ফরিদপুরের বোয়ালমারীর পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর ও ভাই সিদ্দিকী মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার ময়েনদিয়া বাজারে এ ঘটে।

তাঁরা দুজন আওয়ামী লীগের নেতা। মান্নান মাতুব্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের গণস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক। তিনি একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষী দিয়েছিলেন। সিদ্দিকী মাতুব্বর পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর তাঁদের বাড়িতে হামলা হলো।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রায় ঘোষণার পর ময়েনদিয়া বাজারে একটি আনন্দমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বাজারের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে সন্ধ্যার দিকে বাজারসংলগ্ন এলাকায় যায়। এ সময় মিছিল থেকে একদল লোক প্রথমে সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে ও পরে মান্নান মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন পরিবারের সদস্যরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। পাশের ডহর নগর পুলিশ ফাঁড়ির কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে এলে হামলাকারীরা চলে যান।

সিদ্দিক মাতুব্বর অভিযোগ করেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি পাশের সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড়খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদের স্বজন ও সমর্থকেরা এই হামলায় জড়িত। তাঁর ভাই ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদের মামলার একজন সাক্ষী ছিলেন। এই ক্রোধ থেকেই আজাদের ছেলে ও স্বজনেরা আনন্দমিছিলের নামে বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল কালাম আজাদের ছেলে মাসুম বিল্লাহ ওরফে জেহাদ বলেন, তিনি গত দেড় সপ্তাহ ঢাকায় আছেন। ঢাকায় থেকে এলাকায় মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া কীভাবে সম্ভব?

মাসুম বিল্লাহ আরও বলেন, ‘আমার বাবার বিরুদ্ধে শুধু মান্নান মাতুব্বর একা নন, আরও অনেকে সাক্ষী দিয়েছেন। আমরা জানি, তাঁরা নিজে থেকে এ সাক্ষী দেননি, জোর করে দেওয়ানো হয়েছিল। কোনো সাক্ষীর সঙ্গে তাঁদের পরিবারের খারাপ সম্পর্ক নেই, তবে এলাকা কোনো ঘটনা ঘটলে তাঁদের নাম জড়িয়ে অভিযোগ দেওয়া ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৭ অক্টোবর মান্নান মাতুব্বর ও তাঁর ভাই সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ ঘটনায় বোয়ালমারী থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদের ছেলে ও স্বজনদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়। ওই হামলার ঘটনার পর ওই দুই ভাইয়ের পরিবার এলাকায় থাকছেন না।

ময়েনদিয়া বাজার সমিতির সভাপতি মাহবুব হাসান বলেন, গতকাল বিকেলে তিনি, সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পাশের সালথা উপজেলার একটি গ্রামে একটি কাজে গিয়েছিলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে বাজারে ফিরে জানতে পারেন মান্নান মাতুব্বর ও সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে হামলা হয়েছে। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা তাঁর জানা নেই।

ডহর নগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আল আমীন বলেন, তিনি অতিরিক্ত দয়িত্ব পালনে ভাঙ্গা উপজেলায় ছিলেন। এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান জানতে পারবেন।

এ বিষয়ে ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, ময়েনদিয়া এলাকায় গতকাল ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সে বিষয়ে ডহরনগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নিশ্চয় ব্যবস্থাই নেবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন ন ন ম ত ব বর স দ দ ক ম ত ব বর ম ত ব বর র ব ড় ত ম নবত ব র ধ এল ক য় উপজ ল আওয় ম গতক ল অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সাতক্ষীরা–২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ বিএনপির একাংশের

সাতক্ষীরা–২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা সাতক্ষীরা–খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন। ‘সাতক্ষীরা–২ আসনের সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ’–এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) টানা সাতবারের চেয়ারম্যান আবদুল আলিমকে দলীয় মনোনয়নের দাবি জানানো হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মিলবাজার ও আমতলা মোড় এলাকায় প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মিছিল এসে জড়ো হয় শহরের মিলবাজার এলাকায়। এ সময় কয়েক হাজার নেতা–কর্মী সমবেত হলে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলের সামনে ঘোনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক, লাবসা ইউপি বিএনপির সভাপতি সফিকুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক আবুল বাসার, সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য নজিবুর রহমান, আবুল হাসান ও আতিয়ার রহমান।

আবদুল আলিমের সমর্থকদের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আব্দুর রউফকে বহিষ্কার করা হয়। সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কোনো ঘোষণা না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া ত্যাগী নেতা–কর্মীদের প্রতি অবমূল্যায়ন।

বক্তারা বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে লাবসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল আলিম। তিনি দীর্ঘ ১৯ বছর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদস্যসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। দলের দুঃসময়ে আন্দোলন–সংগ্রামে তিনি মাঠে ছিলেন। তিনি দুর্দিনে দলের নেতা–কর্মীদের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। প্রার্থী পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবু জাহিদ বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউপি নির্বাচন করায় আব্দুর রউফকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কোনো চিঠি আমরা পাইনি।’

৩ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে সাতক্ষীরা–২ আসনে মনোনয়ন পান আলিপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রউফ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ