খুলনায় ‘ঝটিকা’ মিছিল করায় আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগের ২৫ নেতাকর্মী আটক
Published: 21st, April 2025 GMT
খুলনায় আওয়ামী লীগের মিছিলে অংশ নেওয়া ২৫ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)।
রবিবার (২০ এপ্রিল) রাতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া এন্ড সিপি) মোহা. আহসান হাবীব এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘খুলনায় ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়াও যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’’
আরো পড়ুন:
টঙ্গীতে দুই শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের মা: পুলিশ
বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটার অভিযোগে জামায়াত নেতা আটক
এর আগে, দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
উল্লেখ্য, রবিবার সকালে খুলনা নগরীর জিরো পয়েন্ট, সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার মজিদ সরণি, বয়রা এলাকার মহিলা কলেজ সড়ক ও দৌলতপুর এবং শান্তিধাম মোড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে আওয়ামী লীগ।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৪২ বছরের এক স্বৈরশাসকের গল্প
১০ বছর, ২০ বছর নয়; একই মসনদে, একই রাজ্যে টানা ৪২ বছর। শুধু নিজ রাজ্যপাটে ছড়ি ঘোরাননি, খেয়াল–খুশিমতো নাচিয়েছেন পশ্চিমাদেরও। লিবিয়ার ৪২ বছরের এই স্বৈরশাসক হলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি।
হঠাৎ কেন বলছি গাদ্দাফির কথা? আজ ২০ অক্টোবরের সেই দিন, যেদিন দাপুটে এই নেতা প্রাণ বাঁচাতে লুকিয়েছিলেন পাইপের ভেতরে। সেখানেও কামানের গোলা ছোড়া হয়। পাইপের ভেতরে থেকে বেরিয়ে আসতেই তাঁকে নিশানা করে চালানো হয় গুলি। শোনা যায়, একসময়ের লৌহমানব গাদ্দাফির মরদেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে বিপণিবিতানের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
২০১১ সালে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সমর্থনপুষ্ট বিরোধী একটি গোষ্ঠীর হাতে আটক হন গাদ্দাফি। সেই বছরের ২০ অক্টোবর হত্যা করা হয় তাঁকে।
কেমন ছিলেন এই স্বৈরশাসক? লিবিয়ার মানুষ কি তাঁকে ভালোবাসত, না ঘৃণা করত? কেনই–বা তিনি পশ্চিমাদের চক্ষুশূল ছিলেন? খুঁজে দেখি এসব প্রশ্নের উত্তর। আর সে জন্য আমাদের যেতে হবে অনেকটা পেছনে। সেই সত্তরের দশকে।
সেনা কর্মকর্তা থেকে মসনদেগাদ্দাফি ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসেরের ভক্ত। ১৯৫৬ সাল থেকে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নেন। ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে অভ্যুত্থান ঘটান। ওই সময় লিবিয়ার বাদশাহ সাইয়্যিদ মুহাম্মদ ইদ্রিস বিন মুহাম্মদ আল মাহদি তুরস্কে ছিলেন।
তখন রাষ্ট্রক্ষমতা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন বাদশাহর ভাইপো যুবরাজ সাইদ হাসান অর রিদা আল–মাহদি। এ সুযোগই কাজে লাগান গাদ্দাফি। রিদা আল–মাহদিকে গৃহবন্দী করে ক্ষমতা দখল করেন। অভ্যুত্থানের পর গাদ্দাফি নিজের ক্যাপ্টেন পদ বদলে ফেলেন। হয়ে যান কর্নেল গাদ্দাফি।
কেমন ছিল গাদ্দাফির শাসনগাদ্দাফির শাসনের চার দশকে আফ্রিকা তো বটেই, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের কাছে লিবিয়া ছিল লোভনীয় কর্মক্ষেত্র। দেশটিতে গিয়ে তাঁরা বিপুল অর্থ আয় করেছেন।
গাদ্দাফির আমলে লিবিয়া অনেক বেশি তেলসমৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়। প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য লিবিয়ার ১১টি সীমান্ত এলাকাকে ৪টি জোনে ভাগ করে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় দেশকে অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত করার কাজ করেছিলেন।
তবে ৪২ বছরের শাসনে গাদ্দাফি হয়ে উঠেছিলেন স্বৈরশাসক। বিরোধী মতের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন চালিয়েছিলেন তিনি। ত্রিপোলির প্রাসাদে আটকে শত শত নারীর ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
১৯৮৮ সালে স্কটল্যান্ডের লকারবিতে প্যানঅ্যাম এয়ারলাইনসের একটি জাম্বো জেট বিমানে বোমা হামলায় ২৭০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গাদ্দাফির জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয় লিবিয়াকে। ১৯৯৯ সালে লকারবি বিমান হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন দুজনকে হস্তান্তর করে গাদ্দাফি প্রশাসন।
অভিযোগ আছে, গাদ্দাফি অনেক বিচারকাজ করেছেন গোপনে। হত্যা করেছেন অনেক মানুষ।
পশ্চিমাদের চক্ষুশূলগাদ্দাফি সব সময়ই ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলেন। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে সমর্থন দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর রোষের শিকার হন তিনি। ১৯৭২ সালে ফেডারেশন অব আরব রিপাবলিকস গঠনের মাধ্যমে আরব দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। আউজো উপত্যকা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ চাদের সঙ্গে সত্তরের দশকে যুদ্ধে জড়ায় লিবিয়া।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান গাদ্দাফিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের পাগলা কুকুর’ বলতেন। ১৯৮২ সালের মার্চে লিবিয়ার তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। লিবিয়ার তেলশিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ২০০৪ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়। এ সময়ে লিবিয়ার ওপর থেকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
২০০৯ সালে গাদ্দাফি আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আফ্রিকার দেশগুলোর স্বার্থ নিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে গাদ্দাফির ঝাঁজালো বক্তব্য, নীতিমালার অনুলিপি ছিঁড়ে ফেলা পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কে আবারও অবনতি ঘটায়।
আরব বসন্ত, গাদ্দাফির পতনের শুরু২০১০ সালের শুরুর দিকে আসে আরব বসন্ত। ফেব্রুয়ারিতে তিউনিসিয়া ও মিসরের প্রতিবেশী দেশগুলোয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলে। তিউনিসিয়ায় জাইন আল-আবিদিন বেন আলী ও মিসরে হোসনি মোবারক ক্ষমতাচ্যুত হন। এ সময়েই বেনগাজি শহরে ছড়িয়ে পড়ে গাদ্দাফিবিরোধী বিক্ষোভ। গোলাবারুদ, যুদ্ধবিমান দিয়ে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেন গাদ্দাফি।
বিক্ষোভ যত জোরালো হতে থাকে, পদত্যাগ করার জন্য গাদ্দাফির ওপর পশ্চিমাদের চাপ তত বাড়তে থাকে। গৃহযুদ্ধ বাধার পরপরই জাতিসংঘ গাদ্দাফিবিরোধী ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিলকে (এনটিসি) সমর্থন দেওয়া শুরু করে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক দেশ এতে মদদ জোগায়। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সমর্থনে এনটিসি লিবিয়ায় আক্রমণ শুরু করে।
গাদ্দাফিকে হত্যাএভাবে এনটিসিই হয়ে ওঠে লিবিয়ার অঘোষিত সরকার। ২০১১ সালের আগস্টে বিদ্রোহী বাহিনী ত্রিপোলিতে ঢুকে পড়ে। শহরের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। ২৩ আগস্ট তারা ত্রিপোলিতে গাদ্দাফির সদর দপ্তর আল-আজিজিয়া কম্পাউন্ড দখল করে। শুরু হয় গাদ্দাফির খোঁজ।
ত্রিপোলির পতনের পর সিয়ার্ত শহরে গাদ্দাফির অনুগত বাহিনী শেষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ শহরেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয় গাদ্দাফিকে। গাদ্দাফিকে হত্যার বর্ণনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্নভাবে এসেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের বিমান হামলায় গাদ্দাফির গাড়িবহরের অন্তত ১৫টি সশস্ত্র পিকআপ ট্রাক বিধ্বস্ত হয়। গাদ্দাফিসহ কয়েকজন বড় একটি পাইপের ভেতরে আশ্রয় নেন। বিদ্রোহীরা কামানের গোলা ছোড়ে। পাইপের ভেতর থেকে গাদ্দাফি বের হয়ে আসার পর তাঁকে নিশানা করে গুলি ছোড়া শুরু হয়।
সে সময় আল-জাজিরা এক ভিডিওতে দেখায়, রক্তাক্ত গাদ্দাফিকে বিদ্রোহীরা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। পরে এনটিসির প্রধান মাহমুদ জিবরিল সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্রোহী ও গাদ্দাফি বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে গাদ্দাফি নিহত হন।
আল-জাজিরার আরেকটি ভিডিওতে কর্নেল গাদ্দাফির মরদেহ মাটিতে টেনে নিতে দেখা যায়। এমনও বলা হয়, একসময়ের লৌহমানব গাদ্দাফির মরদেহ সেখানকার একটি বিপণিবিতানের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
লিবিয়া কেমন আছেগাদ্দাফিকে হত্যার পর লিবিয়ায় কাঙ্ক্ষিত শান্তি ও গণতন্ত্র ফেরেনি। লিবিয়ার সমৃদ্ধ অর্থনীতি এখন অনেকটাই বেহাল।
গাদ্দাফি-পরবর্তী এক দশকে ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার লড়াইয়ে নেমেছে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। ধ্বংস করেছে অবকাঠামো।
জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে অস্ত্রবিরতির মধ্য দিয়ে দেশটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত থামে, খুলে যায় শান্তি আলোচনার পথ। ২০২১ সালে লিবিয়ার প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হন মোহাম্মদ ইউনুস আল-মেনফি।
হত্যার ১৫ বছর পরও লিবিয়ার বনি ওয়ালিদ শহরের প্রবেশমুখে গাদ্দাফির বিশাল প্রতিকৃতি রয়েছে। সেখানকার ওয়ারফারা সম্প্রদায়ের মানুষ গাদ্দাফি ও তাঁর পরিবারকে মনে রেখেছেন।
২০২১ সালে প্রকাশিত এএফপির এক খবরে সেখানকার বাসিন্দা মোহাম্মদ দাইরিকে বলতে শোনা যায়, ‘গাদ্দাফি আমাদের হৃদয়ে রয়েছেন। আমরা সব সময় তাঁর দেখানো পথেই চলব।’
তাই বলা যায়, এই স্বৈরশাসককে এখনো একই সঙ্গে নায়ক ও খলনায়ক হিসেবে মনে রেখেছেন লিবিয়াবাসীর অনেকে।