প্যারিস চুক্তি, জাতীয় জলবায়ু ও কর্মসংস্থান নীতি, এজেন্ডা ২০৩০ এবং আইএলও নির্দেশিকা অনুসারে টেকসই, ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক রূপান্তরকে (ট্রান্সফরমেশন) সমর্থন করার জন্য সরকার, মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে যৌথ সংকল্প বাড়ানোর আহ্বানের মাধ্যমে শেষ হলো দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ জাস্ট ট্রানজিশন একাডেমি।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), লউডস ফাউন্ডেশন এবং থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন (টিআরএফ) এর একটি সম্মিলিত উদ্যোগ। যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে এই বাংলাদেশ জাস্ট ট্রানজিশন একাডেমি।

সমাপনী অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ.

এইচ.এম. শফিকুজ্জামান মন্তব্য করেন, ট্রানজিশন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমাদেরকে মালিক এবং শ্রমিকদের সাথে এই আলোচনাটি একসাথে এগিয়ে নিতে হবে, যাতে প্রধান উপদেষ্টার "টেকসই বাংলাদেশ তৈরি করুন" লক্ষ্য অর্জন করা যায়।

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের সহযোগিতা প্রধান মিখাইল ক্রেজা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এর সদস্য দেশসমূহ আন্তর্জাতিক শ্রম ও পরিবেশগত মান মেনে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাজারে প্রবেশের জন্য সহযোগিতা করছে—যা জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সার্কুলার ইকোনমিকে সমর্থন করার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন বলেন, জাস্ট ট্রানজিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত। বাংলাদেশে, এমন কোনও আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম নেই যেখানে সরকার, শ্রমিক এবং মালিকরা একত্রিত হয়ে জাস্ট ট্রানজিশনকে এগিয়ে নিতে পারেন। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য ত্রিপক্ষীয় পক্ষগুলির প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার আহ্বান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি  আরদাশির কবির বলেন, শুধু ট্রানজিশন এখন আর কোনও বিমূর্ত আকাঙ্ক্ষা নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়ে অর্থনীতির পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে মানুষ, পরিবেশ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার কেন্দ্রে রয়েছে। ট্রানজিশন পরিকল্পনাটি সামাজিক সংলাপের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে যাতে নারী, অনানুষ্ঠানিক কর্মী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

জাস্ট ট্রানজিশন বাংলাদেশ সেন্টারের চেয়ারপারসন এ.আর. চৌধুরী রিপন বলেন, অর্থনৈতিক রূপান্তরে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং টেকসই ব্যবস্থা আমাদের মূলভিত্তি হতে হবে, যেন শ্রমিকরা এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে তা নিশ্চিত করা যায়।

সহ-আয়োজকরা নিশ্চিত করেছেন যে তারা একাডেমির গতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একসাথে কাজ চালিয়ে যাবেন।

৬ মে শুরু হওয়া এই জাস্ট ট্রানজিশন একাডেমিতে অংশীদারদের মধ্যে ছিল প্যানেল আলোচনা, যুব জলবায়ু উদ্যোক্তাদের প্রেজেন্টেশন, ইন্টারেক্টিভ ব্রেকআউট সেশনসহ সরকারী ও বেসরকারি সংস্থা, যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠন, বেসরকারি খাত এবং মিডিয়াকর্মীদের অংশগ্রহণ।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র র জন য এক ড ম জলব য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে ঢাকার আদালতের আদেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) থাকা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করে ফেরত আনার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত এ আদেশ দেন।

গতকাল রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার (৮ কোটি ১০ হাজার ডলার) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক পাচারে জড়িত ছিল বলে সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এ নির্দেশ দেন।

ছিবগাত উল্লাহ বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনার মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। আর আরসিবিসির মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ। প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অন্য উদ্যোগে ফেরত আসে। এখন আরসিবিসির কাছে পুরো ৮১ মিলিয়ন ডলারই ফেরত চাওয়া হচ্ছে, যেটা আদালত বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।

আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে করা মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এর সঙ্গে সিআইডির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সিআইডির কাছে যে মামলা আছে, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। সমাপ্তির পথে, খুব দ্রুতই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

আদালতের আদেশে বলা হয়, তদন্তে সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ এবং ফিলিপাইন সরকারের পাঠানো মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা অবৈধভাবে ৮১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেছিল।

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, আদালতের আদেশ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশের কপি (অনুলিপি) পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে টাকা দেশে ফেরত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তথ্য ১ দিন পর জানতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ২৪ দিন গোপন রাখে। ৩৩তম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।

সিআইডির ভাষ্য, জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম (ইউএনটিওসি), ফিলিপাইনের আইন এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নির্দেশনার আলোকে এবং সর্বশেষ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার এখন ফিলিপাইনের সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে।

সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা (মেসেজ) পাঠিয়ে ফেডে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।

অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মিলছিল না।

২০২০ সালের ২৭ মে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাতের অভিযোগে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেন নিউইয়র্কের আদালত। তবে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এদিকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে। ওই সময় করা এক মামলায় ফিলিপাইনের আদালত ২০১৯ সালে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে মুদ্রা পাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলায়ও তাঁকে আসামি করা হয়।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটির সময় গত ৮ জুলাই আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ দেওয়ার কথা।

এর আগে গত ১১ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে সরকার। এ কমিটিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকাজের অগ্রগতি, এ-সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য ওই কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।

পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা হলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ