সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকায় বন বিভাগের সংরক্ষিত বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে বৈশাখী মেলার প্রস্তুতি বন্ধ করা হয়েছে। বনের ভেতরের প্রবেশমুখে কয়েক দিন ধরে বাঁশ দিয়ে খুঁটি করে মেলার দোকান বরাদ্দের জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছিল।

গতকাল বুধবার এ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে বিকেলে বন বিভাগ মেলা আয়োজনের জন্য নেওয়া প্রস্তুতি বন্ধ করে দেয়।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.

হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, টিলাগড় ইকোপার্কটি সংরক্ষিত বন। সেখানে কোনোভাবেই মেলা আয়োজনের সুযোগ নেই। এরপরও সেখানে মেলা আয়োজনের খবর পাওয়ার পর বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের টিকিট ও ক্যানটিনের ইজারা গ্রহণকারী জালাল এন্টারপ্রাইজের পরিচালককে ডেকে এনে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন। তখন বন বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের মেলার জন্য প্রস্তুত করা বাঁশের খুঁটির অবকাঠামো সরিয়ে নিতে বলা হয়।

জালাল এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মো. শাহজালাল জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তাঁরা বাঁশের খুঁটিগুলো খুলে নিয়েছেন।

আরও পড়ুনসিলেটে সংরক্ষিত বনে বৈশাখী মেলার প্রস্তুতি, নাম এল স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার১৯ ঘণ্টা আগে

মেলা আয়োজনের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সাইদুল এনাম চৌধুরী মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি করেছিলেন। তিনি তাঁর ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি ‘লাহিন চৌধুরী’ থেকে বৈশাখী মেলার জন্য স্টল বরাদ্দ চলছে, এমন প্রচারণা চালান। টিলাগড় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র তিনিসহ আরও কয়েকজন মিলে রক্ষণাবেক্ষণ ও টিকিট বেচাকেনার জন্য ইজারা নিয়েছেন। জালাল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত ২৮ মার্চ বন বিভাগের চুক্তিটি হয়। প্রতিষ্ঠানটি এক বছরের জন্য বন বিভাগকে ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ইজারা দিয়েছে। মেলার জন্য বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রবেশমুখে বাঁশ দিয়ে খুঁটি গেড়ে ১৩টি স্টল নির্মাণ করা হয়েছিল।

অভিযোগের বিষয়ে সাইদুল এনাম চৌধুরী প্রথম আলোকে দাবি করেছিলেন, দলীয় কোনো পরিচয়ে নয়, তিনি ও কয়েকজন মিলে বৈধভাবে ইজারা নিয়েছেন। সেখানে তাঁরা বৈশাখী মেলার আয়োজন করছিলেন না। ক্যানটিনটি নোংরা ও ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় সামনে বৈশাখে যাতে দর্শনার্থীদের খাবার ও পানীয় সরবরাহ করা যায়, সে চিন্তা থেকে প্রবেশমুখে কয়েকটি দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় টিলাগড় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে চিড়িয়াখানার আদলে বিভিন্ন পশুপাখি খাঁচায় রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীরা ছুটির দিনে সেখানে বেড়াতে যান। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে ৬২টি প্রাণী নিয়ে ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর সংরক্ষণ কেন্দ্রটি চালু করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন য প র ণ র প রস ত ত বন ব ভ গ র ক ষ ত বন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরিতে না ফেরালে রাজপথ ছাড়বেন না ইআরপিপি স্বাস্থ্যকর্মীরা

পাঁচ মাস ধরে বেতন নেই। পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেউ, কেউ আবার চাকরির বয়সসীমা পার করে এখন আর নতুন কোথাও আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর মধ্যেই প্রকল্প শেষের অজুহাতে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা—যারা ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই অবস্থায় নিজেদের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং অবিলম্বে বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ারডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আউটসোর্সিং স্বাস্থ্যকর্মীরা। 

আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের প্রধান দাবি হলো স্থায়ীকরণের মাধ্যমে চাকরি বহাল রাখতে হবে এবং রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির লিখিত নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেইসঙ্গে গত চার মাসের বকেয়া ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে অবস্থান কর্মসূচি চলবে, প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বিক্ষোভরত কর্মীদের একজন বলেন, সরকারের ডাকেই তো আমরা এসেছিলাম। ভয়ঙ্কর সময় ছিল সেটা। তখন যদি পেছনে না ফিরে মানুষকে সেবা দিতে পারি, আজ যখন একটু স্থিতি এসেছে—তখন কেন আমরা উপেক্ষিত হবো? ৫ মাস ধরে একটা টাকাও পাইনি, পরিবার চালানো দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিপসমে কর্মরত ইআরপিপির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় পাঁচ বছর এই প্রকল্পে কাজ করেছি। এখন বয়স ৩৫ ছাড়িয়েছে। সরকারি চাকরির আবেদনের শেষ সীমা পেরিয়ে গেছি। এখন আমাদের বাদ দিয়ে নতুন অদক্ষ জনবল নেয়ার চেষ্টা চলছে। এটা শুধু অবিচার না, আমাদের মর্যাদায় আঘাত।

ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি সেন্টারের ডাটা অপারেটর আব্দুর রহমান বলেন, ঘরে ছোট বাচ্চা, স্কুলের বেতন দিতে পারিনি। স্ত্রী-সংসার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি। করোনার সময় এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাকেই আমি কাজে গিয়েছিলাম, এখন সেই অধিদপ্তরের সিঁড়িতেই বসে থাকতে হচ্ছে দাবি আদায়ের জন্য।

ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় কর্মরত এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, করোনার সময় গড়ে তোলা আরটি-পিসিআর ল্যাব, ডেডিকেটেড আইসিইউ বা আইসোলেশন ইউনিটে তারাই প্রথম দিন থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ আজ তাদের বাদ দিয়ে সেই পদে নতুন লোক নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। 

তারা বলছেন, আমরা চাকরি ভিক্ষা চাই না। আমরা যেটুকু প্রাপ্য, সেটুকু চাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চলবে, তবে আমাদের চাকরি কেড়ে নেয়া হলো কেন? আমাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না করে অন্যদের সুযোগ দেওয়া মানে অবিচারকে পুরস্কৃত করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ