সাইবার নিরাপত্তায় দেশের অর্ধেকের বেশি ব্যাংকের এআই নীতিমালা নেই
Published: 22nd, October 2025 GMT
দেশের ৬০ শতাংশ ব্যাংকেরই সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের নীতিমালা নেই। ৪০ শতাংশ ব্যাংকের এই নীতিমালা রয়েছে। এ ছাড়া এআই ব্যবহার করে ব্যাংক পরিচালনার নীতিমালা নেই ৬৮ শতাংশ ব্যাংকের।
আজ বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এ তথ্য জানানো হয়। আলোচনায় ব্যাংক খাতে এআই ব্যবহারের ওপর একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। বিআইবিএমের তিন শিক্ষক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির দুই কর্মকর্তা মিলে মোট ৩৮টি ব্যাংকে প্রশ্ন-উত্তরের তথ্য নিয়ে গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন। গবেষণার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের শিক্ষক ও পরিচালক মো.
আলোচনা সভায় এআই–নির্ভর সাইবার নিরাপত্তা টুল ব্যবহারে ব্যাংকগুলোর তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) অবকাঠামোর প্রস্তুতি তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, দেশের ৬৯ শতাংশ ব্যাংক আংশিকভাবে প্রস্তুত। অন্যদিকে ১১ শতাংশ ব্যাংক নিজেদের প্রায় প্রস্তুত বলে দাবি করেছে। আরও ১১ শতাংশ ব্যাংক এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বিপরীতে ৯ শতাংশ ব্যাংক এখনো প্রস্তুত নয় বলে জানায়।
গবেষণায় আরও বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের সাইবার নিরাপত্তায় দুর্যোগ পুনরুদ্ধার বা ডিজাস্টার রিকভারি পরিকল্পনায় এআইয়ের ব্যবহার করে মাত্র ৫ শতাংশ ব্যাংক। আর গবেষণায় অংশ নেওয়া বাকি ৯৫ শতাংশ ব্যাংক জানিয়েছে, তারা এ ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করে না।
মূল প্রবন্ধে বিআইবিএমের পরিচালক মো. শিহাব উদ্দিন খান বলেন, পুরো বিশ্বেই আর্থিক খাতসহ সব ধরনের খাতে আধুনিকায়ন হয়েছে। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার হামলা। সেখানে আর্থিক খাত নিয়মিতভাবেই অন্যতম টার্গেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এই খাতে নিরাপত্তা বাড়াতে হলে এআই ব্যবহার প্রয়োজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, অনলাইন ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ–নির্ভর ব্যাংকিং কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী ব্যাংক খাতের কেন্দ্রবিন্দু। এআই ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো সহজে অস্বাভাবিক কার্যক্রম শনাক্ত, ম্যালওয়্যার ও জালিয়াতি প্রতিরোধ কার্যকরভাবে করতে পারবে। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সাইবার নিরাপত্তা শুধু প্রযুক্তি নয়, এটি একটি কৌশলগত বিষয়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকও সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে নিয়মিত ই-ব্যাংকিং, ই-কমার্স, মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন পেমেন্ট নীতিমালা হালনাগাদ করছে।
পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সারা পৃথিবী এআইকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী আমরা দেখতে পাচ্ছি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষত পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা এবং ব্যাংকিং খাতে দ্রুত প্রয়োগের দিকে যাচ্ছে। ১০-১৫ বছর পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকস মানবজীবনের সঙ্গে সহাবস্থান করবে। তাই এখন থেকেই আমাদের এই বিষয়ে কৌশলগত পরিকল্পনা প্রয়োজন।’
ইস্টার্ন ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি ওসমান এরশাদ ফয়েজ বলেন, ব্যাংকগুলোকে নিজেদের আরও বেশি আধুনিকায়ন করতে হবে। না হলে ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা দখল করে নেবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ও ফিনটেক কোম্পানি আর্থিক বাজার বদলে দিয়েছে। নতুন প্রজন্ম এখন ব্যাংকে যেতে চায় না, তারা সবকিছু অ্যাপসে চায়। এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তায় ব্যাংকের এমডি ও সিইওদেরও প্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ থাকা প্রয়োজন। এ জন্য ব্যাংকগুলোর প্রয়োজন গ্যামিফিকেশন বা খেলার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সচেতনতা তৈরি করা।
বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার অ্যান্ড ডিজাস্টার রিকভারি সাইটের সিইও মুহাম্মদ ইসহাক মিয়া বলেন, দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকে প্রযুক্তি খাতে বড় বিনিয়োগ থাকলেও তা কতটা কাজে লাগানো হচ্ছে, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই গবেষণায় যেসব ব্যাংক অংশগ্রহণ করেছে, তাদের বেশির ভাগ ভালো ব্যাংক। তাহলে বাকি ২২ ব্যাংকের অবস্থা নিশ্চয়ই আরও খারাপ। এ ছাড়া দেশে এখনো আইটি ফর বিজনেস ধারণাটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত এআই ব যবহ র ব যবহ র কর ম হ ম মদ প রস ত ত আর থ ক ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বুয়েটের ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে চাকসু নেতার পোস্ট, সমালোচনার পর মুছে দিয়ে দুঃখ প্রকাশ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) এক নেতা। এতে তিনি ভুক্তভোগী নারীকেও দায়ী করেন। তবে সমালোচনার মুখে এক ঘণ্টার মধ্যে পোস্ট ডিলিট করেন ওই নেতা। এরপর দুঃখ প্রকাশ করে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানতেন না।
পোস্ট দেওয়া ওই চাকসুর নেতার নাম আকাশ দাস। তিনি চাকসু নির্বাচনে শিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে নির্বাহী সদস্য প্রার্থী ছিলেন। এ পদে তিনি জয়ীও হয়েছেন। পোস্টের কয়েকটি মন্তব্য নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। এ পোস্টে তিনি ধর্ষণ-কাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীকেও দায়ী করেন। এ ছাড়া তদন্ত করলে ভুক্তভোগীর দোষ বেশি পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন।
জানতে চাইলে আকাশ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পোস্টে বলেছি, অপরাধী ছেলে বা মেয়ে যেই হোক, তাঁর ফাঁসি হওয়া উচিত। অনেক আইনজীবীও বলেছেন, “অনেক ধর্ষণ মামলা ভুয়া।” আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তাই সবার মন্তব্যের উত্তর দিতে পারি না। আমি নারী-পুরুষের সমান অধিকারেই বিশ্বাসী।’
তাঁর পোস্টের ব্যাখ্যা দিয়ে আকাশ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ কাউকে জোর করে ধর্ষণ করতে পারে না। তাদের আগে থেকে পরিচয় থাকায় এমন ঘটনা ঘটে। আমি অপরাধীর শাস্তির কথাও বলেছি। তবে আমি একটি সংগঠনের প্যানেলে নির্বাচিত। তাই পোস্টটি ডিলিট করতে হয়েছে। কারণ, অনেকে আমার বক্তব্য বিকৃতভাবে তুলে ধরে শিবিরকে ছোট করার চেষ্টা করছে। আমি ইতিমধ্যেই দুঃখ প্রকাশ করেছি।’
বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারীদের কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছে। শ্রীশান্ত রায় নামের ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
ফেসবুকে সমালোচনা
আকাশ দাসের পোস্টের স্ক্রিনশট ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অনেকেই ইসলামী ছাত্রশিবির ও আকাশ দাসের সমালোচনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রদলসহ অনেক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ পোস্টের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট করেছেন। শাখা শিবিরের নেতা-কর্মীরাও সমালোচনা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চাকসুতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন তাঁর ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আকাশ দাস বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ধর্ষণকে কীভাবে স্বাভাবিকীকরণ করেছে দেখেন! এরাই নাকি নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়বে!’
এ ছাড়া ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী শাফায়েত হোসেন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রশিদ দিনার, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব আশরাফ চৌধুরীসহ অনেকে আকাশ দাসের পোস্টের নিন্দা জানিয়েছেন।
ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হওয়া চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহীম তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘চাকসুর নবনির্বাচিত সদস্য আকাশ দাস বুয়েটের ধর্ষণ ঘটনাকে ঘিরে যে নিন্দনীয় মন্তব্য করেছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি যেন অবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।’ একই মন্তব্য করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক নবনির্বাচিত চাকসুর সাধারণ সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিবও। এ ছাড়া চাকসুর অন্য নেতারাও এ পোস্টের নিন্দা জানিয়েছেন।
বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ
চাকসুর শিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত নির্বাহী সদস্য আকাশ দাস বুয়েটের ধর্ষণের ঘটনায় নেতিবাচক পোস্ট দেওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
আজ রাত সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয়। তারপর কাটা পাহাড়ের রাস্তা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ হয়। এতে বক্তারা আকাশ দাসের পোস্টে করা বক্তব্যকে ‘নারীবিদ্বেষী’ ও ‘ধর্ষণকে স্বাভাবিকীকরণ’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানান। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব আল মাসনূন, ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. শাফায়েত হোসেন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি সাকিব মাহমুদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সহসাধারণ সম্পাদক উম্মেহ সাবাহ্ তাবাসসুম, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের ভিপি পারমিতা চাকমা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শাখা নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।