ব্যক্তিস্বার্থে সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধে সুপারিশ
Published: 15th, January 2025 GMT
ব্যক্তিস্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধের সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন। বুধবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চার সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এই প্রতিবেদনে দুদক মোট ৪৭টি সুপারিশ তুলে ধরেছে।
রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও আইনি সংস্কার অংশে প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২০ (২) এইরূপভাবে প্রতিস্থাপন করতে হবে ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে, যেখানে সাধারণ নীতি হিসেবে কোনো ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করিতে পারবে না এবং অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে সমর্থ হবেন না এবং যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিমূলক ও কায়িক, সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর অভিব্যক্তিতে পরিণত হবে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নরসিংদীতে বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদের নামে সড়কের নামফলক উন্মোচন করলেন উপদেষ্টা ফাওজুল
নরসিংদীর পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কটির নাম বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) সড়ক নামে নামকরণ করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার পাঁচদোনা মোড়ে সড়কটির নামফলক উন্মোচন করেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
এর আগে পাঁচদোনা স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ (কে জি) গুপ্ত স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে নামফলক উন্মোচন উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফাওজুল কবির খান।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা বলেন, আজ ইতিহাসে একটি বিচারের দিন। বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, যিনি দেশ স্বাধীন করেছেন, তাঁকে সদ্য স্বাধীন দেশে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাকারীরা ভেবেছিল সিরাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। কিন্তু নেভাল সিরাজ নিশ্চিহ্ন হননি, পুনর্জাগরিত হয়েছেন। এটাই হচ্ছে ইতিহাসের বিচার। ইতিহাস বিকৃত করা যায়, কিন্তু সত্য একদিন সামনে আসবেই। আজ সড়কটির নামকরণ করা হচ্ছে বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (নেভাল সিরাজ) সড়ক নামে। এভাবেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে নিয়ে আসা হবে।
জেলা প্রশাসন বলছে, বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ পাকিস্তান নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। একাত্তরে নরসিংদীতে ছুটিতে থাকাকালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে আত্মনিয়োগ করেন। ৯ ও ১০ এপ্রিল ইপিআরের সঙ্গে মিলে বাগবাড়ি-পালবাড়ি-পাঁচদোনায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ গড়ে তোলেন। তিনি ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে নিজ গ্রাম নেহাবকে কেন্দ্র করে দুই পাশের জনপদে মুক্তিযোদ্ধাদের অপ্রতিরোধ্য ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ ঘাঁটি থেকেই পাঁচদোনা মোড়সহ অসংখ্য মুখোমুখি এবং গেরিলাযুদ্ধের অপারেশন পরিচালনা করেন। অসমসাহসী বীরত্বের কারণেই মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টর থেকে তাঁকে চার থানার (নরসিংদী, শিবপুর, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের) গেরিলা ইউনিট কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর বিশাল বাহিনী পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও যুদ্ধ পরিচালনা করে। তাঁর বীরত্বের কথা দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশে সিরাজ উদ্দিন আহমদের আকাশচুম্বী খ্যাতি শাসক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ঈর্ষার কারণ হয়। তাদের ষড়যন্ত্রে ১৯৭২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পুরিন্দা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি।
বিষয়টি উল্লেখ করে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ভিন্নমতের জন্যই নেভাল সিরাজকে আততায়ীরা খুন করেছিল। আমরা ভিন্নমতকেই প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বাংলাদেশ বহু মতের দেশ, বহু ধর্মের দেশ। মানুষ বিভিন্ন ধর্মাচরণ করবে, বহুমত ধারণ করবে। কিন্তু মতামতের জন্য আর কাউকে যেন পারসিকিউটেড হতে না হয়। কাউকে যেন হত্যার শিকার হতে না হয়।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জিয়াউল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন। ওই অনুষ্ঠানে সিরাজ উদ্দিন আহমেদের সন্তান মোয়াজ্জেম হোসেন এবং তিন সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ ও তোফাজ্জল হোসেন বক্তব্য দেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে পরিবর্তনের সরকার উল্লেখ করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, সবাই বলেন, এত দিন তো হয়ে গেল, ‘এই সরকার কিছুই তো করতে পারল না? সব জায়গায় অনিয়ম আর অপকর্ম। এই যে সাংস্কৃতিক অপকর্ম, রাজনৈতিক অপকর্ম, অর্থনৈতিক অপকর্ম—এগুলো শোধরাতেই আমাদের সময় লেগেছে বেশি। বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য সড়ক নির্মিত হয়েছে, যেগুলোর তেমন ব্যবহার নাই। সাবেক রাষ্ট্রপতি নিজ এলাকায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সড়ক নির্মাণ করেছেন। সেখানে কয়েকটা টেম্পো ছাড়া কিছুই চলে না।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ‘আপনারা সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন করুন। যাঁর যা মত হোক, যাঁর যা দল হোক যাঁরা বিজয়ী হবেন, আমরা তাঁদের পেছনে দাঁড়াব। কিন্তু যাঁরা এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে, আগের মতো ভোটকেন্দ্র দখল বা পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটাবে, তাঁদের সুযোগ দেবেন না।’