জ্যোতির্বিজ্ঞানকে প্রাচীন আরবে বলা হতো ‘ইলমুল হাইয়া’। তাশ কুবরি জাদা এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, এটি এমন এক বিদ্যা, যা মহাজাগতিক আর পার্থিব বস্তুগুলোর অবস্থা জানতে সাহায্য করে। তাদের আকৃতি, অবস্থান, পরিমাপ আর পারস্পরিক দূরত্ব বুঝতে শেখায়। (তাশ কুবরি জাদা, মিফতাহুস সাআদাহ, ১/৩৭২)

অন্যদিকে ‘ইখওয়ানুস সাফা’ দার্শনিকগোষ্ঠী তাঁদের বিখ্যাত দার্শনিক পত্রগুচ্ছের (রাসায়েল) তৃতীয় পত্রে এ বিষয়টিকে একটু অন্যভাবে দেখেছেন। তাঁদের মতে, নক্ষত্রবিদ্যার (ইলমুন নুজুম) তিনটি ভাগ আছে। এর প্রথম ভাগের কাজ হলো মহাকাশের গঠন জানা। নক্ষত্র আর গ্রহের সংখ্যা গোনা। রাশিচক্রের ভাগগুলো বোঝা। তাদের দূরত্ব, আকার আর গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা। এই শাখারই নাম—ইলমুল হাইয়া বা জ্যোতির্বিজ্ঞান।

দ্বিতীয় ভাগের কাজ হলো পঞ্জিকা বানানো, দিন-তারিখ বের করা আর এ–জাতীয় অন্যান্য বিষয়।

আর তৃতীয় ভাগ হলো—ফলিত জ্যোতিষ। এর কাজ হলো মহাকাশের গতিপ্রকৃতি, রাশিচক্রের ওঠানামা আর গ্রহ-নক্ষত্রের চলন দেখে পৃথিবীর সবকিছুর ওপর তার প্রভাববিচার করা। এই শাখার নাম ‘ইলমুল আহকাম’ বা ভাগ্য গণনার বিদ্যা। (ইখওয়ানুস সাফা, রাসায়েল, ১/৩৭২)

জাহেলি যুগ

ইসলাম আসার আগেও আরবরা যে জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূলবিষয়গুলো নিয়ে কিছুটা জানত, তার প্রমাণ পাওয়া যায় জাহিলি যুগের কবিতায়। পবিত্র কোরআনও সেই জ্ঞানকে স্বীকার করে নিয়েছে। তবে তাদের এই জ্ঞান কোনো নিয়মমাফিক পড়াশোনার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেনি। কিছু সাধারণ প্রয়োজনের বাইরেও তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিশেষ এগোতে পারেনি। (আহমাদ আবদুর রাজিক, আল-হাযারাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল উসুরিল উসতা, পৃ.

৬৬)

আরও পড়ুনমুসলিম সমাজকে বিজ্ঞানমুখী করার উপায়০২ আগস্ট ২০২৫

উমাইয়া যুগ

ইসলামের উষালগ্নে এবং উমাইয়া যুগেও অবস্থাটা প্রায় অপরিবর্তিত ছিল।

তবে ১২৫ হিজরিতে (৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দ), অর্থাৎ উমাইয়াদের পতনের মাত্র সাত বছর আগে, জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর একটি বই অনুবাদ করা হয়েছিল। বইটি ছিল দার্শনিক হারমাসেরলেখা ‘মিফতাহুন নুজুম’ (নক্ষত্র-চাবি)। বইটির বিষয় ছিল বিশ্বের নানা পালাবদল আর তার ওপর ভিত্তি করে করা ভাগ্যগণনা। (কাদরী হাফেজ তুকান, আল-উলুম ইনদাল আরব, পৃ. ৬০)

এই সূত্রে একটি ঘটনার কথাও বলা হয়ে থাকে। শোনা যায়, ফাতেমীয় উজির আবুল কাসিম আলী ইবনে মুহাম্মদ আল-জারজারানি ৪৩৫ হিজরিতে (১০৪৪ খ্রিষ্টাব্দ) রাজকীয় গ্রন্থাগারে টলেমির হাতে গড়া পিতলের একটি গোলক খুঁজে পেয়েছিলেন। তার গায়ে খোদাই করা ছিল: ‘এই গোলকটি শাহজাদা খালিদ বিন ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার কাছ থেকে আনা হয়েছে।’ (জামালুদ্দিন কিফতি, ইখবারুল উলামা বি-আখবারিল হুকামা, পৃ. ২৮৬)

এই খালিদ ছিলেন উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের নাতি। এখান থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি খালিদ বিন ইয়াজিদের গভীর আগ্রহ ফুটে ওঠে।

আল-মনসুরের যুগ

ঐতিহাসিকেরা একমত, আব্বাসীয় খলিফাদের মধ্যে এই জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিকে প্রথম নজর দেন দ্বিতীয় খলিফা আবু জাফর আল-মনসুর। তিনিই প্রথম জ্যোতিষীদের নিজের কাছে টেনে নেন। আর তাঁদের পরামর্শ মতো কাজ করতে শুরু করেন।

কিফতির বর্ণনা থেকে জানা যায়, নওবখত নামে এক পারসিক জ্যোতিষী ছিলেন মনসুরের নিত্যসঙ্গী। যখন নওবখত বার্ধক্যে কাবু হয়ে পড়লেন, তখন তাঁর জায়গায় কাজ করার জন্য মনসুর নওবখতের ছেলে আবু সাহল ইবনে নওবখতকে ডেকে পাঠালেন।

কিফতির ভাষায়, আবু সাহলও ছিলেন তাঁর পিতার মতোই বিচক্ষণ। গ্রহ-নক্ষত্রের মিলন আর তার ফলাফল গণনায় তিনি ছিলেন রীতিমতো বিশেষজ্ঞ। (জামালুদ্দিন কিফতি, ইখবারুল উলামা বি-আখবারিল হুকামা, পৃ. ২৬৬-২৬৭)

জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনুবাদ

খলিফা মনসুরের আগ্রহ শুধু গ্রহ-নক্ষত্র দেখে ভাগ্য গণনার মধ্যেই আটকে ছিল না। বাগদাদ শহর পত্তনের অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি খাঁটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের পুনরুজ্জীবনে উদ্যোগী হলেন। এই কাজে তিনি সাহায্য চাইলেন ভারতীয় পণ্ডিতদের। তাঁদের লেখা গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদ করার জন্য ফরমান জারি করলেন।

সিন্ধু থেকে এক প্রতিনিধি দল এল বাগদাদে। সালটা ছিল ১৫৪ হিজরি (৭৭০ খ্রিষ্টাব্দ)। সেই দলেই ছিলেন এক ভারতীয় পণ্ডিত। নাম তাঁর মানকা, বা মতান্তরে কানকা। ভারতীয় ধারার জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিনি ছিলেন এক গভীর জ্ঞানী। সঙ্গে করে তিনি নিয়ে এসেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর লেখা একটি বই।

আরও পড়ুনজাকাত ও ওয়াকফ: ত্রাণ থেকে টেকসই উন্নয়নের ভাবনা২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রাচীন ভারতীয় ভাষা সংস্কৃতে লেখা বইটির নাম ‘সিদ্ধান্ত’। আর তার লেখক ছিলেন কিংবদন্তি জ্যোতির্বিদ আর গণিতজ্ঞ ব্রহ্মগুপ্ত। (জামালুদ্দিন কিফতি, ইখবারুল উলামা বি-আখবারিল হুকামা, পৃ. ১৭৭)

আরবিতে এসে ‘সিদ্ধান্ত’ শব্দটি একটুখানি বদলে গেল। মুখে মুখে ঘুরতে ঘুরতে, সংক্ষেপ করতে গিয়ে, বা অন্য কোনো ভাষাগত কারণে, তা হয়ে দাঁড়াল ‘আস-সিন্ধিন্দ’। এই নতুন নামটির মধ্যে ভারতের দুটি অংশের—অর্থাৎ সিন্ধু আর হিন্দের—আরবি নামের একটা ছায়া এসে পড়েছিল। (ইগনাটি ক্রাচকভস্কি, তারিখুল আদাবিল জুগরাফিল আরাবি, ১/৭০)

খলিফা মনসুর তখন বাগদাদে আসা সেই ভারতীয় পণ্ডিতকে বইটির একটি সারসংক্ষেপ বলে যাওয়ার জন্য ভার দিলেন। তারপর ফরমান দিলেন, সেটিকে আরবিতে অনুবাদ করার। তাঁর লক্ষ্য ছিল, এর থেকে এমন একটি বই তৈরি করা, যা আরবরা গ্রহ-নাক্ষত্রিক গতিবিধি বোঝার জন্য মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। (জামালুদ্দিন কিফতি, ইখবারুল উলামা বি-আখবারিল হুকামা, পৃ. ১৭৭)

এ ছাড়া ভারত, গ্রিক ও পারস্যের অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই তখন অনূদিত হয়েছিল।

জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিকাশে মুসলিমদের অবদান

আরব ও মুসলিম বিজ্ঞানীরা তাঁদের জ্ঞানচর্চার একেবারে শুরুতে, আব্বাসীয় খলিফাদের পৃষ্ঠপোষকতায়, জ্যোতির্বিজ্ঞানের যত বই খুঁজে পেয়েছিলেন, তার সবই অনুবাদ করেছিলেন।

কিন্তু তাঁদের কাজ শুধু এই অনুবাদের মধ্যেই থেমে থাকেনি। তাঁরা শুধু অনূদিত বইগুলোর ওপর টিকা-টিপ্পনী কেটেই সন্তুষ্ট হননি। তাঁরা এগিয়ে গিয়েছিলেন মৌলিক সৃষ্টির পথে। এই প্রাচীন বিদ্যাটির সামনে খুলে দিয়েছিলেন এক নতুন দিগন্ত। ভুলগুলো শুধরে নিয়েছিলেন, আর যোগ করেছিলেন বহু জরুরি নতুন তথ্য।

প্রথম দিকে তাঁরা অনূদিত বইগুলোর দেখানো পথেই হাঁটতেন, যেমনটা তাঁরা করেছিলেন অন্যান্য পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও। কিন্তু তৃতীয় হিজরি বা নবম খ্রিষ্টাব্দ থেকে সেই ছবিটা আমূল বদলে যায়।

বাগদাদের জ্যোতির্বিদ আবুল ওয়াফা মুহাম্মদ আল-বুযজানি প্রথম দেখান, চাঁদের গতি সব সময় এক থাকে না, বছর-বছর তা বদলায়। এই ব্যাপারটিকে ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি একটি সমীকরণও তৈরি করেন, যার নাম দেন ‘গতির সমীকরণ’ (পৃথিবীর টানে চাঁদের গতিতে যে তারতম্য হয়, তারই হিসাব)।

অথচ এই আবিষ্কারটি ডেনমার্কের জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহের (১৫৪৬-১৬০১) নামে চালিয়ে দেওয়া হয়।

ডক্টর নাফিস আহমেদ এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘বুযজানি ৩৮৫ হিজরিতে (৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ) আকাশ পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাঁর বিখ্যাত আয-যিজুশ শামিল গ্রন্থটি তৈরি করেন। চাঁদের বিষয়ে টলেমির তত্ত্বের ভুলগুলো তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল। আর সেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি চাঁদের গতির তৃতীয় একটি তারতম্য খুঁজে পান—ঠিক সেই জিনিসটিই, যা তাঁর প্রায় ছয় শ বছর পর টাইকো ব্রাহে ‘আবিষ্কার’ করেছিলেন।’ (নাফিস আহমেদ, জুহুদুল মুসলিমিন ফিল জুগরাফিয়া, পৃ. ১৫৬)

বুযজানির এই তত্ত্বের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে প্রখ্যাত ফরাসি প্রাচ্যবিদ ইউজিন সেডিলোট বলেছেন:ট, ‘এইভাবেই মুসলিম সভ্যতা কোনো দুরবিন বা টেলিস্কোপ ছাড়াই জ্যোতির্বিজ্ঞানে জ্ঞানের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গিয়েছিল।’ (নাফিস আহমেদ, জুহুদুল মুসলিমিন ফিল জুগরাফিয়া, পৃ. ১৫৬)

[email protected]

আবদুল্লাহিল বাকি: লেখক, আলেম ও সফটওয়্যার প্রকৌশলী

আরও পড়ুনমুসলিম সভ্যতায় দরিদ্রদের চিকিৎসাসেবা০৩ নভেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ল ন র জন য গ রহ ন প রথম আহম দ র ওপর র একট মনস র

এছাড়াও পড়ুন:

রাবি প্রেসক্লাবের বর্ষসেরা রিপোর্টার হলেন রাইজিংবিডির ফাহিম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রেসক্লাবের বর্ষসেরা রিপোর্টার নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডির প্রতিনিধি ফাহমিদুর রহমান ফাহিম। তিনি রাবি প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফাহিম ছাড়াও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে আরো সাতজন বর্ষসেরা রিপোর্টার নির্বাচিত হয়েছেন।

আরো পড়ুন:

মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ

ভুয়া তথ্য প্রচার ঠেকাতে গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা 

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে সিনেট ভবনে আয়োজিত ‘জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশের গণমাধ্যম; স্বাধীনতা, নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

ফিচার ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা রিপোর্টার নির্বাচিত হয়েছেন রাইজিংবিডির রাবি প্রতিনিধি ফাহমিদুর রহমান ফাহিম, বিশেষ ক্যাটাগরিতে কালবেলার রাবি প্রতিনিধি আজহারুল ইসলাম তুহিন, গবেষণা ক্যাটাগরিতে আবু ছালেহ শোয়েব।

এছাড়া ডেইলি ইভেন্টে যৌথভাবে সৈয়দ মাহিন, নাসিমুল মুহিত ইফাত ও বিপ্লব উদ্দিন এবং উদীয়মান ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে মো. রাফসান আলম ও জুবায়ের হোসাইন নির্বাচিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে অনূভুতি জানিয়ে ফাহিম বলেন, “এটি আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এই স্বীকৃতি শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সিনিয়র–জুনিয়রসহ প্রেসক্লাব পরিবারের সবার সহযোগিতার ফল। সিনিয়রদের দিকনির্দেশনা, সমর্থন আমাকে দায়িত্বশীল হতে শিখিয়েছে। একইসঙ্গে জুনিয়রদের প্রাণশক্তি, কৌতূহল ও সহযোগিতা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে।”

তিনি বলেন, “আজ বর্ষসেরা রিপোর্টার নির্বাচিত হয়েছি। আমি মনে করছি, এতে আমার দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। এই সম্মান আমাকে আরো নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহ দেবে।”

সভায় প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন মাহিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.সালেহ হাসান নকীব।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান ও রাবি প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ফজলুল হক প্রমুখ।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ