আলোচিত স্বৈরশাসকদের শেষ পরিণতি
Published: 18th, November 2025 GMT
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে স্বৈরশাসকেরা ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁরা অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে দেশ শাসন করেছিলেন। অনেকে বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়ন চালিয়েছেন। এসব দাপুটে নেতাদের কারও কারও জীবনের শেষ সময়টা ছিল ভয়ংকর। তাঁরা ক্ষুব্ধ জনগণ বা প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন। আবার কারও কারও স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কাউকে নিজ দেশেই করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। আবার কেউ কেউ জীবনের শেষ দিনগুলো বিদেশে নির্বাসনে থেকেছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভোটের আমেজ থেকে দূর হোক শোডাউনের সংস্কৃতি
দেশে এখন দুটি বাস্তবতা বিরাজ করছে। একদিকে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি কেন্দ্র করে জ্বালাও-পোড়াও আতঙ্ক, অন্যদিকে আছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে মানুষের উৎসাহ ও উদ্দীপনা।
তবে এ দুই বাস্তবতার ভেতর নির্বাচন নিয়ে জনমনে উৎসবের পাল্লাটা ভারী। বেশ বড় ব্যবধানে ভারী। কারণ, গত বছর জুলাই–আগস্টে ক্ষমতাসীনদের রেখে যাওয়া ক্ষত এ দেশের বুকে এখনো দগদগে তাজা। নতুন করে কোনো নাশকতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগ্রহ জনগণের নেই। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার কেন্দ্র করে তো নয়ই।
এ ছাড়া বহু বছরের ডামি নির্বাচন আর ‘রাতের ভোটের’ অধ্যায় পেরিয়ে বাংলাদেশ এবার সত্যিই একটা বহুদলীয় নির্বাচনের সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। বিচার, সংস্কার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঘিরে নির্বাচন নিয়ে অনেক ‘যদি কিন্তু’ ছিল। তবে সে ধোঁয়াশা কেটেছে। ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবসান হয়েছে সব ‘যদি’ আর ‘কিন্তু’র।
ইতিমধ্যে নির্বাচনী আসনগুলোয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে দেশের বড় দলগুলো। নতুন দলগুলোও বিতরণ শুরু করেছে মনোনয়নপত্র। সবাই উঠে পড়েছে নির্বাচনের ট্রেনে। আশা করি, এই ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়বে না।
নির্বাচন কেন্দ্র করে জনমনে উচ্ছ্বাস যেমন আছে, তেমনি প্রার্থীদের শোডাউনের সংস্কৃতি নিয়ে আছে কিছু অস্বস্তিও। এ দেশে নির্বাচনী প্রার্থীদের ভেতর শোডাউনের সংস্কৃতি কেন টিকে আছে, তা অনুমান করা যায়। নির্বাচনের আগে ভোটার ও প্রতিপক্ষকে শক্তি ও সক্ষমতা জানান দেওয়ার এ এক সহজ কৌশল। এ ছাড়া গত ১৬ বছরে ওই অর্থে প্রকাশ্যে কার্যক্রমই চালাতে পারেনি বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তাই হয়তো শোডাউনের জৌলুশটাও এবার বেশি।
কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় তখনই, যখন এই জৌলুশের জোশে প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা নির্বাচনী আচরণবিধি থেকে শুরু করে কাণ্ডজ্ঞানও ভুলতে বসেন। নির্বাচনী আমেজে সারা দেশে চলছে নানা দলের হাজারো সভা-সেমিনার। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে জনগণের চলাচলের পথ অবরুদ্ধ করে চালানো হচ্ছে এসব সভা।
ট্র্যাফিক আইন অমান্য করে হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলের ধীরগতির বহর নিয়ে সড়কগুলোকে করা হচ্ছে একপ্রকার অবরুদ্ধ। জিম্মি করা হচ্ছে এ দেশের প্রকৃত মালিক, এ দেশের আপামর জনগণকে, যা কেবল কাণ্ডজ্ঞানই নয়, নির্বাচনী আচরণবিধিরও বিরোধী।
আরও পড়ুনশোডাউন আর গাড়িবহরের রাজনীতিই কি চলবে২৫ মার্চ ২০২৫সর্বশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবরে সংশোধিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ৬ অনুচ্ছেদের (ঘ) ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, প্রার্থীরা ‘জনগণের চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্টি করিতে পারে, এমন কোনো সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা করিতে পারিবে না এবং তাহাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তিও অনুরূপভাবে জনসভা বা পথসভা ইত্যাদি করিতে পারিবে না’।
বিধিমালার ১০ অনুচ্ছেদের (ক) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, প্রার্থীরা ‘নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো গেইট বা তোরণ নির্মাণ করিতে পারিবেন না কিংবা চলাচলের পথে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিতে পারিবেন না’।
গণ-অভ্যুত্থানের পর জনমনে এক আশার সঞ্চার হয়েছিল। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও তরুণ প্রজন্ম আশা করেছিল, রাজনৈতিক শক্তিগুলো ‘গায়ের জোর’ দেখানোর সংস্কৃতি থেকে অন্তত বের হয়ে আসবে। এর আগের ১৫ বছরে ক্ষমতাসীনদের নানা আয়োজনে যথেষ্ট ‘গায়ের জোর’ সহ্য করেছে তারা। সারা রাত বাধ্য হয়ে ভাষণ শোনা থেকে শুরু করে অপ্রাসঙ্গিক একেকটা ‘দলীয় দিবসে’ জনতা জিম্মি ছিল ক্ষমতাসীনদের শোডাউনের কাছে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলটা জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হওয়ার পেছনে ওই সব কর্মসূচির ভূমিকা কম ছিল না। দলটির পতন হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানে। জনগণ আশা করেছিল, দলোগুলোর ক্ষমতা প্রদর্শনের খেলায় বাধ্য দর্শকের ভূমিকায় তাদের আর থাকতে হবে না।
আমরা কি এমন জনপ্রতিনিধি চাই, যাঁরা কেবল নিয়ম রক্ষার্থে মৌসুমি আইনের অনুগত? নাকি আমরা চাইব এমন জনপ্রতিনিধি, যাঁরা যেকোনো বাস্তবতাতেই জনমানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল? নয়তো আমরা এই নিশ্চয়তা কীভাবে পাব যে এই প্রার্থীরা আইনপ্রণেতা হয়ে খোদ আইনের তোয়াক্কা করাই বন্ধ করে দেবেন না? এ নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারে না।কিন্তু বাস্তবতা কি তা বলে? বলে না। রোজই দেশের কোথাও না কোথাও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে জরুরি সেবায় নিয়োজিত বহু মানুষ প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে স্কুলফেরত শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক নাগরিকেরা। যানজটের জন্য এমনিতেই দেশের প্রধান শহরগুলো দুনিয়াতে কুখ্যাত; এর ওপর যখন যুক্ত হয় শোডাউনের বাড়তি জট, তখন সীমিত পরিমাণে হলেও এর সরাসরি প্রভাব পড়ে জাতীয় অর্থনীতিতে। জনগণের জন্য যা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার চেয়ে কম কিছু নয়।
অনেকে বলতে পারেন, বিধিমালা তো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে কার্যকর হয়। এর আগে বিধিমালা মানার তো কোনো দায় নেই। হ্যাঁ, সেটাই সত্যি।
আরও পড়ুনরাজনীতিবিদদের আচরণ কি পাল্টেছে১০ জানুয়ারি ২০২৫কিন্তু আমরা কি এমন জনপ্রতিনিধি চাই, যাঁরা কেবল নিয়ম রক্ষার্থে মৌসুমি আইনের অনুগত? নাকি আমরা চাইব এমন জনপ্রতিনিধি, যাঁরা যেকোনো বাস্তবতাতেই জনমানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল? নয়তো আমরা এই নিশ্চয়তা কীভাবে পাব যে এই প্রার্থীরা আইনপ্রণেতা হয়ে খোদ আইনের তোয়াক্কা করাই বন্ধ করে দেবেন না? এ নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারে না।
তবে প্রার্থীরা অন্তত আমাদের আশ্বস্ত করতে পারেন, জনগণকে ভোগানোর যেকোনো আয়োজন থেকে তাঁরা বিরত থাকবেন। আশ্বস্ত করার সবচেয়ে সহজ উপায় হতে পারে জনগণের প্রতি এখন থেকেই সহানুভূতিশীল থাকা, নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা মেনে চলা, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগেই। জনগণ একটু শান্তিতে থাকলে কারও যেহেতু ক্ষতি নেই।
• সৈকত আমীন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
* মতামত লেখকের নিজস্ব