ভয় দেখিয়ে নয়, ভালবাসা দিয়ে জয় করতে হয়
Published: 10th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে পারভেজ মিয়াকে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ চার জনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
রিমান্ড শুনানি শেষে জুনাইদ আহমেদ পলককে হাতকড়া, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল। এ সময় পলক সাংবাদিকদের বলেন, “ভয় দেখিয়ে নয়, ভালবাসা দিয়ে জয় করতে হয়।”
কার উদ্দেশে এ বার্তা দিতে চান? এ প্রশ্ন করলে চুপ থাকেন জুনাইদ আহমেদ পলক। তার পাশে থাকা আইনজীবীরা বলেন, “কারা ভয় ছড়াচ্ছে, আপনারা তা দেখতে পাচ্ছেন।”
কারাগারে কেমন আছেন, প্রশ্ন করা হলে শুধু হাসেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
রিমান্ড শুনানি শেষে পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি সাংবাদিকদের বলেন, “বিভিন্ন মামলায় জুনাইদ আহমেদ পলকের ৬০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এখনো ২৪ দিনের রিমান্ড পেন্ডিং আছে। এর আগে যাত্রাবাড়ী থানার এক মামলায় রিমান্ডে নিলে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই, আজকের মামলায় আমরা রিমান্ড বাতিল চেয়েছি। প্রয়োজনে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বলি। শুনানি শেষে আদালত আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেন।”
পারভেজ হত্যার অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনেরও রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। তাদেরকেও পলকের সঙ্গে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়া হয়।
এ সময় শমসের মবিন চৌধুরী সবার উদ্দেশে হাত উঁচু করে বলেন, “এই দেখুন, মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত আসামির হাতে হাতকড়া।”
একটু পর থেমে তিনি আরো বলেন, “খেতাবপ্রাপ্ত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার হাতে হাতকড়া। এটা কেন?” এরপর তিনি নীরবে হেঁটে হাজতখানায় যান।
সোমবার সকালে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
ঢাকা/মামুন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
বাংলাদেশে পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। নিজের এই ধারণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘কারণ, এত কষ্ট, এত ত্যাগ কখনোই বাংলাদেশের মানুষ কোনো সংস্কারের জন্য বা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য করে নাই।’
আজ বুধবার বিকেলে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আইন উপদেষ্টা। সহকারী অ্যাটর্নি সার্ভিস অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়ার ওপর মতবিনিময় সভার আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
‘আমরা অনেক ধরনের সুযোগ পেয়েছি, কোনো সুযোগেরই আমরা সদ্ব্যবহার করতে পারি নাই’ মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এইবার আমার মনে হয় এত ত্যাগ, এত রক্তক্ষয়ের পর এবার যে আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের সুযোগ এসেছে, আমাদের যে একটু সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ এসেছে, এবার যদি আমরা সেই সুযোগটা মিস করি...আমার মনে হয় আগামী কয়েক দশকে আমরা এই সুযোগ পাব না। কাজেই এই সুযোগ আমাদের কোনোভাবেই মিস করা চলবে না।’
মতবিনিময় সভায় সহকারী অ্যাটর্নি সার্ভিস অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়ার ওপর আলোচনায় অংশ নেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এ সময় খসড়াটির নানা সংকট ও করণীয় বিষয়ে তুলে ধরা হয়। তার জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আরও কনসাল্টেশন (পরামর্শ) করব। আরও মতামত দেব। আমি খুবই খুশি হয়েছি আমাদের এই আইনটাকে একদম তুলাধোনা করে দেওয়া হয়েছে। এটা ভালো হয়েছে। আমাদের জন্য একটা ইনসেন্টিভ তৈরি হয়েছে। আমরা আরও ভালো করার চেষ্টা করব।’
খসড়াটি চূড়ান্ত করতে আরও পরামর্শ নেওয়া হবে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘একটা খুব ভালো সাজেশন আসছে পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে কনসাল্টেশন। এটা পলিটিক্যাল পার্টির জন্য খুবই রেলেভান্ট (প্রাসঙ্গিক), অবশ্যই করব। আপনাদের সবার সহযোগিতায় ইনশা আল্লাহ আমরা একটা ভালো আইন করতে পারব এবং আমাদের প্রত্যাশা আছে এই সরকারের আমলে অন্তত কিছু নিয়োগ যদি আমরা অ্যাটর্নি সার্ভিসে দিয়ে দিতে পারি—সে চেষ্টা করব।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সব সময় শুনতাম যে নিম্ন আদালতে বা উচ্চ আদালতে যে দুর্নীতি হয় বা অনিয়ম হয় এখানে অনেক পক্ষ থাকে। শুধু যে আপনার সাপোর্ট স্টাফরা বা জাজরা করে, সেটা না। এক শ্রেণির আইনজীবীরা, সরকারি আইনজীবীদেরও ভূমিকা থাকে। আমি কিছু রিসার্চ করেও শুনেছি যে অল্প, অত্যন্ত অল্প টাকা পান উনারা। বিশেষ করে যাঁরা পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসে আসেন, তারপরও এটা হওয়ার প্রচণ্ড আগ্রহ থাকে সবার। কারণ, এমন অভিযোগ শুনেছি, এগেইন বলছি অভিযোগ অন্যভাবে নিয়েন না। সরকারি উকিল হয়ে উনারা দেখা যায়, প্রতিপক্ষের পক্ষে কাজ করে টাকা নেন এরকম কিছু উদাহরণ আছে। সবাই না। অনেকে তো আছেন, অনেক ভালো প্র্যাকটিস করেছেন বা করছেন।’
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটোরিল অ্যাসিস্ট্যান্ট এহসানুল হক সমাজী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী তানিম হোসেন শাওন, আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, বিজিবির পাবলিক প্রসিকিউটর মো. বোরহান উদ্দিন, জেলা ও দায়রা জজ আদালত ঢাকার পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইকবাল হোসেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের প্রমুখ।