রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের সঙ্গে ভর্তি থাকা জুলাই অভ্যুত্থানের আহতদের হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। গতকাল বুধবার সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চিকিৎসক, রোগী ও স্বজনরা হাসপাতাল ছেড়েছেন।

সংঘর্ষের ঘটনায় সকাল থেকেই সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসা নিতে আসা হাজারো রোগী। এরই মধ্যে সাত দিনের ছুটিতে যান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা.

খায়ের আহমেদ। তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতাল বন্ধের সুপারিশ করেছেন।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন– হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহীদুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ডা. মাহফুজুর রহমান, ডা. আরাফাত হোসেন, ডা. জাহিদ ও ডা. অভি। 
হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী হাসপাতালে বিষপান করেন। এটিকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা, গায়ে হাত তোলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে হাসপাতালে আসা রোগীরা পড়েন বিপাকে। শিডিউল অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও হয়নি। আউটডোরে দীর্ঘ সারি থাকলেও টিকিট দেওয়ার লোক ছিল না। শুধু জরুরি বিভাগ খোলা ছিল।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা গৃহবধূ ফাতেমা খাতুনের গতকাল চোখের ছানি অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। তবে কর্মবিরতি থাকার কারণে সেটা করা সম্ভব হয়নি। তাঁর বড় ছেলে শাহিদুর ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে আমার মায়ের অস্ত্রোপচারের কথা ছিল। হাসপাতালে এসে দেখেছি, নার্স ও কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। জানতে চাইলে কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হননি। শুধু আমার মায়ের না, কয়েকশ রোগীকে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে দেখেছি।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, বেলা ১১টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপুর দেড়টার দিকে সেনা ও কোস্টগার্ড সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এরই মধ্যে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের অনেকে আহত হন এবং হাসপাতালের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের অভিযোগ, তারা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতালের কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। চিকিৎসা না দিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। তাদের চোখের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে।

জুলাই আন্দোলনে আহত হিল্লোল নামে একজন বলেন, সকাল থেকে সব ধরনের সেবা বন্ধ করে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছিলেন। জরুরি সেবাও দিচ্ছিলেন না। এটি নিয়ে প্রতিবাদ জানালে হাসপাতালের স্টাফরা আমাদের ও সাধারণ রোগীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (তেজগাঁও) আলমগীর কবির বলেন, পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে আমরা আরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করেছি, যাতে আবার সংঘর্ষ না হয়।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ বলেন, তিন দিন ধরে হাসপাতালে সমস্যা হচ্ছে। এত ঝুঁকি নিয়ে চাকরি করা যাবে না। আমি সাত দিনের ছুটি নিয়েছি। সকালে আমাদের কর্মীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়ে কর্মবিরতিতে যান। এতে বহির্বিভাগের রোগীদের সঙ্গে মিলে চিকিৎসকদের নাজেহাল করেন জুলাই আহতরা।

কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। আনুমানিক ১৫ চিকিৎসক ও স্টাফ আহত হয়েছেন। তারা বেশির ভাগই পুরুষ। আর নারীদের তারা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। 
তিনি জানান, জুলাই আহত ৫৫ জন ভর্তি ছিলেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করে চারজন সোহরাওয়ার্দীতে এবং একজন সিএমএইচে ভর্তি আছেন।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হাজারো ছাত্র-জনতা এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। কয়েক মাস ধরে তাদের ৫৫ জন ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালকের অভিযোগ, তাদের অনেককে ছুটি দেওয়া হলেও তারা হাসপাতাল ছাড়েননি। তারা এখান থেকে বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে অংশ নেন। এতে অন্য রোগীদের সমস্যা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান সমকালকে বলেন, চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাতের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বৃহস্পতিবার বৈঠক করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেলা সোয়া ৩টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র স ও কর কর মকর ত পর স থ ত চ ক ৎসক স ঘর ষ আহত হ

এছাড়াও পড়ুন:

সারা দেশে জোরদার অভিযান চলুক

সাম্প্রতিক কালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, চাঁদাবাজির পাশাপাশি খুনোখুনির ঘটনাও বেড়ে গেছে। এসব অপরাধের সঙ্গে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জড়িত থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও ফলপ্রসূ অভিযান চালাতে ব্যর্থ হয়েছে।

গত বছর অক্টোবরে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে পিচ্চি হেলাল, কিলার আব্বাসসহ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের খবর ছাপা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে ধরতে পারেনি। গত জানুয়ারি মাসে এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ী ছুরিকাহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন গ্রুপের সন্ত্রাসীদের নাম আসে।

এই প্রেক্ষাপটে অন্যতম সহযোগীসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের ধরা পড়া জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে। মঙ্গলবার কুষ্টিয়া শহরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদসহ আটজনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। ওই দিন ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় সোনার বাংলা মসজিদের পাশে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারে সুব্রত বাইনের উপস্থিতির খবর এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাঁর এক শিষ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঢাকার হাতিরঝিল ও গুলশান এলাকার তিনটি খুনের ঘটনায় সুব্রত বাইনের নাম আসে। খুন ছাড়াও জমি, ফ্ল্যাট দখল ও চাঁদাবাজির একাধিক ঘটনায় সুব্রত বাইন ও তাঁর অনুসারীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজধানীর হাতিরঝিলে গত ২১ এপ্রিল সুব্রত বাইনের অনুসারীদের গুলিতে ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য আরিফ সরদার (৩৫) নিহত হন। ১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের যে তালিকা প্রকাশ করে, তাতে অন্যদের মধ্যে সুব্রত বাইনের নামও ছিল।

১৯৯১ সালে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ খুনের ঘটনায় সুব্রত বাইনের যাবজ্জীবন সাজা হয়। ২০০১ সালে তাঁর নামে ইন্টারপোলের নোটিশ জারি হয়, যা এখনো বহাল আছে। ইন্টারপোলে নোটিশ জারির পর কলকাতায় পালিয়ে যান সুব্রত বাইন। সেখানেও অপরাধের জগতে সক্রিয় থাকেন। ২০০৮ সালে কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে পালিয়ে যান নেপাল, আবার ধরা পড়েন।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, এ রকম একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কী করে মার্কেটে এসে প্রকাশ্যে মহড়া দেন? মগবাজার, রমনা, কারওয়ান বাজার, মধুবাগ—এসব এলাকা ছিল সুব্রত বাইনের দখলে।

উদ্বেগের বিষয় হলো, গত বছর আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জেলখানা থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। যেখানে লঘু মামলার আসামিরও জামিন পেতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়, সেখানে কীভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন?

জামিনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আবার তঁাদের কারাগারে ঢোকানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু গত কয়েক মাসে সরকার কোনো সন্ত্রাসীকে ফের কারাগারে ঢুকিয়েছে এমন প্রমাণ নেই।

মফস্‌সল তো বটেই, দিনদুপুরে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রগুলোয়ও ছিনতাই–ডাকাতি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে খুন–জখমের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়। প্রতিটি এলাকায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হোক। সামনে কোরবানির ঈদ। অতএব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সড়ক–মহাসড়কেও নজরদারি বাড়াতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁদাবাজির অভিযোগে এনসিপি নেতা গ্রেপ্তার
  • সারাদেশে যৌথবাহিনীর হাতে আটক ৩৯০ জন
  • সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৯০
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল সুব্রত বাইনের
  • কমলাপুরসহ দেশের ৪৫ রেলস্টেশনে আনসার মোতায়েন
  • সারা দেশে জোরদার অভিযান চলুক
  • আলোচনায় সুব্রত বাইনের স্যাটেলাইট ফোন
  • ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ হস্তান্তর
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে