মাছ কেনার জন্য দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় মনির উদ্দিন মাকে বলেছিলেন, ‘বেশি দেরি করব না।’ মিনিট কয়েক পরেই মনিরের বড় ভাই শাহাব উদ্দিনের মুঠোফোন বাজতে শুরু করে। ওপাশে পরিচিত এক কণ্ঠ, ‘মনিরকে লরি ধাক্কা দিয়েছে…।’ ফোন পাওয়ার পর শাহাব উদ্দিন ছুটে গিয়ে দেখেন, রাস্তার ধুলার ওপর স্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে তাঁর ভাই। কথা নেই, নড়াচড়া নেই, শুধু একধরনের শীতল নিথরতা।

শাহাব উদ্দিন ভাঙা গলায় বলেন, ‘তিন বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। সেই শোক কাটাতে পারিনি এখনো। আজ ভাইটাও চলে গেল। আমার তরতাজা ভাইটা এখন মর্গে শুয়ে আছে।’ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের কাটগড়ের মুসলিমাবাদ জেলেপাড়া বেড়িবাঁধের ঘাটে মাছ কিনতে গিয়েছিলেন মনির। সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। মাছের ঝুড়ি হাতে সবাই পথ পার হচ্ছিলেন। এমন সময় বেপরোয়া গতিতে একটি লরি এসে তাঁকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই মনিরের জীবন থেমে যায়। অন্য দুজন আহত হন।

মনির উদ্দিন (২৯) সামুদ্রিক মাছ বিক্রেতা। আনোয়ারা উপজেলার গহিরা পশ্চিমপাড়ায় তাঁর গ্রামের বাড়ি। বাবা বদিউল আলম তো আগেই চলে গেছেন। মা ফরিদা বেগম ছেলের মৃত্যুসংবাদ শুনে বারবার অচেতন হচ্ছেন। কথা বলতে পারছেন না, খেতেও পারছেন না। শুধু একটাই কথা—‘আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দাও।’ কিন্তু সেই ছেলে আর ফেরার নয়।

কাটগড় এলাকার পশ্চিম মুসলিমাবাদের জেলেপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন মনির। পরিবারে মা ছাড়াও ছিল বড় চার ভাই, এক বোন। টেনেটুনে চলে যেত দৈনন্দিন জীবন। আগে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। পরে সমুদ্র থেকে ওঠা মাছের ঘ্রাণেই নিজের জীবিকা খুঁজে নেন। ঝুড়ি ভরে মাছ কিনে বিক্রি করতেন। আয় কম, টানাটানি বেশি। কিন্তু পরিবারটা একসঙ্গেই ছিল। সেটাই ছিল স্বস্তি।

দুর্ঘটনা প্রথমে দেখেন মনিরের ভগ্নিপতি আলী হোসেন। গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিলেন তিনি। হইচই শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন মাটিতে পড়ে থাকা মানুষটা তাঁরই শ্যালক। মুহূর্তেই তাঁর কথা থেমে যায়, অসাড় হয়ে যান। পরে কোনোমতে নিজেকে সামলে ফোন করেন শাহাব উদ্দিনের কাছে।

শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ঘর থেকে ঘটনাস্থলের হাঁটা দূরত্ব, মাত্র ১০ মিনিটের পথ। কিন্তু এই পথটুকু যেতেই মনে হচ্ছিল কয়েক ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। তারপর গিয়ে দেখি নিথর পড়ে আছে ভাইটা।’

মনিরের লাশ এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা আছে। আজ শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর দাফন হবে। পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সুলতান মোহাম্মদ আহসান উদ্দিন বলেন, ‘চালককে আটক করা যায়নি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হ ব উদ দ ন ন মন র মন র র

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে সামিট অ্যালায়েন্স

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৯ থেকে ১৩ নভেম্বর) কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে সেবা ও আবাসন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ১৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫.৪৭ শতাংশ। এর ফলে কোম্পানিটি লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করছে।

তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ১৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৪.২১ শতাংশ।

তৃতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের ১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর লেনদেনের ৩.৩৬ শতাংশ।

লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে- সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মার ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ডমিনেজ স্টিলের  ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, মনোস্পুল পেপারের ৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্স পিপি বেগ ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং রানার অটোমোবাইলের ৭ কোটি ৩ লাখ টাকা।র লেনদেন হয়েছে।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ