নড়াইল থেকে নিখোঁজ বৃষ্টির মরদেহ মিলল বাগেরহাটের পুকুরে
Published: 4th, February 2025 GMT
নড়াইল থেকে নিখোঁজের চারদিন পর বাগেরহাট থেকে গৃহবধূ সুরাইয়া শারমিন বৃষ্টির (৩৩) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ফকিরহাট উপজেলার নলধা মৌভোগ ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের একটি পুকুরে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। শুক্রবার নিখোঁজ হন নড়াইল সদর হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের কর্মী বৃষ্টি। তিনি শহরের আলাদাতপুর এলাকার মৃত আব্দুল করিম মোল্যার মেয়ে।
নিহত গৃহবধূর মা সবেজান বেগম গত শনিবার নড়াইল সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, যশোরে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি গত কয়েক বছর ধরে সদর হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে চাকরি করছেন। তাঁর স্বামী মাহফুজ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, পরিবারের সদস্যরা বৃষ্টির লাশ আনতে বাগেরহাটে গেছেন। কথা বলার মতো কেউ নেই। পরে মোবাইল ফোনেও তাদের পাওয়া যায়নি।
ফকিরহাটের পুলিশ জানিয়েছে, সাবেক ইউপি সদস্য সলেমান শেখের পরিবারের লোকজন থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পুকুরে যান। এ সময় তারা দুটি পা ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। তাঁর শরীরে ইট বাঁধা ও গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দেওয়া ছিল।
ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আলমগীর কবীর বলেন, শরীরে ইট বাঁধা, গলায় কালো রশি দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় পুকুরে মরদেহ পাওয়া গেছে। পাড় থেকে জুতাও উদ্ধার করা হয়েছে। পিবিআই ও সিআইডি সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, দু’দিন আগে নারীকে হত্যা করে পুকুরে লাশ ফেলে দেওয়া হতে পারে। কী কারণে কারা তাঁকে হত্যা করেছে, তা উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও খবর দেওয়া হয়েছে।
নড়াইল সদর থানার ওসি মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র র মরদ হ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
হাত নেই, পা দিয়ে লিখেই স্নাতকোত্তর পাস, করেন ফ্রিল্যান্সিং
জন্ম থেকেই দুই হাত নেই তাঁর। দুই পায়ের সাহায্যে লেখেন। আর এভাবেই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন তিনি। এখন ঘরে বসেই অনলাইনে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা উদ্যমী এই তরুণের নাম মো. আলী (২৬)। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল হরিদার ঘোনা গ্রামে।
আলীর বাবা আমিন শরীফ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মা শামসুন্নাহার গৃহিণী। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আলী সবার ছোট। এ বছর তিনি চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এমবিএ পাস করেছেন।
মো. আলীর শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি হয় স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০১৫ সালে বড়হাতিয়ার বি জি সেনেরহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ২০১৭ সালে উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর সাতকানিয়া সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে (স্নাতক) ভর্তি হন। ২০২৪ সালে স্নাতক শেষ করেন। এরপর স্নাতকোত্তর করতে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন তিনি।
সম্প্রতি সরেজমিন বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, আধা পাকা একটি মাঝারি আকারের ঘরে মা–বাবার সঙ্গে বসবাস করছেন আলী। তাঁর একমাত্র ভাই প্রবাসে রয়েছেন, আর দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, আলী দুই পায়ের সাহায্যে লেখাপড়া, খাওয়াদাওয়াসহ সব কাজ করছেন। এসব কাজে কারও সাহায্যের তেমন প্রয়োজন হয় না।
২০১৫ সালে বড়হাতিয়ার বি জি সেনেরহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ২০১৭ সালে উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর সাতকানিয়া সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে (স্নাতক) ভর্তি হন। ২০২৪ সালে স্নাতক শেষ করেন। এরপর স্নাতকোত্তর করতে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন তিনি।পরিবারের সদস্যরা জানান, কলেজে পড়ার সময় ২০১৭ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলীকে একটি কম্পিউটার উপহার দেন। করোনাভাইরাসের মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে উপহার হিসেবে পাওয়া কম্পিউটারটি কাজে লাগান আলী। অনলাইনে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ২০২১ সালে অনলাইনে প্রথমবারের মতো ৯ হাজার টাকা আয় করেন আলী। এতে এ কাজে আলীর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। উঠেপড়ে লাগেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত এই কাজ চালিয়ে গেছেন আলী। তিনি জানান, ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ছয় হাজার মার্কিন ডলার আয় করেছেন তিনি।
আলী সব সময় নিজের কাজ নিজেই সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে। সুযোগ পেলে আমার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ও আমাকে সাহায্য করে আসছে। তার ইচ্ছা, একটি সরকারি চাকরি করার। সরকার যেন তার সেই ইচ্ছা পূরণ করে।আমিন শরীফ, আলীর বাবাআলীর প্রতিবেশীরা জানান, শারীরিক অক্ষমতা থাকলেও আলীর অদম্য ইচ্ছা ও দৃঢ় মনোবল তাঁকে এত দূর নিয়ে এসেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আলী অনুপ্রেরণা। জানতে চাইলে মো. আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জীবনে মা–বাবা ও শিক্ষকদের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তাঁরা কখনো আমার প্রতি বিরক্ত হননি। আমাকে বোঝা মনে করেননি। সব সময় স্নেহ–মমতা দিয়ে আমার পাশে থেকেছেন। আমাকে সাহস দিয়েছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আমার বন্ধুরাও আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে।’
উচ্চশিক্ষার মূল্যায়ন হিসেবে নিজের জন্য একটি সরকারি চাকরির দাবি জানিয়ে মো. আলী আরও বলেন, ‘আমার সমাজ ও দেশের প্রতি আমার দায় অনেক। যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরি পেলে মানুষকে সেবা দিয়ে সেই দায় কিছুটা শোধ করতে পারব। দেশে আমার মতো যাঁরা আছেন, তাঁরাও অনুপ্রাণিত হবেন।’
আলীর বাবা আমিন শরীফ জানান, ‘আলী সব সময় নিজের কাজ নিজেই সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে। সুযোগ পেলে আমার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ও আমাকে সাহায্য করে আসছে। তার ইচ্ছা, একটি সরকারি চাকরি করার। সরকার যেন তার সেই ইচ্ছা পূরণ করে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলী খুবই ভালো ছেলে। এলাকার সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। যেকোনো কাজ সে দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।’
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই হাত ছাড়াও আলী যে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁর কৃতিত্ব একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর সরকারি চাকরির জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’