এই মৌসুমে এমন বায়ুদূষণ আর দেখেনি ঢাকা
Published: 28th, November 2025 GMT
বাংলাদেশে আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। রাজধানী ঢাকায় আজ সকালে বায়ুর মান যে মান, তা চলতি মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ।
ঢাকার আজ সকালের বায়ুর মানকে বলা হয় ‘দুর্যোগপূর্ণ’। ঢাকার বায়ু দূষিত হলেও আজ সকালের মতো এমন বাজে পরিস্থিতি সচরাচর দেখা যায় না।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঢাকার বায়ুর মান ৩৪০। বায়ুর মান ২০০-এর বেশি হলে তাকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। আর ৩০০-এর বেশি হলে তা হয় ‘দুর্যোগপূর্ণ’।
বায়ুদূষণে আজ সকালে বিশ্বের নগরীগুলোর মধ্যে শীর্ষে ভারতের নয়াদিল্লি। বায়ুর মান ৪২০।
বায়ুদূষণের এই পরিস্থিতি তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের অবস্থা নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয়, সতর্ক করে।
ঢাকায় আজ বায়ুর যে পরিস্থিতি (দুর্যোগপূর্ণ), তা থেকে সুরক্ষা পেতে নগরবাসীর জন্য জরুরি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও দূষণ বিশেষজ্ঞ আব্দুস সালাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ নগরবাসীর উচিত হবে যথাসম্ভব বাড়ির বাইরে না যাওয়া। কিন্তু অনেকেই তো এ কাজটি করতে পারবেন না। তাই বাড়ির বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। আজ বাইরে গিয়ে ব্যায়াম না করাই ভালো। আর ঘরেও যথা সম্ভব জানলা বন্ধ রাখা উচিত।
বায়ুদূষণ মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখনো নানা উদ্যোগ-কথাবার্তা শোনা যায় হয়। কিন্তু বায়ুদূষণ পরিস্থিতির দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এটা শুধু যে ঢাকায়, তা নয়। সমগ্র দেশজুড়ে। কোনো কোনো দিন ঢাকাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যান্য শহরের বায়ুর মান।
অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘শুধু কথাবার্তা ছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ে আসলে কোনো কিছু হয় না। শীত বা শুষ্ক মৌসুম এলে যখন বায়ুদূষণ বাড়ে, তখন উচ্চপর্যায়ের একটা কমিটি করা হয়। আর বায়ুদূষণ কমে গেলে বা শুকনো মৌসুম চলে গেলে সেই কমিটি নিয়ে আর কোনো কথাবার্তা হয় না। এটা বরাবর চলে আসছে, এখনো চলছে। তবে আমরা হতাশ হতে চাই না। আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, যথাসম্ভব প্রয়োজনীয় সুরক্ষাব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’
বিভাগীয় শহরগুলোর অবস্থাআজ সকালে বায়ুমানের নিরিখে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা খুলনার। এই নগরীর বায়ুর মান আজ ২৩৬। গত বুধবার একই সময় উপকূলীয় এই শহরের বায়ুর মান ছিল ২৭৭।
বায়ুদূষণে আজ খুলনার পরে আছে রাজশাহী। উত্তর জনপদের এই শহরের বায়ুর মান ১৬৮। ময়মনসিংহের বায়ুর মান ১৪৮, রংপুর ১৪৯, বরিশাল ৮৯, চট্টগ্রাম ৮১ ও সিলেট ৬৯।
গবেষকেরা বলছেন, বায়ুদূষণ একেবারে দেশজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু বায়ুদূষণ কমানোর বিষয়টি রাজধানীর ক্ষেত্রে যতটা প্রাধান্য পায়, অন্য শহরগুলো ততটা পায় না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর চেয়ে অন্য শহরগুলোর বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি।
ঢাকার ৫ স্থানে বায়ুদূষণ বেশিআজ ঢাকার পাঁচ স্থানের বায়ু বেশি দূষিত। স্থানগুলো হলো—কল্যাণপুর (৩৮৪), গোড়ান (৩৬৯), পল্লবী দক্ষিণ (৩৩০), বে’জ এজ ওয়াটার (৩০৬) ও পীরেরবাগ রেললাইন (২৮৪)।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে ঢাকা বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষের দিকে থাকছে। ঢাকার বায়ুমান খুব অস্বাস্থ্যকর দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। আজ তা দুর্যোগপূর্ণ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত শহর র ব শহরগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা নয়, দেশের আরেকটি শহরের বায়ুদূষণ আজ ভারতের নয়াদিল্লির কাছাকাছি
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি কিংবা পাকিস্তানের নগর করাচি বা লাহোর বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ নগরী হিসেবে থাকছে গত প্রায় এক মাস ধরে। এর মধ্যে নয়াদিল্লির দূষণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিল কিছুদিন আগে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ঝরানোর চেষ্টাও করে সেখানকার প্রশাসন। সেই নয়াদিল্লি আজ বুধবার সকালেও বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৭ নগরীর মধ্যে শীর্ষে আছে। কিন্তু সেই নয়াদিল্লির বায়ুর যে মান তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের একটি শহরের বায়ুর মান। সেই শহরটি হলো খুলনা। আর হ্যাঁ, অবশ্যই খুলনার দূষণের মাত্রা রাজধানী ঢাকার চেয়ে বেশি আজ।
আজ সকাল সোয়া আটটার দিকে ঢাকার বায়ুর মান ২৩১। বায়ুর মান ২০০-র বেশি হলে তাকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর ৩০০-র বেশি হলে তা হয় দুর্যোগপূর্ণ। আর আজ বিশ্বের নগরীগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুর মান ২৮৪। আর খুলনার বায়ুর মান তার কাছাকাছি, ২৭৭।
বায়ুদূষণের এই পরিস্থিতি তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের অবস্থা নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস সালাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, সম্ভবত স্থানীয় কিছু কারণেই খুলনার দূষণ পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এর কারণ হতে পারে জৈব জ্বালানী সেখানে অতিরিক্তি মাত্রায় পোড়ানো হচ্ছে। জৈব জ্বালানি যেমন খড়কুটো পোড়ানো বা ধুলাবালি ব্যাপকভাবে ওড়ার কারনে দূষণে বেশি হতে পারে। এ ছাড়া অনুকূল আবহাওয়াগত অবস্থার কারণেও এ পরিস্থিতি হতে পারে। বায়ুদূষণ একেবারে দেশজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। এটা সেই বাস্তবতাকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। আসলে তুলে ধরছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু আমরা এর দিকে নজর দিই না।
নগরীর যে সাত স্থানে দূষণ বেশি
আজ ঢাকা নগরীর যে সাত স্থানের বায়ু আজ খুব অস্বাস্থ্যকর, সেগুলো হলো ইস্টার্ন হাউজিং (২৫৬), দক্ষিণ পল্লবী (২৫৪), বে’জ এজ ওয়াটার (২৩৪) কল্যাণপুর (২২৯), বেচারাম দেউড়ী (২২৬), গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (২১৩) এবং গোড়ান (২০২)।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষের দিকে থাকছে। ঢাকার বায়ুমান খুব অস্বাস্থ্যকর দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিন।
নগরবাসীর জন্য সতর্কতা
বায়ুদূষণ সব মানুষের জন্য সমান ক্ষতিকর। ঢাকার বায়ুদূষণের মূল উপাদান বাতাসে ভেসে বেড়ানো অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এই দূষণের উৎস হলো ধুলোবালু, যানবাহন বা কলকারখানার দূষিত ধোঁয়া, বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়া ইত্যাদি। মানুষের নিশ্বাসের সঙ্গে এসব ফুসফুসে প্রবেশ করে। শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাসহ নানা জটিল রোগ হতে পারে এই দূষণের কারণে।
আইকিউএয়ারের বায়ুদূষণের বার্তায় নগরবাসীর জন্য বেশ কিছু সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো বাইরে বেরোলে অবশ্যই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যথাসম্ভব কমাতে হবে। ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।