ময়মনসিংহে বন্ধুকে কুপিয়ে হত্যার পর তরুণ কুড়াল হাতে থানায়
Published: 28th, November 2025 GMT
ময়মনসিংহের ত্রিশালে সরকারি নজরুল একাডেমি মাঠে মুনতাসির ফাহিম (২২) নামের এক তরুণ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হয়েছেন। তাঁর বন্ধু অহিদুল ইসলামের (২২) বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মুনতাসির ফাহিম ত্রিশাল ইউনিয়নের চিকনা মনোহর গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে। অভিযুক্ত অহিদুল ইসলাম ত্রিশাল পৌরসভার দরিরামপুর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে।
নিহত তরুণের স্বজনেরা জানান, মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন মুনতাসির ফাহিম। চার মাস আগে দেশে আসেন তিনি। আগামী শনিবার তাঁর মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল; ২৫ ডিসেম্বর ক্লাস শুরু হওয়ার কথা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত নয়টার দিকে একটি ‘চায়নিজ কুড়াল’ হাতে নিয়ে থানায় হাজির হন অহিদুল ইসলাম। তিনি পুলিশকে বলেন, ‘ফাহিম আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে, তাই তাকে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছি।’ এমন কথা শোনার পর পুলিশ তাঁকে আটক করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমি স্কুল মাঠে যায়। মাঠের পূর্ব পাশের পানির ট্যাংকের পাশে ফাহিমের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
নিহত ফাহিমের বাবা রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘কেন আমার ছেলেকে হত্যা করল জানি না। কী ক্ষোভ ছিল? আমার ছেলে তো দেশেই থাকত না। এমন নির্মমভাবে আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করল?’
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, ওই দুই তরুণ ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। হত্যার পর অভিযুক্ত তরুণ থানায় এসে বলতে থাকেন, তাঁর জীবন নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তাই তিনি ফাহিমকে হত্যা করেছেন। এর বেশি কিছু জানাননি। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে। আটক তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যার কারণ বের করা হবে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভিক্টোরিয়ায় চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যু, স্বজনরা জানলো দুইদিন পর
শহরের নিতাইগঞ্জের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি। প্রথমে সে জরুরী বিভাগে থাকা ডাক্তারকে দেখান। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি ডাক্তারের কাছে।
কার্ডিওলজি ডাক্তার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করে এসে ডাক্তারের সামনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২৪ নভেম্বর (সোমবার) সকালে এ ঘটনাটি ঘটে।
মৃত্যু ব্যক্তিটির নাম আব্দুল জব্বার। তিনি ফতুল্লা থানাধীন পূর্ব সস্তাপুর এলাকায় অস্থায়ী বাসিন্দা। তার গ্রামের বাসা ময়মনসিংহ জেলায়। পেশায় তিনি ছিলেন মাছ বিক্রেতা।
এদিকে তার মৃত্যুবরণ হাসপাতালে এক প্রকার হৈচৈ পড়ে যায়। কারণ, তার সাথে কোন স্বজন ছিলো না। ফলে কার কাছে লাশটি বুুঝিয়ে দিবেন সেই লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। ফলে শুরু হয় লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান। কিন্তু স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি রাখা হয় হিমঘরে।
গত দুইদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান করা হয়। কিন্তু কোনভাবেই স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি অজ্ঞাতভাবে লাফন করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ আবেদনটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন হাসপাতালের অফিস সহায়ক সাউদ নূরে শফিউল কাদের। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে যাওয়ার পর পরই তাকে হাসপাতাল থেকে কল করে বলা হয়, ‘লাশটির স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেছে। আপনি দ্রুত হাসপাতালে চলে আসুন।’
এদিকে জরুরী বিভাগের পাশে লাশকাটা ঘরের সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে আছে মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আমির হামজা। তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, তারা পিতা মারা গেছে। একদম জলজ্যান্ত মানুষটি বাসা থেকে অনেকটাই সুস্থভাবেই বেড়িয়ে আসলেন, অথচ তিনি আজ মৃত। এসব ভেবেই তিনি অনেকটাই দুঃখে শোকে কাতর। এমন পরিস্থিতিতে তার বক্তব্য নেয়ার সুযোগ ছিলো না।
তবে এ বিষয়ে মৃত আব্দুল জব্বারের চাচাতো ভাই মো: মফিজুল ইসলাম বলেন, যথারীতি ২৪ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন আব্দুল জব্বার। তার পর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাইনি। আমরা তাকে গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করছি।
কিন্তু পাই নি। আজ সকালে আমাদের এলাকারই এক মহিলা বলে, ওনাকে নাকি এ হাসপাতালে দেখছে। তার কথা শুনে আমরা এ হাসপাতালে এসে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারি, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে তিনি মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহে নিয়ে যাবো এবং ওখানে দাফন করবো।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির ওয়ার্ড মাষ্টার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তিনি প্রথমে জরুরী বিভাগে আসেন। সেখান থেকে তাকে ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি স্যারের কাছে পাঠানো হয়। স্যার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু হঠাৎ করেই স্যারের রুমে মাটিতে পড়ে যান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, আমরা তার স্বজনদের খোঁজ পেতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাই নি। আজ তাই ডিসি স্যারের কাছে লিখিত আবেদন নিয়ে পাঠিয়েছিলা যে, এ লাশটি এখন কি করবো। তার নির্দেশনা আসলে আমরা তাকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন করতাম।
আল্লাহ্’র রহমতে এর আগেই তার স্বজনরা চলে আসছে। আমরা মৃত ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য ও ছবির সাথে মিলিয়ে এবং যাচাই করে এ স্বজনদের হাতে লাশটি বুঝিয়ে দিচ্ছি।