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা।

এর আগে গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে আশরাফুলের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। সকালে জানাজায় অংশ নিতে দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা ছুটে আসেন। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হয়। মায়ের আহাজারি, স্বজনদের কান্না আর বিহ্বল মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে ওঠে আশরাফুলের শেষবিদায়ের মুহূর্ত।

আরও পড়ুনতিন দিন আগে বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় যান রংপুরের আশরাফুল, ড্রামে মিলল ২৬ টুকরা লাশ১৪ নভেম্বর ২০২৫

স্থানীয় লোকজন জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আশরাফুলের পরিবার শোকে মুহ্যমান। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন—বাল্যবন্ধু জরেজ আশরাফুলকে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় নিহত আশরাফুলের বোন আনজিনা বেগম শুক্রবার সকালে ঢাকার শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজুল ইসলাম জরেজকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে জরেজুল ইসলাম ও শামীমা নামের এক নারীকে।

আহাজারি করতে করতে আশরাফুল হকের স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, ‘নিজের ভাই মনে করত জরেজকে। জাপান যাওয়ার ১০ লাখ টাকা চাইছিল, সেই টাকাও আমরা দিতে চাইছি। আরও টাকা লাগলে নিত। আমার সব সম্পত্তি নিয়া স্বামীটারে বাঁচাই রাখত। স্বামীটার জান কেন কাড়ি নিল। আমি উনার (জরেজের) ফাঁসি চাই। যারা আমার স্বামীরে টুকরা টুকরা করছে, সবার ফাঁসি চাই।’

বাবা আবদুর রশিদের বিলাপ, ‘হাসপাতালে ছিলাম। জরেজ খুব তাগদা দিয়া ছেলেটারে ঢাকা নিয়া গেছে। বাবাটাক খুন করবে জানলে নিজের জান দিয়াও ঢাকা যাবার দিতাম না। ছোট নাতি-নাতনি, আমাদের এখন কে দেখবে।’

আরও পড়ুন‘টাকার লোভে আমার স্বামীক মারি ফেলছে’১৮ ঘণ্টা আগে

মা এছরা খাতুন মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনেরা জ্ঞান ফেরালে বিলাপ করছেন, ‘আমার বেটা তো কারও ক্ষতি করে নাই। তাহলে কেন এমন করল ওরা? কেন আমার বেটাকে টুকরা টুকরা করল?’

পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মা–বাবার একমাত্র ছেলে আশরাফুল হক। তাঁর চার বোন আছে। ভাই–বোনের মধ্যে আশরাফুল তৃতীয়। তাঁর বাবা আবদুর রশিদ ছিলেন একজন ক্ষুদ্র কাঁচামাল ব্যবসায়ী। ছোট থাকতেই বাবার হাত ধরে কাঁচামাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আশরাফুল। তিনি কাঁচামাল আমদানিকারক ছিলেন। বিভিন্ন দেশ থেকে কাঁচামাল এনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে দিতেন। তাঁর সংসারে ১৩ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়ে ও ৭ বছর বয়সী এক ছেলে আছে।

আরও পড়ুনবন্ধুর হাতে খুন হন আশরাফুল, লাশ দুই দিন লুকিয়ে রাখা হয় বাসায়১১ ঘণ্টা আগে

এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, আশরাফুল কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। তিনি একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। কাঁচামাল ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র মানুষ ছিলেন। বছরের দুই ঈদে এলাকার গরিব মানুষদের দুই হাত প্রসার করে শাড়ি লুঙ্গিসহ শুকনা খাবার বিতরণ করতেন। গরিব মানুষদের জন্য প্রতিবছর কোরবানির ঈদে একটি গরু কিনে মাংস বিতরণ করতেন। তাঁকে হত্যাকারী যেই হোক, তাঁর বিচার চান তিনি।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, সকালে আশরাফুল হকের লাশ তাঁর নিজ গ্রামে দাফন হয়েছে। তাঁকে হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে থাকা বন্ধু জরেজুল ও শামীমা নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১১ নভেম্বর মালয়েশিয়া–ফেরত বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকায় যান আশরাফুল। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার হাইকোর্ট–সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের পাশে একটি ড্রাম থেকে এক তাঁর খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আশর ফ ল র বদরগঞ জ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন নবীর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী

ভারতের রাজধানী দিল্লির লাল কেল্লার কাছে বিস্ফোরণের ঘটনায় গাড়িচালক উমর নবীর জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিস্ফোরণের ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী।

ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী আজ শুক্রবার বলেছে, বৃহস্পতিবার রাতে এবং শুক্রবার ভোরের মধ্যে সন্দেহভাজন চালক উমরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ শেষ করা হয়েছে।

দিল্লির গাড়ি বিস্ফোরণ মামলার তদন্ত চলার মধ্যে কাশ্মীর, হরিয়ানা, দিল্লি এবং উত্তর প্রদেশের একাধিক সংস্থা তথ্যের সূত্রগুলো মেলাতে কাজ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মীরের একজন মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক এবং একজন ছাত্রসহ আরও দুজনকে উত্তর প্রদেশ থেকে আটক করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় মোদি সরকার ফরিদাবাদের আল-ফালাহ ইউনিভার্সিটির সব নথিপত্রের ফরেনসিক নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারের দাবি, লাল কেল্লার কাছে বিস্ফোরণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা বা কাজ করতেন।

দিল্লি পুলিশ লাল কেলার কাছে বিস্ফোরিত হওয়া গাড়িটির চালক উমর নবীর শেষ কয়েক ঘণ্টার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছে। ৫০টির বেশি সিসিটিভি ফুটেজ ব্যবহার করে তাঁর গতিবিধি চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

উত্তর প্রদেশসহ ভারতের বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে এমনকি কেন্দ্রীয় মোদি সরকার নানা অজুহাতে মুসলিমদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। সর্বশেষ কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন মুসলিমদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় মোদি সরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাশ্মীরে থানায় বিস্ফোরক ভান্ডারে বিস্ফোরণে নিহত ৯, আহত ২৯
  • অমিতাভ রেজার বিয়ে
  • ‘টাকার লোভে আমার স্বামীক মারি ফেলছে’
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার
  • ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ব্যাপক হামলা
  • দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন নবীর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী
  • ড্রামে মিলল ২৬ টুকরা লাশ
  • তিন দিন আগে বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় যান রংপুরের আশরাফুল, ড্রামে মিলল ২৬ টুকরা লাশ
  • ২৬ টুকরো করা হয় আশরাফুলকে