ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের দাবি, এই হামলার পেছনে ইরানের শাসনক্ষমতায় পরিবর্তন আনার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তার ভাষ্য, ইরানের শাসক পরিবর্তন এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল না। হামলার আগে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে তেহরানের কাছে সরাসরি বার্তা পাঠিয়ে দরকষাকষি ও আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছিল। খবর রয়টার্সের।

‘অপারেশন মিডনাইট’ নাম দেওয়া সামরিক এই অভিযানে অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সাতটি বি-২ বোমারু বিমান। বিমানগুলো ১৪টি বাঙ্কার বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করেছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফসের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন।
 
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়ে ইরানকে হুশিয়ারি দিয়েছেন হেগসেথ। তিনি বলেন, এ ধরণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে মার্কিন বাহিনী নিজেদের সুরক্ষা দেবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নিখুঁত অভিযান চালিয়ে ইরানের পরমাণু প্রকল্প আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রতি যেসব হুমকি সৃষ্টি করেছে তা নির্মূল করার অনুমোদন দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুদ্ধবিমান হামলা শেষ করে ইরানের আকাশসীমা থেকে বের হয়ে আসার পর পেন্টাগন দেশটির আইনপ্রণেতাদের এই অভিযানের বিস্তারিত জানিয়েছে। এটি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত অভিযান ছিল এবং আগে থেকেই অভিযানের গণ্ডি নির্ধারণ করা ছিল। প্রেসিডেন্ট আমাদেরকে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এই অভিযানটিতে সেনাদের ইচ্ছামতো কাজ করার কোনো সুযোগ ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযানে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে বড় আকারে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গাজায় ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসন, লেবাননে ইসরায়েলের হামলা ও সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতন—সব মিলিয়ে একেবারে উত্তপ্ত অবস্থায় আছে ওই অঞ্চলটি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র

এছাড়াও পড়ুন:

বরকতের শত্রু অহংকার

আমরা প্রায়ই নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠি। নেতিবাচক চিন্তা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই ‘তুমি অবশ্যই সফল হবে’, এমন উক্তি আমাদের মধ্যে উৎসাহ জাগায়। কিন্তু এই বিশ্বাস আমাদের সীমাবদ্ধ করে ফেলতে পারে।

‘আমি মহান কিছুর জন্য নির্ধারিত’, এই চিন্তা আমাদের মধ্যে অহংকার জাগিয়ে তুলতে পারে, যা আমাদের জীবনের বরকত নষ্ট করে।

অহংকারের ক্ষতি

আমাদের সম্ভাবনা কী? সাফল্যের রূপ কেমন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না থাকায় আমরা নিজেরাই সাফল্যের সংজ্ঞা তৈরি করি। আমি ভাবি, আমি একটি বড় কোম্পানির সিইও হতে পারি এবং এটি না হওয়া পর্যন্ত আমি থামব না। অথবা আমার কোনো বন্ধু, যাকে আমি নিজের চেয়ে কম প্রতিভাবান মনে করি, একটি বিশাল ব্যবসা শুরু করেছে। তাই আমি ভাবি, আমি তার চেয়ে ভালো করতে পারি।

অহংকার আত্মবিশ্বাস নয়, অহংকার একটি অস্বাস্থ্যকর বিশ্বাস, যা আমাদের কানে ফিসফিস করে যে আমরা অন্যদের চেয়ে উন্নত, নিয়ম আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।রায়ান হলিডে

যখন আমি নিজেকে মহান মনে করি, আমি সেই অনুযায়ী কাজ করি। সামান্য অনৈতিক পথও বেছে নিতে পারি। কারণ, আমি ভাবি, এটি আমার ‘নির্ধারিত’ সাফল্যের জন্য প্রয়োজন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিবর্তে রাতে কাজের ভেতর সর্বদা ডুবে থাকা আমাদের ন্যায্য মনে হয়। এটি আমাদের স্বার্থপর করে তোলে।

আরও পড়ুনসম্পদের অহংকার ধ্বংস করে কারুনকে১৯ মার্চ ২০২৪

রায়ান হলিডে অহংকারের একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন, ‘অহংকার আত্মবিশ্বাস নয়, অহংকার একটি অস্বাস্থ্যকর বিশ্বাস, যা আমাদের নিজেদের গুরুত্বের ওপর অতিরিক্ত জোর দেয়। এটি আমাদের কানে ফিসফিস করে যে আমরা অন্যদের চেয়ে উন্নত, আমাদের চাহিদা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা এতটাই ব্যতিক্রমী যে নিয়ম আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’

ইসলামি শিক্ষায় নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ধারণা আছে। আবু আলিয়া সুরখিল ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘এটা হলো আত্মার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সংগ্রাম, যেখানে একজন ব্যক্তি প্রলোভন, শারীরিক আকাঙ্ক্ষা ও শয়তানের প্রবঞ্চনা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করে।’

নফস আল–আম্মারা বা ‘মন্দের দিকে প্ররোচনাকারী আত্মা’ আমাদের সম্পদ, খ্যাতি, ক্ষমতা বা শারীরিক তৃপ্তির দিকে ঠেলে দেয়, যা আমাদের আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।

‘আমি মহান কিছুর জন্য নির্ধারিত’, এই চিন্তা আমাদের মধ্যে অহংকার জাগিয়ে তুলতে পারে, যা আমাদের জীবনের বরকত নষ্ট করে।অহংকারের বিরুদ্ধে লড়াই

অহংকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের সাফল্যের ধারণাকে পুনর্গঠন করতে হবে। এর অর্থ হলো, দুনিয়ার সাফল্যের পরিবর্তে আখিরাতের পুরস্কারকে প্রাধান্য দেওয়া এবং ফলাফলের পরিবর্তে কাজের প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দেওয়া। ‘আমি কীভাবে ওটা অর্জন করব’, এর পরিবর্তে ‘আজ আমি কীভাবে নিজেকে উন্নত করতে পারি’, এই চিন্তা আমাদের কাজের ধরন বদলে দেয়।

আরও পড়ুনমন্দ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের উপায়০৬ এপ্রিল ২০২৫

নিজেকে কিছুর ‘প্রাপ্য’ মনে করার ধারণা থেকে মুক্ত হতে হবে। নবীজি (সা.), যিনি সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জান্নাতের প্রাপ্য ছিলেন, তিনিও বলেছেন, ‘সঠিক পথ অনুসরণ করো, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করো এবং সুসংবাদ দাও। নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ শুধু তার কাজের দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সাহাবিরা বললেন, ‘এমনকি আপনিও নন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)?’ নবীজি বললেন, ‘এমনকি আমিও নয়, যদি না আল্লাহ আমাকে তাঁর রহমত দান করেন। জেনে রাখো, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা ছোট হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৬৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৮১৮)

‘আমি কীভাবে ওটা অর্জন করব’, এর পরিবর্তে ‘আজ আমি কীভাবে নিজেকে উন্নত করতে পারি’, এই চিন্তা আমাদের কাজের ধরন বদলে দেয়।

এই হাদিসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। প্রথমত, আল্লাহর সামনে আমাদের অবস্থান স্বীকার করা, মানে আল্লাহ আমাদের রিজিক দান করেন, কিন্তু তিনি আমাদের কিছু দিতে বাধ্য নন। দ্বিতীয়ত, প্রক্রিয়ার ওপর মনোযোগ দেওয়া—জান্নাতে প্রবেশ একটি অসাধারণ অর্জন, কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন ছোট ও নিয়মিত কাজ। এটি আমাদের তাড়াহুড়ার সংস্কৃতি থেকে বরকতের সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যায়।

কর্মক্ষেত্রে বরকতের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সমালোচনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে না নিয়ে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখা, দক্ষতা বাড়িয়ে অন্যদের সেবা করা এবং নিজের পরিবর্তে অন্যদের অবদানের কৃতিত্ব দেওয়া এর অন্যতম উপায় হতে পারে।

 সূত্র: প্রোডাক্টিভ মুসলিম ডটকম

আরও পড়ুনইবলিসের কাহিনি১২ মে ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ