তিন গুণ ফলন হয় মিষ্টি আলুর নতুন জাতে
Published: 21st, February 2025 GMT
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান খাদ্য ও অর্থকরী ফসল মিষ্টি আলু। পুষ্টিগুণে ভরপুর মিষ্টি আলু ভাতের বিকল্প হিসেবে শর্করার চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এ আলুর চাষ হয়। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘কে’ এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ আছে।
স্থানীয় জাতের মিষ্টি আলু উৎপাদনে ব্যয় বেশি হওয়া এবং বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এ ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
তবে, আশার কথা হলো, মিষ্টি আলুর উৎপাদন বাড়িয়ে কৃষকদের লাভবান করতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন ‘বাউ মিষ্টি আলু-৫’। এটি স্থানীয় জাতের তুলনায় অধিক ফলনশীল ও লাভজনক।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খানের নেতৃত্বে একদল গবেষক মিষ্টি আলুর উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী নতুন জাত ‘বাউ মিষ্টি আলু-৫’ উদ্ভাবন করেছেন।
গবেষকদলের নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান জানিয়েছেন, বাউ মিষ্টি আলু-৫ উচ্চফলনশীল জাত। এটি সাধারণ আলুর চেয়ে তিন গুণ বেশি ফলনশীল। প্রতিটি গাছে এক থেকে দেড় কেজি আলু ধরে। চারা রোপণের ৯০ দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। এ আলু সারা বছরই চাষ করার উপযোগী। ১০০ দিনের বেশি বয়সে সর্বোচ্চ ফলন দেয় জাতটি। সাধারণ মিষ্টির আলুর গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ২৫ টন হলেও বাউ মিষ্টি আলু-৫ হয় ৩০ টনের বেশি।
চলতি মৌসুমে ময়মনসিংহ, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও খুলনায় বাউ মিষ্টি আলু-৫ এর চারা সরবরাহ করা হয়েছে। এ জাত চাষ করে অধিক ফলন পেয়েছেন কৃষকরা।
ময়মনসিংহ সদরের কৃষক হাসান বলেছেন, “এই জাতের মিষ্টি আলু চাষ করে গড়ে প্রতি ১০ বর্গমিটারে ৩০ কেজি পর্যন্ত ফলন পেয়েছি। অনান্য স্থানীয় জাতের প্রতি গাছে ৭০০-৭৫০ গ্রাম আলু ধরলেও এই জাতের আলু ১২০০-১৫০০ গ্রাম পর্যন্ত পেয়েছি।”
আরেক কৃষক বলেন, “আগে আমরা অনেক জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করতাম। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও বাজারে দাম কম পাওয়ায় চাষ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এই নতুন জাতের আলু চাষ শুরু করেছি। ফলন বেশি হওয়ায় আশা করছি, লাভবান হতে পারব।”
ফুলপুরের কৃষক মনু মিয়া বলেন, “ফুলপুরে এই প্রথম বাউ মিষ্টি আলু-৫ চাষ করে সফলতা পেয়েছি। প্রতি গাছে ২০০-৩০০ গ্রাম ওজনের ৬-৭টি পর্যন্ত আলু পেয়েছি আমি।”
মিষ্টি আলুর নতুন জাত উদ্ভাবন দলের সদস্য স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মুন মোদক বলেছেন, “ক্রিম, বেগুনি ও কমলা— এই তিন রঙের মিষ্টি আলু জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কমলা রঙের আলু গাজরের বিকল্প হিসেবে সালাদ করে খাওয়া যায়। বেগুনি রঙের গোল আলু পুড়িয়ে খেলে দারুণ স্বাদ পাওয়া যায়। পোড়ানোর পর এতে গ্লুকোজ ও সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণ ক্রিম রঙের আলুগুলো সবজি হিসেবে রান্না করা যায়, আবার পুড়িয়ে ও সিদ্ধ করে খাওয়া যায়।”
প্রধান গবেষক অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খান বলেন, “বাউ মিষ্টি আলু-৫ কম-বেশি প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে, রবি মৌসুমে (১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ) এর ফলন ভালো হয়। মিষ্টি আলু আমিষ, জিংক, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’ ও পটাশিয়ামের জোগান দিতে সক্ষম। উপযুক্ত ও অনুকূল পরিবেশে বাউ মিষ্টি আলু-৫ এর উৎপাদন প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ ৪০ টন হতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “রোগের সংক্রমণ ও ইঁদুরের উৎপাতসহ কিছু প্রতিকূলতা থেকেই যায়। এমন অবস্থায় সর্বোচ্চ উৎপাদন হেক্টরপ্রতি প্রায় ৩৩ টন পাওয়া গেছে। দেশে প্রচলিত মিষ্টি আলুর গড় উৎপাদন ১০ টনের মতো। সে হিসেবে এই নতুন জাতের মিষ্টি আলুর উৎপাদন তিন গুণের বেশি। এই জাতের চারা রোপণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো সময় হলো নভেম্বরের শেষের সময়টা। মার্চের শেষের দিকে এ আলু উত্তোলন করলে ফলন সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায়।”
ঢাকা/লিখন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ষ কর ফলন প র উৎপ
এছাড়াও পড়ুন:
২৫ বছর পর রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কেউ রইলেন না
ক্লাব বিশ্বকাপ খেলেই চলতি মাসে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে এসি মিলানে যোগ দিয়েছেন লুকা মদরিচ। ক্রোয়াট কিংবদন্তির প্রস্থানে শূন্য হয়েছে রিয়াল–সমর্থকদের হৃদয় থেকে ক্লাবটির ড্রেসিংরুম। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের ট্রফি কেবিনেটে ২৮টি শিরোপায় ঘাম জমে আছে মদরিচের। তাঁর ব্যক্তিগত ট্রফি কেবিনেটও হয়েছে সমৃদ্ধ। রিয়ালে থাকতেই ২০১৮ সালে জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। মদরিচের প্রস্থানের সঙ্গে রিয়ালেও ব্যালন ডি’অরজয়ী আর কেউ রইলেন না।
আরও পড়ুনসেই কলম্বিয়ার কাছে হেরেই কোপার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় আর্জেন্টিনার১ ঘণ্টা আগেচলতি শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশে, অর্থাৎ গত ২৫ বছরে এমন কিছু কখনো দেখা যায়নি। আরেকটু ভেঙে বলা যায়, গত ২৫ বছরে রিয়ালের স্কোয়াডে এমন অন্তত একজন খেলোয়াড় ছিলেন যিনি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। মদরিচের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আড়াই দশক পর ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য হয়ে পড়েছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। গত ২৫ বছরে ৮ জন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে ড্রেসিংরুমে পেয়েছে রিয়াল।
বর্ষসেরার ব্যক্তিগত পুরস্কার ব্যালন ডি’অর দেওয়া শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। সেবার জেতেন ব্ল্যাকপুলের ইংরেজ কিংবদন্তি স্ট্যানলি ম্যাথুজ। পরের তিনটি বছরেই এই ট্রফি উঠেছে রিয়ালের ঘরে। ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে জেতেন কিংবদন্তি আলফ্রেদো ডি স্টেফানো এবং তার মাঝখানে ১৯৫৮ সালে জেতেন ফরাসি কিংবদন্তি রেমন্ড কোপা।
অবিশ্বাস্য ব্যাপার, এরপর চার দশকের বেশি সময় রিয়ালে ব্যালন ডি’অর জয়ী কাউকে দেখা যায়নি। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ২০০০ সালে ক্লাবটির সভাপতি হওয়ার পর ‘গ্যালাকটিকোস’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে দলে ভেড়ান বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের। সেই পথ ধরেই ২০০০ সালের জুলাইয়ে রিয়ালে নাম লেখান পর্তুগিজ কিংবদন্তি লুইস ফিগো। সে বছরের ১৯ ডিসেম্বর ব্যালন ডি’অর জেতেন ফিগো এবং শুরু হয় রিয়ালের ২৫ বছরের ধারা—যেখানে ড্রেসিংরুমে অন্তত একজন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে দেখা গেছেই।
আরও পড়ুনগার্দিওলার এ কোন চেহারা, ভাবনায় ফেললেন ভবিষ্যৎ নিয়েও১২ ঘণ্টা আগেফিগো যোগ দেওয়ার পরের বছর রিয়ালে নাম লেখান জিনেদিন জিদান। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতায় সে বছরই ব্যালন ডি’অর জেতেন ফরাসি কিংবদন্তি। ২০০২ সালে যোগ দেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও। ১৯৯৭ সালে ব্যালন ডি’অর জেতার পাশাপাশি ২০০২ সালে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানোয় সে বছরও বর্ষসেরার এ ট্রফি জেতেন রোনালদো।
২০০৪-০৫ মৌসুমে রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় ছিলেন চারজন—ফিগো, জিদান, রোনালদো ও মাইকেল ওয়েন। ফিগো ও ওয়েন ২০০৫ সালে রিয়াল ছাড়েন, রোনালদো ২০০৭ সালে। এর মধ্যেই অবশ্য ব্যালন ডি’অরজয়ী আরেকজনকে দলে ভেড়ায় রিয়াল। ২০০৬ সালে উড়িয়ে আনা হয় ইতালির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ফাবিও কানাভারোকে। সে বছরই ব্যালন ডি’অর জেতেন কানাভারো। রোনালদোর প্রস্থানের পর প্রায় আড়াই বছর রিয়ালের স্কোয়াডে একমাত্র ব্যালন ডি’অরজয়ী হিসেবে দিন কেটেছে কানাভারোর।
কানাভারো রিয়াল ছাড়েন ২০০৯ সালে। সে বছরই ক্লাবটিতে যোগ দেন ২০০৭ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কাকা ও ২০০৮ সালে জয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০২২ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী করিম বেনজেমাও রিয়ালে নাম লেখান সে বছর (২০০৯)।
রোনালদো এরপর ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জেতেন ব্যালন ডি’অর। ২০১৮ সালের মে মাসে রোনালদো রিয়াল ছাড়েন। এরপর মাত্র কয়েক মাস ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য ছিল রিয়াল। শূন্যতাটা ঘুচে যায় সে বছরই ৩ ডিসেম্বর মদরিচ ব্যালন ডি’অর জেতায়। এরপর বেনজেমা ব্যালন ডি’অর জিতলেও ২০২৩ সালে তিনিও রিয়াল ছাড়েন। থেকে গিয়েছিলেন শুধু মদরিচ। তাঁর প্রস্থানের মধ্য দিয়ে রিয়ালে এখন ব্যালন ডি’অর জয়ী কেউ রইলেন না।
তবে ইঙ্গিত আছে জয়ের। গত বছর ব্যালন ডি’অর জয়ে রদ্রির সঙ্গে পেরে ওঠেননি রিয়ালের উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। যদিও চলতি বছর ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা বেশ পিছিয়ে। কিন্তু নতুন কোচ জাবি আলোনসোর অধীন নিশ্চয়ই এ খরা ঘুচিয়ে ফেলবে রিয়াল—সমর্থকেরা সে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন।