করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ে অনলাইন তথা ই–কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল গ্রাহকদের। তখন থেকে দেশের প্রচলিত পণ্য পরিবহনের পদ্ধতি ও খরচ কমানোর কথা ভাবতে থাকেন উদ্যোক্তা রেজওয়ানুল হক জামি। ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তি দিয়ে ২০২২ সালে বাসার গ্যারেজে কাঠ দিয়ে একটি ডিজিটাল লকার তৈরি করেন তিনি। এতে সফলতা পান। ব্যস, আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।

সে সময় গুলশানের এক চায়ের দোকানে হঠাৎ ১০ বছর পর দেখা হয় পুরোনো সহকর্মী মোরশেদুল আলমের সঙ্গে। গল্প ও আড্ডায় লজিস্টিক খাত নিয়ে বন্ধুকে কিছু করার পরিকল্পনা শোনান জামি। তাঁকে এর আগে ডিজিটাল লকারে সফলতা পাওয়ার কথা বলেন। এই স্টার্টআপ ধারণায় একমত হন দুই বন্ধু। কার্যত সেদিনই যাত্রা শুরু হয় ডিজিবক্স নামের নতুন স্টার্টআপের।

প্রথম দফায় এই উদ্যোগে বিনিয়োগ ছিল ৩০ লাখ টাকা। নিজেরাই এসব অর্থ সংগ্রহ করেন। পাঁচটি ডিজিটাল লকার স্টেশন দিয়ে ব্যবসা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে আড়াই কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে লাভের অর্থ ভাগাভাগি না করে পুরোটাই তাঁরা অফিস পরিচালনা ও নতুন ডিজিটাল লকার স্টেশন তৈরিতে ব্যয় করেন।

যেখান থেকে শুরু

মোরশেদুল আলম ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক ভয়েস গেটওয়ে মসফাইভটেল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সে সময় তুসুকা টেকনোট্রেড নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন রেজওয়ানুল হক। তখনই তাঁদের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে রেজওয়ানুল হক অংশীদার হিসেবে জড়িত হন মসফাইভটেলে। এর পাশাপাশি তাঁরা আলাদা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন। মোরশেদুল আলম বিমান ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনালে তাস লজিস্টিক ও সামসা নামের দুটি লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। রেজওয়ানুল হক গড়ে তোলেন বিডিটিকেটস ডটকম ও ওএলএক্স ডটকম ডট বিডি।

২০২৩ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা গার্ডেন সিটিতে ডিজিবক্সের জন্য চার হাজার বর্গফুটের একটি অফিস নেওয়া হয়। পাশেই ছিল ডিজিটাল লকার তৈরির কারখানা। তখন মাসে গড়ে দুটি করে লকার তৈরি করা হতো। এখন মোট ৩১ জনবলে চলছে ডিজিবক্সের কার্যক্রম।

ভবিষ্যতে আমরা নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকায়ও ডিজিটাল লকার সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। আগামী মাসে বক্স টু বক্স সেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ডিসেম্বরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে “ডিজি প্লাজা” চালু করা হবে, যেখানে ২৪ ঘণ্টা ক্যামেরা ভিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি নেওয়া যাবে।রেজওয়ানুল হক, সিইও, ডিজিবক্স।

বর্তমানে দেশের ৫৫টি স্থানে এই ডিজিটাল লকার স্টেশন রয়েছে। এসব লকারে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বক্স রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ৩৬টি স্থানে এই ডিজিটাল লকার স্টেশন রয়েছে। অন্য লকার স্টেশনগুলো রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখের বেশি গ্রাহককে সেবা দিয়েছে। বর্তমানে রাজধানীর সব কটি মেট্রো স্টেশনে তাদের এই ডিজিটাল লকার–সুবিধা আছে। একেকটি পয়েন্ট থেকে দিনে গড়ে প্রায় ৩০০ গ্রাহককে সেবা দেওয়া যায়।

ডিজিবক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকায়ও ডিজিটাল লকার সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। আগামী মাসে বক্স টু বক্স সেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ডিসেম্বরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে “ডিজি প্লাজা” চালু করা হবে, যেখানে ২৪ ঘণ্টা ক্যামেরা ভিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি নেওয়া যাবে।’

বাংলাদেশের ই-কমার্স ও অনলাইন বাজারের আকার প্রায় ৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে ডেলিভারির বাজার ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের। প্রতিদিন সব মিলিয়ে এই খাতে পাঁচ লাখ ডেলিভারি হয়। আমাদের লক্ষ্য ২০২৮ সালের মধ্যে দৈনিক ৫০ হাজার ডেলিভারি করতে চাই।মোরশেদুল আলম, চেয়ারম্যান, ডিজিবক্স।

যেভাবে সেবা দেয় ডিজিবক্স

ঢাকায় সব মেট্রো স্টেশন ও বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়ে কমলা রঙের ডিজিটাল লকার। এসব ডিজিটাল লকারে থাকা পণ্য সংগ্রহে একজন গ্রাহক ৭২ ঘণ্টা সময় পান। এতে ডেলিভারির খরচ পড়ে ২২ থেকে ৪৫ টাকা। তবে এ জন্য অর্ডার করতে হবে ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ বাংলাদেশে। সে ক্ষেত্রে অর্ডারের সময় গ্রাহককে ডিজিবক্স ডেলিভারি অপশন সিলেক্ট করতে হবে। তারপর ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে ডেলিভারিম্যান পণ্য ওই গ্রাহকের পছন্দমতো নিকটস্থ ডিজিবক্সে রেখে যাবেন। গ্রাহক তখন একটি এসএমএস পাবেন।

ডিজিবক্সে প্রায় এটিএম বুথের স্ক্রিনের মতোই একটি স্ক্রিন রয়েছে। সেখানে ‘রাইডার’ ও ‘কাস্টমার’ নামে দুটি অপশন আছে। ডেলিভারিম্যান যখন পণ্য রাখতে যাবেন, তখন রাইডার অপশন ব্যবহার করবেন। অন্যদিকে গ্রাহকের জন্য রয়েছে কাস্টমার অপশন। সেখানে ই–মেইল বা মুঠোফোন নম্বর দিলে একটি ওটিপি কোড আসবে মেইলে বা মুঠোফোন নম্বরে। সেই কোড দিলে গ্রাহকের রাখা পণ্যের বক্সটি খুলে যাবে। এরপর গ্রাহক পণ্য সংগ্রহ করবেন।

যেকোনো ই–কমার্স ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠান চাইলে তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য ডিজিবক্সে নিবন্ধন করতে পারবে। এ জন্য সেই প্রতিষ্ঠানকে শুরুতে কোনো অর্থ দিতে হবে না। বর্তমানে দারাজ ছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক, শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংক, থাউজেন্ড ফিক্স ও অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এই ডিজিটাল লকার সেবা ব্যবহার করছে।

ডিজিবক্সের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের ই–কমার্স ও অনলাইন বাজারের আকার প্রায় ৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে ডেলিভারির বাজার ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের। প্রতিদিন সব মিলিয়ে এই খাতে পাঁচ লাখ ডেলিভারি হয়। আমাদের লক্ষ্য ২০২৮ সালের মধ্যে দৈনিক ৫০ হাজার ডেলিভারি করতে চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড জ ট ল লক র স ব প ল য টফর ম ড জ বক স র ই কম র স গ র হক

এছাড়াও পড়ুন:

ফেসবুক গ্রুপে পরিচয় গোপন রেখে আলোচনায় অংশ নেওয়ার নতুন সুবিধা

ফেসবুক গ্রুপে ‘নিকনেম’ নামের নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে মেটা। সুবিধাটি চালুর ফলে ব্যবহারকারীরা এখন চাইলে নিজেদের আসল নামের পরিবর্তে বিভিন্ন গ্রুপে ছদ্মনামে পোস্ট ও মন্তব্য করার পাশাপাশি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন। এত দিন ফেসবুক গ্রুপে পরিচয় গোপন রেখে পোস্ট করার সুযোগ থাকলেও সে ক্ষেত্রে অন্য সদস্যদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ করা সম্ভব হতো না। নিকনেম ব্যবস্থায় গোপনীয়তা বজায় রেখেই গ্রুপে নির্দিষ্ট ছদ্মনামে নিজস্ব পরিচিতি তৈরির পাশাপাশি ধারাবাহিক যোগাযোগ করা যাবে।

মেটা জানিয়েছে, অনেক ব্যবহারকারীই গ্রুপে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ না করে আলাদা পরিচয়ে আলোচনায় অংশ নিতে চান। নিকনেম সেই সুযোগ করে দেবে। গ্রুপে নিকনেম ব্যবহারের পর ব্যবহারকারীর মূল প্রোফাইল ও প্রোফাইল ছবি অন্য সদস্যদের কাছে গোপন থাকবে। তবে গ্রুপ অ্যাডমিন, মডারেটর এবং ফেসবুকের সিস্টেম তথ্যগুলো দেখতে পারবে। গ্রুপের সদস্যরা নিকনেমযুক্ত ব্যবহারকারীর আগের পোস্ট, মন্তব্য এবং গত সাত দিনের প্রতিক্রিয়াও দেখতে পারবেন।

নিকনেম প্রোফাইলে পছন্দের ছবি ও রঙিন পটভূমি বেছে নেওয়া যাবে। গ্রুপে নতুন পোস্ট দেওয়ার সময় ‘অ্যানোনিমাস পোস্ট’ অপশনের পাশেই দেখা যাবে নিকনেম অপশন। ব্যবহারকারী চাইলে যেকোনো সময় নিকনেম চালু বা বন্ধ করতে পারবেন। তবে নিকনেম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দুই দিনের ব্যবধান মানতে হবে। নাম বদলের পর আগের সব পোস্ট, মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া নতুন নামে যুক্ত হবে। একাধিক গ্রুপে ভিন্ন নিকনেম ব্যবহার করলে নাম পরিবর্তন কেবল সংশ্লিষ্ট গ্রুপের জন্য কার্যকর হবে। নিকনেম ব্যবহারে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। শুধু গ্রুপের অ্যাডমিনরা সুবিধাটি সদস্যদের জন্য চালু করতে পারবেন। ফলে গ্রুপ অ্যাডমিন চালু না করলে বিভিন্ন গ্রুপে সুবিধাটি ব্যবহার করা যাবে না।

আরও পড়ুনআপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কি অন্য কেউ লুকিয়ে ব্যবহার করছে১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফেসবুক গ্রুপে নিজেদের পছন্দমতো নাম নির্বাচন করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। চাইলে সুন্দর নামের জন্য ফেসবুকের পরামর্শও নেওয়া যাবে। তবে নামটি অবশ্যই ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে নির্বাচন করতে হবে এবং গ্রুপে একই নামে অন্য কেউ থাকতে পারবে না। নতুন এ সুবিধা চালুর ফলে ফেসবুক গ্রুপে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিট বা ডিসকোর্ডের মতো আলোচনা করা যাবে। এসব প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীরা নিজেদের পরিচয় না দিয়েই ছদ্মনামে পোস্ট করতে পারেন।

সূত্র: টেক ক্রাঞ্চ

আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখবেন যেভাবে২৩ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেসবুক গ্রুপে পরিচয় গোপন রেখে আলোচনায় অংশ নেওয়ার নতুন সুবিধা