তীব্র শীতে কাঁপছে দিনাজপুর। বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষরা। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে জেলা আবহাওয়া অফিস।

দিনাজপুর জেলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, আজ দিনাজপুরে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫.

০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯১ শতাংশ।

তিনি আরো জানান, শুক্রবার সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়ায় (পঞ্চগড়) ১৩.৫, সৈয়দপুরে ১৫.১, ডিমলায় (নীলফামারী) ১৬.৫, বগুড়ায় ১৬.৪, ঈশ্বরদীতে (পাবনা) ১৪.৫, রাজশাহীতে ১৪.৬, রাজারহাটে (কুড়িগ্রাম) ১৫.০, বদলগাছিতে (নওগাঁ) ১৪.০, চুয়াডাঙ্গায় ১৪.৮ এবং শ্রীমঙ্গলে (মৌলভীবাজার) ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। 

ঢাকা/মোসলেম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষাব্যবস্থায় টিউশননির্ভরতা, সমাধান কোথায়

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমেই টিউশননির্ভর হয়ে উঠছে। স্কুল-কলেজে নিয়মিত ক্লাস থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশন ছাড়া স্বচ্ছন্দ বোধ করে না। ফলে শিক্ষার মান, শিক্ষকের ভূমিকা ও পারিবারিক ব্যয়—সবকিছুতেই সৃষ্টি হচ্ছে এক অদৃশ্য চাপ।

টিউশননির্ভরতার প্রধান কারণ হলো শ্রেণিকক্ষে কার্যকর পাঠদানের অভাব। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসংখ্যা বেশি, শিক্ষক কম; ফলে ব্যক্তিগত মনোযোগ পাওয়া কঠিন। অনেক শিক্ষক স্কুলের ক্লাসে কম মনোযোগ দিয়ে টিউশনকে আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করেন। ফলে শিক্ষার্থীরা মনে করে, ভালোভাবে বোঝার জন্য দায়বদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নয়; বরং ব্যক্তিগত কোচিংয়ে যেতে হবে। এ ধারণা ধীরে ধীরে সমাজে স্বাভাবিক ও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে অভিভাবকেরাও নিরাপত্তার চাদর হিসেবে টিউশনকে বেছে নেন। তাঁদের বিশ্বাস, টিউশন ছাড়া সন্তান প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। এতে শিক্ষাগত ব্যয় অযথা বেড়ে যাচ্ছে, আর শিক্ষার্থীরা জ্ঞান নয়, শুধু পরীক্ষাকেন্দ্রিক প্রস্তুতিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।

সমাধান খুঁজতে হলে প্রথমে প্রয়োজন স্কুল ও কলেজে পাঠদানের মান উন্নয়ন। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা, প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি এবং শ্রেণিকক্ষে আধুনিক শিক্ষণ-পদ্ধতি কার্যকর করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের ছোট দলে বিভক্ত করে ‘ফোকাসড লার্নিং’ চালু করা যেতে পারে। পাশাপাশি অভিভাবকদের বোঝাতে হবে—শিক্ষার আসল শক্তি হচ্ছে বোঝাপড়া, শুধু মুখস্থবিদ্যায় নয়।

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত থাকলেও টিউশন ছাড়া আত্মবিশ্বাস পায় না। ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের যথেষ্ট মনোযোগ না পাওয়াই টিউশননির্ভরতার প্রধান কারণ। অন্যদিকে ৫২ শতাংশ অভিভাবক বিশ্বাস করেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য টিউশন অপরিহার্য। আকর্ষণীয়ভাবে, ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায়, টিউশন তাদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ায়। জরিপে আরও উঠে এসেছে, ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী চায়, স্কুলেই যদি মানসম্মত পাঠদান হতো, তবে টিউশনের প্রয়োজন অনেকটাই কমে যেত।

টিউশননির্ভরতা কমাতে সবচেয়ে জরুরি হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল ক্লাসকে কার্যকর ও আকর্ষণীয় করে তোলা। প্রথমত, শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ ও নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যাতে তাঁরা আধুনিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব পদ্ধতিতে পাঠদান করতে পারেন। শ্রেণিকক্ষ ছোট দলে ভাগ করে ‘ফোকাসড লার্নিং’ ব্যবস্থা চালু করলে প্রতিটি শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত মনোযোগ পাবে এবং টিউশনের প্রয়োজন কমবে। অভিভাবকদের সচেতন করাও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের বোঝাতে হবে, সন্তানকে টিউশনের চাপ নয়; বরং বাড়িতে পড়ার অভ্যাস, সময় ব্যবস্থাপনা ও স্বনির্ভর শেখার দক্ষতা গড়ে তোলা বেশি জরুরি। টিউশনকে অপরিহার্য হিসেবে নয়; বরং অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে দেখার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

সবশেষে স্কুলে একটি ‘হেল্প সেশন’ বা ‘রেমিডিয়াল ক্লাস’ চালু করা যেতে পারে, যেখানে দুর্বল শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত সহায়তা পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান ও জবাবদিহি বাড়াতে পারলেই ধীরে ধীরে টিউশননির্ভরতার চক্র ভাঙা সম্ভব।

টিউশননির্ভরতা যে ক্ষতিকর চক্র তৈরি করেছে, তা ভাঙতে হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে মৌলিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। মূল ক্লাসকে কার্যকর করা, শিক্ষকের দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীর বোঝাপড়া নিশ্চিত করাই সমাধানের প্রকৃত পথ। টিউশন বিকল্প সহায়তা হতে পারে, কিন্তু মূল শিক্ষা কখনোই নয়। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষ—সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারব, যেখানে টিউশনের ওপর চাপ কমে গিয়ে স্কুলই হবে শেখার প্রধান ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ স্থান। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থাই টিউশননির্ভরতা কমানোর সর্বশেষ উপসংহার।

সানিয়া তাসনিম শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ