ইসরায়েলের হাসপাতাল নয়, সেনা স্থাপনা ছিল হামলার লক্ষ্য: আইআরএনএ
Published: 19th, June 2025 GMT
ইসরায়েলের হাসপাতাল নয় সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করেই ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েলের বিরশেভা শহরের সোরোকা হাসপাতালের পাশে এ হামলা চালানো হয়।
সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ- এর মতে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একটি “কমান্ড ও গোয়েন্দা সদরদপ্তর (আইডিএফ-সিফোরআই)” এবং গাভ-ইয়াম টেকনোলজি পার্কে অবস্থিত একটি সেনা গোয়েন্দা ক্যাম্পের উপর এই হামলা চালানো হয়েছে।
তারা আরও বলেন, “হাসপাতাল মূলত বিস্ফোরণের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। আসল লক্ষ্য ছিল সামরিক অবকাঠামো, আর সেটাই সরাসরি ও নির্ভুলভাবে আঘাত করা হয়েছে।”
গাভ-ইয়াম নেগেভ টেকনোলজি পার্কের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এবং আইডিএফ-সিফোরআই ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের পাশে অবস্থিত।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম আগে জানিয়েছিল, এখানে আইডিএফ-এর একটি ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন রয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টাইমড আউট: বছর পেরিয়ে দিনটি ফিরে আসে…
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ‘টাইমড আউট’ হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। ক্রিকেট অভিধানে এই আউট ছিল লম্বা সময়। কিন্তু ব্যবহার করেননি কেউ।
২০২৩ সালের আজকের দিন, অর্থ্যাৎ ৬ নভেম্বর দিল্লিতে বাংলাদেশ টাইমড আউট করেছিল ম্যাথুজকে। সেটি ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটের ৪ হাজার ৬৯৫তম ম্যাচ। এর আগে কখনো টাইমড আউট ব্যবহার করেননি কোনো দল। বিশ্বকাপের মঞ্চে দিল্লিতে যে আউট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। এরপর তো গোটা ক্রিকেট দুনিয়া তোলপাড় হয়েই গেল।
নিরুত্তাপ ম্যাচে উত্তাপ ছড়ায় শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক ম্যাথুজের আউটকে কেন্দ্র করে। কোনো বল না খেলেই টাইমড আউট হয়েছেন তিনি। সাকিবের বলে সামারাবিক্রমা ৩টা ৪৯ মিনিটে আউট হয়েছিলেন। পরের ২ মিনিটে নতুন ব্যাটসম্যান ম্যাথুজকে পরের বল খেলতে হতো। কিন্তু হেলমেটের উটকো ঝামেলায় খেলতে পারেননি ম্যাথুজ। বাংলাদেশ সেই সুযোগটি নিয়ে ম্যাথুজের আউটের আবেদন করেন। তাতেই মেলে সাফল্য।
নিয়মের মধ্যে থাকায় সাকিবের আউটের সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকে। আবার ক্রিকেটীয় চেতনার কথা চিন্তা করে সাকিবের সিদ্ধান্তের বিপক্ষেও লোকের অভাব ছিল না।
সেদিন যা হয়েছিল…
দিল্লির অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ৩৮তম ম্যাচ চলছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার। সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়া দুই দল কেবল লড়ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিট নিশ্চিতে। ম্যাচে কোনো বল না খেলেই টাইমড আউট হয়েছেন ম্যাথুজ।
সাকিবের বলে সামারাবিক্রমা ৩টা ৪৯ মিনিটে আউট হয়েছিলেন। পরের ২ মিনিটে নতুন ব্যাটসম্যান ম্যাথুজকে পরের বল খেলতে হতো। কিন্তু হেলমেটের উটকো ঝামেলায় খেলতে পারেননি। বাংলাদেশ সেই সুযোগটি নিয়ে ম্যাথুজের আউটের আবেদন করেন। তাতেই মেলে সাফল্য।
ক্রিকেটীয় আইনে আম্পায়াররা ম্যাথুজকে আউট দিলেও, বাংলাদেশের আবেদন এবং আম্পায়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রবল সমালোচনা হচ্ছে। কেননা ম্যাথুজ সময় মতোই ক্রিজে পৌঁছে গিয়েছিলেন। ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুতও ছিলেন। ক্রিজে প্রণাম করে বল খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু মাথার হেলমেট ঠিক করতে গিয়ে স্ট্রিপে টান দিলে তা ছিঁড়ে যায়। ম্যাথুজ নতুন হেলমেট আনার জন্য ড্রেসিংরুমে ইঙ্গিত করেন।
বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব সময় নষ্টের জন্য ম্যাথুজের আউটের আবেদন করেন। পাশেই ছিলেন সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুতে আম্পায়ার ইরাসমাসের সঙ্গে সাকিবের আলোচনা দেখে মনে হচ্ছিল, টাইমড আউট নিয়ে দুজন কেবল কথা বলছেন। কিন্তু সাকিবের সিরিয়াস আবেদনে ইরাসমাস সঙ্গে থাকা আরেক আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। এ সময়ে বলও দিয়ে দেন আম্পায়ারকে।
তাতেই বোঝা যাচ্ছিল, ম্যাথুজের আউট নিয়ে বাংলাদেশ সিরিয়াস। নতুন হেলমেট নিয়ে ম্যাথুজ ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুত হলেও আম্পায়ার তাকে আউটের সিদ্ধান্ত জানান। তখন ম্যাথুজ বাংলাদেশের অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। নিজের প্রতিক্রিয়াও দেখান। কিন্তু সাকিব হাসি দিয়ে তাকে ক্রিকেটের নিয়মের কথা মনে করিয়ে দেন। তাদের আলোচনায় বোঝা যাচ্ছিল, হেলমেটের স্ট্রিপ ছিঁড়ে যাওয়ার দুর্ঘটনার কথাই বলা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের আবেদনে ছিল স্থির। ক্রিকেটের নিয়মে এই আউট থাকায় ম্যাথুজ টাইমড আউট হন।
টাইমড আউট নিয়ে এমসিসি’র আইন
‘‘উইকেটের পতন বা একজন ব্যাটসম্যান রিটায়ার্ড হওয়ার পর, নতুন ব্যাটসম্যানকে, সময় না বলা পর্যন্ত, বল খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বা অন্য ব্যাটসম্যানকে আউট হওয়ার ২ মিনিটের মধ্যে পরবর্তী বল গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ না হলে, নতুন ব্যাটসম্যান আউট হবেন, টাইমড আউট।’’
ম্যাথুজের কড়া সমালোচনা…
‘‘আজকের (গতকাল) দিন পর্যন্ত তার (সাকিব) ও বাংলাদেশ দলের জন্য আমার সর্বোচ্চ সম্মানটাই ছিল। আমরা সবাই জেতার জন্যই খেলি এবং সেটা নিয়মের ভেতরে থেকেই জেতার চেষ্টা করি। কিন্তু আজ (গতকাল) আমার ঘটনায় নিয়মই বলছে, আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই (ক্রিজে) ছিলাম। আমাদের কাছে ভিডিও আছে। আমরা এ নিয়ে পরে বিবৃতি দেব। ভিডিও থেকে ফুটেজের প্রমাণও আছে। আমি এখানে শুধু কথার কথা বলছি না, প্রমাণ নিয়েই বলছি।’’
‘আমি ভুল কিছু করিনি। নিজেকে তৈরি করে ক্রিজে যাওয়ার জন্য আমার হাতে ২ মিনিট সময় ছিল এবং সেটা আমি করেছি। আমার (হেলমেট) সরঞ্জামে সমস্যা হয়েছিল। আমি জানি না কাণ্ডজ্ঞান কোথায় হারাল। অবশ্যই সাকিব ও বাংলাদেশের জন্য এটা লজ্জাজনক। যদি ওরা এভাবেই খেলতে চায় এবং এত নিচে নামে, আমার মনে হয় ওদের কোথাও একটা বড়সড় ঝামেলা আছে।’
‘‘হেলমেটটা ভেঙে যাওয়ার পরও হাতে ৫ সেকেণ্ডের মতো সময় ছিল। আমি বোঝাতে চাইছি, আমি শুধু হেলমেটটা পাল্টাতে চাইছিলাম। তাই এটা একদমই কাণ্ডজ্ঞানের (কমন সেন্স) ব্যাপার। আমি মানকাডিং কিংবা অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড নিয়ে কথা বলছি না। এটা একদমই কাণ্ডজ্ঞানের ব্যাপার, যেটার অনুপস্থিতি খেলাটায় অসম্মান বয়ে এনেছে। এটা ভীষণ লজ্জার।’’
সাকিব কী জবাব দিয়েছিলেন?
‘‘আমার মনে হয়েছে আমি যুদ্ধে ছিলাম, আমার যেটাই করার দরকার ছিল, সেটা করেছি। কোনো দুঃখ প্রকাশ নেই। আইসিসির উচিত আইনটা দেখা এবং নিয়ম পরিবর্তন করা (যদি ক্রিকেটের স্পিরিট ভঙ্গ হয়)।’’
‘‘অ্যাঞ্জেলোকে আমি লম্বা সময় ধরে চিনি সেই ২০০৬ থেকে। দূর্ভাগ্যজনক। কিন্তু আইনেই এটা আছে। আমি সতর্ক থাকবো যেন এটা আমার সঙ্গে না হয়।’’
‘‘আমরা দুজন দুজনের সঙ্গে ২০০৬ সাল থেকে খেলছি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও প্রচুর খেলেছি। আমি তাকে খুব ভালোভাবে চিনি। সেও আমাকে খুব ভালোভাবে চেনে। সে আমাকে এসে জিজ্ঞেস করেছিল, আমি আবেদন তুলে নেব কিনা? আমি জানিয়েছি, ‘‘আমি তোমার পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। এটা আনফরচুনেট। কিন্তু আমি চাই না।’’
কে পক্ষে ছিলেন, কে বিপক্ষে?
ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন, ‘‘এ নিয়ে হয়তো বিতর্ক চলতেই থাকবে। (টাইমড আউটের) সময় পার হয়ে গেছে কি যায়নি, এর সঠিক উত্তরও হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো সাকিবের এই আবেদন কি তুলে নেওয়া উচিত ছিল নাকি সাকিবের আবেদন করাই ঠিক হয়নি? আমি অধিনায়ক হলে আমার মাথায় এ ধরনের চিন্তা আসতই না।’’
হার্শা ভোগলে বলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেটীয় চেতনার বিষয়টি ছেড়ে দিন। এটি একটি দুর্বল যুক্তি। যারা অজ্ঞ বা ভুল করে, তারা প্রায়ই এই যুক্তি তুলে ধরে। আইন আছে মানে, আপনি আইনের মধ্যে থেকেই খেলছেন। ম্যাথুজ ও শ্রীলঙ্কার সমর্থকেরা হতাশ কিংবা ক্ষুব্ধ হতে পারেন। কিন্তু খেলার নিয়ম অনুযায়ী তিনি আউট ছিলেন।’’
মার্ক ওয়াহ বলেছিলেন, ‘‘ক্রিকেটের আইন ও চেতনা ভুলে যান। একজন ন্যায্য মনের ক্রিকেটার কীভাবে এই আউটের জন্য আবেদন করার কথা ভাবতে পারেন, আউটটি তো পরের ব্যাপার।’’
ওয়াকার ইউনিস বলেছিলেন, ‘‘এটা ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু নয়। এটা ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী।’’
ডেল স্টেইন, ‘‘এটা ভালো কিছু হলো না।’’
ঢাকা/ইয়াসিন