অবিলম্বে নারী সংস্কার কমিশন ও তাদের সুপারিশ বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

আজ রোববার এক বিবৃতিতে দলের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোতে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক পারিবারিক বিধানকে চরমভাবে অবজ্ঞা ও অস্বীকার করা হয়েছে। সুপারিশে থাকা ‘অভিন্ন পারিবারিক আইন’–এর মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার নামে ইসলামের বিধানকে বাতিল করে পশ্চিমা সমাজব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনে করে, ইসলামে নারীর জন্য নির্ধারিত উত্তরাধিকার, বিবাহ ও তালাকের বিধান কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত, যা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, যৌন পেশাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া বা শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব সরাসরি কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী এবং সমাজে ব্যভিচার, অনাচার ও নৈতিক অধঃপতনকে অবাধ করে দেবে।

অভিন্ন পারিবারিক আইন তৈরির প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। আগামী ৩ মের আগে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়ী থাকবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাইয়ে কুষ্টিয়ায় হামলার প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা ইনু

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় কুষ্টিয়ায় ছাত্র–জনতার ওপর হামলার প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা ও উসকানিদাতা ছিলেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। জবানবন্দিতে এ কথা উল্লেখ করেছেন সাক্ষী মো. রাইসুল হক। এ জন্য ইনুর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন এই সাক্ষী।

গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ইনুর বিরুদ্ধে করা মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে রাইসুল হক এ কথাগুলো বলেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২–এ আজ সোমবার রাইসুল হক জবানবন্দি দেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার উপস্থিত ছিলেন।

ইনুর মামলার প্রথম সাক্ষী রাইসুল হকের বাড়ি মেহেরপুর জেলায়। তিনি জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় কুষ্টিয়ার কালি শংকরপুর এলাকার একটি মেসে ছিলেন। জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি কপালে গুলিবিদ্ধ হন।

জবানবন্দিতে রাইসুল হক বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি সফল করতে কুষ্টিয়া বক চত্বরের দিক থেকে ছয় রাস্তার মোড় পর্যন্ত দুই হাজার থেকে তিন হাজার আন্দোলনকারী অবস্থান নেন। সেখানে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী তাঁদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। দুপুরের পর বক চত্বরের পাশে আন্দোলনকারী বাবু গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তাঁরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন বক চত্বরের আশপাশে সুরুজ আলী বাবু, বাবুল ফরাজী, আবদুল্লাহ মুস্তাকিন, উসামাসহ ছয়জন শহীদ হন।

জবানবন্দিতে সাক্ষী রাইসুল হক আরও বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি দেখেছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনকলের মাধ্যমে ইনু আন্দোলনকারীদের দমনের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে আন্দোলনকারীদের গুলি করা, বোম্বিং করা, যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করার পরামর্শ ও উসকানি দেন।

জেরায় যা বললেন এই সাক্ষী

জবানবন্দি শেষে সাক্ষী রাইসুল হককে জেরা করেন ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। সাক্ষী রাইসুলকে আইনজীবী মনসুরুল প্রশ্ন করেন, ২০২৪ সালে কুষ্টিয়া–২ আসন থেকে কে নির্বাচিত হয়েছিলেন?

এর জবাবে সাক্ষী রাইসুল বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে কুষ্টিয়া–২ আসন থেকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

এই একটি প্রশ্নের মাধ্যমে আইনজীবী মনসুরুল হক তাঁর জেরা সম্পন্ন করেন। তারপর ইনুর পক্ষে আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিনও সাক্ষী রাইসুলকে জেরা করেন।

গত রোববার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে ইনুর বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিনে দুজন সাক্ষী হাজির করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। রাইসুল হক ছাড়াও গতকাল বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।

‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ যাচাই করা হবে’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে এসেছে। তবে সে অভিযোগ এখন পর্যন্ত তাঁরা যাচাই–বাছাই করে দেখেননি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।

তাজুল ইসলাম বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনও পড়ে দেখবেন। যদি মনে হয় বিডিআর হত্যাকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পড়ে কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার উপযুক্ত, তাহলে এখানে (ট্রাইব্যুনালে) হবে। অন্যথায় দেশের প্রচলিত অন্যান্য আইনেও বিচার হতে পারে।

শাহরিয়ার কবিরকে হাজির করার নির্দেশ

মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি ও লেখক শাহরিয়ার কবিরকে আগামী ১২ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত রোববার এই আদেশ দেন। সে সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

২০১৩ সালের মে মাসে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শাহরিয়ার কবিরকে হাজির করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় আগামী ১২ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য আছে।

ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম শাপলা হত্যাকাণ্ডের ‘অন্যতম নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে শাহরিয়ার কবিরকে উল্লেখ করেন। ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর মিজানুল আরও বলেন, শাহরিয়ার কবিরকে এ মামলায় আগামী ১২ জানুয়ারি হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ আরও অনেকে এ মামলার আসামি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ