ব্যক্তিস্বার্থে সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধে সুপারিশ
Published: 15th, January 2025 GMT
ব্যক্তিস্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধের সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন। বুধবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চার সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এই প্রতিবেদনে দুদক মোট ৪৭টি সুপারিশ তুলে ধরেছে।
রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার অংশে প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২০ (২) এইরূপভাবে প্রতিস্থাপন করতে হবে ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে, যেখানে সাধারণ নীতি হিসেবে কোনো ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করিতে পারবে না এবং অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে সমর্থ হবেন না এবং যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিমূলক ও কায়িক, সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর অভিব্যক্তিতে পরিণত হবে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আলু দিয়ে রসমালাই, পায়েস, পেঁয়াজুসহ আরও কত কিছু বানানো যায়
‘আমি জানতাম আলু দিয়ে চিপস আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানানো হয়। কিন্তু এখানে এসে তো দেখলাম অন্য বিষয়। আলু দিয়ে রসমালাই, পায়েস, কেক, কাটলেট, হালুয়া, চানাচুর, পেঁয়াজু, নিমকিসহ নানা পদ বানানো যায়। এখন আমি বাসাতে এগুলো বানানোর চেষ্টা করব।’
দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত আলু উৎসবে এসে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা বলছিলেন রাজধানীর বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা শান্তা ফারহানা। তিনি বনশ্রীতে একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। আজ ছুটির দিনে ঘুরতে এসেছেন আলু উৎসবে।
রাজধানীর ৩০০ ফুটসংলগ্ন অবস্থিত আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই দিনব্যাপী এ আলু উৎসব (মেলা) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ শনিবার ছিল মেলার শেষ দিন। মেলা আয়োজন করেছে বাংলাদেশ হিমাগার সমিতি।
আয়োজকেরা জানান, মেলায় আলু উৎপাদন, বিপণন, কৃষি যন্ত্রপাতি, কোল্ড চেইন প্রযুক্তিসহ খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ৬৬টি স্টল রয়েছে।
আলু মেলায় যা দেখা গেলমেলায় আলু থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছিল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) স্টলে।
সেখানে থাকা প্রতিষ্ঠানটির কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ টি এম তানজিমুল ইসলাম বলেন, মূলত আটার পরিবর্তে আলুর ফ্লেক্স ব্যবহার করা হয়। ফলে আটা দিয়ে যেসব পণ্য তৈরি করা যায়, সেগুলো আলু দিয়েও বানানো যায়।
মেলায় থাকা বেশির ভাগ স্টলই আলুর বীজ উৎপাদন ও বিপণন–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান মালিক সিডস।
স্টলে থাকা মালিক সিডসের ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ সুদীপ্ত কৌশিক পাল জানান, তাঁরা নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানি থেকে আলুবীজ এনে সেগুলো কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন।
বর্তমানে প্রধানত তিন ধরনের আলুর বীজ পাওয়া যায়। এক. সাধারণ খাওয়ার আলু, যা টেবিল আলু নামে পরিচিত। দুই. শিল্প বা প্রক্রিয়াজাতের আলু, যা চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আর কিছু প্রজাতি রপ্তানি উপযোগী। যেমন মালিক সিডসের কাছে ১০ প্রজাতির আলুর বীজ রয়েছে। এর মধ্যে সিডনি, মার্কিস, ফন্টেন, সিনোরা, নেপোলিয়ন প্রজাতি হচ্ছে শিল্প আলু। আর ডায়মন্ড, লেভান্তে, এলুয়েট, প্যারাডিসো, রোনমি প্রভৃতি আলু সরাসরি খাওয়ার জন্য।
বারির কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ টি এম তানজিমুল ইসলাম বলেন, দেশে বর্তমানে সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ প্রজাতির আলু রয়েছে। এর মধ্যে বারি উদ্ভাবিত জাত ১০৬টি। বাকিগুলো বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত।
মেলায় ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বড় কোম্পানিও অংশ নিয়েছে। এদের একটি এসিআই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসিআই সিড।
প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক হোসেন সোহরাওয়ার্দী প্রথম আলোকে বলেন, আলুর উন্নত প্রজাতির বীজ আগে প্রায় সবটাই আমদানিনির্ভর ছিল। এখন সেটি কমে দেশীয় সক্ষমতা বেড়েছে। এটি মূলত সম্ভব হয়েছে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে।
হোসেন সোহরাওয়ার্দী বলেন, বিদেশি বীজ থেকে তৈরি আলুগাছ থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে নতুন আলু বীজ (চারা) তৈরি করা হয়। এই বীজ থেকে চার ধাপে উৎপাদিত সার্টিফায়েড বীজ কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। তবে মেধাস্বত্বের বিষয় থাকায় এগুলো সাধারণত রপ্তানি করা যায় না। এ কারণে দেশি অনেক কোম্পানি আলুর বিভিন্ন প্রজাতির সংকরায়ণের মাধ্যমে নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন করেছে। এসব আলু আবার রপ্তানি করা যায়।
হোসেন সোহরাওয়ার্দী আরও জানান, গত বছর তাঁরা মালয়েশিয়ায় প্রায় ৭০০ টন শিল্প আলু রপ্তানি করেছিলেন।
আলুর যন্ত্রপাতিমেলায় একাধিক মেশিনারিজের স্টলও দেখা গেছে। এদের একটি এক্সপার্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশন। প্রতিষ্ঠানটির ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, তাঁরা আলু প্রক্রিয়াজাত করা থেকে মোড়কজাত করা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে থাকেন।
মূলত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের যন্ত্রপাতি তাঁরা সরবরাহ করেন। গ্রাহকের চাহিদার ভিত্তিতে এসব যন্ত্র তাঁরা চীন, ইতালি, জার্মানি, জাপান, লেবানন, তুরস্ক প্রভৃতি দেশ থেকে আমদানি করেন।
মেলা অনুষ্ঠানের হলঘরে প্রবেশ করতেই একটি স্টলে চোখে পড়ে বিশালকায় এক ট্রাক্টর। এটি ভারতের মাহিন্দ্রা কোম্পানির তৈরি। দেশীয় কোম্পানি র্যানকন অ্যাগ্রো মেশিনারি এটির স্থানীয় সরবরাহকারী।
স্টলে থাকা মাহিন্দ্রার বাংলাদেশি কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. সোহেল জোয়ারদার বলেন, এই ট্রাক্টর মাধ্যমে জমির মাটি তুলে সেটি গুঁড়ো করে এবং সমান (লেবেলিং) করে বীজ বপনের উপযোগী করে দেয়। ফলে কৃষকের দুই দিন ধাপের কাজ একবারে হয়ে যায়। এসব ট্রাক্টরের দাম ১২ থেকে ১৮ লাখের মধ্যে। কৃষকদের কাছে এর চাহিদাও রয়েছে। গত মাসে সারা দেশে প্রায় ২০০ ট্রাক্টর বিক্রি হয়েছে।
আলু উৎপাদন, বিপণন, সংরক্ষণ ও রপ্তানি–সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিষ্ঠান এক ছাদের নিচে জড়ো হওয়ায় পণ্যটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ পেয়েছেন মেলায় আগত ব্যবসায়ী-দর্শনার্থীরা।
রাজধানীর গ্রিন রোড থেকে মেলায় ঘুরতে এসেছেন বাণিজ্যিক জাহাজের ক্যাপ্টেন সাইফুল ইসলাম। মালয়েশিয়ায় একটি সুপারশপে অংশীদারত্ব রয়েছে তাঁর।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আলুর বীজ থেকে শুরু করে রাসায়নিক, সার, যন্ত্রপাতি ও উৎপাদিত সব পণ্য সম্পর্কে এখান থেকে জানতে পেরেছি। মালয়েশিয়ায় আমার সুপারশপের জন্য কোন ধরনের আলু বাংলাদেশ থেকে নিতে পারি, সেটিরও একটা ধারণা পাওয়া গেছে।’
আমদানি কমিয়ে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতে জোর দিতে হবেশনিবার বিকেলে আলু রপ্তানির সম্ভাবনা বিষয়ে মেলা প্রাঙ্গণে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের বিশাল খাদ্যপণ্য আমদানি ব্যয় কমাতে কৃষি উৎপাদন, গত বছর আলুর দাম বেশি থাকায় সমস্যা ছিল, আবার এ বছর দাম কম। তাতেও সমস্যা। শুধু রপ্তানির ওপর নির্ভর করে সমস্যার সমাধান হবে না। স্থানীয় ভোগ ও চাহিদা বাড়ানোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আলুর দাম কমলেও ভোগ কেন বাড়ছে না। এর কারণ ও প্রয়োজনীয় উৎপাদনমাত্রা বিশ্লেষণ করা দরকার।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আলু আমাদের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী ফসল ও খাদ্য। ৯০ থেকে ১১০ দিনব্যাপী স্বল্প মেয়াদের এই আলুর ফলন অন্যান্য খাদ্যশস্যের প্রায় তিন গুণ। আলুর এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দেশের অভ্যন্তরে খাদ্য হিসেবে আলুর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে, আলু থেকে প্রক্রিয়াজাতকৃত বিভিন্ন খাদ্য অধিক মাত্রায় উৎপাদন করে এবং গুণগত মানসম্পন্ন আলু বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে।