বিদ্রূপের আরশিতে প্রতিফলিত ইতিহাস
Published: 15th, November 2025 GMT
বাংলায় ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত একটি শব্দ ‘সফর’। দেশ-বিদেশ, জীবনের লম্বা পথ, ইতিহাসের পাতা, এমনকি কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়ানো ইত্যাদি নানা অর্থে সফর শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই ভ্রমণপিয়াসু। তাই নিজের মুখে ঝাল খাওয়া সব সময় সম্ভবপর না হলেও দুঁদে ও পোড়খাওয়া লেখকের কলমের শক্তিতে আবিষ্কার করতে চান নতুন নতুন দুনিয়া। আবার অর্থের ব্যাপকতায় আর কলমের জোরে সোজাসাপটা ভ্রমণকাহিনির বাইরে গিয়ে কল্পনাশক্তির আশ্রয়ে লেখকেরা অনেক সময় ঘরে বসেই সপ্ত আসমান, দেবলোক থেকে শুরু করে অধুনা নানা কাল্পনিক রাজ্য থেকে মহাবিশ্বের নানা কোনা পর্যন্ত ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারেন পাঠককে।
অন্যদিকে সাহিত্যের ব্যঙ্গাত্মক ধারাটিকে অবলম্বন করে সমাজসচেতন লেখক নানা অসংগতির কথা তুলে আনেন মজার ছলে। সমাজের নানা আইনকানুন বা ক্ষমতাসীনদের চোখরাঙানির ভয়ে অনেক সময় তাঁদের রূপকের আশ্রয় নিতে হয়। কখনো কখনো এ কাজ তাঁরা করেন পাঠকের কাছে জটিল ভাবনাকে সহজবোধ্য করে উপস্থাপনের উদ্দেশ্যেও। এই রাজনৈতিক ব্যঙ্গরচনা আর কাল্পনিক ভ্রমণকাহিনির এক অপূর্ব মেলবন্ধন আমরা পাই অষ্টাদশ শতকের বিখ্যাত সাহিত্যিক জোনাথন সুইফটের গালিভার ট্রাভেলস বইয়ে। আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যঙ্গসাহিত্যের প্রবাদপুরুষ আবুল মনসুর আহমদ সেই ভাবনার নির্যাসটুকু নিয়েই লিখেছেন গালিভরের সফরনামা, তবে দেশীয় প্রেক্ষাপটে। রাজনীতির অন্দরমহলের সুলুকসন্ধান সে আমলে তাঁর মতো করে খুব কম লোকই জানতেন, সঙ্গে সঙ্গে মানব চরিত্রের কৌতূহলী পর্যবেক্ষণ আর অনুপম রসবোধের মিশেলে তাঁর এই বই হয়ে উঠেছে বাংলা ভাষায় এ ধরনের সাহিত্যের এক চমৎকার নিদর্শন।
তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, রসের অংশটুকু বাদ দিলে তৎকালীন সমাজ ও রাজনীতির চালচিত্র জেনে সনাতন পাঠকের কাজ কী? ইতিহাসমুখী পাঠক ছাড়া অন্যদের জন্য এ বইয়ে আগ্রহোদ্দীপক কিছু কি আছে? এ প্রসঙ্গে বলতে গেলে ফিরে যেতে হয় শুরুতে বলে আসা সফর শব্দের বিস্তৃত ব্যবহার প্রসঙ্গে। ইতিহাসের রাস্তায় যে সফর, সেই সফর বৃত্তাকার পথে আবর্তিত। ফলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি অবশ্যম্ভাবী। এ বইয়ের লেখাগুলোতে, পাঠকের জন্য সবচেয়ে অর্থপূর্ণ যে সফর রয়েছে, তা হচ্ছে ইতিহাসের শিক্ষা। পড়তে পড়তে পাঠক কখনো কখনো বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারেন, তিনি কি বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের গল্প পড়ছেন, নাকি অতি সাম্প্রতিক কোনো রাজনৈতিক ঘটনার বয়ান।
গালিভরের সফরনামা বইয়ে গালিভর বা তাঁর সফরের বর্ণনা অবশ্য প্রথম অংশেই সীমাবদ্ধ। মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক জায়ান্ট ও ডোয়ার্ফের তুলনামূলক আলোচনার জন্যই তিনি গালিভরের উপমা টেনেছেন। গল্পগুলোতে আজব দেশ বলতে ভারতীয় উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলা এবং বিভাগ–পরবর্তী পাকিস্তানের পূর্ব অংশকেই বোঝানো হয়েছে এবং এ অঞ্চলের রাজনীতি নিয়ে লেখকের অভিজ্ঞতাপ্রসূত নানা ঘটনার তির্যক কিন্তু হাস্যরসাত্মক বিবরণই গল্পগুলোর প্রাণ। দ্বিতীয় গল্প ‘শিক্ষা-সংস্কার’ থেকেই পাঠক নড়েচড়ে বসবেন। এই অঞ্চলের রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের তাবৎ কুশীলবদের এক মঞ্চে এনে নবসৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের পর্বতপ্রমাণ আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে পর্দার আড়ালের বিপুল অরাজকতা, অপরিপক্বতা ও অপরিণামদর্শিতা নিয়ে এই গল্প। ব্যঙ্গের প্রয়োজনে লেখক কখনো কখনো অতিশয়োক্তির আশ্রয় নিয়েছেন, কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় কখনোই সেটা বাহুল্য মনে হয়নি। বরং নিজে একই শ্রেণির অংশ হওয়ায় শব্দচয়ন থেকে চরিত্রচিত্রণ—সব জায়গায় তিনি অকৃত্রিম মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে পেরেছেন। ফলে মূল বক্তব্য দ্রুত ধরতে পাঠককে কখনোই বেগ পেতে হয় না। এদেশীয় মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, পশ্চিম পাকিস্তানি আমলা, দেশীয় নানা স্তরের শিক্ষাবিদ ও সরকারি চাকরিজীবী, আলেম-ওলামা প্রভৃতি চরিত্রের মধ্যকার কথোপকথনের ভেতর দিয়ে গোটা পাকিস্তান রাষ্ট্রের চরিত্রগত চিত্রায়ন এত পুঙ্খানুপুঙ্খ হয়েছে যে গল্পের দৃশ্যপটের বাইরের সমাজ ও রাজনীতির চিত্রও পাঠক মুহূর্তের মধ্যে ধরে ফেলতে পারবেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের ধর্মীয় চরিত্রের প্রাবল্যে নার্ভাস ও ভীত শিক্ষাবিদই আবার যেভাবে বাংলা ভাষা প্রশ্নে আপসহীন হয়ে যান, তার মধ্য দিয়ে পরবর্তী রাজনীতির গতিপ্রকৃতির ইঙ্গিতও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গালিভরের সফরনামা
আবুল মনসুর আহমদ
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
প্রকাশ: আগস্ট ২০২৪
প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল
পৃষ্ঠা: ১৩৬
মূল্য: ৩২০ টাকা
সুবিধাভোগী শ্রেণির দ্বিচারিতা কাল বা সময়ভেদে কীভাবে অপরিবর্তিত থাকে, তার দৃষ্টান্ত পাই গল্পের শেষে এসে। বাস্তবমুখী শিক্ষাকে জনগণের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পর নিজেদের সন্তানদের ওই একই শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যটি আমাদের আজকের কালের সুবিধাভোগীদের ভন্ডামি বিবেচনায় একই রকম প্রাসঙ্গিক, ‘ইসলামী নেতা হিসাবে, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল নায়ক হিসাবে, আমরা জনগণকে এ আত্মহত্যামূলক সাংঘাতিক ত্যাগ করে পাপ করতে দিতে পারি না। সেজন্যে এ ত্যাগকে, খ্রিস্টানি কুফরী শিক্ষাকে, আমরা বিপুল ব্যয়সাধ্য করে গরিব জনসাধারণের নাগালের বাইরে একেবারে করাচিতে নিয়ে ফেলেছি।’ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পদ্ধতি যে কেবল নির্বাচন না দেওয়া বা পেশিশক্তি প্রদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বোঝাপড়ামূলক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে জনগণকে দূরে রেখে হঠকারী কিন্তু আজ্ঞাবহ একটি জনগোষ্ঠী তৈরি করার মাধ্যমেও যে তা করা যায়, আবুল মনসুর আহমদ সেকালেই তা অনুধাবন করেছিলেন, বর্তমান সময়ে এসে যার ভয়াবহ রূপ আমরা নিয়মিত প্রত্যক্ষ করছি।
পরবর্তী গল্পগুলোতেও অনেকটা বৈঠকি ঢঙে তুলে ধরা হয়েছে রাজনৈতিক দল, নেতা ও প্রার্থীদের নানা রকম কার্যকলাপের বিবরণ। একই রকম অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী বলেই হয়তো বিবরণগুলোতে কোনো কোনো সময় পুনরাবৃত্তি এসে গেছে, তবে আলাদা করে সব কটি গল্পই সময়ের প্রতিচ্ছবি ধারণ করে। ‘বন্ধুবান্ধবের অনুরোধে’ গল্পের ‘মাহমুদ নিয়ে বের হলো টাকা, সদাগর সাব নিয়ে এলেন লীগের নমিনেশন, আর আমরা নিয়ে এলাম চরম বিস্ময়।’ কিংবা ‘আহা, যদি প্রধানমন্ত্রী হতে পারতাম’ গল্পে ওয়াহেদ মাস্টারের বয়ানে ‘সোজাসুজি প্রধানমন্ত্রী হওয়াতে আপত্তিটা কেবল আমার বেলাতেই? কত লোক যে ইতিমধ্যে বিনা ট্রেনিংয়ে সোজাসুজি প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেল, কই তখন তো কেউ আপত্তি করে নাই।’ এমন সহজ বাক্যগুলোর মধ্য দিয়ে রাজনীতির যে গভীর সত্য আবুল মনসুর আহমদ অকপটে ফুটিয়ে তুলেছেন, তারই আরও অনেক নমুনা ছড়িয়ে আছে বইয়ের নানা অংশে। পড়তে পড়তে বইয়ের ভূমিকায় লেখা একটি কথাই ঘুরেফিরে মনে আসে, আবুল মনসুর আহমদের দুঃসাহস সেদিনের সেই পশ্চাৎপদ সমাজ সহ্য করতে পারলেও আজকের এই তথাকথিত অগ্রসর সমাজে আর কোনো লেখকের পক্ষে এই কথাগুলো এত অকপটে লেখা আদৌ সম্ভব হতো কি?
বইটির আরেকটি বৈশিষ্ট্যের কথা না বললেই নয়। একটা প্রচণ্ড পরিবর্তনশীল সময়ে জাতিগোষ্ঠীর একধরনের বিস্ময়মাখা আত্মানুসন্ধানের কালের গল্প নিয়ে লিখিত হওয়ায় বর্তমান সময়ে লেখাগুলো হয়ে উঠেছে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যময়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আরেক যুগসন্ধিক্ষণে। তাই কেবল বিদ্রূপাত্মক বিবরণ বা নিছক আনন্দের খোরাক নয়, চলমান ঘটনাবলির চুলচেরা বিশ্লেষণের সহায়ক পাঠ হিসেবেও বইটি চিন্তাশীল পাঠকের কাছে মূল্যবান বলে বিবেচিত হতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ভর র র জন ত ক র জন ত র মন ত র চর ত র র সফর
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোটের মাধ্যমে আইনপ্রণয়ন, সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, মনে রাখতে হবে, গণভোটের মধ্য দিয়ে আইনপ্রণয়ন করা হয়ে যাবে না। গণভোটের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না। এর জন্য আগে অবশ্যই জাতীয় সংসদ গঠিত হতে হবে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
‘নারীর উপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক এই মৌন মিছিল ও সমাবেশের আয়োজক নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা প্রতিপালনে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর বাইরে চাপিয়ে দেওয়া, জবরদস্তিমূলক কোনো প্রস্তাব যদি দেওয়া হয়, তা জনগণ বিবেচনা করবে।
জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি সোচ্চার থাকবে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে ক্ষুণ্ন হোক, তা তাঁরা চান না। সে জন্য কোনো আরোপিত আইন দিয়ে, আদেশ দিয়ে, জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ তাঁরা করতে দেবেন না।
দেশে একটি দল ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ব্যবসা করছে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। তারা চায়, এ দেশের নারীরা যেন অন্দরমহলে বন্দী থাকে। যেন বাংলাদেশে অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে। নারীর অগ্রগতি-উন্নতি যেন না হয়। সে জন্য তারা বলছে, কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।
নারীরা যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর্মঘণ্টা কমানোর সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিপরীত সম্পর্ক আছে। কাজেই নারীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে চাকরিদাতারা তাদের চাকরি দিতে চাইবে না। এতে নারীর কর্মসংস্থান আরও কমে যাবে। তাই যাঁরা নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর কথা বলছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য খারাপ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, গত ১৭ বছর নারীরা যেভাবে খুন-ধর্ষণের শিকার হতো, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে। নারীরা তাদের মর্যাদা ফিরে পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশে আজ আবার নারীরা অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছে। নারীদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কাজেই অধিকার আদায়ে নারীদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মর্যাদা ফিরে পেতে নারীদের সমস্বরে আওয়াজ দিতে হবে।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, আজ তাঁরা এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংকেত দিয়ে গেলেন যে, নারীর অধিকার নিয়ে কোনো সংকট তৈরি করা হলে দেশের পুরো নারী সমাজ জেগে উঠবে। এ সময় তিনি স্লোগান দেন, ‘পাঁচ নয় আট, তুমি বলবার কে।’
নারী কর্মপরিসরে কাজ করবে না ঘরে থাকবে—এটা একান্তই নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সদস্য চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস। তিনি বলেন, নারী অধিকার হলো মানুষের অধিকার। নারীর কোনো দান, দয়া, দাক্ষিণ্যের প্রয়োজন হয় না। নারীরা ঘর সামলাবে না বাইরে থাকবে, সেটা একান্তই নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়। নারীদের সিদ্ধান্ত নারীদেরই নিতে দিন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান বলেন, ‘পুরুষ আমাদের সহযোদ্ধা। পুরুষ আমাদের শত্রু নয়। তাই নারীর পাশাপাশি যে পুরুষকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, আমি তাঁর পক্ষে দাঁড়াই।’
যে জুলাই সনদে নারীর কথা নেই, সেই জুলাই সনদ নারীরা প্রত্যাখ্যান করছে বলে মন্তব্য করেন নাহরীন ইসলাম খান। তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি প্রকৃত উন্নয়ন নয়। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে সেই উন্নয়ন, যেখানে রাত্রিবেলায় নারী নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ডাকসুর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ তন্বি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হোক, পারিবারিক ক্ষেত্রে হোক বা যেকোনো ক্ষেত্রে হোক, যখনই তাঁরা কথা বলতে গিয়েছেন, তখনই দেখেছেন, বিভিন্নভাবে নারীদের হ্যারেস করা হয়েছে। হয়তো নারীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে, অথবা কোনো মতাদর্শ নিয়ে, অথবা পোশাক নিয়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারীকে কথা বলতে হবে।
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, নিলুফা চৌধুরী, শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম, সহসভাপতি রেহানা আক্তার প্রমুখ।