দেশে চলতি বছরের অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮৬টি। নিহত হয়েছেন ৪৪১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি—১৩৭ জন নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়; যা মোট নিহতের ৩১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

গত সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ১৩ দশমিক ৯ জন নিহত হন। আর অক্টোবর মাসে প্রতিদিন নিহত হয়েছেন গড়ে ১৪ দশমিক ৭ জন। তবে সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়লেও প্রাণহানি কমেছে। সেপ্টেম্বরে ১৫১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৩ জন নিহত হন। অক্টোবরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে ১৯২টি।

আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ১২৮ জন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে সকালে। এই মাসে সড়কে ৯৮ জন পথচারী প্রাণ হারিয়েছেন। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬২ জন। এ ছাড়া অক্টোবরে ১১টি নৌ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৪৬টি রেল দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে যানবাহনভিত্তিক নিহত মানুষের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অক্টোবরে বাস যাত্রী ৩০ জন, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ-ট্রলির আরোহী ২৪ জন, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস আরোহী ৭ জন, থ্রি হুইলারের যাত্রী ১০৩ জন, নছিমন–ভটভটি-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্রের যাত্রী ৩৪ জন, রিকশা ও বাইসাইকেল আরোহী ৮ জন নিহত হয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় ঢাকায়

বিভাগভিত্তিক নিহতের হিসাবে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসে ঢাকা বিভাগের সড়কে সবচেয়ে বেশি—১২১টি দুর্ঘটনায় ১১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা মোট মৃত্যুর ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম—২৬টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন।

সকালে দুর্ঘটনা বেশি

এ ছাড়া অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি ২৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে সকালে। আর ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে রাতে। এ ছাড়া ভোরে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, দুপুরে ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ, বিকেলে ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং সন্ধ্যায় ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিরোধে সুপারিশ

সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে হবে; পরিবহনমালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌপথ সংস্কার করে সড়কপথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ বাস্তবায়ন করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ল দ র ঘটন য় ক দ র ঘটন পর বহন সবচ য় দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

রোনালদোকে সামনে বসিয়ে কী বললেন ট্রাম্প

গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া এক জমকালো নৈশভোজে হাজির ছিলেন ফুটবল মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে সম্মান জানাতে আয়োজিত এই ভোজে দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ছিলেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক, টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কসহ বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা।

অনুষ্ঠানে রোনালদোকে ইস্ট রুমের সামনের দিকে বসানো হয়। সেখানেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ক্রাউন প্রিন্স অতিথিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। বক্তব্যের মধ্যেই রোনালদোর উপস্থিতিকে আলাদা করে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। জানান, তিনি রোনালদোকে তাঁর ১৯ বছর বয়সী ছেলে ব্যারন ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

রোনালদোকে ধন্যবাদ জানিয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার ছেলে রোনালদোর বড় ভক্ত। রোনালদো যেখানে, সে-ও সেখানে থাকতে চায়। ব্যারন আজ তাকে সরাসরি দেখা করার সুযোগ পেয়েছে। আর আমার মনে হয়, শুধু তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পেরেছি বলেই সে এখন তার বাবাকে একটু বেশি সম্মান করছে।’

আরও পড়ুনট্রাম্পকে ‘শান্তির জন্য খেলা’র বার্তা লিখে জার্সি উপহার রোনালদোর১৮ জুন ২০২৫

ট্রাম্পকে ঘিরে রোনালদো এর আগেও বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছেন। চলতি বছরের জুনে নিজে স্বাক্ষর করা জার্সি উপহার পাঠান তিনি। পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা কানাডার আলবার্টার কানানাসকিসে ট্রাম্পকে বিশেষ সেই জার্সি তুলে দেন। এরপর কদিন আগে পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে নিয়ে রোনালদো বলেন, ‘তিনি এমন একজন ব্যক্তি, যিনি বিশ্বের পরিবর্তন ঘটাতে বা পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারেন।’

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে রোনালদোদের এই সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হলে দীর্ঘ সময় যুক্তরাষ্ট্রে যাননি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে খাসোগি হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের মূল্যায়নে জানিয়েছিল, এই অপারেশন অনুমোদন করে থাকতে পারেন ক্রাউন প্রিন্স। তবে প্রিন্স শুরু থেকেই অভিযোগটি অস্বীকার করে আসছেন। সব মিলিয়ে তাঁর এই সফরকে তাই বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুনরোনালদো কি সত্যিই বিশ্বকাপে ১-২ ম্যাচ মিস করবেন, কীভাবে১৬ নভেম্বর ২০২৫

রোনালদোও অনেক দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন। এই দেশে তিনি সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৪ সালে। তবে তাঁর সামনে আবার এক বড় যাত্রা অপেক্ষা করছে। আগামী বছর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে তাঁকে আবারও যুক্তরাষ্ট্রে আসতে হবে।

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হবে ৫ ডিসেম্বর, ওয়াশিংটনের কেনেডি সেন্টারে। সেখানে থাকার কথা আছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরও। ২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আগ্রহ এখন প্রায় উচ্ছ্বাসের পর্যায়ে। ইতিমধ্যেই তিনি নানা মন্তব্য করে সেই আগ্রহের প্রমাণ দিয়েছেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ