আগামী শুক্র ও শনিবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম পুরোদমে চলবে। এজন্য ঢাকা কাস্টমস হাউসের সব শুল্ক দলের অফিস খোলা থাকবে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ আদেশ জারি করেছে। ১৮ অক্টোবর দুপুরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ (আমদানি কমপ্লেক্স) ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়।

আরো পড়ুন:

এক সপ্তাহের মধ্যে খুলবে বিমানবন্দরের ই-গেট: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নন-শিডিউল ফ্লাইটের সব খরচ মওকুফ করা হবে: উপদেষ্টা

আদেশে বলা হয়, ঢাকা কাস্টমস হাউসের শুল্কায়ন দল এবং তাদের অধিক্ষেত্রের আওতায় এয়ারফ্রেইট ইউনিট ও এক্সপ্রেস সার্ভিস ইউনিট দুর্যোগ–পরবর্তী অন্তর্বর্তী সময়ে আমদানি, রপ্তানি ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম গতিশীল রাখার লক্ষ্যে আগামী শুক্র ও শনিবার অফিস খোলা থাকবে। নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার ফলে কুরিয়ার সার্ভিস সেবা এবং আমদানি অংশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমদানিকারকদের বহু পণ্য নষ্ট হয়। স্বাভাবিক আমদানি কার্যক্রম চালু রাখার জন্য এনবিআর শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন সত্ত্বেও বিশেষ ব্যবস্থায় পুরো শুল্ক দলকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্ঘটনা না নাশকতা—দ্রুত উদ্‌ঘাটন করতে হবে

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের (আমদানি ও রপ্তানি পণ্য রাখার জায়গা) ভয়াবহ আগুন সামগ্রিকভাবে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ত্রুটি ও দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে ঢাকার মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড ও বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র বা অন্তর্ঘাত আছে কি না, তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের যে উদ্বেগ ও প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে গত শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে আগুন লাগে। এ অগ্নিকাণ্ডের কারণে প্রায় সাত ঘণ্টা বন্ধ থাকে বিমানবন্দরটি। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস, বিমানবন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিট, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা অংশ নেয়। আগুন নেভাতে গিয়ে বিমানবন্দরের আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্য আহত হন। নিরাপত্তার কারণে ২৩টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট দেশের অন্য বিমানবন্দরসহ ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় শত শত যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন।

কার্গো ভিলেজের এ অগ্নিকাণ্ড নিশ্চিত করেই আমাদের জন্য সতর্ক হওয়ার একটি সংকেতবার্তা। এটা ঠিক যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ক্যাটাগরি-৯ পর্যায়ের, অর্থাৎ বিমানবন্দরে আগুন নেভানোর জন্য তিনটি ফায়ার ইউনিট রয়েছে। কিন্তু সেখানে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থায় যে গলদ আছে, সেটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাবেক পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) এম কে জাকির হাসানের বক্তব্য থেকে পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত অভিমতে তিনি জানিয়েছেন, কার্গো ভিলেজে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার হাইড্রেন্টসহ আরও কিছু সরঞ্জামের প্রয়োজন ছিল।

আমরা মনে করি, কার্গো ভিলেজের এ অগ্নিকাণ্ড থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও সরকারের শিক্ষা নেওয়ার আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাইরের বিশ্বের সংযুক্তির প্রধান এই বিমানবন্দরের অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থাসহ ও অন্যান্য নিরাপত্তাব্যবস্থা পুনর্মূল্যায়ন করার এবং গলদগুলো শনাক্ত করে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এ অগ্নিকাণ্ডের কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আসা বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে গেছে। কয়েক দফা পেছানোর পরও দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়নি। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুড়ে যাওয়ায় নতুন কোনো অনিশ্চয়তা যেন না তৈরি হয়, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।

অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, দ্রুত তা নির্ধারণ করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি অগ্নিকাণ্ডের কারণে যে আস্থার সংকট তৈরি হলো, তা কাটিয়ে উঠতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও দায়দায়িত্ব নির্ধারণে অন্তর্বর্তী সরকার ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। আমরা আশা করি, তদন্ত কমিটির তদন্তে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড না ঘটে, তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াটাই সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য।

নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, এটা কেবল দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে, সেটি সরকারকে দ্রুত তদন্ত করে বের করতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে পরপর তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জনমনে এ প্রশ্ন প্রবলভাবে এসেছে। বর্ষা মৌসুম কেবল শেষ হয়েছে, এখনকার নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া অগ্নিকাণ্ডের জন্য অতটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেলে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনও বলেছেন, নাশকতাসহ সবকিছু আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করা হবে। আমরা মনে করি, বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সরকারকে অবশ্যই সেটি নিরসন করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শুক্র ও শনিবার বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম পুরোদমে চলবে
  • দ্রুত জানতে পেরেও শুরুতে কেন কার্গো ভিলেজের আগুন নেভানো যায়নি
  • কার্গো ভিলেজে আগুনে ২০০ কোটি টাকার ওষুধের কাঁচামাল পুড়েছে: ওষুধশিল্প সমিতি
  • দুর্ঘটনা না নাশকতা—দ্রুত উদ্‌ঘাটন করতে হবে