লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেশের রাজনীতিতে আর অনিশ্চয়তা থাকছে না বলে অনেকেই ভেবেছিলেন। বিশেষত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে উভয় পক্ষ একমত হওয়ায় মনে করা হচ্ছিল, নির্বাচনী ট্রেনটি ট্র্যাকে উঠে গেছে। যদিও বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে সংস্কার ও বিচার কার্যক্রমের অগ্রগতি সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল, বাস্তবে এসব শর্ত বাধা হবে না বলেই অনেকে ধরে নিয়েছিলেন।
ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাগুলোতে এটা পরিষ্কার– দেশের প্রধান দল বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল কম সংস্কারেরই পক্ষে। তদুপরি সরকার নির্ধারিত মৌলিক সংস্কার নিয়ে দলগুলোর আলোচনায় সন্তোষ প্রকাশ করে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ একাধিকবার বলেছিলেন, সংস্কার নিয়ে প্রস্তাবিত জুলাই সনদ জুলাইয়েই তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু ইতোমধ্যে কয়েকটি ঘটনার ভিত্তিতে মনে করার অবকাশ আছে যে, নির্বাচনটি আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
প্রথমত, মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলে দুই সময় ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, লন্ডন বৈঠকে ফেব্রুয়ারি নিয়ে ঐকমত্যের পর এখন আবার এপ্রিল কেন? সিইসির পরিষ্কার জবাব– প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা বলেছিলেন। লন্ডন বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারির কথা এসেছে। দুটি টাইমফ্রেমই সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকার যখন নির্বাচন করতে চায়, তখনই যাতে করা যায়, আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি (সমকাল, ২ জুলাই ২০২৫)।
মজার ব্যাপার, সিইসি এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ‘সৌজন্য’ সাক্ষাতের পর। গত ২৬ জুন ওই সাক্ষাৎ সম্পর্কে সিইসির ভাষ্য, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আর ইসি পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা জানানো হয়েছে (সমকাল, ২ জুলাই ২০২৫)। সেখানে নাকি নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন নির্বাচনের কোনো নির্দিষ্ট সময় ছাড়া? তা কীভাবে সম্ভব!
এই যে প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে সোমবার ১৫ মিনিট ফোনালাপ করেছেন বলে তাঁর প্রেস উইং জানাল, সেখানে এ কথাও ছিল। প্রধান উপদেষ্টা রুবিওকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন হবে। তিনি এ কথাটি সিইসিকে জানাবেন না কেন?
দ্বিতীয়ত, লন্ডন বৈঠকটি হয় ১৩ জুন। দেশে ফিরে ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরে সংস্কার আলোচনা এগিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন বলে খবরে প্রকাশ। এর পর বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদও বিবৃতি দিয়ে ফেব্রুয়ারির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর আহ্বান জানান। এত কিছুর পরও সিইসি জানেন না, কবে নির্বাচনটি হতে পারে?
তৃতীয় বিষয়টি আরও চিত্তাকর্ষক। বুধবার সমকাল জানিয়েছে, সংস্কারের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১৬ জুলাই হচ্ছে না ‘জুলাই সনদ’। এ কথা সমকালকে জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ; যদিও এখনও আশা, জুলাইয়েই হবে সনদ। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক মাসে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ৯ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে; ঐকমত্য হয়েছে মাত্র তিনটিতে, আর এক বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে ঐকমত্য হয়েছে। এত অল্পে ঐকমত্য কমিশন সন্তুষ্ট নয়– বোঝা যায়, যদিও সরকারের আগের ঘোষণা অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলো যতটুকু একমত হবে তার ভিত্তিতেই জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে। সেখানে বড় জোর ভিন্নমত পোষণকারী দলগুলো কে কোন ক্ষেত্রে কী বলেছে, তা আলাদাভাবে উল্লেখ থাকতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংস্কার আলোচনা যে পর্যায়ে আছে, তাতে এমন ধারণা অমূলক নয়, সম্পূর্ণ ঐকমত্য আর বেশিদূর এগোবে না। কারণ বিষয়গুলো এমন, যা নিয়ে দশকের পর দশক বিতর্ক চালিয়েও ইউরোপের বহু দেশ তা গ্রহণ করতে পারেনি। যেমন আনুপাতিক হারে নির্বাচন তথা পিআর প্রথায় বহুমতের প্রতিনিধিত্ব সম্ভবপর হলেও সংবিধান সংশোধন এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলে একদিকে শাসন ব্যবস্থায় নানা জটিলতা যেমন তৈরি হবে তেমনি অনেকের মধ্যে অসাংবিধানিক পন্থার আশ্রয় গ্রহণের ঝোঁক বাড়তে পারে। সংসদীয় ব্যবস্থা কার্যকর আছে এমন খুব কম দেশেই এ প্রথা চালু আছে, অন্তত জনসংখ্যার আকৃতিতে আমাদের সমান কোনো দেশে তো নয়ই।
অবশ্য সরকারের অগ্রাধিকার তালিকার অন্যতম দল জামায়াত, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল পিআর প্রথার সংসদের জন্য দৃশ্যত মরিয়া। তাদের নেতাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, এ বিষয়ে ঐকমত্য ছাড়া কোনো জুলাই সনদ হবে না। আর জুলাই সনদ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। অথচ বিএনপি কোনোভাবেই পিআর প্রথার সংসদ মানতে রাজি নয় বলে ইতোমধ্যে স্পষ্ট। মঙ্গলবার জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দলের অনুষ্ঠানেও তারেক রহমান বলেছেন, পিআর প্রথার নির্বাচন অস্থিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হতে পারে।
জামায়াত ও এনসিপি সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে যেভাবে প্রচারাভিযান চালাচ্ছে, তাতেও কাঙ্ক্ষিত সময়ে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় সৃষ্টির কারণ ঘটে। যদিও সিইসি বলেছেন, কমিশনের প্রস্তুতি এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে; স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রস্তুতি নেই– এমনটা বলছেন না তিনি। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে ভোটার তালিকা কি ব্যবহার করতে পারব না? অন্যান্য বিষয়ে কি ব্যবহার করতে পারব না?
নির্বাচনে কোন কোন দল অংশ নিতে পারবে, সেটাও কিন্তু পরিষ্কার নয়। এমন যে, কোনো প্রশ্নের উত্তর প্রধান উপদেষ্টা বলছেন নির্বাচন কমিশন দেবে। আর ইসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে। অথচ যে কোনো প্রকার একতরফা নির্বাচন সংকট বাড়াবে বৈ কমাবে না। আর বিদ্যমান রাজনৈতিক বিন্যাসে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন কীভাবে আশা করা যায়?
দেশে এ মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা চলছে, তা কোনো বিচারেই স্বস্তিদায়ক নয়। একদিকে মবতন্ত্রের দৌরাত্ম্য আগের মতোই চলছে, আরেকদিকে একের পর এক ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ নানা ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অর্থনীতিতেও সুখবর নেই। জ্বালানি সংকটে বহু খাতের কলকারখানা হয় বন্ধ, নয় তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
বেসরকারি খাতের আশঙ্কাজনক সংকোচনের কারণে নতুন কর্মসংস্থান তো দূরস্থান, অনেকের চাকরি টেকানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে কথিত ত্রাণ চ্যানেল এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ চলছেই।
অন্তত জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য একটা সরকার গঠনই হতে পারে এসব সমস্যার প্রাথমিক সমাধান। আর তা কেবল একটা অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই সম্ভব করে তুলতে পারে। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা যেহেতু সরকারের নীরবতাই সৃষ্টি করেছে, তাই সরকারকেই তা পরিষ্কার করতে হবে।
সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত সরক র ন র জ ল ই সনদ র জন ত ক পর ষ ক র সরক র র বল ছ ন সমক ল ব এনপ দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট
জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এই ভাষণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ঠেলে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) একমত হওয়াকেই যদি সবার ঐকমত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে তা এত দিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠককেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
বাম জোটের নেতারা বলেন, সনদ বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণেও একই কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত উঠে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের যে ন্যূনতম সংস্কারটুকু করার সুযোগ জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তা–ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮০ দিন জাতীয় সংসদ দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলবে অর্থাৎ একই সঙ্গে সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করার যে কথা বলা হয়েছে; এটাও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোনো ঐকমত্য হয়নি।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়ে যে কথা প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেছেন, তা একদেশদর্শী ও সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধানে আদেশ জারি বা গণভোটের কোনো বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি কেবল অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে সংবিধান পরিপন্থী কাজ করা হয়েছে।
বাম জোটের নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে গণভোট ও আদেশ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের (দ্বিমতের) উল্লেখ থাকছে না। ঐকমত্য কমিশনে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টিতে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন—এ তথ্যও সঠিক নয়। ৩০টি প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, এ রকম প্রস্তাব ১১টির বেশি নয়।
এ ছাড়া বিবৃতিতে লালদিয়ার চরে ডেনমার্কের কোম্পানিকে বন্দর নির্মাণ এবং পানগাঁও টার্মিনাল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আগামী রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে তড়িঘড়ি করে কেন সরকার একের পর এক আমাদের লাভজনক বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে, তা দেশবাসীর মনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এ ধরনের প্রকল্পে ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নানা ঝুঁকি থাকে। দেশের নানা মহল থেকে বারবার সেই আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত না করে আগের স্বৈরাচার সরকারের বন্দর ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।’
বাম জোটের নেতাদের বিবৃতিতে উঠে আসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি। তাঁরা বলেন, মব সন্ত্রাস লাগামছাড়া, নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, উগ্র মৌলবাদী তৎপরতা সমাজজীবনকে বিষিয়ে তুলছে, দিনদুপুরে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, মানুষের বেঁচে থাকার উপায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আর এই সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের গুপ্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে জনজীবনে এক চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকারের গত ১৫ মাসের কর্মকাণ্ডই এই পতিত শক্তিকে জনপরিসরে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ বাম জোটের নেতাদের।
গণভোট ও উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয় এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে—এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে বাম জোটের নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদেরই। তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করুন। দেশের বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো প্রতিকারে উদ্যোগ নিন।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলীর পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে।