আদেশের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে সাধুবাদ জানালেও একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের সিদ্ধান্তে আপত্তি রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর। এটাকে ‘সংস্কারকে গুরুত্বহীন করার ফাঁদ’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ভোটের সময়কার প্রশাসন নিয়েও দলটির উদ্বেগ রয়েছে। নির্বাচনপূর্ব প্রশাসনিক রদবদলে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ দুর্বল করার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ তুলেছে দলটি।

গতকাল শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের অভিযোগ করেন, সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (ভোটে সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরির ব্যাপারে আদৌ মনোযোগী নয়। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সহযোগিতায় একটি বিশেষ দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে দলীয় প্রশাসনে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনে কিছু কিছু পরিবর্তন হচ্ছে এবং সেখানে একটি বিশেষ দলের অনুগত লোকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে ঢাকার মগবাজারের আল–ফালাহ মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াতসহ আট দল। এই দলগুলো পাঁচ দফা দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের বলেন, একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হলে জাতীয় নির্বাচন বেশি গুরুত্ব পাবে। এতে গণভোটের গুরুত্ব কমবে। মানুষের মনোযোগের অভাবে গণভোটে যদি ভোট কম পড়ে, তাহলে যারা সংস্কার চাইছে না তারা বলবে, যেহেতু ভোট কম পড়েছে, জনগণ গণভোট চায়নি বলে বিবেচিত হোক। এর মাধ্যমে তারা সংস্কার থেকে সরে আসবে।

এটা দলটির একটি ‘ফাঁদ’ বলে আখ্যা দিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, অপ্রত্যাশিতভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে হোক অথবা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে হোক, সরকার একটি দলের ফাঁদে পা দিয়েছে এবং সংস্কারকে প্রায় গুরুত্বহীন করেছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে সাধুবাদ, তবে.

..

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারির ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের। তিনি বলেন, বিএনপি কখনোই আদেশের মাধ্যমে সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়ার পক্ষে ছিল না। তারা অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার গ্রহণের প্রস্তাব করেছিল। প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেওয়ার পক্ষে দৃঢ় ছিলেন। সে জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানানো যায়।

তবে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ না করে সরকার যথেষ্ট কাটছাঁট করেছে বলে অভিযোগ করেন তাহের। তিনি বলেন, একটি দলের সঙ্গে আপস করে সুপারিশে অনেক পরিবর্তন এনে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণ দিয়েছেন। এটি জনগণকে হতাশ করেছে।

জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, সংস্কার কমিশন গণভোটে একটা প্যাকেজে ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোট নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও সরকার সেই প্যাকেজকে চার ভাগে ভাগ করেছে। সেটি জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতার মধ্যে ফেলে দেবে।

সরকার বিএনপির নোট অব ডিসেন্টকে ‘অ্যাকোমোডেট’ করার জন্যই গণভোটের প্রশ্নকে চার ভাগ করেছে বলে দাবি করেন তিনি মুহাম্মাদ তাহের।

আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের অভিযোগ করেন, প্রধান উপদেষ্টাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছেন তিনজন উপদেষ্টা। তাঁরা ভুল তথ্য দিয়ে, নানাভাবে বুঝিয়ে একটি দলের হয়ে কাজ করে সরকারকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হতে না পারে, সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুকৌশলে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেই উপদেষ্টাদের নাম পাঠানো হবে। এরপরও যাঁরা ষড়যন্ত্রের পেছনে প্রধান হোতা হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের বিষয়ে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়, সেই নামগুলো প্রকাশ করার বিষয়ে ভাবা হবে।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ। উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফজলে বারী মাসউদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সাখাওয়াত হোসাইন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব কাজী নিজামুল হক প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ ম হ ম ম দ ত হ র গণভ ট র সরক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জে পার্ক করা মিনিবাসে আগুন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পার্ক করা নাফ পরিবহনের একটি মিনিবাস আগুন লেগে পুড়ে গেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।

আজ শনিবার ভোর ছয়টার দিকে শিমরাইল এলাকায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকায় সওজ অফিসের সামনে বাসটি রেখে যান চালক। শনিবার ভোরে স্থানীয় লোকজন বাসের ভেতর থেকে ধোঁয়া ও আগুন বের হতে দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে বাসের সিট, কাচসহ ভেতরের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে। তবে বাসে কেউ না থাকায় প্রাণহানি বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কের পাশে পার্ক করা একটি বাস আগুন লেগে পুড়ে গেছে। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কোনো কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ