মানুষ যে পৃথিবীতে আধিপত্য সৃষ্টি করতে পেরেছে, এর কারণ আর কোনো প্রাণী মানুষের মতো এত সহজে ও ব্যাপক সংখ্যায় একত্র হয়ে কাজ করতে পারে না।

কথাটি বলেছিলেন ইয়ুভাল নোয়াহ হারারি তাঁর ‘স্যাপিয়েন্স’ বইয়ে। পৃথিবীর সব প্রাণীই অবজেক্টিভ রিয়েলিটি অনুযায়ী কাজ করে; অর্থাৎ যা চোখে দেখা যায় বা স্পর্শ করা যায়। কিন্তু মানুষই একমাত্র প্রাণী যে অবজেক্টিভ রিয়েলিটির বাইরে একটা ‘ফিকশনাল রিয়েলিটি’ বা কাল্পনিক বাস্তবতা তৈরি করতে পারে। আর এর বদৌলতেই তারা একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে বিশ্বাস করে একত্র হয়ে কাজ করতে পারে। প্রশ্ন হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ফিকশনাল রিয়েলিটি কি তৈরি হবে?

এ বিষয় করণীয় নির্ধারণে প্রতিবছর জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (ইউএনএফসিসিসি) কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ) নামে সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। এ বছর বিশ্বের প্রায় ১৯৫টি দেশ থেকে রাজনীতিবিদ, জলবায়ুবিজ্ঞানী, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, আদিবাসী নেতাসহ প্রতিনিধিদের সম্মেলন বসেছে ব্রাজিলের বেলেম শহরে। নভেম্বরের ১০ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত চলবে এ সম্মেলন।

এ বছর সম্মেলনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ব্রাজিলেই আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ইউএনএফসিসিসি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। আয়োজক দেশ হিসেবে ব্রাজিল বলেছে, সম্মেলন থেকে নতুন করে কোনো প্রতিশ্রুতি যেন না দেওয়া হয়। কারণ, আগের দেওয়া প্রতিশ্রুতিই পূরণ করা হয়নি। দুই বছর আগে ২৮তম কপ সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার ব্যাপারে দেশগুলো যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলোই বাস্তবায়িত হয়নি।

তবে এবারের সম্মেলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত। সেই সম্মেলনে বলা হয়েছিল, এই শতাব্দী, অর্থাৎ ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির বেশি বাড়তে না দেওয়া। এর বেশি বাড়লে পৃথিবীতে কী ধরনের দুর্যোগ নেমে আসবে তার হিসাব-নিকাশ করে বহু গবেষণা হয়েছে। যেমন বাংলাদেশের উপকূলে ১২ থেকে ১৮ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে, অর্থাৎ ইতিমধ্যে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত যেসব দুর্যোগ আর মৃত্যু দেখছি, তার চেয়েও ভয়াবহ হবে ভবিষ্যৎ।

পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে মানুষের মধ্যে সহযোগিতার বিকল্প নেই। সে জন্য আমাদের ফিকশনাল রিয়েলিটি তৈরি করতেই হবে। হারারি যেমনটি বলেছেন যে মানুষের শরীরে অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে, অধিকার বলে তো কিছু নেই। তাই মানবাধিকার একটি ফিকশনাল রিয়েলিটি। কিন্তু তবু মানুষ নীতিগতভাবে হলেও মানবাধিকারে বিশ্বাস করে। যদিও নিজের স্বার্থ অনুযায়ী এর লঙ্ঘন করতে বেশির ভাগই পিছপা হয় না।

এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করলেও ধনী দেশগুলোর পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাবে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। উল্টো দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) বলছে, ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। এমনটি ঘটলে শুধু মানবজাতি নয়, পুরো পৃথিবীই এক ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে।

সম্পদের স্বল্পতা আর ভৌগোলিক কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ভুক্তভোগী বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই এ সম্মেলনের ফলাফল বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব রাখবে। সম্মেলনে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোট এবং জি-৭৭-এর সঙ্গে বাংলাদেশও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ ছাড়া রয়েছে আফ্রিকা গ্রুপ ও ব্যাসিক গ্রুপ, অর্থাৎ ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও চীন।

সাধারণত সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহে দেশগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অগ্রাধিকার ঠিক করে। দ্বিতীয় সপ্তাহে মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে আইনি ও কারিগরি দিকসহ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সবচেয়ে জরুরি যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঠেকানো, সে লক্ষ্য অধরাই থেকে যায়। এর বাইরে আছে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোজনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়টি। সে ক্ষেত্রেও অগ্রগতি অতি সামান্য।

ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০। সম্মেলনের ফাঁকে অস্ট্রেলিয়ার প্যাভিলিয়নে এক অনুষ্ঠানে কথা বলছেন অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন। ১৩ নভেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ কশন ল র য় ল ট অর থ ৎ জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন

রাজশাহীতে ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। তার নাম নাইম ইসলাম (২৩)। তিনি রাজশাহী কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। দুর্ঘটনায় রোহান ইসলাম (২২) আহত হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে নগরের চৌদ্দপাই বিহাস মোড়ে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নাইম নগরের মাসকাটাদিঘী এলাকার মো. সাধুর ছেলে।  আহত রোহান একই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকটিতে আগুন দিয়েছে।

আরো পড়ুন:

সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত

চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেল পুলিশবাহী বাস, আহত ২০

স্থানীয়রা জানায়, নগরের বিমানচত্বর এলাকায় আইটি সেন্টরে অনলাইনে কাজ করত নাইম। কাজের জন্য তারা মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি থেকে রওনা হয়। পথে চৌদ্দপাইয়ের বিহাস মোড়ে পৌঁছালে ট্রাক মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে তারা ছিটকে পড়ে। এরপর ওই ট্রাকের চাকার নিচে চাপা পড়ে নাইম।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক জানান, দুর্ঘটনায় হতাহতের পর ক্ষুব্ধ জনতা ট্রাকটিতে আগুন দেয়। ট্রাকটি পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে নাইমের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা/কেয়া/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ