আড়াইহাজার বিএনপির ইতিহাসে সর্ববৃহৎ নির্বাচনী মহাসমাবেশ
Published: 15th, November 2025 GMT
আসন্ন এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বিএনপির নির্বাচনী মহাসমাবেশে অর্ধলক্ষাধিক জনগণ ও নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে।
এসময়ে মহাসমাবেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্লোগান দেয়’ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সালাম নিন ধানের শীষে ভোট দিন, আজাদ ভাইরে সালাম নিন ধানের শীষে ভোট দিন’ আর লাগারে লাগা ধান লাগা’ শ্লোগান শ্লোগানে মুখরিত তোলে পুরো আড়াইহাজার উপজেলা।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকাল তিনটায় শহীদ মঞ্জুর স্টুডিয়াম মাঠে আড়াইহাজার বিএনপি’র উদ্যোগে এই নির্বাচনী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এদিকে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির মহাসমাবেশকে সফল করতে দুপুর থেকেই আড়াইহাজার উপজেলা,পৌরসভা ও গোপালদী পৌরসভা বিএনপিরবিভিন্ন ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড বিএনপি ও যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিকদল, মহিলাদল, ওলামাদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার- ফেস্টুনে সু-সজ্জিত হয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে শহীদ মঞ্জুর স্টেডিয়ামে এসে জড়ো হয়।
আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) নারায়ণগঞ্জ -২ আসনে বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ, উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেননারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য লুৎফর রহমান আব্দু, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এড.
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মতিউর রহমান মতিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবু, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গাজী মাসুদ, শাকিল মিয়া, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম শিকারী, মাইনুদ্দিন খাজা,সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম লাভলু, আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান সেলিম, সদস্য সচিব খোরশেদ আলম ভূঁইয়া, আড়াইহাজার পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ লিটন, সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ ডালিম, গোপালদী পৌর বিএনপির সভাপতি শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মিলন, আড়াইহাজার উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক কবির হোসেন, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক রাজিবুল ইসলাম রাকিব, সাদেকুর রহমান সাদেক, আড়াইহাজার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আলমগীর সাকিব, আড়াইহাজার উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মোবারক হোসেনসহ আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ উপস থ ত ছ ল ন ব এনপ র স ল ইসল ম র রহম ন য বদল র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি পে স্কেলে এই সব সংস্কার কেন হবে না
এখন প্রায় দিন কোনো না কোনো পত্রিকাতে সরকারি পে স্কেল নিয়ে প্রতিবেদন বা মতামতমূলক লেখা থাকে। এরই মধ্যে আমরা জেনে গেছি, এই সরকার পে কমিশন বাস্তবায়ন করবে না।
আমরা জানি, সরকারি অনেক তথ্যই গোপন রাখতে হয়। কিন্তু এই একটা কমিশনের কাজ মনে হচ্ছে সবাইকে জানিয়ে করা হচ্ছে, যাতে সরকার চাপে থাকে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে এবার বেতন বাড়ার প্রস্তাবনা থাকবে ৮০-১০০ শতাংশ। কিন্তু এভাবে সনাতন পদ্ধতিতে বেতন বাড়ালে এই ব্যবস্থা কি টেকসই হবে?
সিটিজি এবং পারফরম্যান্সভিত্তিক কেন হচ্ছে নাবেসিকভিত্তিক বেতনকাঠামো এখন কোনো দেশে নেই। আমাদের সরকারি কর্মচারীদের বেতন জিজ্ঞেস করলেই বলবেন, আমাদের বেসিক বেতন এত, এই টাকাতে কীভাবে চলি? আসলেই বেসিক কম দেখায়। কিন্তু ওই টাকার সঙ্গে যে ভাতা পান, তা কি বেতন না?
বিশ্বজুড়েই বেতনকাঠামো করা হচ্ছে সিটিসি বা কস্ট টু কোম্পানি কনসেপ্টে। এখানে হবে সিটিজি মানে কস্ট টু গভর্নমেন্ট। যেমন কোম্পানিতে সিটিসি, তেমনি সরকারে সরকারের মোট ব্যয় হিসাব। একজন চাকরিজীবী সারা বছর মোট যে পরিমাণ বেতন–ভাতা এবং সুবিধা পান, তা এক মাসে নিয়ে আসা। আমি নিচে একটা ড্রাফট উদাহরণ দিচ্ছি।
১. মূল বেতন—মাসিক বেতনের মূল অংশ, যার ওপর অন্য ভাতাগুলো নির্ভর করে।
২. বাসাভাড়া ভাতা—সাধারণত মূল বেতনের ৩০%-৫০% পর্যন্ত হতে পারে।
৩. চিকিৎসা ভাতা—নির্দিষ্ট পরিমাণ বা প্রকৃত খরচ অনুযায়ী প্রদান করা হয়।
৪. যাতায়াত ভাতা—অফিসে আসা-যাওয়ার খরচের জন্য।
৫. বিশেষ ভাতা—অফিস নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন অতিরিক্ত সুবিধা। মহার্ঘ ভাতার মতো সব ভাতাও এর মধ্যে আসবে।
৬. প্রভিডেন্ট ফান্ড, সাধারণত বেতনের ১০% কর্মী ও ১০% প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে জমা হয়। কোম্পানির অংশটি সিটিসির অন্তর্ভুক্ত।
৭. গ্র্যাচুইটি, নির্দিষ্ট সময় চাকরি শেষে কর্মীকে প্রদেয় এককালীন সুবিধা মাস হিসাবে ভাগ করে ধরা হয়।
৮. বোনাস, সাধারণত বছরে দুইবার (ঈদ/বছর শেষ) বোনাস মোট পরিমাণকে ১২ দিয়ে ভাগ করে দেওয়া হয়। সরকারি ক্ষেত্রে বৈশাখী বোনাস যুক্ত হবে।
৯. ইনস্যুরেন্স, কর্মীর জন্য কোম্পানি যেকোনো বিমা করলে, তার প্রিমিয়াম। এটা সরকারিতে না থাকলে ধরা উচিত।
১০. অব্যবহৃত ছুটি ভাতা, অব্যবহৃত ছুটির আর্থিক মূল্য হিসাবে যোগ হয়।
১১. পেনশনকে মাসের খরচে ভাগ করে দেওয়া হয়।
১২. অন্যান্য কোনো সুবিধা যেমন গাড়ির খরচ, খাওয়ার খরচ ইত্যাদি।
তাহলে একজনের যদি বেসিক ৪০ হাজার হয়, তাঁর পুরো বেতন যা সরকার দিচ্ছে বা আমরা ট্যাক্স থেকে দিচ্ছি, তার সিটিজি ৯০ হাজারের কাছাকাছি হবে। আমাদের প্রতিটি সরকারি কর্মচারীর পেছনে সরকারকে কত মাসে বাস্তবে কত দিতে হচ্ছে, তা অন্যান্য সব দেশের মতো আধুনিক করতে হবে। এর ফলে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে ও কর্মচারী তাঁর মোট প্রাপ্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন, যা ‘বেসিক কম, ভাতা বেশি’ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে, যা আসলে পুরোটাই বেতন।
ভারতের সপ্তম পে কমিশন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু সেখানে সিটিসি ফরম্যাটে স্বচ্ছ ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হয়। এবং এখনকার চাকরি চুক্তিভিত্তিক। পারফরম্যান্স যোগ্যতা ও দক্ষতা ধরে রাখতে না পারলে নতুন কেউ আসবে।
সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন নির্ধারণে পারফরম্যান্সভিত্তিক অ্যালাউন্স বা ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে, যা বাংলাদেশে নেই। ইনক্রিমেন্ট কখনো কারও জন্য আজীবনের জন্য নির্দিষ্ট হতে পারে না। হতে হবে পারফরম্যান্সের ওপর। এটা অনেক দেশেই হচ্ছে। শুধু আমরা ব্যতিক্রম। যুক্তরাজ্যের মতো স্যালারি ট্রান্সপারেন্সি পোর্টাল বানালে কেউ আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
বেতনের সংকুলানের চাপ আমাদের ওপর কেন আসবেআমাদের এতগুলো সরকারি অফিস, কিন্তু বেশির ভাগই নিজের আয় নিজেরা না করে সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বেতন, ভাতা ও পেনশন খাতে বরাদ্দ প্রায় ১ দশমিক ৫৮ ট্রিলিয়ন টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আমাদের উচ্চ অপারেশন খরচ বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় প্রথম দিকে থাকবে। অপারেশন খরচের ভার বহন করতে গিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা, উন্নয়ন, পরিবেশ, শিক্ষা, নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় খাতগুলোতে আমরা খরচ জোগান দিতে পারছি না। ফলে সব ক্ষেত্রেই দেশের সূচক নেমে যাচ্ছে।
নিজেরা আয় না করাতে এই টাকা সরকারের নিজের আয় থেকে দিতে হচ্ছে। এমনকি অনেক সময় সরকারের ধার করে দিতে হচ্ছে। এমনকি এই বিশাল খরচ জোগানোর জন্য যে পরিকল্পনা হচ্ছে, তা–ও সরকারি তিনটা খাতের সংস্কার বা খরচ কমিয়ে জোগানের কথা বলেছে, যা আসলে অন্য খাতকে আটকে দিয়েই হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সব জায়গাতে হাত পড়লেও হাত পড়ে না আমাদের সরকারি খাতে। সবার সম্পত্তির হিসাব নেওয়ার কথা উঠলেও তা যে সত্যি কি না, কোনো তৃতীয় পক্ষ থেকে তদন্ত করে দেখা হয়নি। ফলে সব আগের মতোই চলছে।খরচ না কমিয়ে বাড়ানো কেনবিগত সরকারের সময় অর্থনীতিবিদদের থেকে প্রস্তাবনা ছিল পরিচালনা ব্যয় ২০ শতাংশ কমানোর। কিন্তু এই সরকার তা কমানোর চেষ্টা না করে বরং বাড়িয়েছে। এদিকে অপ্রয়োজনীয় অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা শুধু খরচই করে, সেগুলা বন্ধ করার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এদিকে যে যে প্রতিষ্ঠান নিজেরা আয় করতে সক্ষম, সেগুলোকে নিজেদের আয়ে চলার কোনো সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় না। যেহেতু নিজেদের আয়ে চলতে হয় না, তাই সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান থাকে লোকসানে। এবং তাদের খরচ মেটানোর দায় আমাদেরই।
প্রস্তাবিত পে কমিশন এখন পর্যন্ত আলোচনা অনুযায়ী ১৫ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর জন্য বরাদ্দ বাড়বে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। তাই অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজের আয়ে চলার দায়িত্ব দিতে হবে। তারা নিজেদের আয়ে পারফরম্যান্স মতো বেতন নিলেও আমাদের কষ্ট হবে না। বিদ্যুৎ আর পানির ভর্তুকির দায় সরকার আমাদের ওপর দিয়ে দিলে, তাদের লসের ভর্তুকির দায় আমরা কেন নেব?
দুর্নীতি কি কমছেডেইলি স্টারের জরিপ অনুযায়ী ৭২ শতাংশ মানুষ মনে করেন পে স্কেল বৃদ্ধির আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুদকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০২৪ সময়কালে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ এবং সরকারি খাতে ৬০ শতাংশের বেশি কেস। বাস্তবে এই হার আরও বেশি হবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, কানাডার বেগম পাড়াতে বেশির ভাগ বাড়ি সরকারি কর্মকর্তাদের। ঢাকা ট্রিবিউনের মতে, ৫৬ শতাংশ সরকারি কর্মচারী সম্পদের ঘোষণা করেন না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার বিভিন্ন সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এই ব্যাপারে কি কোনো ব্যবস্থা দেখেছেন?
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সব জায়গাতে হাত পড়লেও হাত পড়ে না আমাদের সরকারি খাতে। সবার সম্পত্তির হিসাব নেওয়ার কথা উঠলেও তা যে সত্যি কি না, কোনো তৃতীয় পক্ষ থেকে তদন্ত করে দেখা হয়নি। ফলে সব আগের মতোই চলছে।
হ্যাঁ! পে স্কেল দরকার আমাদের যাঁরা সৎ কর্মচারী আছেন তাঁদের। এখন সরকার ভয়ে অসৎদের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে, প্রকারান্তরে সৎ যাঁরা থাকতে চান, তাঁদেরও অসততার পথে ঠেলে দিচ্ছে। বেতন স্কেল দেওয়ার আগে তাই সবার সম্পদের হিসাব তদন্ত করে দুর্নীতিগ্রস্তদের বাদ দিয়ে পে স্কেল করলে আর কারও ক্ষোভ থাকত না। এটা হলে সরকারের খরচও কমত এবং কাজও অনেক গতিশীল হতো।
২০১৫ সালে যখন শেষ পে স্কেল হয়, তখন বলা হয়েছিল আর পে স্কেল হবে না। দুর্নীতি কমবে। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে? দেশে যে বিশাল দুর্নীতির টাকা পাচার হয়েছে, তার একটা বিশাল অংশের দায় সরকারি চাকরিজীবীদের একটা অংশের।সর্বজনীন পেনশন কেন সরকারিদের জন্য সর্বজনীন নাপেনশন খাতে একাই ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়, যা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা—দুই খাতের সম্মিলিত বরাদ্দের প্রায় সমান। বিগত সরকার বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে পেনশন স্কিম করলেও তা সরকারি কেউই তা গ্রহণ করতে চাননি। কারণ, তাঁরা জানেন এই নিজেরাই শর্ষের ভেতর ভূত লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু এটা সংস্কার করে তা যদি সবার জন্য বাধ্যতামূলক করত, তাহলে অনেক খরচ বেঁচে যেত। শুধু সরকারের খরচই না, সামাজিক নিরাপত্তাও ভূমিকা রাখতে পারত।
ট্যাক্স হতে হবে সর্বজনীনআমরা ৯৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের মানুষজন, আয়কর দিচ্ছেন মূল বেতনসহ সব ভাতার ওপর। আর সরকারি চাকরিজীবীরা দিচ্ছেন শুধু বেসিক বা মূল বেতনের ওপর। এই কারণেই আসলে তাঁরা চান না বেতনকাঠামো বেসিক কাঠামো থেকে সরে আধুনিক হোক। কিন্তু এই আইন দেশে দ্বৈত আইনের উদাহরণ, যা সাংবিধানিকভাবে অবৈধ।
দায় নিতে হবে সরকারি চাকরিজীবীদের২০১৫ সালে যখন শেষ পে স্কেল হয়, তখন বলা হয়েছিল আর পে স্কেল হবে না। দুর্নীতি কমবে। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে? দেশে যে বিশাল দুর্নীতির টাকা পাচার হয়েছে, তার একটা বিশাল অংশের দায় সরকারি চাকরিজীবীদের একটা অংশের।
তারপর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও তাদের ছিল। সেই দায় পালনে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। যদি তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারত, তাহলে নতুন পে স্কেলের দাবি আসত না। শুধু তা–ই নয়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের চাহিদামতো তারা মূল্যস্ফীতির মিথ্যা ডেটা দেখিয়ে এসেছে। ২০১৫ থেকে যদি আমরা সরকারি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাঁদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এবং বিভিন্ন মহার্ঘ ভাতার সমন্বয় করি, তাহলে তাঁদের বর্তমান বেতনের সঙ্গে তা গত বছরের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পর কাগজে–কলমে সমন্বয় হয়ে যায়।
তাহলে পে স্কেলের দাবি কেন? এখন তাঁরা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করেন। অন্য মধ্যম আয়ের দেশে যেখানে কর জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশের ওপর, সেখানে গত বছর আমাদের ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আয় বাড়ানোর দায়িত্ব কার? আপনারা নিজেরদের কাজে ব্যর্থ, সেখানে প্রাইভেট সেক্টর হলে চাকরি নিয়ে টানাটানি থাকত আর আপনারা বেতন বাড়াতে বলেন? হ্যাঁ! এই অযোগ্যতার বলি হচ্ছে সৎ পরিশ্রমী মানুষজন।
এখন নিজেরা কি নিজেদের ভুল বা ব্যর্থতা বুঝতে পারবেন? না বুঝলে তো প্রতিবছরই একই অবস্থা হবে। নিজেদের ভুল না বুঝলে সংশোধন কীভাবে হবে?
মূল্যস্ফীতি কমানো হওয়া উচিত মূল লক্ষ্যএই দেশে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য স্নাতক পাস শিক্ষার্থীর শুরুতে সর্বমোট বেতন ২৫ হাজারের বেশি খুব একটা হয় না। যেখানে সরকারি ৯ম গ্রেডে যোগ দিলে মোট সুবিধা প্রায় ৬০ হাজার টাকার সমতুল্য সিটিজি। এখন পে স্কেল হওয়ার পর মার্কেটে একটা এলোমেলো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। চাকরির বাজারে তো অবশ্যই, সঙ্গে বাজারে। আমাদের মূল্যস্ফীতি যেখানে ৫ শতাংশে চলে আসার কথা ছিল, তা এখনো ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এখন এই নতুন পে স্কেল কি নতুনভাবে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ানোর কাজ করবে না? আসল কাজ হওয়া উচিত ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। তাঁরা এই কাজে ব্যর্থ শুধু না, এই ব্যর্থতাকে দেখিয়ে এখন আরও মূল্যস্ফীতি বাড়ানোরই কাজ করা হচ্ছে।
নিজেদের জন্য নিজেরাই যখন প্রস্তাবকসরকারি অন্য কমিশনগুলা খুব ধীরগতিতে কাজ করলেও পে কমিশন প্রতিদিনই মিটিং করছে নিজেদের অংশীজনদের সঙ্গে। কিন্তু তারা সংস্কারের কাজ না করে, নিজেদের বলয়ের মধ্যে কথা বলছে। একটা জনমত জরিপের ফরম অনলাইনে ছাড়া হয়েছে, তা এমনভাবে করা হয়েছে, নিজেদের চাওয়া উত্তরগুলোই যেন আসে। কমিটিতে কোনো এইচআর বা মানবসম্পদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদ নেই।
কথা বলা হচ্ছে না মূল অংশীদার বেসরকারি খাত নিয়ে, যারা এই অর্থ বরাদ্দ দেয়। প্রথম আলোর জরিপ মতে, ৬৮ শতাংশ ট্যাক্সদাতা মনে করেন সরকারি কর্মচারীরা পর্যাপ্ত সুবিধা পান। আমরা যদি পুরো বেতনকাঠামো আর পেশাগত দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আধুনিক এইচআর বা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার রীতি অনুসারে ঠিক না করে, আবারও ৫ বছর পর আরেকটি পে কমিশনের জন্য পথ রেখে যাচ্ছি।
আগামী বছর আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সরকার আসবে, এ ছাড়া নভেম্বরে আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ ঘটবে, তখন আমাদের অনেক সুবিধা বাতিল হবে। তখন দরকার ব্যয় সংকোচন।
হ্যাঁ! আমাদের সৎ কর্মচারীরা সমস্যায় আছেন। এই সমস্যা যাতে বারবার না হয়, তার জন্য দরকার পুরো কাঠামোর টেকসই সংস্কার। সরকারি পে স্কেল সংস্কার প্রয়োজন, তবে তা হতে হবে স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামোর ভিত্তিতে। দুর্নীতিগ্রস্তদের বাদ দিয়ে, সিটিজি কাঠামোতে, সর্বজনীন ট্যাক্স ও পেনশন ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি ন্যায্য ও টেকসই পে স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে, সরকারি খাতের বাইরের জনগণের ওপর চাপ বাড়তেই থাকবে, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক
*মতামত লেখকের নিজস্ব