৩০ বছর নন্দনগাছীতে সরকারি জমিতে অস্থায়ী মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা করেন মফিজুল ইসলাম। মার্কেটের কাজ শুরু হলে জমি বর্গা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা বাজার কমিটির সভাপতিকে দেন। এক বছরের মধ্যে দোকান বুঝে পাওয়ার কথা ছিল। এরপর ছয় বছর গড়িয়েছে। দোকান বুঝে পাননি। কবে পাবেন, সেটাও জানেন না। সমিতির লোকজনের কাছে গেলে তারাও নির্দিষ্ট করে কিছু বলছেন না।
শুধু মফিজুল ইসলাম নন, একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন নন্দনগাছী বাজারে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করা ৮২ জন। তারা সবাই মিলে আওয়ামী লীগ নেতার কাছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু কেউই দোকান বুঝে পাননি। এ অবস্থার জন্য তারা ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন।
আক্ষেপ করে মফিজুল বলেন, মার্কেটের প্রকল্প নেওয়ার সময় নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করা হলো। দোকান পাওয়ার আশায় এক নেতাকে টাকা দিলাম। এখন আবার নতুন কমিটি হয়েছে। বরাদ্দের সময় তারা আবার কত টাকা চায় শঙ্কায় আছি। আমাদের ব্যবসা একেবারে শেষ।
আরেক ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, বছরখানেক আগে মার্কেটের দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হয়েছে। এরপরও দোকান বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে কথা বলতে যার কাছে যাই, সে-ই খারাপ ব্যবহার করে।
জানা গেছে, মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরুর সময় নন্দনগাছী বাজার কমিটির সভাপতি ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জুলহাস ইসলাম লিটন। তারা ছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীও পজেশন বরাদ্দের বিষয়ে সক্রিয় ছিলেন। ব্যবসায়ীরা পজেশন পেতে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত এসব নেতা ও বাজার কমিটির হাতে দিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তারা সবাই পলাতক। বাজার কমিটির অফিস এখন বিএনপি নেতাদের দখলে। ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ নান্টু এখন বাজার কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আবুল কালাম আজাদ নান্টু বলেন, আগের সভাপতি দোকান বরাদ্দের নামে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর তারা পালিয়ে গেছেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। দোকান বরাদ্দ শুরু হলে সরকারি ফি ছাড়া বাড়তি একটি টাকাও নেওয়া হবে না ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, দেড় শতাধিক বছর ধরে চারঘাটের নন্দনগাছী স্টেশনকে কেন্দ্র করে চারশর বেশি অস্থায়ী দোকান নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজার। চাল, ডাল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেচাকেনা হয় এখানে। উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাটটিরও অবস্থান এই বাজারে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ এখানে অত্যাধুনিক মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
দোতলাবিশিষ্ট নন্দনগাছী বাজার কিচেন মার্কেটের ভবন নির্মাণের জন্য ৪২ শতাংশ জমি ফাঁকা করা হয়। এতে ৮২ ব্যবসায়ীর দোকান ভেঙে ফেলা হয়। বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। কাজ শুরুর কথা ছিল ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর। শেষ করার কথা ছিল ২০২১ সালের ১০ মার্চে। ২০২০ সালে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। এ কাজ বাস্তবায়ন করছে মিম ডেভেলপার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সরওয়ারুল ইসলাম বলেন, শুরুতে দোকানঘর ভাঙা ও সয়েল টেস্ট নিয়ে ঝামেলা ছিল। করোনার কারণেও কাজ বন্ধ রাখতে হয়। এ জন্য মার্কেট নির্মাণে দীর্ঘ সময় লেগেছে। তবে শিগগিরই কাজ শেষ হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার বলেন, যোগদানের পর থেকে দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেছি। শিগগিরই ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, পরিষদের পাশেই নন্দনগাছী বাজার। ব্যবসায়ীদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে ভীষণ খারাপ লাগে। কয়েক বছর ধরে প্রতিদিনই তারা আমার কাছে জানতে চান, কবে দোকান বরাদ্দ পাবেন। আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। উপজেলার সবচেয়ে বেশি রাজস্ব প্রদানকারী হাট হওয়া সত্ত্বেও এখানকার ব্যবসায়ীরা একেবারে অসহায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ র কম ট র ব যবস য় দ র ব যবস য় র ন বর দ দ ল ইসল ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসইসির জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপন
শহীদদের স্মরণ ও শ্রদ্ধায় সারা দেশে পালিত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’। এরই ধারাবাহিকতায় সকল গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে এ দিবসটি উদযাপন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে মঙ্গলবার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস, ২০২৫’ উপলক্ষে কমিশনের সব গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে একটি আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
পাঁচ বিমার অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুশাসন বাড়ে: আনিসুজ্জামান
এদিন দুপুর ১২টায় কমিশনের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসির কমিশনার, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালকসহ বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ কমিশনাররা বক্তব্য রাখেন। সভায় ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ এর গুরুত্ব ও তাৎপর্যের ওপর আলোচনা হয়। এছাড়া সভায় সব শহীদের আত্নত্যাগসহ সবার অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আলোচনা সভা শেষে সব শহীদের আত্মার শান্তি এবং দেশের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করে দোয়া মাহফিল হয়। বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ উপস্থিত সবাই দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।
ঢাকা/এনটি/এসবি