জন ন্যাশ। ১৯৯৪ সালে ‘ইকোনমিক সায়েন্স’-এ নোবেলজয়ী আমেরিকান গণিতবিদ। কিংবদন্তি এই গণিতবিদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন শাকিলা ইসরাত

শৈশব থেকেই গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি এক ধরনের আচ্ছন্নতা রয়ে গেছে আমার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার দিনগুলোতে অন্য ছাত্রদের তুলনায় আমি বরং একটু বেশি মাত্রায় অঙ্ক করতে পছন্দ করতাম। মিউজিকের প্রতি মোজার্টের যেমন টান ছিল, আমিও তেমনই টান বোধ করি অঙ্কের প্রতি। খুব অল্প বয়সেই আমার বাবা-মা বুঝে গিয়েছিলেন তাদের ছেলেটার চিন্তা-চেতনায় বিশেষ কিছু রয়েছে। সেটির বিকাশ ঘটাতে প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন তারা। স্কুলের যে শৃঙ্খলা, তাতে কোনো ছাত্রের বিশেষ কোনো মেধার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ বলতে গেলে ছিলই না। আপনি বিশেষ ধরনর কিছু করে বসুন– এমন কোনো প্রেরণাও স্কুল থেকে পাইনি আমি। তবু অজান্তেই নিজের ভেতরে অঙ্ক ও বিজ্ঞানের প্রতি আচ্ছন্নতাকে ধরে রেখেছি।
শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন
শিক্ষা ব্যবস্থায় এখন অনেক জটিল বিষয়-আশয় ঢুকে পড়েছে। এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমি মনে করি, আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বড় শহর কিংবা ছোট এলাকা– অবস্থানভেদে সমস্যাগুলো নানাবিধ হয়। একজন ছাত্রের উচিত তেমন দক্ষতা অর্জন করা, যা দিয়ে সে যে কোনো সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছাতে পারে। এ কাজটা 
তারা অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সেই করে ফেলতে পারে– তা সেই সমাধান সর্বক্ষেত্রে নিখুঁত না হলেও সমস্যা নেই।
প্রযুক্তির তুলনায় মানুষের ইতিহাস দীর্ঘ
সমাজে ধনী-গরিবের ব্যবধান বিদ্যমান। ফলে এ ব্যাপারে কিছু করা উচিত– এমনটা বলা খুব সহজ। কিন্তু কথা হলো, সমাজে ধনী ও গরিবের অস্তিত্ব বরাবরই ছিল। তবে একজন মানুষ ততটা গরিব না হলেও তাকে আমরা ‘গরিব’ বলে অভিহিত করতে পারি। আমি বলতে চাচ্ছি, যার কাছে প্রয়োজনের তুলনায় কম সম্পদ আছে, সেই গরিব। তার মানে, আপনার কাছে হয়তো কোনো জিনিস প্রয়োজনের তুলনায় শতকরা ১০ ভাগ কম আছে, আবার কোনো জিনিস ১০ ভাগ বেশি। তুলনামূলকভাবে ব্যাপারটি হয়তো তত খারাপ নয়। আমি যখন ভারতে প্রথম যাই, তখন থেকে এই চিন্তাটি মাথায় ঘুরছে। সেটি ২০০৩ সালের জানুয়ারির ঘটনা। গ্রামাঞ্চলে গিয়ে দেখি বেশির ভাগ মানুষের উপার্জন একদমই কম। কিন্তু তা দেখে এই ভাবনা এলো, একই পরিমাণ উপার্জনকারী মানুষের জীবন-ব্যবস্থা অবস্থানভেদে একেক ধরনের। তাতে তাদের মধ্যে তেমন অনুতাপ নেই। তারা কিন্তু রাস্তার ভিক্ষুক নয়; বরং দেশটিরই উপার্জনক্ষম মানুষ। তারা তাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় তেমন গরিব নয়। ইতিহাসের দিকে তাকালে আপনি বুঝতে পারবেন মানুষকে নানা পরিস্থিতির ভেতর জীবন কাটিয়ে নিতে হয়। মাত্র কয়েক হাজার বছর আগেও, মানুষ কিন্তু একেবারেই আদিম জীবন-যাপন করত। সেই তুলনায় আধুনিক জীবন-যাপন তো শুরু হয়েছে বলতে গেলে অতি সম্প্রতি। আধুনিকতা নামের এই প্রযুক্তির তুলনায় পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ।
একেবারেই সুস্থ জীবন-যাপন আশা করা যায় না
‘অ্যা বিউটিফুল মাইন্ড’ সিনেমাটি নিয়ে মন্তব্য করা সহজ। সিনেমাটি বানানোর অনুমতি দিয়ে আমার পরিবার অবশ্যই কিছু টাকা পেয়েছে। একটি মানসিক অসুস্থতার ধরন কী রকম হয় কিংবা কীভাবে সামলাতে হয় সেটি এই সিনেমার একটি অংশ। মানসিক অসুস্থতা ইতিহাসে একটি প্রতিকূলতা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে এ কথা আপনি বলতেই পারেন। ফলে এটি থেকে সেরে উঠে কোনো মানুষ একেবারেই সুস্থ জীবন-যাপন করতে পারবে– বোধ করি এমনটা কেউ প্রত্যাশাও করে না। এ ধরনের রোগীকে সাধারণত মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর একজন ভোক্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের সবসময়ই ওষুধের ওপর নির্ভর করতে হয়। তারা হয়তো হাসপাতালে ভর্তি থাকে না ঠিকই, কিন্তু তাদের পুরো পৃথিবীটা হয়ে ওঠে একটা হাসপাতাল। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তারা কোনো স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে না। আমার ক্ষেত্রে এ রোগ থেকে একটা বড় ধরনের নিষ্কৃতি আমি পেয়েছি। বেশির ভাগ সময়ই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে আমারটা ছিল একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা। এখন আর আমি মানসিক রোগী নই; আমাকে আর ওষুধ খেতে হয় না।
জীবনে প্রভাব.

..
নোবেল প্রাইজ জেতাটা আমি মনে করি অন্য সব বিজয়ীর চেয়ে আমার জীবনে একটু বেশি মাত্রায় অসাধারণ প্রভাব ফেলেছিল; কেননা, ব্যক্তিজীবনে আমি তখন ভীষণ বেসামাল অবস্থা পার করছিলাম। সে সময় আমি ছিলাম বেকার। শরীর-স্বাস্থ্য যদিও ভালো ছিল, কিন্তু বয়স হয়ে গিয়েছিল ৬৬ বছর। ফলে বছরের পর বছর ধরে বেকার থাকার ফলে আমার সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্ন তখন হুমকির মুখে। এমন বৈরী সময়ে আমার পুরোনো কাজের জন্য এমন বড় মাপের পুরস্কার পেয়ে যাওয়ায় সেটির বেশ প্রভাব পড়েছিল নিজেকে সবার কাছে পরিচিত করে তোলার ক্ষেত্রে। যদিও এর আগে আমার বেশ নাম-ডাক হয়ে গেলেও বলার মতো প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সুপরিচিতি ছিল না। অর্থনীতি ও গণিতের সাহিত্য নিয়ে প্রচুর কথা বলেছি আমি। প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতি পাওয়ার বিষয়টি ছিল একদমই আলাদা। এই পুরস্কারটি আমাকে তা এনে দেয়। n

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা মো. আবু সাদিক কায়েম। তিনি দাবি করেছেন, ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তা করার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

গতকাল রোববার মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এই দাবি করেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম।

এর আগে গতকাল রাতে এক ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে হলে থাকার কারণে ছাত্রশিবিরের যারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করত, তারা মূলত আইডেনটিটি ক্রাইসিস (আত্মপরিচয়ের সংকট) থেকে উতরানোর জন্য কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াত। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সাদিক কায়েম এমন কয়েকজনকে বাঁচাতে তদবির করেন বলে অভিযোগ তোলেন আবদুল কাদের।

আরও পড়ুনছাত্রলীগ পরিচয়ে নির্যাতনের অংশীদার হতেন ‘ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা’, দিলেন অনেকের পরিচয়১৪ ঘণ্টা আগে

আবদুল কাদেরের বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে ছাত্রশিবির নেতা সাদিক কায়েমের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

১. বিপ্লবের পর দুইটি কনসার্ন ছিল। প্রথমটি ছিল অপরাধের বিচার। দ্বিতীয়টি ছিল বিচারের নামে নিরীহ কোনো ব্যক্তির হয়রানি না হওয়া।

সে সময় অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানান যে ‘তারা ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত থাকলেও কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেননি এবং ব্যক্তিগত আক্রোশবশত মামলায় তাদের নাম যুক্ত করা হচ্ছে।’

স্বাভাবিকভাবেই গণহারে মামলার আশঙ্কা থাকলে কে অপরাধী আর কে নিরপরাধ, তা যাচাই করার জন্য আন্দোলনে সক্রিয় নানা স্টেকহোল্ডারের কাছে তথ্যগুলো ফরওয়ার্ড করে পারস্পরিক ফিডব্যাকের ভিত্তিতে ভেরিফাই করাটা জরুরি ছিল। তাই বেশ কয়েকটি কনসার্ন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেয়ে আমি এনসিপি নেতা ও সংস্কার কমিশনের এক সদস্য আরমান হোসেন এবং মাহিনকে ফরওয়ার্ড করি অধিকতর তদন্তের জন্য।

তাদের বলেছি, এমন একটি দাবি এসেছে যে তারা হামলায় যুক্ত ছিলেন না, এই দাবিটি খতিয়ে দেখতে, যাতে অসচেতনতা বশত নিরপরাধ কেউ ভিকটিম না হন।

২. এনসিপি থেকে শুরু করে সব দলের নেতারাই সে সময় এ রকম বিভিন্ন সুপারিশ পেয়েছেন এবং নিজেদের মধ্যে চালাচালি করেছেন ভেরিফাই করার জন্য।

আবদুল কাদের নিজেই উল্লেখ করেছেন, মামলার তালিকাগুলো আমরা পারস্পরিক আলোচনা করে প্রস্তুত করেছি। এখন, নিজেদের মধ্যে কথা না বললে কীভাবে জানব—আসলে কেউ অপরাধী, নাকি তাকে হয়রানি করা হচ্ছে?

৩. স্ক্রিনশটে যাদের নাম যুক্ত আছে, তারা কেউই শিবিরের কেউ না। ৫ আগস্টের পর থেকেও তারা শিবিরের কোনো পদে বা কর্মসূচিতে ছিলেন না।

ফলে, ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তা করার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

৪. সাঈদী নামের এক ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে আমি নাকি বিভিন্ন জায়গায় কল করেছি—এটাও একটি মিথ্যা।

সাঈদী অপরাধী, এবং তাকে বাঁচানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।

৫. মুহসিন হলের একজনের সাথে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ উক্ত শাহাদাতকে আমি চিনিই না।

তা ছাড়া, কাদের লিখেছে, ‘চব্বিশ সালের সেপ্টেম্বরে এই মামলা হওয়ার পরে শাহাদাতকে নিয়ে একজন পোস্ট করেন। পরবর্তীতে ওই পোস্টদাতার সাথে শিবিরের তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েম যোগাযোগ করেন।’

আচ্ছা, আমি যদি ফোন দিতেই চাইতাম, তাহলে তো সেটা মামলা হওয়ার আগেই দেওয়ার কথা ছিল। মামলা হওয়ার পরে কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট দিলে সেই পোস্টদাতাকে ফোন দেওয়ার কী দরকার!

এলাকায় থাকতে কোনো সময় শিবির করেছে, তামিরুল মিল্লাতে অধ্যয়নরত অবস্থায় শিবিরের কোনো আয়োজনে অংশ নিয়েছে, শিবিরের নেতা হিসেবে বা শিবির কানেকশন ব্যবহার করে জুলাইয়ের বড় নেতাও হয়েছে—কিন্তু এখন উগ্র শিবিরবিদ্বেষী—এমন মানুষের সংখ্যাও কম না।

যদি জীবনের কোনো এক ধাপে সাময়িক সময়ের জন্য ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিবিরের সাথে যোগাযোগ রাখে, পরবর্তীতে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিবিরবিরোধী ভূমিকা নেয় অথবা ছাত্রলীগে যুক্ত হয়—এবং, এমন নরপশুদের কর্তৃক ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা নিয়মিত ভিক্টিম হওয়া সত্ত্বেও তাদের কর্মকাণ্ডের দায়ভার যদি শিবিরকে নিতে হয়, তাহলে শিবির ছেড়ে বাগছাস-এনসিপিতে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের কৃতিত্ব, দুর্নীতিসহ অন্যান্য নেতিবাচক ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের দায়ভারও তো শিবিরকে নিতে হবে!

সেটা কি যৌক্তিক হবে?

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটকীয়তা আর রহস্যে মোড়ানো ফ্রেন সিলাকের জীবন
  • ভুল রেলস্টেশনে নামা তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় একজন গ্রেপ্তার
  • পাবনায় মসজিদের নির্মাণকাজ নিয়ে সংঘর্ষে আহত আরও একজনের মৃত্যু
  • গয়নার দোকান থেকে গুজবের বাজার—তামান্না অবশেষে মুখ খুললেন রাজ্জাক প্রসঙ্গে
  • আবুল হাসানকে নিয়ে নতুন গল্পগাছা ও পূর্বাপর
  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব
  • রক্তাক্ত ৪ আগস্ট: ফেনীতে গুলিতে ঝরে যায় ৭ তরুণের প্রাণ
  • হাতকড়াসহ নৌকা থে‌কে হাওরে ঝাঁপ দি‌য়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
  • ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম