মহানবী (সা.) কীভাবে বিবাদ মেটাতেন
Published: 21st, June 2025 GMT
মানুষের মধ্যে বিবাদ বা তর্ক কেন হয়? এর পেছনে থাকতে পারে নানা কারণ—অনিচ্ছাকৃতভাবে কারও প্রতি অন্যায় করা, চাপের মুখে অন্যের ওপর রাগ প্রকাশ করা, ঈর্ষা, অহংকার, নিম্ন আত্মসম্মান বা কেবল ব্যক্তিত্বের সংঘাত।
মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু সম্পর্কে বলব না, যা স্বেচ্ছায় রোজা, নামাজ এবং দানের চেয়েও উত্তম? তা হলো মানুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা। সম্পর্ক নষ্ট করা হলো কর্তনকারী।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৯১৯)
একটি বর্ণনায় যোগ করা হয়েছে: ‘এটি কর্তনকারী মানে আমি বলছি না যে এটি চুল কাটে, বরং এটি দ্বীনকে ধ্বংস করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৫০৯)
একবার আবু বকর ও উমর (রা.)-এর মধ্যে বিবাদ হয়। আবু বকরের কোনো কাজে উমর রেগে যান। আবু বকর (রা.) ক্ষমা চাইতে গেলেও উমর দরজা বন্ধ করে দেন।সাহাবাদের মধ্যে বিবাদ
একবার আবু বকর ও উমর (রা.)-এর মধ্যে বিবাদ হয়। আবু বকরের কোনো কাজে উমর রেগে যান। আবু বকর (রা.) ক্ষমা চাইতে গেলেও উমর দরজা বন্ধ করে দেন। পরে আবু বকর নবীর সঙ্গে সাহাবাদের মজলিসে এসে বসেন। নবীজি (সা.) তাঁর মুখের ভাষা ও ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারেন যে তিনি বিচলিত। উমর এসে ঘটনার বিবরণ দিলে নবীজি রাগান্বিত হন। আবু বকর তৎক্ষণাৎ নিজের ভুল স্বীকার করে বলেন, তিনিই বেশি দোষী।
নবীজি দুটি পদক্ষেপ নেন। তিনি আবু বকরকে তাঁর ‘সঙ্গী’ বলে সম্বোধন করেন এবং সবাইকে দুবার জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা কি আমার সঙ্গীকে আমার জন্য ছেড়ে দেবে?’ এটি আবু বকরের আল্লাহ ও নবীর প্রতি অটল আনুগত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
দ্বিতীয়ত, তিনি আবু বকরের সত্যবাদিতার একটি উদাহরণ বর্ণনা করেন: যখন নবীজি নবুওয়াতের দাওয়াত শুরু করেন, সবাই তাঁকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, কিন্তু আবু বকর বলেছিলেন, ‘আপনি সত্য বলছেন।’
এই ঘটনা থেকে আমরা শিখি: যিনি ভুল করেছেন এবং ক্ষমা চাইছেন, তাঁকে দ্রুত ক্ষমা করা উচিত। বিবাদ সমাধানে ভুলকারীর আগের ভালো কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া পুনর্মিলনকে সহজ করে এবং রাগ বা অভিমান বেশি সময় ধরে রাখা উচিত নয়, বিশেষ করে যিনি নবীর প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করেছেন।
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫নবীজির স্ত্রীদের মধ্যে বিবাদমানুষ হিসেবে নবীর স্ত্রীদের মধ্যেও মাঝেমধ্যে মতবিরোধ হতো। একবার জয়নাব বিনতে জাহশ (রা.) নবীর সামনে আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে কঠোর কথা বলতে শুরু করেন। আয়েশা প্রথমে চুপ থাকেন, পরে তিনি জয়নাবকে উত্তর দেন এবং তাঁকে চুপ করিয়ে দেন। নবীজি হাসিমুখে আয়েশার বাগ্মিতার প্রশংসা করে বলেন, ‘সে আবু বকরের মেয়ে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪৪২)
আমি কি তোমাদের এমন কিছু সম্পর্কে বলব না, যা স্বেচ্ছায় রোজা, নামাজ এবং দানের চেয়েও উত্তম? তা হলো মানুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা।সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৯১৯এই ঘটনা থেকে কয়েকটি শিক্ষা পাওয়া যায়: নবী হিসেবে এবং স্বামী হিসেবে কর্তৃপক্ষের অবস্থানে থেকেও নবীজি (সা.) আয়েশাকে নিজের প্রতিরক্ষা করতে দেন, কারণ তিনি জানতেন জয়নাবের কথাগুলো ঈর্ষার কারণে উচ্চারিত।
আয়েশা (রা.) নিজে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং জয়নাবের ধার্মিকতা, আল্লাহভীতি, সত্যবাদিতা ও উদারতার প্রশংসা করেছেন। এটি শেখায় যে বিবাদের সময়ও প্রতিপক্ষের ভালো গুণ উপেক্ষা করা উচিত নয়।
আজকের মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিবাদ, বিশেষ করে পারিবারিক ও সামাজিক স্তরে, একটি বড় সমস্যা। প্রায়ই পরিবারের কর্তৃপক্ষের ব্যক্তিরা—যেমন পিতামাতা বা পরিবারের প্রধান—নিরপেক্ষতার অভাবে বা পক্ষপাতিত্বের কারণে বিবাদকে আরও জটিল করে তোলেন। এমন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুর্বল সদস্যদের প্রতি বারবার অন্যায় করা হয় এবং তাঁদের প্রতিবাদের সুযোগ দেওয়া হয় না। এটি সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ায় এবং পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করো না, একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করো না, ঈর্ষা করো না। বরং আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাইয়ের মতো হও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা জায়েজ নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,০৭৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৬৫)
সূত্র: ডিসকভারিং ইসলাম আর্কাইভ
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সর্বজনের জন্য অর্থনীতি
অর্থনীতিকে খাদের কিনারে ফেলে জনতার রোষে জন–আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিযুক্ত পূর্ববর্তী সরকার অপসারিত হয়। জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের প্রলম্বিত দুর্বিষহ সংকট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমজীবী মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি আত্মাহুতি দিয়েছেন। শহীদের তালিকায় তাঁরাই শীর্ষে। অভ্যুত্থানকালে শ্রমজীবীদের পরে শিক্ষার্থীরা শাহাদাতবরণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ত্যাগ অবিস্মরণীয়। আগ্রাসী সরকারের টিকে থাকার জন্য বর্বরতার নিষ্ঠুরতম দৃষ্টান্ত।
২০০৮ সাল থেকে গড়ে ওঠা কায়েমি রাজনৈতিক গোষ্ঠীতন্ত্রভিত্তিক অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা সর্বজনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গণতান্ত্রিক অধিকারহীনতা জারি রেখে, আইনের শাসন ও জবাবদিহির প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়ে, ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে বিগত সরকার গণমানুষের ওপর জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিপীড়ন চালিয়েছে। এই নিষ্পেষিত জীবন থেকে মুক্তির আশায় ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতা দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়েছেন। গুম-খুনসহ লাখ লাখ মানুষ পৈশাচিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। পুঞ্জীভূত আক্রোশ-আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর