‘হিমসাগর আমের কেজি ৮০’, ‘পেয়ারার কেজি নেন ৫০’– হ্যান্ডমাইকে রেকর্ড করা এমন প্রচারণা চালিয়ে ভ্যানগাড়িতে ফল বিক্রি করছেন শাহ আলম নামের এক বিক্রেতা। বুধবার বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় তাঁকে ঘিরে দেখা গেল ক্রেতার ভিড়। কেউ আম কিনছেন, কেউ কিনছেন জাম কিংবা পেয়ারা।
শাহ আলমের মতো আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সেখানে ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন দেশি মৌসুমি ফল বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রত্যেকের ভ্যানে রয়েছে হ্যান্ডমাইক। দাম কত? ক্রেতার এমন প্রশ্নের বারবার জবাব দেওয়ার বিকল্প হিসেবে তারা এই মাইক ব্যবহার করছেন।
শুধু ফার্মগেট নয়, রাজধানীর সব বাজার এখন ভরপুর বিভিন্ন মৌসুমি ফলে। কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি ফলের দাপট বেশি। প্রতিটি দোকান থরে থরে সাজানো আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ নানা মৌসুমি ফলে। দাম নাগালে থাকায় ক্রেতারাও কিনছেন চাহিদামতো।
বিভিন্ন জাতের আমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হচ্ছে আম্রপালি। খুচরা পর্যায়ে আকারভেদে এ জাতের আমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আম ৭০ থেকে ৮০, হিমসাগর ৯০ থেকে ৯৫ ও ল্যাংড়া আমের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোম্বে, চায়না, জিরান নামের কয়েক ধরনের লিচু যাওয়া যাচ্ছে বাজারে।
প্রতি একশটি বোম্বে লিচু ৪০০ থেকে ৪৫৫ ও জিরান লিচু ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। কালো জামের দামও বেশি নয়। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। লটকনের কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। পেয়ারার দর আরও কম। প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার দেশি ফলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল থেকে, বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা এলাকা থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে হাজার হাজার মণ আম আসছে ঢাকায়। দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর ও নরসিংদী অঞ্চল থেকে আসছে লিচু। এভাবে অন্যান্য জেলা থেকেও নানা ফল আসছে ঢাকায়। তবে প্রায় কাছাকাছি সময়ে সব ফল চলে আসার কারণে দাম কমে গেছে বলে জানা তারা।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ফল বিক্রেতা মামুন হোসেন সমকালকে বলেন, প্রতিদিন রাতে ট্রাক ভরে প্রচুর পরিমাণে ফল আসছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। আম, জাম, লিচু, ড্রাগন সব একসঙ্গে আসছে। এ কারণে দাম পড়ে গেছে। তবে আম বেশি আসছে বলে জানান এই ফল বিক্রেতা।
কথা হয় পাইকারি ফল ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের সঙ্গে। আম বিক্রি করা এই ব্যবসায়ী বলেন, এবার উত্তরাঞ্চল থেকে এত বেশি ফল আসছে যে বিক্রি করে শেষ করা যাচ্ছে না। ফল পাকলে বেশি সময় রাখা যায় না, পচে যায়। তাই দাম কম হলেও তাড়াতাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়। পাইকারিতে জাত ও আকারভেদে আমের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
দাম নিয়ে ক্রেতার অনেকেই খুশি। ফার্মগেটে ভ্যানগাড়ি থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে হাঁড়িভাঙা জাতের পাঁচ কেজি আম কিনেছেন গৃহিণী সায়েরা আলম। একই সঙ্গে ১৫০ টাকা দরে ড্রাগন ফল কিনেছেন দুই কেজি। দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, ‘ঈদের আগে আমের কেজি কিনেছি ৯০ টাকা, ড্রাগন কিনেছি আড়াইশ টাকায়। সেই তুলনায় দাম এখন মোটামুটি অনেক কম।’
তবে দাম নিয়ে অসন্তোষও রয়েছে কারও কারও মধ্যে। কারওয়ান বাজার থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে এক পাল্লা (৫ কেজি) আম্রপালি কিনেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আমির হোসেন। কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে সমকালকে তিনি বলেন, ‘খবরে শুনতেছি ২০-৩০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করছেন চাষিরা। তাদের খরচও উঠছে না। কিন্তু ঢাকায় কিনলাম ১০০ টাকায়। তাহলে আমাদের লাভ হইল কই! বেশি দামেই কিনতে হইল।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফল আম র ক জ ফল ব ক র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি লবণের তথ্য পৌঁছেনি বিতরণে কারসাজির অভিযোগ
মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ্ বোর্ডিং কর্তৃপক্ষকে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হলেও এ থেকে বঞ্চিত হয়েছে কয়েকটি এতিমখানা ও মাদ্রসা। যার কারণে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে ফড়িয়াদের হাতে পশুর চামড়া তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, যে পরিমাণ লবণ সরকার সরবরাহ করেছে, তা হয়তো যথেষ্ট নয়। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চেয়ে প্রাপ্ত লবণের পরিমাণ কম হতে পারে। এতগুলো মাদ্রাসা লবণের তথ্যই জানল না, এক দানা লবণও কেউ পেল না। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাদের দাবি, স্বল্পতার জন্য নয়, কারসাজির কারণেই বঞ্চিত হয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের রমজান আলী এতিমখানাটি উপজেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান। ওখানে ৫২ জন এতিম শিক্ষার্থীর সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এবার ঈদে ওই এতিমখানাটি ৩৬টি কোরবানির পশুর (গরু) চামড়া পেয়েছিল। সেই চামড়া সস্তার বাজারে আরও কম মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
এতিমখানার পরিচালক সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাসেম আক্ষেপ করে বলেন, চামড়া সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছিলেন তারা। লবণের দামসহ অন্যান্য খরচের কথা চিন্তা করে পরে নামমাত্র দামে তা বিক্রি করে দেন পাইকারদের কাছে। সরকারিভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে চামড়া সংরক্ষণে সহায়তা দিতে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হলেও তারা সেটি পাননি।
একই উপজেলার পৈলনপুর দারুল উলুম সাদিলুল রাশাদ মাদ্রাসার সুপার, উপজেলা কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাওলানা মঈনুদ্দিন বলেন, তাঁর মাদ্রাসায় ২৩২টি গরুর চামড়া এসেছিল। লবণের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এতগুলো চামড়ার জন্য অনেক লবণ দরকার ছিল। সেই খরচ পোষাতে পারতেন না তারা। এই উপজেলার ৭৩টি কওমি মাদ্রাসার কোনোটিতেই সরকারের দেওয়া বিনা মূল্যের লবণ সরবরাহ করা হয়নি।
উপজেলার বাদাঘাট এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া ঈদের পরদিন জনৈক ব্যক্তিকে ফোনে জানান, ৫০০ টাকা করে দিয়ে লবণ পেয়েছেন ৫০ বস্তা। তাঁর এ কথোপকথনের রেকর্ড আছে।
রোববার বিকেলে স্বপন মিয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁকে ৫০ বস্তা লবণ বিনামূল্যেই দিয়েছেন। লেবার ও নৌকা খরচসহ ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে তাঁর।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, ১৫০ বস্তা লবণ তাঁর উপজেলার জন্য দেওয়া হয়েছিল। এই লবণ সব মাদ্রাসায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। দোয়ারাবাজার ইউএনও অরূপ রতন সিংহ বলেন, সরকারের বিনামূল্যের লবণ পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পরিষদকে কাজে লাগানো হয়েছে। পরিবহন সুবিধার জন্য ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জেলা প্রশাসকের ব্যবসা বাণিজ্য শাখার একজন কর্মচারী জানান, লবণ প্রতিটি উপজেলায় সরবরাহ করা হয়েছে। পরিবহন খরচসহ হিসাব করে মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের সুনামগঞ্জের ডেপুটি ম্যানেজার মো. আফিক্স বলেন, সুনামগঞ্জে ৩০ হাজার ৪৮৯টি চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। এজন্য সরকার বিনামূল্যের ১২০ টন লবণ সরবরাহ করেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানালেন, এই লবণ দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন চামড়া সংরক্ষণে রাখা সম্ভব হবে।