পুলিশ কি নাগরিকদের মুঠোফোন ঘাঁটতে পারে, আইন কী বলে
Published: 15th, November 2025 GMT
কারও মুঠোফোনে আসলে কী কী থাকে—এই প্রশ্নের চেয়ে বরং কী থাকে না, তার উত্তর খোঁজা সহজ। কারণ, এখন মুঠোফোনে একজন ব্যক্তির প্রায় সব ব্যক্তিগত তথ্য—সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ছবি–ভিডিওসহ অফিশিয়াল নথি সব–ই সংরক্ষিত থাকে। তাই মুঠোফোন শুধু একটি ডিভাইস নয়; ব্যক্তির নিজস্ব সত্তারই এক বিস্তার।
তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কি তল্লাশির নামে যেকোনো সময় নাগরিকের মুঠোফোন ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারে, তাঁর ব্যক্তিগত দুনিয়ায় ঢুকে পড়তে পারে? যদিও দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দিনের পর দিন এটাই করে আসছে।
সম্প্রতি কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ধরতে পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল ও মেসে অভিযান চালিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময় পুলিশ বহু মানুষের মুঠোফোনও তল্লাশি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশের এই আচরণ নতুন নয়। বিগত সরকারের আমলেও বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘিরে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে নাগরিকের মুঠোফোন ঘাঁটাঘাঁটি করা হতো, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে—আইন কি এই তল্লাশির অনুমোদন দেয়?
শুরু করেছে আওয়ামী লীগবিএনপি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছিল। সে সময় ১০ ডিসেম্বর প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—‘তল্লাশির সময় পুলিশকে মোবাইল দেখাইতে হইছে, এটা কেমন আচরণ?’
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী উত্তরার কামারপাড়া মোড়ে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে বাস, মোটরসাইকেলসহ যানবাহনগুলোয় পুলিশ তল্লাশি চালায়। পাশাপাশি মুঠোফোনও চেক করে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে রাজধানীতে বিএনপির ডাকা সমাবেশকে ঘিরেও পুলিশ মোড়ে মোড়ে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে নাগরিকদের মুঠোফোন চেক করে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশ শুধু একা এ কাজ করেনি। দলটির ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ–যুবলীগের সদস্যরাও মানুষের মুঠোফোন চেক করেছিলেন। ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই ডেইলি স্টার অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, শাহবাগে লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের খুঁজতে থাকে। সে সময় তারা মানুষের মুঠোফোনও চেক করে।
জুলাইয়ের এই গণ–অভ্যুত্থানে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেসে মেসে গিয়ে তাঁদের মুঠোফোন চেক করেছিল পুলিশ।
পুলিশের এই আচরণ নতুন নয়। বিগত সরকারের আমলেও বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘিরে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে নাগরিকের মুঠোফোন ঘাঁটাঘাঁটি করা হতো, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে—আইন কি এই তল্লাশির অনুমোদন দেয়?একই পথে বর্তমান সরকারওঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধসহ এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দলটির শীর্ষনেতারা দেশ–বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিচারের রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন ছিল ১৩ নভেম্বর। এ দিনটি ঘিরে আওয়ামী লীগ অনলাইনের মাধ্যমে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ডাকে।
এই কর্মসূচি ডাকার মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। সরকার বলছে, এসবের পেছনে আওয়ামী লীগ দায়ী। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব অভিযানে মুঠোফোন চেক করার অভিযোগও উঠেছে।
মুঠোফোন মানুষের আয়রোজগার থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয়। কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া, আদালতের অনুমতি ছাড়া এভাবে গণহারে মুঠোফোন চেক করা মানুষের গোপনীয়তার অধিকার, চলাচলের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে।১২ নভেম্বর প্রথম আলো অনলাইনে ‘সন্দেহ হলে আমিনবাজারে তল্লাশি করা হচ্ছে যাত্রীদের ব্যাগ ও মুঠোফোন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশপথ আমিনবাজারে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালায় ঢাকা জেলা পুলিশ। তল্লাশির সময় সন্দেহজনক মনে হলে যাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্ন করার পাশাপাশি তাঁদের ব্যাগ, মুঠোফোন চেক করতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের।
একই দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের খোঁজে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ফকিরেরপুল, কাকরাইল, এলিফ্যান্ট রোডসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোয় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা যাচাই করতে নাগরিকদের মুঠোফোন চেক করা হয়।
শুধু পুলিশ নয়, বর্তমান সরকারের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে মুঠোফোন চেক করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের (সিএসই) শিক্ষার্থী আবির হাসান। গত ২৫ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটে বলে ২৭ অক্টোবর তিনি প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেন।
আইন যা বলছেবাংলাদেশের কোনো আইনে অভিযান বা তল্লাশির সময় মুঠোফোন চেক করে দেখার সরাসরি কোনো বিধান নেই। বরং সরকার সম্প্রতি ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষার জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে।
২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৮০ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ কর্মকর্তার যদি বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে কোনো প্রকাশ্য স্থানে এই আইনের পরিপন্থী কিছু হয়েছে বা হচ্ছে তাহলে ওই বিশ্বাসের কারণ লিখে তিনি উক্ত স্থানে তল্লাশি করতে পারবেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট যেকোনো বস্তু আটক করতে পারবেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
সম্প্রতি জারি হওয়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এর ৩৫ ধারায় বলা আছে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোয় সাইবার হামলা কিংবা কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, ডিজিটাল ডিভাইস ইত্যাদিতে বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে অপরাধের সম্ভাবনা থাকলে পুলিশ কারণ লিপিবদ্ধ করে কিছু কাজ করতে পারবেন। যেমন ওই স্থানে প্রবেশ করে তল্লাশি, তল্লাশিকালে প্রাপ্ত অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, তথ্য-উপাত্ত বা অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক কোনো দলিল জব্দ, ওই স্থানে উপস্থিত যেকোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি, অপরাধী সন্দেহ হলে গ্রেপ্তার এবং তল্লাশির প্রতিবেদন দ্রুত ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন।
আইনজীবী যা বলছেনগণহারে মুঠোফোন তল্লাশি করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই; কারণ, সংবিধান তা অনুমোদন দেয় না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী।
স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো অপরাধের তদন্তের স্বার্থে যুক্তিসংগত আইনানুগ প্রয়োজনে ডিজিটাল ডিভাইস চেক করা যেতে পারে। কিন্তু তার সুযোগও সীমিত। ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত। মুঠোফোন মানুষের আয়রোজগার থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয়। কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া, আদালতের অনুমতি ছাড়া এভাবে গণহারে মুঠোফোন চেক করা মানুষের গোপনীয়তার অধিকার, চলাচলের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে।
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুলিশের মনে হওয়ার ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের তল্লাশি চালানো হয়। এই মনে হওয়ার ব্যাখ্যা কী? পুরো বিশ্বেই এখন নজরদারি প্রবণতা বেড়েছে। যে ক্ষমতায় থাকে সে–ই এই নজরদারিকে ব্যবহার করে। ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে এর প্রয়োগ হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এর অহরহ ব্যবহার করেছে। বর্তমান সরকারের সময়েও হচ্ছে। অথচ মানুষ এই ভয়ের পরিবেশের বিরুদ্ধেই লড়াই করেছিল।’
কোনো এলাকায় অথবা জরুরি কোনো পরিস্থিতিতে তল্লাশির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে নাগরিককে আগে থেকে জানাতে হবে এবং পুলিশকে আগে থেকে সেসব কারণ লিপিবদ্ধ করার বিধান আছে বলে জানিয়েছেন স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ম ঠ ফ ন চ ক কর সরক র র সময় প রক শ ত র অন ম প রব ন ব যবহ অপর ধ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
দুই রকমের নাগলিঙ্গম ফুল
প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক পিজি হাসপাতাল) মধ্য দিয়ে হেঁটে পার হই আর মাঝেমধ্যে রাস্তার এপাশে একটি ও ওপাশে আরেকটি নাগলিঙ্গমগাছের দিকে তাকাই। বছরের নানা সময় দেখি সেই গাছে ফুল ফুটছে। ফুল ফোটার যেন কোনো নির্দিষ্ট মৌসুম নেই। একদিন সেসব ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে দেখলাম, দুটি গাছের ফুলের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। একটির ফুল ফিকে লাল, অন্যটির ফুল টকটকে মেরুন লাল। এর পর থেকে যেখানেই নাগলিঙ্গমগাছ দেখি, সেখানেই ফুলগুলোকে দেখি। প্রায় সব নাগলিঙ্গমগাছের ফুলগুলোই দেখি লাল বা ফিকে লাল। কিন্তু মেরুন বা ঘন লাল রঙের ফুল আর একটিও চোখে পড়েনি।
রমনা পার্কে আছে বেশ কটি নাগলিঙ্গমগাছ। তার প্রায় প্রতিটির ফুলকে দেখার চেষ্টা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের বাগানে আছে একটি প্রাচীন নাগলিঙ্গমগাছ। মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ভেতরে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে—সব জায়গার গাছেই প্রায় একই রকমের ফুল।
কিন্তু এই একটি গাছের ফুল এমন আলাদা হলো কেন? এ গাছটির বয়স তুলনামূলকভাবে কম, বয়সে নবীন। তাই গাছটি অন্যগুলোর চেয়ে পরে লাগানো। মনে প্রশ্ন এল, তাহলে কি নাগলিঙ্গমেরও ভিন্ন ভিন্ন জাত আছে, যেটিকে কখনো এভাবে চরিত্রায়ণ করা হয়নি, নামকরণও না। জানি না। নিসর্গী দ্বিজেন শর্মাও ঢাকায় নাগেশ্বর ফুল দেখতে দেখতে একদিন দুই রকমের নাগেশ্বর ফুল আবিষ্কার করেছিলেন। তেমনি নাগলিঙ্গমেরও কি দুটি জাতের গাছ ঢাকা শহরে আছে? এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা যেতে পারে।
তবে জাতটাত যা–ই হোক, দুটি জাতের ফুলই দেখতে চমৎকার। যেকোনো উদ্যানে এ গাছ থাকলে যিনি কখনো নাগলিঙ্গমের ফুল দেখেননি, তিনি অবশ্যই চমৎকৃত হবেন। কেননা এ গাছের মোটা গুঁড়ির চারদিক থেকে শলা বা কাঠির মতো কুঁড়িসহ নস্যি রঙের মঞ্জরিদণ্ডÐবেরিয়ে আসে। সেসব মঞ্জরিদণ্ডের আগায় একসঙ্গে একাধিক ফুল ফোটে। পর্যায়ক্রমে তাতে আরও ফুল ফুটতে থাকে। ফুলগুলোর ঘ্রাণে গাছের চারপাশ আমোদিত হয়ে ওঠে। রমনা পার্কে ভোরবেলায় যখন এসব গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে যাই, মনে হয় সেসব গাছে যেন স্বর্গের পরিরা আতর মেখে বসে আছে! গাছের গোড়ায় ঝুলছে ঘুঙুরের মতো সবুজাভ-হলদে কুঁড়ি আর লাল ফুল, সকাল হতেই খসতে শুরু করে ফুলের পাপড়িগুলো। বলধা উদ্যানের প্রাচীন নাগলিঙ্গমগাছের তলায় একবার দেখেছিলাম সেসব ঝরা ফুলের বিছানাকে, ফুলে ফুলে বিছানো ছিল গাছের তলা, কোনো মাটি দেখা যাচ্ছিল না।
নাগলিঙ্গমের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Couroupita guianensis ও গোত্র লেসিথিডেসি, পাতাঝরা প্রকৃতির বহুবর্ষী বৃক্ষ। গাছ ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। একটি বয়স্ক গাছে দিনে হাজারটা ফুলও ফুটতে পারে। নাগলিঙ্গমের ফুলগুলো বড্ড অদ্ভুত, সাধারণ কোনো ফুলের মতো গড়ন না। হঠাৎ দেখলে মনে হয় অসংখ্য দাঁত নিয়ে হাঁ করে আছে কোনো সাপের ফণা! জননাঙ্গটা সাদাটে দুই পাটি মাড়ির মতো, বক্রাকার সে অঙ্গের ওপরের অংশে গেঁথে আছে অসংখ্য হলদে- গোলাপি লোমের মতো পুরুষকেশর, নিচে রয়েছে ঘন লাল রঙের খাড়া কেশরগুচ্ছ। ফুলের সৌন্দর্যে ও সৌরভে কীটপতঙ্গরা ছুটে আসে। কিন্তু এসে খানিকক্ষণ ফুলে ঘোরাঘুরি করে নিরাশ হয়ে ফিরে যায়, নাগলিঙ্গম ফুল যে মধুশূন্য। কেবল কাঠ মৌমাছিরাই থেকে যায় ফুলের রেণু সংগ্রহের জন্য। ফুলের হলদে গুঁড়ার মতো রেণুই যে ওদের বাচ্চাদের খাবার, মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পাউরুটির মতো তা বাচ্চাদের খাওয়ায়। মাথা ও পিঠে মেখে সেসব রেণু বয়ে নিয়ে যায় ওরা। উড়ে আবার সে ফুল থেকে পাশের ফুলে যায়। ডানা ঝাপটায় আর ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। এতে লাভ হয় দুজনেরই। কাঠ মৌমাছি পায় ছানাদের খাবার, নাগলিঙ্গম ফুল পায় বীজ ও ফলগঠনের সাহায্য। প্রকৃতিতে এ এক চমৎকার পারস্পরিক মেলবন্ধন।
নাগলিঙ্গমের গাঢ় লাল ফুল