খুলনায় ‘ঝটিকা’ মিছিল করায় আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগের ২৫ নেতাকর্মী আটক
Published: 21st, April 2025 GMT
খুলনায় আওয়ামী লীগের মিছিলে অংশ নেওয়া ২৫ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)।
রবিবার (২০ এপ্রিল) রাতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া এন্ড সিপি) মোহা. আহসান হাবীব এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘খুলনায় ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়াও যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’’
আরো পড়ুন:
টঙ্গীতে দুই শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের মা: পুলিশ
বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটার অভিযোগে জামায়াত নেতা আটক
এর আগে, দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
উল্লেখ্য, রবিবার সকালে খুলনা নগরীর জিরো পয়েন্ট, সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার মজিদ সরণি, বয়রা এলাকার মহিলা কলেজ সড়ক ও দৌলতপুর এবং শান্তিধাম মোড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে আওয়ামী লীগ।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভিউয়ের দৌড়ে মূল্যবোধের পতন
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এটি যেমন মানুষের ভাবনার আদান-প্রদানের একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, তেমনি এটি হয়ে উঠেছে আত্মপ্রকাশ ও বিনোদনের এক নতুন ক্ষেত্র। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই প্ল্যাটফর্মেই দিনে দিনে বাড়ছে অশ্লীলতা, কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট আর সামাজিক অনৈতিকতার চর্চা। ভিউ, লাইক, ফলোয়ার বা ভাইরাল হওয়ার আশায় অনেকেই এখন মূল্যবোধ, শালীনতা আর নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছেন। যার ফলে ফেসবুকের মতো শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠছে সামাজিক অবক্ষয়ের হাতিয়ার।
একটা সময় ছিল, যখন কেউ কিছু পোস্ট করলেই তা দিয়ে তার চিন্তা-চেতনার পরিচয় মিলতো। কিন্তু এখন অনেকেই কনটেন্ট তৈরি করছেন শুধুমাত্র ‘ভিউ’ পাওয়ার জন্য। যেন এটাই হয়ে উঠেছে জীবনের একমাত্র লক্ষ। অর্ধনগ্ন ভিডিও, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, ভুয়া প্রেম-ভাঙন নাটক কিংবা আপত্তিকর প্র্যাংক—এসবই যেন নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয়েছে কিছু তথাকথিত ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’-এর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব কনটেন্টে দেখা যায় হাজার হাজার লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। সমাজের নানা স্তরের মানুষ—বিশেষত তরুণ প্রজন্ম—এসব দেখছে, শিখছে এবং অনুকরণ করছে। ফলে তৈরি হচ্ছে এক ভয়াবহ সামাজিক ও মানসিক সংকট।
এই সমস্যা শুধু কিছু ব্যক্তি বা কনটেন্ট নির্মাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর দায়ভার সমাজ ও দর্শককেও নিতে হবে। কারণ দর্শকই এসব কনটেন্টকে ভাইরাল করে তোলে। দর্শকদের অসংযমী কৌতূহল, অপ্রয়োজনীয় বিনোদনের তৃষ্ণা এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই এসব অশ্লীল কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা যারা ‘দর্শক’, তারা যদি এসব কনটেন্ট এড়িয়ে চলতাম, প্রতিবাদ করতাম বা রিপোর্ট করতাম—তাহলে এমন অবস্থা হতো না।
এখানে একটি প্রশ্ন উঠে আসে—ভিউ কি আদতেই জীবনের একমাত্র সফলতার মানদণ্ড? কেবল জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য নিজেকে, সমাজকে, এমনকি আগামী প্রজন্মের চিন্তা-চেতনা ধ্বংস করে দেওয়া কি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য? ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের যেমন সুযোগ দিয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহার আমাদের জন্য ভয়ানক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এসব অশ্লীলতা দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছে, নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে, তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার পথ রুদ্ধ হচ্ছে।
এখন সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। ফেসবুকে আমরা যারা সক্রিয়, আমাদের দায়িত্ব এসব কনটেন্টের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, প্রতিবাদ জানানো এবং সুন্দর-শালীন কনটেন্টকে উৎসাহ দেওয়া। সরকার, সামাজিক সংগঠন, এবং পরিবারকেও একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রয়োজন ফেসবুক কর্তৃপক্ষেরও কঠোর মনিটরিং ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের।
অশ্লীলতা কিংবা ভিউয়ের পেছনে ছোটা কোনো সৃজনশীলতা নয়। বরং এই প্রবণতা আমাদের সামাজিক কাঠামো, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং আত্মিক শুদ্ধতার ওপর এক গভীর আঘাত। আমরা চাই একটি সুস্থ, নিরাপদ ও শালীন ভার্চুয়াল জগৎ—যেখানে মানুষ বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিবাচকতার আলোয় আলোকিত হবে।
ভিউ নয়, গঠনমূলক চিন্তা হোক আমাদের লক্ষ। ভাইরাল নয়, নৈতিকতা হোক আমাদের অহংকার। দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই সম্ভব একটি সুস্থ ও মানবিক ফেসবুক গড়ে তোলা। এখনই সময়—প্রতিবাদ গড়ে তোলার, নিজেকে বদলানোর এবং অন্যকেও সচেতন করার। নইলে ভিউয়ের দৌড়ে আমরা একদিন হারিয়ে ফেলব আমাদের মূল্যবান মানবতা, নৈতিকতা এবং আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।
এস.এম. রেদোয়ানুল হাসান রায়হান
আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া